আমি আপনাদের সবাইকে একটা রেডিওর গল্প শোনাতে চাই। এই গল্পটা বলার পরেই আজ আমাকে বিশ্বকাপে আমাদের দেশের জার্সি গায়ে চড়াবার জন্যে ২৩ জনকে নির্বাচন করতে হবে। আমার জন্যে এটা অনেক বড় সম্মানের পাশাপাশি অনেক বড় দায়িত্বের কাজও বটে। কিন্তু কাজটা করার আগে এই ২৩ জনকে ঠিক করার কাজটা আমার কাছে কতোটা গুরুত্ব বহন করে সেটা আপনাদের জানাতে চাই। আর জানানোর জন্যে আমাকে শুরু করতে হবে একটা রেডিওর গল্প দিয়ে । কারণ আমার শৈশবে রেডিও আমার কাছে শুধু ছোট একটা কালো বাক্সই ছিলো না, আমার কাছে রেডিও ছিলো এক জাদুর খোরাক।
বারবার রেডিওর কথা বলে আমি খুব সম্ভবত আমার বয়স কতোটা বেড়ে গেছে সেই গল্পটাও বলে ফেলছি। তবে এটাই সত্য যে, আমি যখন বেড়ে উঠছিলাম আমার বাসায় টিভি ছিলো না।আমার বাবা-মাকে নিম্নবিত্ত কৃষকের কাতারেই ফেলতে হবে। আমার বয়স যখন ৩ বছর , আমরা রোকা থেকে শহরে চলে এলাম আগের চাইতে স্বচ্ছল একটা জীবনের জন্যে। আমার বাবা এক মদের কারখানায় চাকরি নিলেন আর মা নিলেন সেলাইয়ের চাকরি। আমার মনে আছে, আমি আমার মাকে হুট করে বলতাম, “মা! আমার একটা সোডা চাই!”
মা উত্তরে শুধু বলতেন, “ঠিক আছে, ধৈর্য ধরো, তুমি পারবে।
দুই-তিনদিন পরে স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পরে দেখতাম মা আমার জন্যে একটা সোডা এনে রেখেছে। তখনকার ব্রাজিলে সোডাকে আসলে বিলাসীতার কাতারেই ফেলে দেয়া যেতো। বড় হওয়ার পরে আস্তে আস্তে বুঝতে শুরু করলাম যে বাচ্চাদের শুধু নতুন একজোড়া মোজা দেবার জন্যে আমার মায়ের ভোর তিনটা পর্যন্ত সেলাই করে অতিরিক্ত টাকা জমাতে হতো। আর একটা সোডার টাকা যোগাতে আমার মায়ের ৪/৫ ঘন্টার মতো ওভারটাইমে কাজ করতে হতো । আমি সেই শৈশবের দিনগুলোতে মায়ের ত্যাগের গল্পটুকু আমি বুঝতাম না । কিন্তু আমার কাছে সোডা ছিলো জাদু, আর মা ছিলেন জাদুকর ।
আমার বাবা ছিলেন অন্য মানুষ। তিনি কিছু বললে সেটা চোখের দিকে তাকিয়েই বলতেন । খেঁজুড়ে আলাপ পছন্দ করার মত লোক আমার বাবা ছিলেন না। আমার এখনো মনে আছে ডিনারে বসলে “রুটিটা এদিকে দাও” এটুকু বোঝানোর জন্যে বাবার শুধু লাগত সামান্য চোখের ইশারা । কোন কথা নয় ! তার সামান্য ইশারাতেই আমরা বাসার সবাই বুঝে যেতাম বাবা কী চাইছেন । আমাদের মধ্যে যোগাযোগ আর কথা বলার একমাত্র জায়গা ছিলো ফুটবল। এই একটা জিনিস নিয়েই আমরা নিজেদের মধ্যে একটু কথা বলতাম ।আমার মনে আছে, ১৯৭০ এর বিশ্বকাপের সময় বিশ্বকাপের উন্মাদনায় সারাটা দেশ থমকে গিয়েছিলো । আমার বয়স তখন ৯ বছর। বাবার সাথে রেডিওর সামনে বসে আমরা রোজ ফুটবলের জাদুতে কান পাততাম। ব্যাপারটা এমন হয়ে গিয়েছিলো যে, একেকটা ম্যাচ আমাদের কাছে একেকটা রূপকথার গল্প হয়ে উঠছিলো। আমার মতে এই ধারাভাষ্যের ব্যাপারটা একটা শিল্পের মত। কখনো এটাকে পেইন্টিং মনে হয়, কখনো মনে হয় উপন্যাস। এই গল্পগুলো বলে টিভিতে ফুটবল দেখায় আনন্দ কম এটা আমি বলতে চাচ্ছি না । তবে আমার মনে হয় টিভিতে ফুটবল দেখার ব্যাপারটায় রহস্য আর কৌতুহলের জায়গাটা কম। কল্পনারাজ্যে ঘুরে আসার সুযোগটা আরো কম। যখন আমাদের রেডিওই সব ছিলো, প্রত্যেকটা শব্দই আমাদের কাছে ছিলো রহস্যেঘেরা গল্পের মত ।
১৯৭০ এর বিশ্বকাপের উরুগুয়ের বিপক্ষে সেমিফাইনালের ম্যাচটা আমার আলাদাভাবে মনে আছে । এটা আমার স্মৃতিপটে এক আবেগময় স্মৃতি, কারণ প্রথমার্ধে আমাদের মনে হচ্ছিলো ব্রাজিল হেরেই যাচ্ছে । পুরোটা সময়জুড়ে রেডিওর সামনে বসে বসে বারবার নিজের কল্পনার জগতে একটা জয়সূচক গোলের ছবি আঁকছিলাম । বাঁশি বাজার আগ দিয়ে ধারাভাষ্যকারের কন্ঠের উত্তেজনা আমাদের বুঝিয়ে দিচ্ছিলো, কিছু একটা হতে চলেছে । তখনই আমরা শুনলাম, “টোস্টাও…ক্লোদোয়ালদো… ক্লোদোয়ালদোওওওওওওওওওওওওও!!!!!!!!!!!!!!!”
আমার আনন্দের সাথে ছিলো সমানভাবে বিস্ময়ের ছটা। বিস্ময়টা আনন্দের জোয়ারে ভেসে গিয়েছিলো যদিও। তারপরেও আমার চোখেমুখে অবিশ্বাসের ছাপ ছিলো। কারণ ধারাভাষ্যকার শুনিয়েছিলেন, টোস্টাও এর পাসের পরে ক্লোদোয়ালদো এলেন এবং গোল করলেন । আমি নিজেকে জিজ্ঞাসা করলাম, “ক্লোদোয়ালদো কীভাবে গোল করলো? ক্লোদোয়ালদো তো ডিপ ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার…! টোস্টাও একজন স্ট্রাইকার ! সে কীভাবে পাস দিয়ে ক্লোদোয়ালদোকে নিজের জায়গা ছেড়ে গোল দিতে দিলো ? এটা কীভাবে সম্ভব ?”
পরদিন সকালে আমি পত্রিকায় খেলা নিয়ে প্রফেসর রুই কার্লোস অস্টারম্যানের কলামটা পড়ে নিলাম এবং সেই ম্যাজিকাল গোলটার নিজের মত করে একটা ছবি বানিয়ে ফেললাম। এবার আমার ছবিটা গতকালের ম্যাচের সময়ে ধারাভাষ্যের সময়ে বানানো ছবির চেয়ে অনেক বেশি জীবন্ত আর সুন্দর। সত্যি বলতে পরে আমি কখন সেই গোলটির ভিডিও দেখতে পেরেছিলাম তা আমার মনে নেই । আমি আর আমার মত আরো লাখো ব্রাজিলিয়ান যাদের ঘরে টিভি কেনার মত সামর্থ্য ছিলো না তাদের কাছে রেডিও আর পত্রিকায় শোনা গল্পটাই ভালোমত মনে গেঁথে গিয়েছিলো। এবং আমি জানি এটা ছিলো আমার জীবনে শোনা সবচেয়ে সেরা গল্প।
ব্যাপারটা কিছুটা মজার হলেও সত্য যে, আমি ছোটবেলায় গ্রেমিওর ট্যাকটিকস নিয়ে প্রফেসর অস্টারম্যানের কলামগুলো পড়তাম আর ভাবতাম, “বাহ দারুন তো! কোচ এরপর কী করবেন ?
