বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সবচেয়ে গ্র্যাটেস্ট সৃষ্টি হলো এখন পর্যন্ত একজনই , সাকিব আল হাসান । আসলে সাকিব কে নিয়ে বাড়তি বলার নেই, ক্রিকেট ইতিহাসে টেস্ট, ওয়ানডে, টি টুয়েন্টি সব ধরনের ক্রিকেটে বিশ্বসেরা হওয়ার গৌরব কেবল একজনেরই, আর তিনি হলেন বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান।আজকে এই ক্রিকেট রাজপুত্রের জন্মদিন .
সেই সাকিব আল হাসানের বাক্তিগত কিছু বিষয় সম্পর্কে আজ আমরা জানব।
৬ আগস্ট ২০০৬, বাংলাদেশ বনাম জিম্বাবুয়ে ৫ম ওয়ানডে ম্যাচ । অভিষেক হলো এক তরুণ খেলোয়াড়ের, নাম সাকিব আল হাসান । বল হাতে ১০ ওভারে ৩৯ রানের বিনিময়ে এলটন চিগাম্বুরার উইকেট এবং ব্যাট হাতে ৪৯ বলে অপরাজিত ৩০ রানের একটি ইনিংস । এভাবেই শুরু হয়েছিল সাকিবের আন্তির্জাতিক ক্যারিয়ার । এরপর দিন যত গড়িয়েছে সাকিব নিজেকে নিজে ছাড়িয়ে গেছেন । মাগুরার ফয়সাল হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের সাকিব । তিনিই আজ বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচাইতে বড় বিজ্ঞাপন । যে কোন ফরম্যাটের ক্রিকেটেই বাংলাদেশ দলের অন্যতম নির্ভরতার নাম হচ্ছে সাকিব আল হাসান । তার একটি দায়িত্বশীল ইনিংস কিংবা একটি ঘূর্ণিজালের স্পেল দলের ভাগ্য গড়ে দিতে পারে ।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট :
আন্তর্জাতিক T২০ ক্রিকেট লীগে সারা ওয়ার্ল্ডে এ খুবই জনপ্রিয় একটি মুখ , সাকিব আল হাসান। কলকাতা নাইট রাইডার্সে সাকিবের উদয় হয় ২০১১ সালে , শুধু কি তাই ফার্স্ট কোনো বাংলাদেশী ক্রিকেটার IPL এ চুক্তিতে যায়। ব্যাটে এবং বোলিংয়ে সমান তালে ভূমিকা রাখার জন্য KKR এ একজন অনবদ্য প্লেয়ার হিসাবে প্রচলিত হয় সাকিব। শুধু কি আইপিএল ! বিগ ব্যাস , সাসেক্স সহ সারা বিশ্বের অনেকগুলো লীগে তার পদচারণা।
ডোমেস্টিক ক্রিকেট:
সাকিব আল হাসান BPL এর ফার্স্ট সংস্করণ এ সবচেয়ে দামী প্লেয়ার ছিল। তখন সে খুলনা রয়েল বেঙ্গল কে সামনে থেকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। সেকেন্ড সংস্করণ এ ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস এর ক্যাপ্টেন ছিল। ঐ টুনার্মেন্টে সে তার দলের জন্য অনেক বড় ভূমিকা প্লান করেছিল। তারপর রংপুর রাইডার্স , আবার ঢাকা এভাবেই ডোমেস্টিক প্রিমিয়ার লীগে আইকন প্লেয়ার হিসাবে শক্তিশালী ভূমিকা রেখে চলেছেন।
ক্যারিয়ার:
তার পারফরম্যান্সের জন্য ২০১২ সালে, শ্রীলংকা প্রিমিয়ার লীগে নির্বাচিত হয়ে উথুরা রুদ্রাস এর হয়ে খেলেন। আবার, ২০১৩ সালে ক্যারিবিয়ান লীগে বার্বাডোস ট্রিডেন্ট এ খেলেন। ২০১৪ তে ফার্স্ট কোনো বাংলাদেশী খেলোয়াড় এর বিগ ব্যাস এর আঙিনায় পদচরণ। অপরদিকে, পাকিস্তান প্রিমিয়ার লীগ যদিও অনিয়মিত !
২০১৬ সালে প্ল্যাটিনাম প্লেয়ার হিসাবে করাচি কিংস জায়গা করে নেন। সে PSL এ সেকেন্ড রাউন্ডে ৫টি ফ্রাঞ্চিসের প্রতিযোগিতায় প্ল্যাটিনাম ক্যাটেগরি থেকে আবার করাচীতেই যান। সাকিবই প্রথম বাংলাদেশী কোনো প্লেয়ার যে ইংলিশ কাউন্টি খেলেছে । শুধু খেলার মতোই খেলেননি , নিজের জাতও চিনিয়েছেন।
রেকর্ড :
বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের মধ্যে সাকিব আল হাসানের আছে গ্লোরিয়াস রেকর্ড। ২০০৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরুর আগে সবসময় দলের সবগুলো ফরম্যাটে টীম স্কোয়াডে থাকতো।
সেই একমাত্র খেলোয়াড় যে সিক্সথ প্লেয়ার হিসাবে জয়সুরিয়া, ক্যালিস ,ক্রিস,আফ্রিদি, কপিল এর পরে ৮০০০ রান করেন ৪০০ উইকেট নেন (২০১৬) . এখন তার রান ১০৫৭২ এবং উইকেট ৫৪১ (২০১৭ আপডেট) . শহীদ আফ্রিদির পরে একমাত্র খেলোয়াড় তিনিই শাকিব যে ১০০০ রান এবং ৫০ উইকেট নেন টি টোয়েন্টিতে।
র্যাংকিং:
তার পারফরম্যান্স সর্বদা ধরে রাখার জন্য ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই অলরাউন্ডার মুকুট তার চেয়ে বেশি কেউ পরে নি ! কিনতু, একটু খারাপ সময় যাওয়ার কারণে টি টোয়েন্টি তে ৩ নম্বর পজিশনে চলে গিয়েছেন। কিনতু , টেস্ট এবং ওডিআই এখনো মুকুট তার দখলেই।
ইনকাম :
বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের মধ্যে সাকিব সবচেয়ে এগিয়ে আছে ইনকামের দিক থেকে। তার বাৎসরিক ইনকাম $৩৫ মিলিয়ন অর্থাৎ ২৮০কোটি টাকা। এই ইনকাম তার আসে খেলা এর পাশাপাশি ব্র্যান্ড এম্বেসেডর হওয়া থেকে এবং টিভি কমার্শিয়াল এড থেকে ..
পার্সোনাল লাইফ:
উম্মে আহমেদ শিশির কে বিয়ে করে জীবনের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করেন সাকিব ২০১২ ডিসেম্বরে । শিশির একজন মার্কিন বাঙালী। তাদের সম্পর্কের সূত্রপাত সাকিবের কাউন্টি খেলা থেকে। তাদের ঘরে ফুটফুটে একজন আসে ২০১৫ সালে নভেম্বরে , আলাইনা হাসান অব্রে। সাকিবের ইন্টারেষ্টিং একটা জিনিস হলো উনি ডাই হার্ড ফ্যান , Barcelona এর।
Image: Shakib with his wife
তার এই সাফল্য একদিনে আসে নি। অনেক স্ট্রাগল করে জাতীয় দলে চান্স পান এবং তার জন্য অনেক কঠিন ছিল চান্স পাওয়া। সে তার খেলার শুরুর দিকে গ্রামে গ্রামে ভাড়ায় খেলতে যেত , সেখান থেকে মাগুড়া ইসলামপুর ক্রিকেট ক্লাবে চান্স পান। তারপর BKSP তে ভর্তি হন। আন্ডার ১৯, ১৮ থেকে আজকে জাতীয় দলে। আমার মনে হয় তার পর সব গল্প সবার জানা।
একজন সাকিব শুধু দেশের ক্রিকেটের গর্ব নয় উনি আন্তর্জাতিক গর্ব।
Written By
Raju Ahmed Rony
Manager, Innovation & Idea, Youth Carnival