বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়, অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে সাকিবদের ঈদ–উপহার

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে ঐতিহাসিক জয় পেয়েছে বাংলাদেশে। আজ  বুধবার টেস্টের চতুর্থ দিনেই ২০ রানের জয় তুলে নেয় টাইগাররা।মিরপুরে আজ সকাল থেকেই টাইগার বোলারদের চেষ্টা ছিল ডেভিড ওয়ার্নার ও স্টিভেন স্মিথ জুটি ভাঙার। তবে কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছিল না। এর মধ্যেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে নিজের শতক তুলে দলকে জয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন ওয়ার্নার।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

কালটা ছিল পুরোপুরিই অন্যরকম। তৃতীয় দিন বিকেলের বিষণ্নতার ছোঁয়াটা ছিল সকালের মিরপুরেও। যেভাবে ইচ্ছা, সেভাবেই খেলছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার আর স্টিভ স্মিথ—অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে সেরা দুই ব্যাটসম্যান। ওয়ার্নার তো আগের দিন বিকেলেই ৭৫ রানে অপরাজিত ছিলেন। স্মিথও জমে গেছেন উইকেটে। কোনো আশা কী ছিল!

এগারো বছর পর বাংলাদেশ সফরে এসেই হার সঙ্গী হলো অস্ট্রেলিয়ার। মিরপুর টেস্টে টিম অস্ট্রেলিয়াকে ২০ রানে হারিয়েছে লাল-সবুজের দল। সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুলদের ঘূর্ণির সামনে দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪৪ রানেই গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। প্রথম ইনিংসে ২৬০ রান করেছিল বাংলাদেশ। জবাবে প্রথম ইনিংসে ২১৭ রানে অস্ট্রেলিয়াকে গুটিয়ে দেয় টাইগার বোলাররা। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ২২১ রানে অলআউট হলে অস্ট্রেলিয়ার সামনে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৬৫। সাকিব আল হাসানের স্পিন-বিষে অসিরা অলআউট হয় ২৪৪ রানে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টাইগারদের এটি প্রথম টেস্ট জয়।
মিরপুরের দর্শকের হতাশ করে এই দুই ব্যাটসম্যান দিনের প্রথম ঘণ্টাতেই তুলে নিলেন ৬৫ রান। বাংলাদেশের বিপক্ষে পাওয়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ফিফটিটি সেঞ্চুরিতে (১১২) পরিণত করতে বেশি সময়ও নিলেন না। কিন্তু এর পরপরই কী যেন হয়ে গেল অস্ট্রেলিয়ার।

সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণি দুর্বোধ্য হয়ে উঠল অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের কাছে। প্রথমে সেঞ্চুরিয়ান ওয়ার্নারকে এলবির ফাঁদে ফেলে ফেরালেন সাকিব। এরপর অধিনায়ক স্মিথ—উইকেটের পেছনে তাঁর ক্যাচ নিলেন মুশফিক। জ্বলে উঠলেন তাইজুলও। পিটার হ্যান্ডসকম্বকে স্লিপে সৌম্যর ক্যাচে পরিণত করলেন। ম্যাথু ওয়েডকে এলবিডব্লু করলেন সাকিব। অ্যাশটন অ্যাগারকে নিজেই তালুবন্দী করলেন তাইজুল। প্রথম ঘণ্টায় যেখানে ব্যাটসম্যানরা স্বাচ্ছন্দ্যে খেলে যাচ্ছিলেন, সেখানে বাংলাদেশ লাঞ্চে গেল জয়ের সুবাস নাকে নিয়েই।
বিরতির সময় জোর জল্পনা-কল্পনা। বাংলাদেশ কি পারবে? গ্লেন ম্যাক্সওয়েল যে তখনো ছিলেন। কিন্তু লাঞ্চের পর প্রথম বলেই ম্যাক্সওয়েলকে সাকিব বোল্ড করলেন। বলটি নিচু হয়ে গিয়েছিল। সেটিতেই চালিয়ে প্লেডঅন ম্যাক্সওয়েল। জয়টা তখন চোখেই দেখছিল বাংলাদেশ।

{ "slotId": "", "unitType": "in-article", "pubId": "pub-6767816662210766" }

কিন্তু প্যাট কামিন্স আর নাথান লায়ন চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা করলেন। বাংলাদেশকে জয় পেতে দেবেন না সহজেই। কামিন্স নিজের ব্যাটিং-পারঙ্গমতার পুরোটা ব্যবহার করলেন। লায়নও কম যান না। ২৯ রানের জুটি গড়লেন। কামিন্স রাখলেন মূল ভূমিকাটা। টিকে থাকতে পারবেন না দেখে বড় শটে মনোযোগী হলেন। ঝুঁকি নিয়ে কয়েকটা বাউন্ডারিও মেরে দিলেন। গ্যালারিতে তখন শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। জয়টা বোধ হয় ফসকেই গেল বাংলাদেশের হাত গলে। অনেকের মনে তখন ভেসে উঠছে ২০০৩ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মুলতান টেস্টের স্মৃতি। ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের খেলা সর্বশেষ সিরিজের স্মৃতিও জেগে উঠছিল। সেবার ফতুল্লায় বাংলাদেশের কাছ থেকে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন রিকি পন্টিং, জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েও ৩ উইকেটে হেরেছিল বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে তো এক টেলএন্ডার, জেসন গিলেস্পি কাঁদিয়ে ছেড়েছিলেন বাংলাদেশকে। কিন্তু মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে তেমন কিছু হতে দিলেন না বাংলাদেশের বোলাররা। কামিন্স-লায়ন জুটিটা চোখ রাঙিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু স্বপ্ন হাতিয়ে নেওয়ার আগেই মিরাজের আঘাত। সুইপ করতে গিয়ে সৌম্যর দুর্দান্ত এক ক্যাচে পরিণত হলেন লায়ন। স্লিপ থেকে বাম দিকে দৌড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে নেওয়া সৌম্যর ক্যাচটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

জশ হ্যাজলউড চোটগ্রস্ত। কিন্তু দলের প্রয়োজনে মাঠে নামলেন। পিঠের ব্যথায় খুব অসুবিধা হচ্ছিল তাঁর ব্যাটিংয়ে। কিন্তু কামিন্স খুব বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে হ্যাজলউডকে আড়াল করে খেলতে লাগলেন। বাংলাদেশের বোলাররা সুযোগই পাচ্ছিলেন না শেষ ব্যাটসম্যানকে বোলিং করার। সুযোগ পেলেন তাইজুল। আর তাতেই ইতিহাস গড়ে ফেলে বাংলাদেশ। তাইজুলের বলে এলবির ফাঁদে পড়লেন হ্যাজলউড। ম্যাচ শেষ। মর্নিং শোজ দ্য ডে—কথাটা মিথ্যে প্রমাণ হলো দুর্দান্তভাবেই।
এই জয়ের নায়ক সাকিবই। ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো ১০ উইকেট পেলেন। নিউজিল্যান্ডের কিংবদন্তি ক্রিকেটার স্যার রিচার্ড হ্যাডলির পর দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে এক টেস্টে ১০ উইকেট ও ন্যূনতম ৫০ রান করার কীর্তিটা নিজের করে নিলেন। কিন্তু ব্যক্তিগত সেই অর্জন ছাপিয়ে দুর্দান্ত এক দলগত অর্জন বাংলাদেশের। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয়—পবিত্র ঈদুল আজহার উৎসবে দেশের মানুষ এর চেয়ে বড় উপহার আর কী পেতে পারত!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *