মাইকেল ওয়েন “ফুটবল ইতিহাসের দূর্ভাগা এক খেলোয়াড় “


দুঃভাগ্য মানুষের জীবনে এমন এক বিভীষিকাময় অধ্যায়, যার পিছে পড়ে তাঁর কাছে সাফল্য যেন এক বিশাল গোলকধাঁধা হয়ে পড়ে। দুঃভাগ্য লগ্নে জন্ম নেওয়াই যেন কারও জন্য হয়ে যায় সাফল্যের অন্তরায়। পূর্বাভাস দিয়েও তাই অনেকে আটকে থাকে ব্যর্থতার বৃত্তে!

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

Image result for মাইকেল ওয়েন

মাইকেল ওয়েন ইংল্যান্ড জাতীয় দলের সাবেক স্ট্রাইকার। ১৯৭৯ সালের ১৪ই ডিসেম্বর ইংল্যান্ডের চেস্টারে জন্মগ্রহণ করেন এ তারকা স্ট্রাইকার।

Image result for Michael Owen


ইংল্যান্ডের ইতিহাসের সবচেয়ে দুর্ভাগা খেলোয়ারদের মধ্যে একজন। বাবা টেরি ওয়েন ছেলের মধ্যে প্রতিভার ছায়া দেখতে পেয়ে ওয়েনকে ফুটবলার বানানোর স্বীদ্ধান্ত নেন। ডিসাইড এরিয়া প্রাইমারি স্কুলের অনুর্ধ-১১ দলে চান্স পান মাত্র ৮ বছর বয়সে, ৯ বছর বয়সে ক্যাপ্টেন হন আর দশ বছর বয়সে এক মৌসুমে ৯৭ গোল করে ইয়ান রাশের ২০ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে দেন, যার সংখ্যা ছিল ৭২। মাত্র তিন বছরেই প্রয়াত গ্যারি স্পিডের সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ডও ভাঙেন। পরে যখন আরেক এ্যাকাডেমি মোল্ড আলেকজেন্দ্রাতে যান, সেখানেও রেখে যান নিজের ছাপা। ২৪ ম্যাচে করেন ৩৪ গোল। ১২ বছর বয়সে যখন লিভারপুল, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, চেলসি ও আর্সেনাল থেকে অফার পান, তখন একটু হলেও গোলকধাঁধাঁয় পড়ে গিয়েছিলেন। তবে তত্কালীন লিভারপুল ইউথ ডেভেলপমেন্ট অফিসার ব্রাইয়ন কিড্ নিজ হাতে চিঠি লিখে তার আগ্রহের ব্যাপারটি ব্যাক্ত করেন, যা ওয়েনের মন ছুঁয়ে যায় এবং তিনি লিভারপুল এ্যাকাডেমিতে যোগ দেন। ১৪ বছর বয়সেই ২০ ম্যাচে ২৮ গোল করে অনূর্ধ ১৫ ও ১৬ দলের রেকর্ড ভাঙ্গেন।

Related image


তবে তা শুধুই শুরু ছিল, লিভারপুলে সিনিয়র ক্যারিয়ার শুরু করেই বিশ্ববাসিকে পুরাই চমকে দেন। ১৭তম জন্মদিনে সাইন করেন সিনিয়র কন্ট্র্যাক্ট। তারপর ইংলিশ ফুটবলে শুরু হয় এক নতুন অধ্যায়, যা সহজেই ভুলার নয়। প্রথম মৌসুমেই ১৮ গোল করে যৌথভাবে লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা, পরের মৌসুমেও একই কাহিনী, এবার জেতেন ব্যালন ডি’অর। ২০০২ সালে যখন তিনি ফর্মের তুঙ্গে, হঠাত্ ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ তাকে মাদ্রিদে নিয়ে আসার ইচ্ছা ব্যাক্ত করেন। ২০০২-০৩ মৌসুমে অনেকটা তার ওপর ভর করেই লিভারপুল লিগে ৪র্থ স্থান অর্জন করে। লিভারপুলের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে কোয়ালিফাই না করাটা ওয়েনের ক্লাবের থাকা নিয়ে সংশয় যাগায়। ২০০৩-০৪ মৌসুমে ক্লাবের খারাপ শুরুর পর যখন তিন মাসের ইন্জুরি কাটিয়ে যখন মাঠে ফেরেন তখন লিভারপুলের জন্য মৌসুম প্রায় শেষ, তবে পরের জেরারর্ড ও তার দারুন পারফরমেন্সে দল আবারো চতুর্থ স্থান অর্জন করে, আর তিনি করেন তার ১৫০ তম গোল। পরের মৌসুমে যখন কোচ হউলার বরখাস্ত হন, ওয়েনের ক্লাব ছাড়াটা অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায়। টানা ৭ মৌসুম লিভারপুলের সর্বোচ্চ গোলদাতা যখন ৮ মিলিওন পাউন্ডে মাদ্রিদের জন্য ক্লাব ছাড়েন, তখন তার গায়ে লিভারপুল লেজেন্ডের তকমাটা লেগে যায়। ২১৬ ম্যাচে মোট গোল দিয়েছেন ১১৮টি, লিভারপুলের হয়ে জিতেছেন একটি এফএ কাপ, দুটি লিগ কাপ, একটি কমিউনিটি শিল্ড, একটি উয়েফা, একটি উয়েফা কাপ। করেছেন বেশ কিছু অসাধারণ গোল, কাটিয়েছেন জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় যা আর কখনোই ফিরে পান নি।

{ "slotId": "", "unitType": "in-article", "pubId": "pub-6767816662210766" }

Image result for Michael Owen


রিয়াল মাদ্রিদে যেয়েই যোগ দেন ‘গ্যালাক্টিকোসে’, যেখানে রোনাল্দো, রাউল, জিদান, ফিগো আর ডেভিড বেকহ্যাম ছিলেন। ১১ নম্বর জার্সিধারি এই স্ট্রাইকারের মৌসুমটি একেবারেই ভালো কাটেনি, শুরুর দিকটা ছিল একেবারেই বেঞ্চ বসে থাকা। মৌসুমে করেন ১৩ গোল, যা মিনিট ও গোলের অনুপাতে সর্বোচ্চ ছিল। তবে দুই ব্রাজিলিয়ান রবিনহো আর জুলিও বাপ্তিস্তার মতো হাই প্রোফাইল খেলোয়ার যখন মাদ্রিদে যোগ দেন, প্রিমিয়ার লিগে ফিরে আসাটা তখন সময়ের ব্যাপার ছিল। ৪১ ম্যাচ খেলে করেন ১৮ গোল, যার মাত্র ১৫টিতেই শুরু থেকে খেলতে পেরেছিলেন।

২০০৬ সালের বিশ্বকাপ তখন দাড়গড়ায়, আর প্রধানত সেই কারণেই নিউক্যাসলের ট্রান্সফার রেকর্ড ভেঙে ১৬.৮ মিলিওন পাউন্ডে যোগ দেন ক্লাবে। প্রি-সিজনের শুরুতেই পড়েন থাই ইন্জুরিতে, যা ২০০৫-০৬ মৌসুমের শুরুতে খেলতে বিরত রাখে। তবে পড়ে ওয়েস্ট হ্যামের বিরূদ্ধে ‘পারফেক্ট হ্যাট্রিক’ করে তার ফিরে আসার জানান দেন। ২০০৫ এর ৩১ ডিসেম্বর টটেনহ্যামের বিরূদ্ধে খেলাকালে ওয়েনের হাড় ভেঙে যায়, যা তার মৌসুমটাই শেষ করে দেয়। এই ইন্জুরিটা এতোটাই খারাপ ছিল যে ২০০৬ এর বিশ্বকাপ শেষের পড়েও তার ইফেক্ট থাকে। এই ইন্জুরির পর প্রথম ট্রেনিং এ আসেন ২০০৭ এর ফেব্রুয়ারিতে। তবে ২০০৬-০৭ মৌসুমের পড়ে ক্লাব তাকে ১০ মিলিওন পাউন্ডের আশেপাশে ছেড়ে দিতে রাজি হয়। কেউ না কিনলেও ওই মৌসুমেও সে দলে নিজের জায়গা হারায়। তারপর দফায় দফায় ইন্জুরির কারণে নিউক্যাসল আর কন্ট্র্যাক্ট রিনিউ করেনা। যার ফলে ফ্রি এজেন্টে পরের মৌসুমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তাকে সাইন করায়। এবারও সেই একই কাহিনি, শুধু দৃশ্যপট ভিন্ন। আবারো কয়েক ম্যাচে একটু-আধটু পারফরমেন্স, তারপর ইন্জুরির কারণে আবারো ছিটকে যাওয়া। ইউনাইটেডের তিন মৌসুম ঠিক একইভাবে কাটান। মাত্র ৩১ ম্যাচ খেলে করেন পাঁচ গোল। জেতেন একটি করে প্রিমিয়ার লিগ, লিগ কাপ ও কমিউনিটি শিল্ড।
পরে আর কন্ট্র্যাক্ট রিনিউ করা হয়নি। এবার গন্তব্য স্টোক সিটি, আর এবারও হানা দেয় ইন্জুরি। মাত্র আটটি ম্যাচ খেলেও ক্যারিয়ারের ইতি টানেন এই ইংলিশ।

Image result for Michael Owen


জাতীয় দলের হয়েও ছিলেন দারুন, ৮৯টি ম্যাচ খেলে করেন ৪০ গোল, যা তাকে ইংল্যান্ডের ৪র্থ সর্বোচ্চ গোলদাতার আসনে বসায়। ইংল্যান্ডের হয়ে তিনি ১৯৯৮,২০০২ ও ২০০৬ বিশ্বকাপ এবং ২০০০ ও ২০০৪ ইউরো খেলেন।

 

Image result for Michael Owenমাইকেল ওয়েনের একটা চরম বৈশিষ্ট্য ছিল, হঠাত্ জোড়ে দৌড় দিয়ে কাউন্টার অ্যাটাকে গোল দেওয়া। তার শুটিং পাওয়ার ছিল খুব দ্রুত, ভলিতে করা গোলগুলো ছিল দেখার মতো আর ফিনিশিং ততটাই নিঁখুত। সবাইকে কাটিয়ে ওয়ান-অন-ওয়ানে গোল করাটা ছিল তার স্টাইল, আর ফুটবলটা জীবন। তাহলে এতটা অসাধারণ ফুটবলারের ক্যারিয়ারের ফিনিশিংটা এতটা ….. ছিল কেন?
শূণ্যস্থানে ‘প্যাথেটিক’ ছাড়া অন্য কোনো শব্দ পেলাম না, তবে দিলামও না। কারণ একটাই, ‘রেস্পেক্ট’!!!

#অর্জন সমুহঃ ম্যানচেষ্টার ইউনাইটেডের হয়ে
★এফ এ কাপ: ২০০০-০১
★লীগ কাপ: 2000-01,2002-03
কমিউনিটি শিল্ড: 2001
উয়েফা কাপ :2001
উয়েফা সুপার কাপ:2001
★ম্যানচেষ্টারের হয়েঃ
প্রিমিয়ার লীগ:2010-11
লীপ কাপ:2009-10
কমিউনিটি শিল্ড: 2010

#ব্যাক্তিগতঃ
★ব্যালন ডি’ অরঃ 2001
★ওয়াল্ডনারের সকার প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার:2001
★ইএসএম টিম অফ দ্য ইয়ার:2000-01
★বিবিসি স্পোর্টস পার্সোনালিটি অপ দ্য ইয়ার:1998
প্রিমিয়ার লীগ গোল্ডেন বুট:1997-99,1998-99
প্রিমিয়ার লীগ প্লেয়ার অফ দ্য সিজন:1997-98
পিএফএ ইয়াং প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার:1997-98
পিএফএ টিম অফ দ্য ইয়ার:1997-98
প্রিমিয়ার লীগ প্লেয়ার অফ দ্য মান্থ :আগস্ট, 1998
★ফিফা ওয়াল্ডকাপ বেস্ট ইয়াং প্লেয়ার: 1998.

Written By

Mohammad Ali

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *