যে ১০টি ভুল সফল হতে কখনই করা উচিৎ নয় : ওয়ারেন বাফেট

জীবনে সফল হতে হলে হলে আপনাকে জানতে হবে কিভাবে আপনি আপনার টাকাপয়াসার খোঁজখবর রাখবেন এবং সঠিক ভাবে তার সঠিক ব্যবহার করবেন। জীবনে সফল ব্যাক্তিরা অনন্য কাজটি খুব দক্ষতার সাথেই করে থাকেন জীবনের শুরুর দিক থেকেই। আর এই দক্ষতা আপনাকে সাহায্য করবে পৃথিবীর বুকে সামনের দিন গুলোতে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য।

আসুন এবার জেনে নেওয়া বিশ্বের সেরা ধনী ও অর্থনীতিবিদ ওয়ারেন বাফেটের মতে একজন সফল মানুষ হতে যে ১০টি বিষয়ে অবশ্যই নজর রাখতে হবে, সেই ১০টি বিষয়কে –

. বাজে খরচ নয়, যা উপার্জন করি যেন খরচ তার থেকে কম হয়ঃ যা উপার্জন করা হয়, তার থেকে কম খরচ করা বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটা অর্থিক দক্ষতা। পৃথিবীর সব থেকে ধনী ব্যাক্তিরা এই দিকটি সব সময় খেয়াল রেখে চলেছেন এবং চলেন। উদাহরণ হিসেবে আমরা বিনিয়োগকারী জগতের কিংবদন্তী হিসেবে খ্যাত  Sir John Templeton এর নাম বলতে পারি যিনি একজন বিলিয়নিয়ার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পরেও তার উপার্জনের ৫০% সাশ্রয় করতেন। সেজন্য অবশ্য আপনাকে ৫০% সাশ্রয় করতে বলা হচ্ছে না। আপনার উপার্জনের ১০%-১৫% সাশ্রয়ের মাধ্যমেও আপনি আর্থিক সাফল্য অর্জন করতে পারেন।

.তারা নির্ধারিত দামে থেমে থাকেন না,জিনিস এর মূল্যায়ন কে গুরুত্ব দেনঃ আমরা ব্যাক্তিগত জীবনে কোথায় কেমন খরচ করছি এটা সেগুলো নিয়েই দুটি কথা, এটা হতে পারে আপনার বিনিয়োগ, একটা ভাল রেস্টুরেন্টে খাওয়ার খরচ কিংবা কেনাকাটার ব্যাপারে। সফল ব্যাক্তিরা ব্যাপারেও গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তারা বিনিয়োগ ক্ষেত্রের ভবিষ্যত বিবেচনা করেন। উদাহরণ হিসেবে দেখা যাবে যে তারা ২০০ ডলার বা তার বেশি খরচ করে একটি দামি বিজনেস সু কিনবেন, সস্তা জুতো ক্রয় করেন না। কারণ, অল্প যত্নেই দামী জুতো জোড়া তুলনামূলকভাবে অনেক দিন টিকবে।

. তারা ব্যাংকের হিসেবের পেছনে পয়সা খরচ করেন না,তারা জানেন কিভাবে নিজেদের ব্যাংক সম্পর্কিত বিষয় সামলাতে হয়ঃ CNN এর তথ্য অনুসারে আমেরিকানরা প্রায় ১৫০০০ ডলার এর উপর খরচ করে ক্রেডিট কার্ড এর পেছনে। সফল ব্যাক্তিরা ব্যাপারেও নজর রাখেন। তারা খেয়াল রাখেন তাদের ATM এর পেছনে এবং অন্যান্য ব্যাপারে কত খরচ হচ্ছে।

.জীবনে বড় কোন পরিবর্তন আসার পর তারা জমাখরচ মিলিয়ে নিতে একদমই ভোলেন নাঃ  আপনি কি সম্প্রতি বিয়ে করেছেন? আপনার স্ত্রী কি আপনার মন মত চলে? এগুলোও এমন কিছু জিনিস যা সফল ব্যাক্তিরা সফলতার সাথেই মানিয়ে নিতে পারেন। আপনার জীবনে যখন বড় কোন খরচের ব্যাপার আসে তখন আর্থিক লেনদেন এর পর সার্বিক খরচ মিলিয়ে নেয়া একান্ত কর্তব্য। বছরে অন্তত একটি বার আপনি নিজে বসে অথবা কোন এক্সপার্ট এর সাহায্য নিয়ে আপনার জীবন এবং আর্থিক পরিকল্পনা করে নিন যা আপনাকে জীবনে সাফল্যের শীর্ষে থাকতে সাহায্য করবে।

