মানসিকভাবে সুস্থ থাকার কৌশল-১

আমরা সবাই মানুষ। আর প্ৰত্যেক মানুষের মন বলতে একটা কিছু আসে যার সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত। আমাদের এই মন থেকেই ভালো আবার থেকেই মন খারাপ হয়ে যায়। আমাদের মন যখন ভালো থাকে তখন আমরা স্বাভাবিক থাকি -ঘুরি ফিরি ,কাজ করি ,আনন্দে থাকি।কিন্তু মাঝে মাঝে আমাদের এই মন খারাপ হয়ে যায়-তখন কোনো কিছু ভালো লাগে না ,আমরা তখন কষ্ট পাই ।মন হচ্ছে- আমাদের ব্রেন যা দেখতে নদীর মতো।নদীর মতো আমাদের মনেও ভাঙ্গন ধরে ,চর পরে ,ঝড় ওঠে, আবার সুন্দর গতিতে বহে চলে। যাহোক ,আমাদের মন কেন খারাপ হয় ,কিভাবে আমাদের মন ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকবে তা আমরা জানব ।

সবকিছুরই যত্ন নিতে হয় ,নচেৎ ওই যত্নহীন জিনিস অকেজো হয়ে যায়। ঠিক তেমনি মনের যে যত্ন নেয় না ,সে মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়। তার মন খারাপ থাকে ,অনেক সময় বিষন্নতায় ভোগে। মনের যত্ন নেয়ার জন্য সবার আগে প্রয়োজন –

১. Me time :”me time ” মানে হচ্ছে নিজেকে সময় দেয়া। আমরা সাধারণত নিজেকে সময় দিতে চাই না। আমার সময় দেয় আমাদের কাজ কে। কিন্তু নিজেকে সময় দেয়া অত্যন্ত জরুরি। আমরা নিজেকে সময় না দিতে পারলে মনের যত্নের ঘাটতি হবে। যার ফলে আমাদের মন খারাপ হয়ে যাবে। প্রতিদিন দশ মিনিট হলেও নিজেকে নিয়ে ভাবতে হবে । -”আজকে কি করসি ,কাল কি করবো ,যা করেছি তার রেজাল্ট কি হতে পারে? ”এসব একটু চিন্তা করা। আর এ ভাবে নিজেকে সময় দিলে আমাদের মন ভালো থাকবে।

২.কার্যকরী সিদ্ধান্ত :আপনার কাজ যাতে সুষ্ঠু ভাবে সম্পূর্ণ হয় সেজন্য আপনাকে কার্যকরী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কেননা কাজ এর ফলাফল নির্ভর করে সিদ্ধান্তের উপর। সিদ্ধান্ত সঠিক ভাবে না নেয়া হলে কাজের পর ফলাফল খারাপ হবে। আর এ জন্য মনও খারাপ হবে। ভালো করে ভেবে চিন্তে বা কার্যকরী সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করলে কাজে সফলতা আসে। যদি বিফল হয় ,তাহলে মন একটা ভালো যুক্তি খুঁজে পায়।সেজন্য স্বাভাবিক ভাবেই মন খারাপ হয় না ,মন ভালো থাকে। তাই মন ভালো রাখতে হলে কার্যকরী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

৩.জীবনের মুক্তোদানা :আমরা অনেক কিছু জানি অনেক কিছু দেখি।কিন্তু আমাদের নিজের ভিতরে যে অপার সম্ভাবনা আসে তা আমরা জানি না। আর এই ওপর সম্ভাবনা হচ্ছে জীবনের মুক্তোদানা। আমরা যদি ভালো থাকতে চাই তাহলে আমাকে জানতে হবে আমার ভিতরের সম্ভাবনা কে ,আমার গুনটাকে। দুঃখজনক হলেও সত্য আমরা আমাদের জীবনের পিয়ারলেস গুলোকে চিনতে পারি না। আমরা মিথ্যার পিছনে দৌড়ায়। আমাদের মন ভালো রাখতে হলে আমার সত্ত্বাকে,আমার সেই লুকিয়ে থাকা গুন্ খুঁজে বের করতে হবে। তাহলে আমাদের মন প্রশান্তির হাওয়ায় শীতল হবে।

৪.বিকল্প ভাবনা: আমাদের সাধারণ ভাবনার পাশাপাশি বিকল্প ভাবচিন্তা ভাবনা রাখতে হবে। আমরা কখনোই একটি চিন্তা ধারার উপর বেসিস করে অথবা পূর্বের ধারণা অনুযায়ী কাজ করবো না। সময় সাথে আমাদের ধারণাটা পাল্টে হবে ,পরিবেশ পরিস্থিত মেপে ধারণা পরিবর্তন করতে হবে। অর্থাৎ আমাকে বিকল্প ভাবনার প্রসেসকে তৈরী করতে হবে। কখনোই আমরা একটি বিষয় দেখে বা খণ্ডিত অংশ দেখে সিদ্ধান্ত নিব না ,আমাদের আচরণ সেভাবে পরিচালিত করবো না। আমরা কারো সম্পর্কে শুধু নেগেটিভ চিন্তা করব না ,বিকল্প একটা পজিটিভ চিন্তাও করব। তাহলে দেখবো কারো সাথে কোনো ঝামেলা হবে না। যার ফলে মন ও খারাপ হবে না।

৫.টিম ওয়ার্ক :আমরা একা কোনো কাজ সুষ্ঠুভাবে করতে পারি না। কোনো না কোনো ভাবে আমাদের কাজ গুলো দল গতভাবে হয়ে যায়। আমি-আপনি যদি খেয়াল করি তাহলে দেখব তা অফিসের মধ্যে বিদ্যমান ,এমনকি পরিবারের মধ্যেও। যিনি অফিসের চা বানানো থেকে শুরু করে বড় সিদ্ধান্ত পর্যন্ত একাই করে থাকেন ,তার পক্ষে মনের উপর যে চাপ পড়বে তা মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে যায়। এ চাপ মুক্ত থাকতে হলে কাজের জায়গা গুলো ভাগ করে দিতে হবে। এটি যেমন কর্মক্ষেত্রে ও তেমনি আমাদের পারিবারিক ক্ষেত্রে ও প্রভাব ফেলবে। বাসাতেও সবাই কাজ ভাগাভাগি করে করলে অর্থাৎ টীম ওয়ার্ক করলে কারো মনের উপর চাপ পড়বে না। ফলে মন চাপ মুক্ত ও ভালো থাকবে।

৬.পরিবার ও বন্ধু : আমাদের কাজ থাকবে ,পড়াশুনা ,ক্যারিয়ার ইত্যাদি থাকবে। এত কিছু পর যদি আমরা ভালো থাকতে চাই তাহলে পরিবার ও বনধুদের কে সময় দিতে হবে। কারণ পরিবার ও বনধুরা আমাদের মানসিক চাপ কমায় এবং আমাদের ভালো থাকতে পরোক্ষভাবে সাহায্য করে। এদের সাথে আমাদের মনের সব কথা শেয়ার করে মানসিক চাপ কমানো সম্ভব। সুতরাং এদের বাদ দিয়ে শুধু কাজের পিছনে গেলে আমাদের মনের চাপ বাড়বে ,মন খারাপ হয়ে যাবে এবং আমরা বিষণ্ণতায় পরে যাব। এর কারণে আমাদের জীবনটার অর্ডার বলে কিছু থাকবে না। আমরা তাহলে মানসিক রোগী হয়ে যাব।

বিখ্যাত একটা কবিতায় বলা হয়েছে ,
Family is like music ,
some high notes
some low notes ;
But always ,
a beautiful song .
এই যে গানের সুর, অসাধারণ!
চলবে …

 

Written By,
Ariful Islam Reza
Department of AIS

Jagannath University

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *