সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে অনুমোদিত দোকানে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, গ্যারেথ বেল, জিনেদিন জিদানদের যে জার্সি বিক্রি হচ্ছে, সেগুলোর সামনের দিকে অনেক আগেই থেকেই লেখা হয়ে গেছে, ‘ফাইনাল মিলানো ২০১৬, স্তাদিও সান সিরো ২৮ মে।’
ভিসেন্তে ক্যালদেরনও কি বসে আছে? সেখানে স্টেডিয়ামের পাশে পার্ক করে রাখা প্রায় সব গাড়িতেই শোভা পাচ্ছে মিলানে যাওয়ার বিমান টিকিট, থাকার ব্যবস্থার অনেক প্যাকেজ।
মাদ্রিদের দুই ক্লাবেই উৎসবের রং লেগেছে বেশ ভালোভাবে। সেটিই তো স্বাভাবিক। মাদ্রিদের দুই ক্লাব রিয়াল ও অ্যাটলেটিকো আজ নামছে ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ শিরোপার লড়াইয়ে। মিলানে আজ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল শেষে উচ্ছ্বাসে ভাসবে কারা?
মাদ্রিদের রাস্তা ধরে গেলে দুই ক্লাবের মধ্যে মাত্র ১০ কিলোমিটারের ব্যবধান। ট্রফি ক্যাবিনেটেও চ্যাম্পিয়নস লিগের সংখ্যায় ব্যবধান একই—১০! রিয়াল যেখানে ইউরোপীয় শ্রেষ্ঠত্বের এই প্রতিযোগিতা জিতেছে সবচেয়ে বেশি ১০ বার, অ্যাটলেটিকোর সেখানে শূন্যতার হাহাকার। স্মৃতি বলতে সম্বল শুধু ১৯৭৪ ও ২০১৪ ফাইনালে খেলা। আজ কার দিকে মুখ ফিরে তাকাবে ট্রফিটা? রিয়াল নিজেদের আরও এক ধাপ ওপরে তুলে নিয়ে জিতবে ‘উনডেসিমা’? নাকি অ্যাটলেটিকো করবে প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা ‘প্রিমেরা’ জয়ের উচ্ছ্বাস?
চ্যাম্পিয়নস লিগে মাদ্রিদই একমাত্র শহর, যেটির দুটি ক্লাব ফাইনালে মুখোমুখি। দুই বছর আগে লিসবনেও প্রথমবার মুখোমুখি হয়েছিল রিয়াল–অ্যাটলেটিকো, আজ দ্বিতীয়বার। কিন্তু মাঠে নামার পর দুই দলের মধ্যে প্রতিবেশীসুলভ ভালো লাগাটা কি আর থাকবে? নামেই শুধু একই শহরের ক্লাব, না হলে রিয়াল ও অ্যাটলেটিকোর মধ্যে ইতিহাস–ঐতিহ্যে বিস্তর ব্যবধান। ট্রফি ক্যাবিনেটের কথা তো আগেই বলা হলো। আভিজাত্যের পাশাপাশি রিয়াল ঐতিহ্যেও বনেদি৷ তুলনায় অ্যাটলেটিকো ফুটবলের মধ্যবিত্ত সমাজের প্রতিনিধি। ভালোবেসে সমর্থকেরা ডাকে ‘লস কোলচোনেরোস’ (তোশকের কারিগর) নামে, নামটাই বলে দিচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষের ক্লাব এটি।
তবে গত পাঁচ বছরে তফাতটা অনেক কমে এসেছে। কমিয়ে দিয়েছেন ডিয়েগো সিমিওনে। কম বাজেটের ক্লাব, প্রতিবছর তারকারা ক্লাব ছেড়ে যাচ্ছে, তবু দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রবল অনুরাগেই এগিয়ে নিচ্ছেন ক্লাবটিকে। স্প্যানিশ লিগে বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদের ‘দ্বৈতাধিপত্য’ ভেঙে দিয়েছেন। চ্যাম্পিয়নস লিগেও টানা তিন বছরের মধ্যে দ্বিতীয় ফাইনাল খেলছে অ্যাটলেটিকো।
দুই বছর আগে লিসবন থেকে ফিরতে হয়েছিল হতাশা নিয়ে, আজ নিশ্চয়ই ‘প্রতিশোধ’ নিতে চাইবে অ্যাটলেটিকো। সিমিওনে যদিও এই শব্দটাই ব্যবহার করতে রাজি নন, ‘প্রতিশোধ বাজে একটা শব্দ। কারণ, এটা আমাদের হার ও বাজে সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয়।’ তাঁর ভাবনায় বরং সর্বশেষ দুই রাউন্ডের সুখস্মৃতি, ‘আমরা এরই মধ্যে বিশ্বের সেরা তিনটি ক্লাবের দুটিকে (বার্সেলোনা ও বায়ার্ন মিউনিখ) হারিয়েছি, ফাইনালে তৃতীয় দলটির সঙ্গে খেলব।’ সিমিওনের প্রেরণা হতে পারে রেকর্ডও, ২০১৪ ফাইনালের পর রিয়ালের সঙ্গে সর্বশেষ ১০ ম্যাচে মাত্র একবার হেরেছে তাঁর দল।
শুধু সিমিওনের কথা বললে জিনেদিন জিদানকেও প্রাপ্য সম্মানটা দেওয়া হয় না। তাঁর অর্জনই বা কম কিসে! জানুয়ারিতে ফ্রেঞ্চ কিংবদন্তি যখন রিয়ালের দায়িত্ব নেন, রোনালদো–বেলদের মনে হচ্ছিল যেন বিচ্ছিন্ন একেকটি দ্বীপ। সেখান থেকে মাত্র পাঁচ মাসে রিয়ালকে একই তরঙ্গে বেঁধেছেন, নিয়ে এসেছেন মৌসুমের সবচেয়ে বড় শিরোপার দুয়ারে। কে বলবে, এই প্রথম কোনো ক্লাবের মূল দলের দায়িত্ব নিয়েছেন জিজু!
রূপকথার মতো শুরুটাকে আজ কিংবদন্তিতে রূপ দেওয়ার অপেক্ষায় জিদানও। এএফপি।
টুর্নামেন্টে দুই দল
রিয়াল মাদ্রিদ অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ
২৭ গোল ১৬
১১ বিপক্ষে গোল ৭
৫৪% গড় বল দখল ৪৬%
৮৬ গোলে শট ৭২
১৮ হলুদ কার্ড ২১
০ লাল কার্ড ১
রোনালদো (১৬) সর্বোচ্চ গোলদাতা গ্রিজমান (৭)