এবং তারপর একটা সময় এলো যখন আমি আসলেই গ্রেমিওর ম্যানেজার হয়ে গেলাম । এই সময়টাতেও আমি প্রফেসর অস্টারম্যানের কলাম পড়ার অভ্যাসটা নিজের সাথে রেখে দিয়েছিলাম । সত্যি বলতে, ফুটবল ম্যানেজার হবার স্বপ্নটা আমার মধ্যে ছোটবেলাতে একদমই ছিলো না । ১৯৭০ এর বিশ্বকাপের স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে বেড়ে উঠা আর দশটা কিশোরের মত আমিও জাতীয় দলের গৌরবের হলুদ জার্সি গায়ে চড়াবার স্বপ্ন নিয়ে বড় হয়েছি। দুর্ভাগ্যবশত, সে গৌরব আমার কপালে লেখা ছিলো না । হাঁটুতে আমাকে ৭ বার সার্জারি করাতে হয় । চোটে-আঘাতে ২৭ বছর বয়সেই আমার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায় এবং ২৭ বছর বয়সের আমাকে আমি তরুণই বলবো । ফুটবলের জন্যে বেঁচে ছিলাম সারা জীবন। ফুটবলের সাথে থাকার জন্যে আমাকে তাই বেছে নিতে হলো কোচিং।
এখন আমার নিজেরই বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে কোচিং এর এই চাকরি আমি ৩০ বছর ধরে করছি। খেলোয়াড়দের মত কোচদের গল্পগুলোও অনিশ্চয়তায় ভরা, আগে থেকে অনুমান করা যায় না। আট বছর আগের কথা। দুবাইতে আমার এপার্টমেন্টে বসে ছিলাম। তখন সেখানে কোচিং করাচ্ছিলাম আল ওয়াহদা এফসিকে। হঠাৎ করে একটা ফোন এলো আমার ফোনে এবং আমাকে বলতে হচ্ছে সেই ফোনটাই আমার জীবন বদলে দিয়েছিলো। ব্রাজিল থেকে আন্দ্রেস সানচেজ ফোন করে আমাকে কোরিন্থিয়াসের অফার দিলেন । আমি তাকে বললাম, “আমি নিশ্চিত না আমাকে দিয়ে হবে কি না ….আমার স্ত্রী আমাদের দুবাইয়ের জীবনটাকে পছন্দ করত এবং আমার মেয়েকে ওখানকার স্কুলে দেবার প্রাথমিক প্রক্রিয়া প্রায় করা হয়ে গিয়েছিলো। চাপ ছিলো না খুব একটা। সত্যি বলতে আমি দুবাইয়ের জীবনটাকে একবাক্যে পারফেক্ট বলে দেবো।
তাই কিছুটা দ্বিধা নিয়েই আমি আমার স্ত্রীকে বললাম, “আচ্ছা…”
ওর জবাবটা ছিলো, “শোনো, আমাকে বোকা বানানোর চেষ্টা করো না … আমি জানি তুমি চলে যাবে…”ও জানত আমার মন কোথায় পড়ে আছে । কিছুদিন পরেই ব্রাজিল এর পথে উঠে পড়তে হলো সাও পাওলোর প্লেনে এবং আমি নিজেকে নিজেই বলছিলাম, “বাহ! তুমি রোনালদো এবং রবার্তো কার্লোসকে কোচিং করাতে যাচ্ছো ! দুইজন লিজেন্ড! অবিশ্বাস্য সম্মানের ব্যাপার।”ফেরার পরে কোরিন্থিয়াসের কোচ হিসাবে প্রথম কয়েকে মাসের অভিজ্ঞতা ছিলো দারুন। তারপর কলম্বিয়াতে তলিমা এফসির বিরুদ্ধে ছিলো কোপা লিবার্তদরেসের সহজ এক কোয়ালিফাইং ম্যাচ। এবং ম্যাচের সময় দেখা গেলো সহজ ম্যাচটা আসলে সহজ নয়। ম্যাচটা আমরা হেরে বসলাম এবং লিবার্তোদরেসে উঠা হলো না। কোরিন্থিয়াসের মত ক্লাবের জন্যে লিবার্তোদরেসে কোয়ালিফাই না করতে পারাটা অগ্রহণযোগ্যের পর্যায়েই পড়ে। আমার এখনো মনে আছে শেষ বাঁশি বাজার পরে আমি জায়ান্ট স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে নিজেকে নিজেই বলছিলাম, “এটাই তো ফুটবল, এখানে আমার দিন শেষ…”আমরা সাও পাওলোতে যখন ফিরলাম, কিছু লোককে দেখলাম আমাদের ট্রেইনিং সেন্টার ঘিরে ফেলেছে এবং আমাদের সবার গাড়ি ইটের টুকরো মেরে ভেঙেচুরে দিয়েছে। কিছু লোক তো খেলোয়াড়দের রীতিমতো ভয় দেখাচ্ছিলো। এটা খুব ভীতিজাগানিয়া একটা সময় ছিলো এবং আমি জানতাম ওরা আসলে ফ্যান না। ওরা ছিলো একদল ভবঘুরে চোর যারা আসলে ফুটবল আর মানুষের সীমাবদ্ধতার ব্যাপারগুলো বুঝতো না। ট্রেইনিং সেন্টারে ঢোকার পরের মুহূর্তাটা আমি আমার জীবনে কখনোই ভুলবো না। আমাদের একজন গোলকিপার রাফায়েল দাঁড়িয়ে সবার সামনে বলে উঠলো, “আমরা চোর নই, আমরা মানুষ, আমরা খেলাটার জন্যে কঠোর পরিশ্রম করি এবং আমাদেরও পরিবার আছে। তারা আমাদের সাথে এমন করতে পারে না…
পুরো দলের সামনে রাফায়েল কাঁদতে শুরু করলো। এমনিতে মানুষ হিসেবে রাফায়েল খুবই নরম প্রকৃতির ছিলো এবং ওর আবেগের পুরোটাই সত্য ছিলো। আমি উঠে দাঁড়ালাম এবং রাফায়েলকে বললাম, “চিন্তা করো না রাফায়েল, আমরা এই অবস্থা কাটিয়ে উঠবো…”
সত্যি বলতে রাফায়েলকে সান্ত্বনা দিলেও আমি নিজেই নিশ্চিত ছিলাম না। পিছের ভাঙা ওয়াইন্ডশিল্ড নিয়ে গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম। আর নিজে নিজেই ভাবছিলাম, “আগামীকাল সকালে আমার চাকরিটা থাকবে তো?”
অনেক চাপের মধ্যে কোরিন্থিয়াস আমার পাশে দাঁড়িয়ে যায় মিরাকলের মত। চাকরিটা বেঁচে যায় আমার। ঠিক তার এক বছর পরের ঘটনাটা আপনাদের বলি। এই ভীতিজাগানিয়া সময়টার ঠিক এক বছর পরে সাও পাওলোতে আমার বাসার কিচেনে বসে আমি আর আমার স্ত্রী ওয়াইনে চুমুক দিচ্ছিলাম । সময় তখন ভোর চারটা। বাসায় ফিরেছি মাত্রই। এবার আর গাড়ির ভাঙা কাঁচ নিয়ে নয়। পরের আসরের কোপা লিবার্তোদরেসের ট্রফি জিতে
কেন জানি না, আমি আমার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করে বসলাম, “আমরা কি আসলেই এটার যোগ্য দাবিদার?ও আমাকে জবাবে গত একটা বছরে তোলিমা বিপর্যয়ের পর থেকে কীসের মধ্য দিয়ে আমাকে এবং আমার পরিবারকে যেতে হয়েছে সব মনে করিয়ে দিলো। শুধু ট্রেনিং সেন্টারের এটাকই নয়, আরও অনেক কিছু যে গল্প হয়তো এখন বলবো না। এবং তখনই বাইরে থেকে মানুষের শব্দ শুনে জানালায় গেলাম এবং দেখলাম কিছু কোরিন্থিয়াস সমর্থককে যারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আমার নামে স্লোগান দিচ্ছিলো। আমার কাছে এই সবকিছু অবাস্তব লাগছিলো। নিজে নিজেই ভাবছিলাম, একটা বছরে কত কিছু না বদলে যায় !
সেই রাতে লিবার্তদরেসের ভারি ট্রফিটা আমি নিজের হাতে ধরেছিলাম এবং ট্রফি ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ি। অনেকেই হয়তো ভাববে, ফুটবল কীভাবে মানুষের চোখে পানি আনে… কিন্তু আমি আপনাকে বলতে পারি ব্যাপারটা শুধু খেলার মধ্যে আটকে থাকে না । এই ব্যাপারগুলোর সাথে জড়িয়ে যায় অনেক কিছু, মাঝে মাঝে কোচের পরিবারটাও। তবে যারা খেলাটাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচে নি তাদের এ আবেগ বলে বোঝানো যাবে না। উদাহরণ হিসাবে আমি আপনাকে ২০১৪ বিশ্বকাপে ব্রাজিল যখন জার্মানির বিপক্ষে খেলছিলো সেই ম্যাচটার কথা বলতে পারি। আমি আমার স্ত্রীকে সাথে নিয়ে আমার বাসায় বসে ম্যাচটি দেখছিলাম । জার্মানি যখন ৪-০ করে ফেললো, আমার স্ত্রী কান্নায় ভেঙে পড়লো। আমি ওকে জিজ্ঞাসা করলাম ও ঠিক আছে কি না এবং ও আমাকে জবাবে বললো, ওর কাঁদা ছাড়া উপায় ছিলো না কারণ সে নিজেকে স্কোলারির স্ত্রীর জায়গায় চিন্তা করে ম্যাচটি দেখছিলো। এভাবেই ম্যাচগুলো খেলোয়াড় আর কোচ-স্টাফদের পরিবারের কাছে খেলার চেয়ে অনেক আলাদা কিছু হয়ে উঠে ।৭-১ গোলের পরাজয়ের পরে আমার বিশ্বাস ছিলো আমিই হবো ব্রাজিল এর পরবর্তী কোচ। আমি ভেবেছিলাম আমার সময় এসে গেছে। যখন চাকরিটা আমাকে দেয়া হলো না, সত্যি বলতে আমি একই সাথে হতাশাগ্রস্থ, বিরক্ত এবং দুঃখিত হয়েছিলাম। এই সময়টাতে আমার মায়ের অনুপ্রেরণা আমাকে সাহস যুগিয়েছে। আমাদের পরিবার যখনই অভাবে পড়ত, তখনই আমার মা তার পরিশ্রম বাড়িয়ে দিতেন। তার হাত ভঙ্গুর হওয়ার আগ পর্যন্ত সে সেলাই করে যেত যাতে আমি কখনো সোডা চেয়ে বসলেই সেটা ম্যাজিকের মত আমার সামনে হাজির হয়। তার এই শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবার মানসিকতা ছিলো আমার কোচিং জীবনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।
সিদ্ধান্তটা জানার পরের একটা সপ্তাহজুড়ে আমি কেঁদেছিলাম । তারপরে আবার যুদ্ধে নেমে গেলাম। আমি জানতাম ট্যাকটিকসটা আরো ভালোভাবে জানতে আর নিজের ফিলোসোফিগুলোকে ঝালাই করার জন্যে আমাকে ব্রাজিলের বাইরে যেতেই হবে। তাই আমি নিজের মধ্য থেকে কষ্টের ভূত তাড়িয়ে প্লেইনে উঠে পড়লাম। এই বিশ্রামের সময়টায় আমাকে শেখানোর জন্যে দুইজন লোককে বিশেষভাবে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাইঃ মিস্টার আনচেলত্তি এবং মিস্টার বিয়াঞ্চি।
আমি মাদ্রিদে যাবার পরে আনচেলত্তি আমাকে খুবই বন্ধুসুলভ মনোভাব নিয়ে ট্যাকটিকস শেখান । আমি সেখানে ছিলাম এক সপ্তাহের মত এবং এই সময়টায় সে আমাকে তার ৪-৪-৩ ফর্মেশনে এটাক করার এবং একই সাথে ৪-৪-২ ফর্মেশনে ডিফেন্স করার দর্শনটা বুঝিয়ে দেন। সাথে সাথে তিনি আমার সাথে তার প্লেয়ারদের সম্পর্কে জোগাড় করা তথ্য শেয়ার করেন, তার ট্রেইনিং ফিলোসোফিটা বুঝিয়ে দেন এবং তার সাথে আরো বোঝান ম্যাচের আগে তার স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিংগুলোও। আমার মনে হচ্ছিলো আনচেলত্তির কাছে শেখাটা আমার কাছে চকলেটের দোকানে বাঁধাহীনভাবে চকলেট কুড়ানোর মতই ছিলো। আগের তিনটা বিশ্বকাপের জন্যেই ট্যাকটিক্সের খুঁটিনাটি লিখে রাখার জন্যে আমার কাছে ছিলো সাজানো নোটবুক। আমার স্ত্রীর কাছে এই কাজটা পাগলামো মনে হলেও এটাই আমার প্যাশন । অনেক লোক ইতিহাসের বই পড়তে পছন্দ করে, আবার অনেকে ক্রসওয়ার্ড পাজল সলভ করতে ভালোবাসেন । একই জায়গা থেকে আমার প্যাশনের জায়গা হলো একটা ম্যাচ দেখলে সেটার ফরমেশন আর ট্যাকটিক্স আমার নোটখাতায় লিখে রাখা । সেদিক থেকে দেখলে, আনচেলত্তির কাছ থেকে রামোস-রোনালদো এবং ইস্কোর মত বড় তারকাদের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা জানতে গিয়ে আমি শিখতে পেরেছি নতুন অনেক কিছু।
মিস্টার বিয়াঞ্চির সাথে যখন বোকা জুনিয়র্সে দেখা হলো, এটা ছিলো একদম আলাদা রকমের একটা আলোচনা। কারণ আমরা দুইজন আগের কয়েকবছরে ফুটবল মাঠে বেশ কয়েকবার একে অন্যের মুখোমুখি হয়েছি। লাঞ্চের সময় বিয়াঞ্চি আমাকে একটা কথা বলেছিলেন যেটা আমি কখনো ভুলবো না। তিনি বলেছিলেন, “তোমার কোরিন্থিয়াস দলটা মানসিকভাবে খুব শক্তিশালী। কারণ আমরা আর্জেন্টাইনরা জানি যে, ব্রাজিলিয়ানদের উত্তেজিত করলে তারা খেই হারিয়ে ফেলে। কিন্তু তোমার কোরিন্থিয়াসের দলটা মোটেও অমন নয়। অনেক বেশি ফোকাসড… ”
আমি কথাটা মাথায় রাখলাম। কোরিন্থিয়াসে যখন কাজে ফিরলাম, আমার মূল টার্গেট ছিলো নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করা এবং নতুন সিচুয়েশনের সাথে আরো ভালোভাবে মানিয়ে নিতে শেখা। কোপা লিবার্তোদরেস জেতার পরে যেই জায়গাটায় ছিলাম, সেখানে আটকে থাকার ইচ্ছে আমার কখনোই ছিলো না। তখনকার কোরিন্থিয়াস দলটা খুব ব্যালেন্সড এবং ধারাবাহিক ছিলো । দলটার সৃজনশীলতার ভিত্তি ছিলো বক্সের ভেতর কাট করে পলিনহোর ঢুকে যাওয়ার শক্তি। পলিনহো স্পেশাল এবং অসাধারণ এক খেলোয়াড়। ব্রাজিল দলেও ওকে নিয়ে একটা কৌতুক খুব প্রচলিত। আমরা ক্রস প্র্যাক্টিস করার সময় ফরোয়ার্ডেরা হেসে বলতে থাকে, “কোচ আমরা বল পাবার জন্যে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। কিন্তু আমরা জানি, যাই হোক না কেন, পলিনহো হুট করে হাজির হয়ে গোল করে দিবে…”
কোরিন্থিয়াসে ফেরার পরে আমি আরো গতি নিয়ে আক্রমণ করার উপরে কাজ করে গেলাম। ২০১৫ সালে যখন লিগ জিতলাম, সেটা আমার জন্যে খুব গর্বের মুহূর্ত ছিলো। কারণ আমাদের জয়টা আসে খুব সুন্দর ফুটবল খেলে।আমার দলের জাডসন, রেনাটো অগাস্টো, এলিয়াস, রালফ এবং ব্রুনো হেনরিক সবাই নিজেদের সেরাটা দিচ্ছিলো এবং একই সাথে আনন্দ নিয়ে খেলাটা খেলছিলো। ঐ মৌসুমে আমি বুঝলাম, পৃথিবীতে সবকিছু ঘটারই একটা কারণ থাকে। ২০১৪ সালে ডিউটি না পাওয়া আমার কোচিং ক্যারিয়ারে ছিলো এক মন ভেঙে দেবার মত ঘটনা। সত্যি বলতে, এই ঘটনাটাই আমাকে আমার মূলে ফিরিয়ে নিয়েছিলো আর ফুটবলটাকে আরো শেখার জন্যে প্রতিনিয়ত তাগিদ দিয়ে যাচ্ছিলো।২০১৬ সালের জুনে ফেডারেশন আমাকে তাদের সাথে দেখা করার জন্যে ফোন দেয় । তারা যখন জাতীয় দলের চাকরিটা অফার করে, আমি কিছু সময়ের জন্যে আবেগে ভেসে যাই । তারপরে কোয়ালিফাইং টেবিলে আমাদের পজিশনটা দেখে বাস্তবতায় ফিরে আসি। এবং আমি জানতাম যে, পরের ম্যাচটা ইকুয়েডরের সাথে ইকুয়েডরের মাটিতে যেটায় হারলে আমাদের বিশ্বকাপ স্বপ্ন অনেক ফিকে হয়ে যাবে। সত্যি বলতে টাইম মেশিনে চড়ে পিছনে গিয়ে আমি কোপা লিবার্তোদরেসের কোয়ালিফাইং থেকে বাদ পরার দিনটায় চলে যেতে বাধ্য হই। আমি ভাবলাম, সেবার লিবার্তোদরেস, এবার যদি বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ে যাই, তাও আবার ব্রাজিলকে নিয়ে ? এই বাদ পরে যাওয়াটাই যদি দিনের পর দিন আমার ভাগ্যে লেখা থাকে ?
পরদিন সকালে উঠে নিজেকে নিজেই বললাম, “চাকরিটা আমি নেবো না। এটা ঠিক সময় নয়…”
কিন্তু আবার কিছুক্ষণ ভেবে আমার বাবা-মায়ের জীবন সংগ্রামের কথা ভাবতে বাধ্য হলাম। রাত ৩টা বাজে সেলাই মেশিনের সামনে আমি আমার ক্লান্ত মায়ের মুখের কথা একবার ভেবে নিলাম। বাবার পাশে বসে কীভাবে দিনের পর দিন রেডিওতে খেলার কমেন্ট্রি শুনতাম সেটাও ভেবে নিলাম একবার। এবার নিজেকে বলে উঠলাম, “আচ্ছা, এটার জন্যে আমি লড়েছি, এই দিনটার জন্যে আমার বাবা-মাও লড়ে গেছেন। এখন আমার হাতে এটা একটা স্বপ্নপূরণের সুযোগ…”
অনেক সম্মান আর অনেক বড় দায়িত্বের চাকরিটা শেষমেষ নিয়েই ফেললাম। চেয়ারে বসার প্রথম দিনেই আমি আমার বাবার কাছ থেকে একটা শিক্ষা নিলাম। আমি জানি ট্যাকটিকস আর স্ট্রাটেজি নিয়ে কথা বলাটা জরুরি। তবে আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রত্যেকটা খেলোয়াড়কে আলাদা করে ফোন দিয়ে তাদের সাথে কথা বলা। আমি প্রথমে অবশ্য সবার কাছে সশরীরে যেয়ে দেখা করে চোখে চোখ রেখে কথা বলতে চেয়েছিলাম যেমনটা আমার বাবা হলে করতেন । কিন্তু খেলোয়াড়েরা সারা পৃথিবীর সব জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় কাজটা প্রায় অসম্ভব ছিলো।মার্সেলোকে ফোন দেবার পরে ওর বলা কথাগুলো আমি কখনোই ভুলবো না । ও খুবই স্পেশ্যাল একজন প্রতিভা এবং আমি জানতাম না কেন সে জাতীয় দলে তখন খেলছিলো না । আমি ওকে জিজ্ঞাসা করলাম, “কী হয়েছে ? তুমি কি ইনজুরড?”
