জেমস ট্রুডো হলেন বিশ্বের একজন তরুণ জননেতা এবং বিশিষ্ট নবীন রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব। যার আবহমান জীবনযাত্রা তথা জীবনসংগ্রামে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সৎসাহস যে কাউকে করবে আর জোরাল আত্মবিশ্বাসী এবং উদ্যমী।
জাস্টিন পিয়েরে জেমস ট্রুডো (জন্ম ২৫শে ডিসেম্বর,১৯৭১) একজন কানাডিয়ান রাজনীতিবিদ।তিনি কানাডার লিবারেল পার্টির নেতা হিসেবে ২০১৫ সালে দেশটির ২৩ তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন। জো ক্লার্কের পর তিনি কানাডার দ্বিতীয় কম বয়স্ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার পিতা পিয়েরে ট্রুডোও কানাডার প্রাক্তন প্রধান্মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অটোয়া তে জন্ম নেয়া ট্রুডো কলেজ জিন-দ্যে-ব্রেবুফ এ পড়ালেখা করেন। ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৪ সালে এবং ১৯৯৮ সালে ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়া থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পিতার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতে দেয়া একটি বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি সবার প্রথম জনসমক্ষে নিজের স্বীয় ব্যক্তিত্ব তুলে ধরেন। স্নাতক শেষ করে ট্রুডো ভ্যানুকুভারের ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৩ সালে চাকরি ছাড়ার আগে তিনি মন্ট্রিলের ইকোল পলিটেকনিক থেকে এক বছরের ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রাম শেষ করেন।
২০০৫ সালে ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ে জাস্টিন ট্রুডো পরিবেশগত ভূগোলে স্নাতকোত্তর শুরু করলেও এক বছর পরেই তা থেকে অব্যাহতি নেন।”দ্যা গ্রেট ওয়ার” নামক একটি টিভি মিনিসিরিজে তিনি নিজের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগান। বাবার মৃত্যুর আট বছর পর ট্রুডো রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন।২০০৮ সালের ফেডারেল ইলেকশনে তিনি হাউজ অব কমন্সে নির্বাচিত হয়ে লিবারেল পার্টির যুব ও সংস্কৃতি বিভাগের একজন সমালোচক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। পরবর্তী বছর তিনি নাগরিক ও ইমিগ্রেশন বিভাগের সমালোচকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালে সেকেন্ডারী শিক্ষা এবং যুব ও সৌখিন খেলাধূলা বিভাগের সমালোচকের দায়িত্ব পান। ২০১৩ সালের এপ্রিলে ট্রুডো লিবারেল পার্টির নেতৃত্ব পান। ২০১৫ সালে তার নেতৃত্বে ১৮৪ এর মধ্যে ১৩৬ টি আসন পেয়ে কানাডার ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক আসন নিয়ে লিবারেল পার্টি সরকার গঠন করে।
১৯৭১ সালের ২৩ শে জুলাই কানাডার প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে এলিয়ট ট্রুডো ও মার্গারেট সিনক্লেয়ার দম্পতির পরিবারে নতুন সদস্য আসছে বড়দিনে আসতে যাচ্ছে। সাথে সাথেই জুয়াড়িরা পার্লামেন্ট হিলে বাচ্চার সম্ভাব্য জন্মদিন নিয়ে বাজী ধরা শুরু করে দেয়। ১৯৭১ সালের বড়দিনের দিন অটোয়া সিভিক হাসপাতালে স্থানীয় সময় ৯টা বেজে ২৭ মিনিটে জাস্টিন ট্রুডো জন্মগ্রহণ করেন।সেই আমলের কানাডার অন্য সকল হাসপাতালের মতো বাচ্চা ডেলিভারির রুমে বাবাদের উপস্থিত থাকার নিয়ম ছিল না। কিন্তু মার্গারেট সিনক্লেয়ার এই নিয়মের বিরোধীতা করেন এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের নিয়ম পাল্টাতে বাধ্য হন। এরপর থেকে কানাডার অন্য হাসপাতালগুলোতে উক্ত নিয়মে পরিবর্তন আনা হয়।
ট্রুডো ছাড়াও এর আগে জন এ ম্যাকডোনাল্ডের কন্য মারগারেট ম্যারি থেডোরা ম্যাকডোনাল্ডই কানাডার প্রধানমন্ত্রীর অফিসে জন্মগ্রহণ করেন। ট্রুডোর ছোটভাই আলেক্সান্ডার ও মিচেল এর জন্মের সময়ও পিয়েরে ট্রুডো কানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনরত ছিলেন।
১৯৭৭ সালের ২৭শে মে ট্রুডর পিতামাতা সম্পর্ক বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন। পাঁচ বছর বয়স্ক ট্রুডো তখন তার বাবার অধীনে ছিলেন। এরপর একাধিকবার তার পিতামাতার পূনর্মিলনের গুজব ছড়িয়েছিল। তবে তার মায়ের আইনজীবি মাইকেল লেভাইন সুপ্রিম কোর্ট অব অন্টারিও তে ১৯৮৩ সালের ১৬ই নভেম্বর ডিভোর্সের কাগজ পেশ করেন। একই বছরের ২৯শে ফেব্রুয়ারি, পিয়েরে ট্রুডো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে অবসরের ঘোষণা দেন। অবশ্য শেষ পর্যন্ত তার পিতামাতা ট্রুডোর প্রতি সম্মিলিত অধিকার পান।ট্রুডর ন্যানি ১৯৭৯ সালে এক ইন্টারভিউয়ে বলেন, “জাস্টিন মা পাগল ছেলে। তাই ওকে সামলানো খুব একটা সহজ কাজ না। কিন্তু বাচ্চাদের মন খুব দ্রুত গলে যায় আর নিঃসন্দেহে এরা খুব ভাগ্যবান বাচ্চা। ট্রুডোর মায়ের দিক থেকে দুইজন সৎভাইবোন এবং তার পিতার দিক থেকে এক বোন আছেন। তরুণ বয়স থেকে জাস্টিন ট্রুডো লিবারেল পার্টির সমর্থক ছিলেন।হাই স্কুলে থাকাকালীন অবস্থায় তিনি কানাডিয়ান ফেডারেলিজম এ অংশ নেন।বাবার মৃত্যুর পর ২০০০ সাল থেকে ট্রুডো লিবারেল পার্টিতে আরো বেশি জড়িয়ে পড়েন। ২০০৩ সালের লিবারের পার্টির লিডারশিপ কনভোকেশনে প্রধানমন্ত্রী জীন শ্রেটিয়েন এরে উদ্দেশ্য একটি ট্রিবিউটে অলিম্পিয়ান শারমেইন ক্রুকের সাথে ২০০৬ সালে সহসঞ্চালোনা করেন নির্বাচনে লিবারেল পার্টির হারের পর জাস্টিন ট্রুডো যুব রিনিউয়াল এর দায়িত্ব পান।২০০৭ সালে লিবারেল পার্টির হয়ে মনোনয়নের নিমিত্ত জাস্টিন ট্রুডো মন্ট্রিল সিটির কাউন্সিলর ম্যারি ডেরোস ও ব্যাসিলো জরডানোর মুখোমুখি হন।খুব সুহজেই অবশ্য তিনি অন্য দুইজনকে হারিয়ে লিবারেল পার্টির মনোনয়ন পান।২০০৮ সালের ১৪ই অক্টোবর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন। এর জন্য প্রায় এক বছর ধরে জাস্টিন ট্রুডো প্রচারনা চালিয়ে আসছিলেন। নির্বাচনে ট্রুডো জয়যুক্ত হন। তার জয়কে নিয়ে দ্যা গ্লোব এন্ড মেইল পত্রিকার প্রধান সম্পাদক লিখেন, “ট্রুডো আর অল্প সংখ্যক নতুন এমপিদের একজন যার মাঝে ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রীর ছায়া দেখা যায়।”।
উক্ত নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টি সরকার গঠন কুরলে ট্রুড বিরোধী দলীয় এমপি হিসেবে সংসদের প্রবেশ করেন। ডায়োনের অবসরের পর ২০০৮ সালে লিবারেল পার্টির নেতৃত্ব গ্রহণের সুযোগ জাস্টিন ট্রুডর হাতে আসে। অন্য সব প্রতিদ্বন্দ্বীদের মাঝে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে তিনি লিবারেল পার্টির জনপ্রিয় নেতা হিসেবে স্বীকৃত পান।কিন্তু জাস্টিন ট্রুডো দায়িত্ব গ্রহণ করেন না বরং ইগ্নাটিফ নেতা হিসেবে ২০০৮ সালে ডিসেম্বরে লিবারেল পার্টির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।২০১১ সালের নির্বাচনে লিবারেল পার্টির শোচনীয় অবস্থার পর ইগ্নাটিফ স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। জাস্টিন ট্রুডো পুনরায় লিবারেল পার্টির অবশ্যম্ভাবী নেতা হিসেবে উঠে আসেন।
২০১২ সালের সেপ্টেম্বরেই একাধিক মাধ্যমে বলা হয় জাস্টিন ট্রুডো এবারের নির্বাচনে লিবারেল পার্টিকে নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছেন।যদিও তার যোগ্যতা নিয়ে সবস্ময়ই সমালোচকদের প্রশ্ন ছিল।পার্লামেন্টে থাকা অবস্থায় তাকে কখনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেমন অর্থনৈতিক বা পররাষ্ট্রনীতি ব্যাপারে কথা বলতে দেখা যায় নি।অনেক পন্ডিত মনে করেন তার সেলিব্রিটিসুলভ স্ট্যাটাসের কারণে তিনি ততোধিক জনপ্রিয় আর একারনে হয়তো আরো অভিজ্ঞ ও পটু নেতৃত্ব থেকে কানাডা বঞ্চিত হতে পারে।
২০১৫ সালের ১৯ শে অক্টোবর শতাব্দীর সবচেয়ে দীর্ঘ নির্বাচনী প্রচারণার পরজাস্টিন ট্রুডোর নেতৃত্বে লিবারেল পার্টী ফেডালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। ৩৩৮ টি আসনের মাঝে ১৮৪টি আসন লিবারেল পার্টি অধিকার করে।যা পূর্বের ২০১১ সালের নির্বাচনের তুলনায় অনেক বেশি।
গভর্নর জেনারেল ডেভিড জনসন জাস্টিন ট্রুডো ও তার কেবিনেটের অন্যান্য সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করান। ৩রা ডিসেম্বর ২০১৫ তে সরকার গঠন করেই জাস্টিন ট্রুডো জানান তার প্রথম উদ্যোগ হবে মধ্যবিত্তদেরজন্য রাজস্বের হার কমানো এবং ধনীদের ক্ষেত্রে তা বৃদ্ধি করা। তিনি কানাডার আদিবাসীদের সাথে সম্পর্ক উন্নীতকরণ ও একটি স্বচ্ছ, নীতিবান সরকার গঠনের ঘোষনা দেন।
জাস্টিন ট্রুডো তার ছোটভাই মাইকেলের সহপাঠিনী ও বান্ধবী সোফি গ্রেগরের সাথে ২০০৫ সালের ২৮ শে মে বিবাহবন্ধনের আবদ্ধ হন।ব্যক্তিগত জীবনে তিনি তিন বাচ্চার জনক।
বর্তমানে তিনি রাজনৈতিক জীবন এবং ব্যাক্তি জীবন উভয়দিক থেকেই একজন সফল মানুস এবং বর্তমান বিশ্বের বহুমানুষের কাছেই তিনি আদর্শ স্বরূপ।