১৯৩৯ সাল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। জার্মানদের আগ্রাসী মনোভাব সারা বিশ্বকে এক হুমকি দিয়ে চলেছে। ১ম বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকা পুরোপুরিই বাইরে ছিল কিন্তু এবারের পরিস্থিতি সম্পূর্নই ভিন্ন, আস্তে আস্তে জার্মানরা স্বপ্ন দেখতে শুরু করছে আমেরিকা জয়ের।
আইনস্টাইন জার্মানের হলেও তিনি ছিলেন ইহুদী, সুতরাং নাৎসি বাহিনীর সাথে ছিল তার ঘোর বিরোধীতা। এদিকে বিজ্ঞানী ফার্মি তখন গোপন খবরের ভিত্তিতে আইনস্টাইনকে জানালেন যে বিজ্ঞানী হাইজেনবার্গ ইহুদী হওয়া স্বত্বেও তিনি নিজ দেশের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে হাত মিলিয়েছেন জার্মানদের সাথে। আইনস্টাইনের সাথে যদিও হাইজেনবার্গের সম্পর্ক খুব মধুর ছিল না তবুও হাইজেনবার্গ যে একজন প্রতিভাধর বিজ্ঞানী ছিলেন এটা আইনস্টাইন জানতেন। আর হাইজেনবার্গ জার্মানদের সাথে হাত মেলানো মানেই জার্মান পারমানবিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বড় কোন অস্ত্র তৈরী করে ফেলতে পারে এটা হলফ করেই বলা চলে।
আইনস্টাইন জানতেন একসাথে একগুচ্ছ পরমানু ভাঙ্গলে যে পরিমান শক্তি উৎপন্ন হতে পারে সেটা একটা বড় শহরকেই নিমিষেই শেষ করে দিতে পারে। তখন তার মাথায় ইউরেনিয়ামের নাম ঘুরপাক করছিল, বুঝতেই পারছিলেন জার্মান চাইলেই বিশাল ইউরোনিয়াম তার হাতের কাছের বেলজিয়ামেই পাবে। এরমানে পৃথিবী একটি বড় এক ঝুকির দিকে এগিয়ে চলেছে আর এদিকে আমেরিকা হাত-পা গুটিয়ে বসে আছে! আইনস্টাইন আমেরিকার এমন নিষ্ক্রয় অবস্থা একদমই মেনে নিতে পারছিলেন না। তিনি জানতেন একবার যদি হাইজেনবার্গ পারমানবিক অস্ত্র তৈরী করতে পারেন তবে পৃথিবী হিটলারের হাতে আসতে সময় নিবে না আর কত যে শহর পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে সেটার একটা বিশাল তালিকা তৈরী হতে থাকবে।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট তখন জার্মান হুমকির সামনে দিন কাটাচ্ছিলেন। প্রতিদিনই যুদ্ধের খবর তার টেবিলে আসচ্ছিল আর জার্মানদের জয়ের খবর তাকে আরো হুমকির মুখে ফেলছিল। তিনি ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলেন না আসলে কিভাবে হিটলারকে থামানো যেতে পারে।
২রা আগস্ট ১৯৩৯, সকালে উঠে অফিসে পৌছাতেই টেবিলের উপর তিনি আইনস্টাইনের একটা চিঠি পেলেন- যেখানে আইনস্টাইন লিখেছিলেন যে তিনি জার্মানদের আগ্রাসন নিয়ে খুবই চিন্তিত। জার্মানেরা ইউরোনিয়াম নিয়ে গবেষণা শুরু করছে- যা থেকে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ানক পারমানবিক বোমা হয়ত আবিষ্কার সম্ভব আর জার্মানেরা যদি একবার এই অস্ত্র হাতে পেয়ে যায় তবে পৃথিবীকে রক্ষা করা হয়ত আর সম্ভব হবে না। তিনি প্রেসিডেন্ট এর নিকট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হস্তক্ষেপ ও জার্মানদের বিরুদ্ধে সৈন্য পাঠাতে অনুরোধ জানালেন।
কিন্তু আইনস্টাইন বুঝতে পারেন নাই যে তিনি এক আগ্রাসনকে থামাতে আরেক আগ্রাসনকে ডেকে আনছেন। রুজভেল্ট এ খবর পেয়ে খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লেন। তিনি জার্মানদের রুখতে না সৈন্য পাঠালেন না আইনস্টাইনকে চিঠির উত্তর। তিনি জেনে গিয়েছেন ইউরোনিয়াম নামের এক মৌল দিয়ে পারমানবিক অস্ত্র বানানো যায় যা একটা বড় শহরের নাম পৃথিবী থেকে নিমেষেই মুছে দিতে পারে। রুজভেল্ট পারমানবিক বিজ্ঞান নিয়ে গবেষকদের খোজে নামলেন, খুজে বের করলেন ওপেনহেইমারকে। যাকে আমরা পারমানবিক বোমার জনক হিসাবে জানি।
আইনস্টাইন জীবিত থাকতে দেখে গিয়েছিলেন যে আসলে তিনি কাদের হাতে বিশ্বাসের ছুড়ি তুলে দিয়েছিলেন। হ্যা, নাগাসাকি হিরোশিমায় পারমানবিক হামলায় যুদ্ধ এর পুরোপুরি ইতি ঘটে তবে আজ ও প্রশ্ন থেকে যায় সেখানে পারমানবিক অস্ত্র ব্যবহারের আসলেই কি তখন কোন দরকার ছিল? নাকি এটা শুধু মাত্র আমেরিকার ক্ষমতা দর্শনই ছিল।
আরেকটা তথ্য জেনে রাখা ভালো, পারমানবিক বোমা সত্যিকার অর্থে সর্ব প্রথম হাইজেনবার্গ বানাতে সক্ষম হয়েছিলেন, কিন্তু গবেষনাকালে তার গবেষনা কেন্দ্র মারাত্নকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় আর জার্মান সরকার তার জন্য অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়া থেকেও পিছিয়ে আসেন। আজ যদি হাইজেনবার্গকে বিশ্বাস করে আরেকবার তাকে সহযোগীতা জার্মান সরকার করত তবে ইতিহাস হয়ত আরো রক্তাক্ত হতে পারত।
সব শেষে এক প্রশ্ন থাকল- বলতে পারবেন উক্ত চিঠিটি এখন কোথায় আছে এবং এর বর্তমান মূল্য কত হতে পারে?