মার্সেলো বললো, “শুনুন প্রফেসর, ১৭ বছর বয়স থেকে আমি জাতীয় দলে। প্রথমে বয়সভিত্তিক দলে এখন সিনিয়র টিমে। কিন্তু এখনো প্রতিবার জাতীয় দলে আমাকে ডাকা হলে আমার পরিবার অনেক খুশি হয় । ব্রাজিল এর হয়ে খেলা একটা সম্মান। যাই হোক না কেন, আপনি আমাকে ডাকলে আমি প্লেইনে চড়বোই… ”
দানি আলভেজ আর নেইমারকে ফোন করলাম। এই দুইজনকে যারা আসলেই চেনে, তারা জানে এই দুইজন আসলে কত বড় হৃদয়ের মানুষ এবং ব্রাজিল এর প্রতিনিধিত্ব করা এই দুইজনের কাছেই কত বিশাল ব্যাপার। আমার কাছে এই ফোনকলগুলো ছিলো চেঞ্জরুমে একটা এনভায়রনমেন্ট তৈরি করার প্রথম ধাপ যেই এনভায়রনমেন্টে সবাই সবার জন্যে লড়াই করবে ।আমরা যখন ইকুয়েডর ম্যাচের জন্যে জড়ো হলাম, আমি প্রথম যে কাজটা করলাম সেটা হলো খেলোয়াড়দের একটা বাস্কেটবল ম্যাচের একটা ভিডিও দেখালাম । এটা ক্লিভল্যান্ড বনাম গোল্ডেন স্টেইটের একটা এনবিএ ফাইনালের ক্লিপ ছিলো। এখানকার একটা দৃশ্য আমার মনে গেঁথে ছিলো। খেলার এক পর্যায়ে লেবরন জেমস আরভিংকে বল পাস দিলেও আরভিং একটা বাজে শট নিয়ে মিস করে ফেলে। লেবরন জেমস কী করলেন ? তার কীইবা করা উচিত ? সে একজন সুপারস্টার । আপনি হয়তো ভাববেন জেমস হাততালি দিয়ে আরভিংকে জিজ্ঞাসা করবেন, “তুমি কেনো শটটা নিলে ?”
উলটো লেবরন জেমস ছিলেন পুরোপুরি ফোকাসড। রিবাউন্ডে বল পাবার জন্যে কঠোর লড়াই করে বলটা পেয়ে এবারও আরভিং এর উপর বিশ্বাস রাখলেন এবং আরভিংকে আবারও বলটা দিলেন । এবার আরভিং স্কোর করলেন । আমি খেলোয়াড়দের বললাম, “সাফল্যের জন্যে আমাদেরও একই রকম মানসিকতা জরুরি। সবাই সবার জন্যে লড়বে। এমনকি সুপারস্টারেরাও…”
ইকুয়েডরের বিপক্ষে ম্যাচটা আমাদের একতাবদ্ধ করে দিলো। প্রথমার্ধ ছিলো দারুণ কঠিন । আমরা গোল করতে পারছিলাম না এবং এটা আমাকে সেই ১৯৭০ এর সেমিফাইনালের ম্যাচে নিয়ে গেলো যেখানে আমি রেডিওর সামনে বসে একটা গোলের দৃশ্য নিজের মনে বারবার নিজেই তৈরি করছিলাম। নেইমার পেনাল্টিতে গোল করার পরে বাকি কাজটা সহজ হয়ে গেলো এবং আমরা ৩-০ গোলে জিতলাম। আমার মনে হয় না, তারপর থেকে আমাকে আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়েছে। ম্যাচের পরে আমরা চেঞ্জিং রুমে আসার পর খেলোয়াড়েরা একসাথে হয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে শুরু করল। আমি দেখলাম নিরাপত্তাকর্মীরা রুম ছেড়ে চলে যাচ্ছিলো। আমি তাদের ডেকে বললাম, “এ জয় সবার। চলো সবাই প্রার্থনা করি। ” সিকুরিটি গার্ডসহ সবাই একসাথে এলো এবং প্রার্থনা করতে শুরু করলো । এটা আমার জন্যে বিশাল আবেগের মুহূর্ত ছিলো।আমরা মূল টুর্নামেন্ট থেকে ১ মাস দূরে দাঁড়িয়ে। এখন আমাকে কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। আমি জানি, যারা যোগ্য তাদের সবাইকে আমি আমার সেরা তেইশে রাখতে পারবো না । যেমন লেফটব্যাকের জন্যে আমার হাতে তিনজন ওয়ার্ল্ডক্লাস লেফটব্যাক থাকলেও আমি বিমানে দুইজনকে উঠাতে পারবো। যাকে নিলে আমার মতে টুর্নামেন্টটা জয়ের সবচেয়ে বেশি সুযোগ থাকবে তাকেই আমাকে নিতে হবে । ব্যাপারটা আমি আরো খোলাসা করে বলতে পারি ২০১২ সালের ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালের একটা উদাহরণ দিয়ে। চেলসির বিপক্ষে ম্যাচটা খেলার জন্যে জর্জ হেনরিক কখনোই সবচেয়ে যোগ্য খেলোয়াড় ছিলো না। ঐ সময়ে ডগলাস আর রোমারিনহো আমার দলে আরো ভালো খেলছিলো। কিন্তু আমার দলের ঐ ম্যাচটা জেতার জন্যে ওর মতো কাউকেই দরকার ছিলো। তাই আমাকে কঠিন সিদ্ধান্তটা নিতেই হলো । আমি জানি আমার সিদ্ধান্ত অনেকের স্বপ্নকে গড়ে দিবে, কারো কারো স্বপ্নকে ভেঙে দিবে। কিন্তু আমি আশা করবো এই সিদ্ধান্ত সুযোগ না পাওয়াদের সাথে যারা সুযোগ পাচ্ছে তাদের মধ্যে বোঝাপড়ার সম্পর্কটা আগের মতই বজায় রাখবে।
আমি জানি বাবা থাকলে আজ কী বলতেন। তিনি বলতেন, “তোমার অবশ্যই তরুণদের সুযোগ দেওয়া উচিত…”
কিছু কিছু কারণে বাবা সবসময়ই ভাবতেন একটু বয়সী খেলোয়াড়েরা স্লো হয়ে থাকে। কোন খেলোয়াড়ের বয়স ২৭ এর বেশি হলে বাবা সেই খেলোয়াড়কে একদমই বিশ্বাস করতেন না। তিনি বলতেন, “বয়স্ক খেলোয়াড়েরা হলো কচ্ছপের মত আর তরুণেরা হলো বিদ্যুতের মত। তরুণদের খেলাও…”
কিন্তু আমি জানি বাবা ৩৫ বছর বয়সী দানি আলভেজকে ট্রেনিং করতে দেখলে এবং ড্রেসিং রুমে নাচতে দেখলে তার মতামত বদলে ফেলতেন । আমার বাবা মারা যাবার পরে আমার মা আমাকে বাবার বলে যাওয়া কিছু কথা বলেছিলেন। এই কথাগুলো বাবা বেঁচে থাকার সময় আমাকে বলেন নি। কারণ এটা তার স্টাইল ছিলো না। একদিন বাবা মা-কে বলেছিলেন, “আদে (তিতের পারিবারিক নাম) একদিন গ্রেটদের একজন হবে…”
এটা আমার ক্যারিয়ারে জেতা সব ট্রফির চেয়ে বড় ছিলো। আজ যদি বাবা এই বিশ্বকাপটা দেখে যেতে পারতেন! শুধু সৃষ্টিকর্তাই জানেন রাশিয়ায় কী হবে। আমি শুধু আশা করবো গোটা ব্রাজিল এক হয়ে আমাদের পাশে থাকবে। আমি জানি এই জেনারেশনের অনেক কিছু বদলে গেছে। কিন্তু আমার এখনো এটা ভাবতেই ভালো লাগবে, ১৯৭০-এ আমি যেভাবে নিজের মনের কোণে জয়সূচক গোলটার ছবি নিজের মত করে আঁকছিলাম, ঠিক তেমনিভাবে ২০১৮-তেও লাখো ব্রাজিলিয়ান শিশু টিভি কিংবা রেডিওর সামনে বসে নিজের মনের মত করে জয়সূচক গোলটার ছবি আঁকতে থাকবে। এই আঁকিবুঁকি চলতে থাকবে জয় আসার আগ পর্যন্ত বারবার । জানি না এবার কাজ করবে কি না, আমার জন্যে তো ১৯৭০-এ জাদুর মত কাজ করেছিলো ।
(“পুরো নাম আদেনর লিওনার্দো বাচ্চি, ব্রাজিল এ বেশি পরিচিত তিতে নামে। ২০১৬ সালে যখন ব্রাজিল এর দায়িত্ব দুঙ্গার হাত থেকে নেন ব্রাজিল তখন বিশ্বকাপ থেকে বাদ যাবার শঙ্কায়। তারপর ব্রাজিল কে শুধু কোয়ালিফায়ার টেবিলের সবচেয়ে উঁচু জায়গায় রেখে বিশ্বকাপে তোলেন নি, ফিরিয়ে দিয়েছেন হারানো বিশ্বাস। নেইমারের মত সুপারস্টার থাকা দলেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন দলের সবচেয়ে বড় অভিভাবক হিসাবে। বিশ্বকাপের ২৩ সদস্যের দল ঘোষণার আগেই The Players Tribune নামের এক ব্লগে প্রকাশিত হয় তিতের লেখা “To Brazil” নামের এক লেখা যাতে উঠে আসে তার শৈশব- কোচিংয়ে আসার গল্প থেকে আরো অনেক কিছু। সেই লেখাটাই বাঙলায় সহজপাঠ্য করে অনুবাদ করার চেষ্টা করা হলো।
Written By
Mohammad Ali