‘প্রথম’ উচ্ছ্বাসের ডাক

0

সেন্ট পিটার্সবার্গে আজ কনফেডারেশনস কাপের ফাইনালে যা-ই ঘটুক, একটা ব্যাপার নিশ্চিত, ব্রাজিল (৪টি শিরোপা), ফ্রান্স (২টি), আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো ও ডেনমার্কের (১টি করে) পর ট্রফিটিতে একটা দেশের নাম লেখা হবে। কী নাম হবে সেটি? চিলি, না জার্মানি?

ম্যাচের আগেই শিরোপা জিতে ফেলার মতো অনুভূতি নিয়েই অবশ্য চিলির মুখোমুখি হচ্ছে জার্মানি। হবে নাই-বা কেন? তরুণ, কম পরিচিত খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে এসেও ফাইনালে উঠে যাওয়া, সেটিও আবার জার্মানির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কনফেডারেশনস কাপের ফাইনাল…এ-ও কি শিরোপার চেয়ে কম কিছু!

রাশিয়াতেই এক বছর পর বিশ্বকাপ সামনে রেখে নতুন কিছু ফুটবলারকে বাজিয়ে দেখতে চেয়েছিলেন জার্মানি কোচ জোয়াকিম লো। শিরোপা-টিরোপা ঠিক তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল না এবার। তারপরও টুর্নামেন্টটার বড় ভক্তও তাঁকে কোনোভাবেই বলা যাবে না। ইউরো ও বিশ্বকাপের মাঝের বছরে এমন একটা ‘প্রস্তুতি’ টুর্নামেন্ট আয়োজনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্নও তুলেছিলেন কয়েকবার। কিন্তু যা চেয়েছিলেন, তার চেয়েও বেশি কিছু এরই মধ্যে পেয়ে গেছেন লো। আজ শিরোপাটাও জিতে গেলে প্রাপ্তিটা হবে সর্বাঙ্গ সুন্দর। তিনি ভক্ত না হোন, তবু এটিও তো একটা শিরোপা!

তবে লোর কথা শুনে সেটি কে বুঝবে? শিরোপার চেয়েও জার্মান কোচের আকর্ষণ যে বেশি টুর্নামেন্টজুড়ে গড়ে ওঠা দুর্দান্ত দলীয় চেতনার দিকেই, ‘ছেলেরা অনেক মজা করছে। সাফল্যের ক্ষুধাও অনেক ওদের। সেটা সহজেই টের পাওয়া যায়। আমার মনে হয়, এখানে আমরা একটা দুর্দান্ত দলকে গড়ে উঠতে দেখছি।’

হতে পারে ফাইনালের আগে তাঁর তরুণ, অনভিজ্ঞ ছাত্রদের ওপর থেকে ফাইনালের চাপটা সরিয়ে নিতে এটা লোর কথার চাল। তবে টুর্নামেন্টজুড়ে ড্রাক্সলার-গোরেৎস্কা-চ্যান-টের স্টেগেনদের ‘বড় হয়ে ওঠা’টা দেখাও তো ছিল তৃপ্তির। দুর্দান্ত আক্রমণাত্মক খেলছে দলটা, টুর্নামেন্টে ৪ ম্যাচে করেছে ১১ গোল। একটাই দুর্বলতা, ৪ ম্যাচের প্রতিটিতেই গোল খেয়েছেও।

ওই ৫ ম্যাচে একটিতেই প্রতিপক্ষকে হারাতে পারেনি জার্মানি—আজকের ফাইনালের প্রতিপক্ষ চিলি! গ্রুপপর্বের ম্যাচটা ড্র হয়েছিল ১-১ গোলে। ওই ম্যাচ আর গত কয়েক বছরের উত্থান—সব মিলিয়ে জার্মান কোচের সম্মানও আদায় করে নিয়েছে চিলি, ‘জানি চিলিয়ানরা খেলায় যেকোনো কিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে। অনেক বছর ধরেই নিজেদের একটা স্টাইল ধরে রেখেছে ওরা। অনেক ভালো, ইতিবাচক উন্নতি এটা।’

উন্নতির গ্রাফটা চিলির জ্যামিতিক হারেই ওপরের দিকে উঠছে। তারা পরপর জিতে নিয়েছে ২০১৫ কোপা আমেরিকা ও ২০১৬ শতবার্ষিকী কোপা আমেরিকা।  কনফেডারেশনস কাপটাও জিতে গেলে টানা তিন বছরে তিনটি আন্তর্জাতিক শিরোপা হয়ে যাবে সানচেজ-ব্রাভো-ভিদালদের। তবে আজ ফাইনালের আগে কোচ হুয়ান আন্তোনিও পিজ্জি হয়তো পইপই করে একটা জায়গায় উন্নতি করতে বলবেন শিষ্যদের, ‘বাবারা, গোলের সুযোগগুলো একটু কাজে লাগিয়ো ঠিকমতো!’ টুর্নামেন্টে ৪ ম্যাচে চিলি গোল করেছে মাত্র ৪টি। পর্তুগালের বিপক্ষে সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে ব্রাভোর বীরত্বের আগে ১২০ মিনিটজুড়েও অনেক সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে। আজ সব ঠিকঠাক হবে?

চিলিয়ানদের প্রেরণার কমতি নেই। এ যে একটা ফুটবল ম্যাচ ছাপিয়ে জাতীয় আনন্দের উৎস। অধিনায়ক ব্রাভোই বলেছেন, ‘আমরা এমন একটা দেশ থেকে এসেছি, যেখানে লোকজন এমন (আনন্দের) পরিস্থিতির সঙ্গে খুব একটা পরিচিত নয়। তাই ফুটবল খেলে আমাদের একটা সুযোগ থাকে মানুষকে খুশি করার, যাতে তারা অন্য সব সমস্যা ভুলে যায়। ওই ব্যাপারটাই সবচেয়ে সুন্দর।’

সমস্যা হলো, জার্মানরা এই আবেগকে অন্তত ৯০ মিনিটের (বা ১২০ মিনিট) জন্য সম্মান জানাতে নিশ্চয়ই চাইবে না। রয়টার্স, ফিফাডটকম

 

মুখোমুখিজার্মানিচিলি

মোট ৮

ড্র ১

চিলি ২

জার্মানি ৫

এ নিয়ে টানা চারবার কনফেডারেশনস কাপের ফাইনালে কোনো দক্ষিণ আমেরিকান দল উঠল। আর কনফেডারেশনস কাপ ‘দক্ষিণ আমেরিকা বনাম ইউরোপ’ ফাইনাল দেখছে এ নিয়ে তৃতীয়বার

২০০১ সালে ফ্রান্সের পর চিলিই প্রথম দল, যারা প্রথমবার কনফেডারেশনস কাপ খেলতে এসেই উঠে গেছে ফাইনালে

কনফেডারেশনস কাপ সবচেয়ে বেশিবার জিতেছে দক্ষিণ আমেরিকার দলগুলো (৫ বার)। ইউরোপের দলগুলো জিতেছে ৩ বার, উত্তর-মধ্য আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দলগুলো জিতেছে ১ বার

Collected

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *