একটি বিশ্বকাপ বদলে দেয় অনেক ইতিহাস, সৃষ্টি হয় অনেক নতুন গল্পের। সেই সাথে বিশ্বকাপেই জন্ম নেয় অনেক নতুন তারকার। ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপেই জন্ম হয়েছিলো হামেশ রদ্রিগেজে। তেমনি রাশিয়া বিশ্বকাপও ভিন্ন নয়। রাশিয়া বিশ্বকাপও অখ্যাত অনেক ফুটবলারকে বানিয়েছে তারকা, এনে দিয়ে বিশ্বব্যাপী তারকা খ্যাতি। রাশিয়া বিশ্বকাপের আগে যারা ছিলেন মেসি-রোনালদোর ভিড়ে একেবারে অচেনা। তারাই এখন ছাপিয়ে গেছেন অন্য সব খেলোয়াড়কে। নজর কেড়েছেন সারা দুনিয়ার ফুটবল ভক্তদের। চলুন জেনে আসি রাশিয়া বিশ্বকাপে অখ্যাত থেকে বিখ্যাত হয়েছেন যে ৫ জন ফুটবলার।
আন্তে রেবিচ
আন্তে রেবিচের দল ক্রোয়েশিয়া প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে। সেই সাথে আন্তে রেবিচও নিজেকে খুজে পেয়েছেন। গত বিশ্বকাপের চেয়ে এবারের বিশ্বকাপে তিনি দারুণভাবে উপভোগ করছেন। ব্রাজিল বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার ব্যর্থতাকে ছাপিয়ে এবার তারা সেরা সাফল্য পাওয়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। ভাগ্য সহায় থাকলে রেবিচদের হাতে উঠতে পারে বিশ্বকাপের শিরোপা। তবে আন্তে রেবিচ বিশ্বকাপে আবার নিজেকে এভাবে মেলে ধরতে পারবেন সেটা হয়তো কখনো ভাবেননি। ব্রাজিল বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর তিনি দল থেকে বাদ পড়ে যান এবং নিজের ক্ষিপ্রতা হারিয়ে ফেলেন।
কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার কোচ জ্লাতকো ডেলিচ তাকে পুনরায় দলে টানেন। দূর্দান্ত গতির এই উইঙ্গার পুরো বিশ্বকাপে দলের হয়ে দারুণ খেলেছেন। গ্রুপ পর্বে উইলি কাবায়েরোর ভুলের পর দারুণ এক শটে আর্জেন্টিনার জালে বল জড়ান। দ্বিতীয় রাউন্ডে ডেনমার্কের বিপক্ষেও তিনি দারুণ খেলেন। বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে তিনি দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে থাকবেন। তার উপরও নির্ভর করছে ক্রোয়েশিয়ার শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা।
হুয়ান কুইনতেরো
কলম্বিয়ান মিডফিল্ডার হুয়ান কুইনতেরো রাশিয়া বিশ্বকাপে নিজেকে আবার প্রমাণ করেছেন। নিজের জাত চিনিয়েছেন কুইনতেরো। ব্রাজিল বিশ্বকাপে তার পারফর্মেন্স হামেস রদ্রিগেজের কারণে ঢাকা পড়ে যায়। এরপরের চার বছর তার কেটেছে এক ক্লাব থেকে আরেক ক্লাবে। পোর্তোর হয়ে তিনি এক ক্লাব থেকে অন্য ক্লাবে লোনে খেলেছেন এবং চেষ্টা করেছেন নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে।
রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে তিনি তার নিজে ফুটবল প্রতিভা এবং দক্ষতাকে প্রমাণ করেছেন। তাকে ঘিরে সকল সন্দেহ দূর করে দিয়েছেন রাশিয়া বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে। রাশিয়া বিশ্বকাপে কলম্বিয়ার ৫ গোলের মধ্যে ৩ গোলে তার অবদান রয়েছে। পোল্যান্ড এবং সেনেগালের বিপক্ষে রাদামেল ফ্যালকাও এবং ইয়েরি মিনার গোলের উৎসে ছিলেন তিনি। দুই গোলে অ্যাসিস্ট করা ছাড়াও জাপানের বিপক্ষে হুয়ান কুইনতেরো ফ্রি কিক থেকে একটি গোল করেন। যদিও জাপানের বিপক্ষে কলম্বিয়া ম্যাচটি হেরে যায় তবু কুইনতেরোর পারফর্মেন্স ছিলো নজরকাড়া। তিনি ফুটবলের বিশ্বমঞ্চে নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন এবং নিজেকে প্রমাণও করেছেন। রাশিয়া বিশ্বকাপ অন্য এক হুয়ান কুইনতেরোকে দেখেছে।
তাকাশি ইনুই
রাশিয়া বিশ্বকাপে জাপানের যে খেলোয়াড়টি সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে তিনি হচ্ছেন তাকাশি ইনুই। বেলজিয়ামের বিপক্ষে বক্সের বাইরে থেকে তার করা গোলটি সবার নজর কেড়েছে। তিনি শুধু কোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়ামের বিপক্ষে ভালো খেলেছেন সেটাই নয়, গ্রুপ পর্বের দুটি ম্যাচেও জাপানের হয়ে তিনি দারুণ পারফর্ম করেছেন।
স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল বেটিস তাকে বিশ্বকাপ শুরুর কয়েক সপ্তাহ আগে ফ্রি ট্রান্সফারে দলে ভেড়ায় এরপর বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার পরে তিনি তাঁর অসাধারণ পারফর্ম করে দেখাতে শুরু করেন। ৩০ বছর বয়সী এই জাপানিজ ফুটবলার তাকাশি ইনুইকে নিয়ে বেশ মাতামাতি চলছে। রাশিয়া বিশ্বকাপে দ্বিতীয় রাউন্ডে বেলজিয়ামের বিপক্ষে সেয়ানে-সেয়ান খেলার পেছনে তাকাশি ইনুইয়ের অন্যতম অবদান রয়েছে। রাশিয়া বিশ্বকাপ মাতানোর পর ক্লাব ফুটবল মাতাবেন সেটাই আশা করছেন অনেকে। এখন দেখা যাক বুন্দেসলিগার পরে লা লিগাতে তিনি কেমন করতে পারেন। ক্লাবে তিনি কেমন করবেন সেটা পরের বিষয় তবে দেশের হয়ে তিনি যা করেছেন সেটা নিয়ে জাপানিরা গর্ব করতেই পারেন।
ভিক্টর ক্ল্যাসন
ইব্রাহিমোভিচ না থাকায় অনেকেই ভেবেছিলেন সুইডেন হয়তো ভালো করতে পারবে না। কিন্তু সুইডিশ খেলোয়াড়রা দেখিয়ে দিয়েছে কিভাবে দলীয়ভাবে ভালো খেলে দলকে বিশ্বকাপে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। দলীয়ভাবে ভালো খেলে তারা রাশিয়া বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত উঠেছে যদিও তাদের নিয়ে এতদূর কেউ আশা করেনি। কিন্তু সুইডেনের এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে বেশ কয়েকজন তারকার একক পারফর্মেন্স। যাদের মধ্যে অন্যতম ভিক্টর ক্ল্যাসন।
সুইডেনের এই উইঙ্গার প্রতিপক্ষের রক্ষণে ছিলেন এক মূর্তিমান আতঙ্ক। পুরো বিশ্বকাপ জুড়ে তিনি প্রতিপক্ষকে বেশ ভুগিয়েছেন। ২৬ বছর বয়সী এই উইঙ্গার খেলেন রাশিয়ান ক্লাব ক্রাসনোদারে। ফলে রাশিয়ার পরিবেশ তার বেশ পরিচিত। অনেকটা ঘরের মাঠের মতো। সেই সুবিধা কাজে লাগিয়ে তিনি সুইডেনের হয়ে দারুণ খেলেছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে পেনাল্টি থেকে একটি গোল করেছেন এবং আরো দুইটি গোলে সহায়তা করেছেন। এবারের রাশিয়া বিশ্বকাপে ভিক্টর ক্ল্যাসন যেমন খেলেছেন তেমনি খেলেছে সুইডেন। তিনি তার গতি, দক্ষতা এবং ফুটবল প্রতিভা দিয়ে সবার মন জয় করে নিয়েছেন।
বেঞ্জামিন পাভাদ
রাশিয়া বিশ্বকাপের আগে বেঞ্জামিন পাভাদ ছিলেন এক অচেনা ফুটবলার। তাকে অনেকেই চিনতো না। এমনকি তাকে দলে নেয়ার কারণে বিশ্বের অনেক ফুটবল ভক্তরা হাসি-ঠাট্টা করেছিলেন এবং ফরাসি কোচ দিদিয়ের দেশমকে অনেক কথা শুনতে হয়েছে তাকে দলে নেয়ার কারণে। কিন্তু বেঞ্জামিন পাভাদ বিশ্বকাপে সবার মুখ বন্ধ করে দিয়েছেন তার নজরকাড়া পারফর্মেন্স দিয়ে।
২২ বছর বয়সী রাইট ফুলব্যাক কোচের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন দারুণভাবে। বলতে গেলে প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি তিনি দিয়েছেন। দ্বিতীয় রাউন্ডে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে তার গোলে সমতায় ফেরে ফ্রান্স। কোয়ার্টার ফাইনালে উরুগুয়ের বিপক্ষেও তিনি দারুণ খেলেছেন। রাশিয়া বিশ্বকাপে ফ্রান্স যে ফাইনালে উঠেছে এর পিছনে পাভাদের অনেক অবদান রয়েছে। তিনি একই সাথে যেমন রক্ষণ সামলাতে পারেন, তেমনি আবার গোল করতেও সিদ্ধহস্ত। তাকে নিয়ে ইতিমধ্যে ইউরোপিয়ান ফুটবলের দলবদলের বাজারে হইচই পড়ে গেছে।
Featured Image: espn.com