.তারা একটি নির্ধারিত উপার্জনের মাঝে সীমাবদ্ধ না থেকে উপার্জন বাড়াবার নানা পথ খোঁজেনঃ কিছু মানষ সীমিত আয়ের মাঝেই দীমাবদ্ধ থাকতে চান। তবে সফল ব্যাক্তিরা নিত্যদি চেষ্টা করেন তাদের উপার্জনের পাল্লাটা ভারী করতে। উদাহরণ স্বরূপ তারা তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নানা প্রশিক্ষণ নেন, এমনকি নতুন নতুন আইডিয়া প্রয়োগ করেন তাদের কোম্পানীর উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য।

.তারা আর্থিক হিসাবগুলোকে কখনই অবহেলা করেন নাঃ  আর্থিক দিক থেকে সফল হতে হলে আপনাকে অবশ্যই কিছু গুণের অধিকারী হতে হবে। তার ভেতর একটি হল আর্থিক হিসাব গুলোতে নজর রাখা। সফল ব্যাক্তিরা মাসে অন্তত ৩০৬০মিনিট এর পেছনে ব্যয় করেন। আর যখনই তারা কোন ভুল কিংবা ঘাটতি খুঁজে পান, তারা সাথে সাথে ব্যাবস্থা নেন।

.টাকার ব্যাপারে তারা কখনই বোকার মত কোন ঝুঁকি নেন নাঃ Warren Buffet এর ভাষ্য মতেRule number one is never lose money.” প্রতিটা বিনিয়োগের ক্ষেত্রেই কিছু ঝুঁকি থাকে। আর এজন্যই সফল ব্যাক্তিরা দুটি কার্যকরী পন্থা অবলম্বন করে থাকেন ঝুঁকি এড়াবার জন্য।  ঝুঁকি এড়াতে যেকোন বীমা (যথাঃ বাড়ি, গাড়ী কিংবা জীবন বীমা) কে তারা অত্যাধিক গুরুত্ব দেন। এছাড়াও সম্পদের বরাদ্দকরণকে তারা অনেক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।

.অর্থের ব্যাপারে তারা তাদের বুদ্ধিগত সীমাবদ্ধতার কথা মাথায় রাখেনঃ পৃথিবীটা অনেক বড় এবং জটিল একটা স্থান”-সফল ব্যাক্তিরা এই কথাটি জানেন এবং খুব ভালভাবেই এটার অর্থ বোঝেন।তাই যখন টাকার ব্যাপারে কথা আসে,তখন সেখানে জানার বাকি থেকে যায় অনেক কিছুই। এজন্যই Warren Buffet এর মত সফল ব্যাক্তিরা তাদের সীমাবদ্ধতা গুলো জানেন এবং নিজেদের সামর্থ্যের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে থাকেন।

.তারা কখনই অন্যের উপর নিজের দায়িত্ব চাপিয়ে দেন নাঃ  সফল ব্যাক্তিরা প্রায়শ হয়ত এক্সপার্টের পরামর্শ গ্রহণ করে থাকেন, কিন্তু কখনই তারা তাদের দায়িত্বে অবহেলা করেন না। উদাহরণ স্বরূপ আর্থিক পরিকল্পনার ক্ষেত্রে একজনট্যাক্স একাউন্টেন্টএর গুরুত্ব সহজেই অনুমান করা যায়। আর এজন্যই সফল ব্যাক্তিরা সময় নিয়ে প্রশ্ন করেন এক্সপার্টের কাছে এবং তাদের উপদেশের মূল্যায়ণ করেন।

১০.তারা তাদের খরচকে কখনই তাদের জীবন ভিত্তিক চাহিদা এবং সামর্থ্যের বাইরে যেতে দেন নাঃ আর্থিক সাফল্য অর্জন আমাদের সবারই অভীষ্ট লক্ষ্য। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিই নিশ্চিত করতে পারে একটি উন্নত জীবন যাপন ব্যাবস্থার যার ভেতর অন্তর্ভুক্ত থাকবে উন্নত প্রযুক্তি ব্যাবস্থা,স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং একটি নির্মল অবসর। এজন্যই সফল ব্যাক্তিরা একটি সমৃদ্ধিশীল জীবনের জন্য আর্থিক সাফল্যের গুরুত্ব খুব ভাল ভাবেই উপলব্ধি করেন। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে আপনি যদি আপনার স্বাস্থ্যের ব্যাপারে কম খরচ করে অন্য ব্যাপারকে গুরুত্ব দেন, তবে আপনি একটি নিম্ন মানের পরিকল্পনাই অবলম্বন করছেন।

 

সূত্র – Winning by Jack Welch

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *