বর্তমানে আমাদের জীবন ইন্টারনেট নির্ভর হয়ে যাচ্ছে। মেতে আছি আমরা ইন্টারনেটে অনেক কাজে। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশী সময় কাটায় ফেইসবুকে। ফেইসবুকের আলোচ্য বিষয় হল অন্যের সাথে আমাদের জীবনের নানা দিক শেয়ার করা। আমরা আমাদের সুখ, দুঃখ,আনন্দ, বেদনার কথা শেয়ার করি। কিন্তু কিছু সংখ্যক লোক অতিরিক্ত কিছু শেয়ার করে ফেলে। যার জন্য পরে তাদের মাশুল দিতে হয়। এসমস্যায় সবচেয়ে বেশি ভুগতে দেখা যায় আমাদের তরুণ সমাজদের। এরকারণে গত কয়েকমাসে বেশ কিছু দুর্ঘটনাও ঘটে গিয়েছে আমাদের দেশে, অনেকেই বেঁছে নিয়েছেন আত্নহত্যার পথ পর্যন্ত।
তাহলে সেগুলো কি যে গুলো আমরা আমাদের ফেসবুকে শেয়ার করার মাধ্যমে নিজেই নিজের বিপদ ডেকে আনছি। সবার আগে আমাদের যেটা মনে রাখা উচিৎ আপনি জানেন না আপনার ফেসবুকের ওপারের স্ক্রিনে কে বসে আছে তার সম্পর্কে আপনি কিন্তু তেমন কিছুই জানেন না তাই বোকার মত অপরিচিত একজনকে নিজের পার্সোনাল সবকিছু শেয়ার করে দেওয়া আপনার জন্য চরম ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। তাই আসুন জেনে নেওয়া যাক কোন কোন তথ্য আপনার ফেসবুক থেকে আড়াল করে রাখা উচিৎ।
জেনে নিন কোন ব্যক্তিগত বিষয়গুলো আপনি ফেইসবুকে গোপন রাখবেন।
১) আপনার ফোন নাম্বার
প্রতিটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর কাছেই তার ফেসবুক আইডি টি অনেক যত্নের ও পার্সোনাল। সামান্য একটু ভুলেই আপনার সব পার্সোনাল ডাটা একজন হ্যাকার হ্যাক করে নিতে পারে শুধুমাত্র আপনার ফোন নম্বরটি দিয়েই। তাই ফেইসবুকে আপনার ফোন নাম্বার শেয়ার করা খুব বাজে পরিকল্পনা। উত্ত্যক্তকারী, পরিচয় ফাঁসকারীগণ সদা এ সুযোগটা খোঁজে। তাছাড়া আপনাকে বিপদের মুখে ফেলতে অনেকে আপনার ফোন নাম্বার ইউজ করতে পারে। খুন, রাহাজানী, অপহরণ ইত্যাদিতে ফাঁসিয়ে দিতে পারে। আপনার সাথে মজা নিয়ে আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট করে দিতে পারে।
এছাড়া আপনার ফেইসবুক আইডি হ্যাক করে সেখানে নানা রকম খারাপ ছবি আপলোড করে আপনার খুব ক্ষতি করতে পারে। এতে আপনার বন্ধু এবং পরিবারের চোখে আপনার অবস্থান খুব শৌচণীয় হতে পারে।
২) বাড়ির ঠিকানা
মনে করুণ আপনাকে কোন এক ব্যাক্তি কোন এক কারণে আপনাকে অনেকদিন খুঁজছেন, জানতে চেষ্টা করছেন আপনি কোন কোন অবস্থানে থাকেন। যদিও আপনি কখনই চান না যে আপনি তার সাথে দেখা করুন, কিন্তু আপনার ফেসবুকে আপনার ঠিকানা দেওয়া থাকলে আপনাকে খুঁজে পাওয়া তো মিনিটের ব্যাপার। এভাবেই সাধারণত কিডন্যাপ, ছিনতাই থেকে হত্যার মত ঘটনা ঘটে থাকে। তাই আপনার বাড়ির ঠিকানা আপনাকে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে ফেলে দিতে পারে। কিছু অসাধু লোক আপনার বাড়ির ঠিকানা পেলে তারা কি করতে পারে ভাবুন।এটি আপনার পরিবারের ক্ষেত্রে এক বিরুপ প্রভাব ফেলতে পারে। আপনার যদি ঠিকানা দিতেই হয় তবে গোপনীয়তার মাধ্যমে ব্যবহার করুন। যাদের জানার দরকার তাদের জানান।
৩) কর্মসম্পর্কীয় তথ্য
আপনার কর্ম সম্পর্কীয় কোন তথ্য ফেইসবুকে শেয়ার করবেন না। যদিও করে থাকুন তবে প্রাইভেসি দিবেন। হ্যাকাররা আপনার এই তথ্যগুলো নিয়ে আপনার কর্মরত কোম্পানীকে বিপদের মুখে ফেলে দিবে। যার জন্য আপনি ভুক্তভুগী হবেন। যেমন ধরেন আপনি কোন কোম্পানির পরিচালক। আপনার কার্মের লিংক যদি হ্যাকাররা পায় তবে আপনাকে বিপদের মুখে টেলে দিতে তাদের তেমন কষ্ট হবেনা।
৪) ব্যক্তিগত সম্পর্কের তথ্য
আপনার ব্যক্তিগত সম্পর্কের তথ্য ফেইসবুকে শেয়ার করার অর্থ হল বিশৃঙ্খলাকে আমন্ত্রন করা। আপনার পারিবারিক সদস্যদের সম্পর্ক শেয়ার করবেন না। করলেও যাতে আপনার বিশ্বস্থ লোকেরা তা দেখতে পায় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।কিছু কিছু সম্পর্ক উত্ত্যক্তকারীদের সাহায্য করে। আপনাকে অপদস্ত করার জন্য তারা এক চমৎকার পথ পায়।
৫) আপনার পারিশ্রমিকের তথ্য
ফেইসবুক ব্যবহার করতে খুব কম খরচ হয়। তাছাড়া বর্তমানে আমাদের দেশে প্রায় বিনামূল্যে ফেইসবুক ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু মাঝে মাঝে ফেইসবুকে কিছু লিংক আপনার ক্রেডিট কার্ডের নাম্বার খোঁজে। ভুলেও সে পথে পা বাড়াবেন না। তাছাড়া দুষ্কৃতকারীরা আপনার পারিশ্রমিকের তথ্য পেয়ে আপনার পরিবারের কাউকে অপহরণকরে মুক্তিপণ দাবি করতে পারে। যা আপনার জন্য এক বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
অতএব, বন্ধুরা ফেইসবুকে নিজের সম্পর্কে তথ্য দিতে সতর্ক থাকবেন। যাতে আপনাকে ভুগতে না হয় ভবিষ্যতে।