সামরিক বাহিনী – দেশের বহু মানুষের কাছে স্বপ্নের নাম। আর সেখানে যোগ দেয়ার সুযোগ আপনি পাবেন বিভিন্ন সময়েই। এস.এস.সি পাশের পরেও এখানে যোগ দেয়া যায়, এইচ.এস.সি পাশের পরও (এমনকি এইচ.এস.সি পরিক্ষার্থীরাও ) আবেদন করা যায়, স্নাতক শেষ করেও কিন্তু যোগ দেয়া যায় এখানে। সুতরাং শিক্ষাজীবনের বিভিন্ন ধাপ শেষে সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন পদে আবেদন করা যায়। এবং অবশ্যই পদগুলোর মাঝে তফাৎ ও আশে বেশ খানিকটা। কথা না বাড়িয়ে ,এক নজরে দেখে নেওয়া যাক বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীগুলোর কিছু খণ্ডচিত্র। মূলত তিনটি বাহিনী নিয়েই গড়ে উঠেছে এদেশের সামরিক বিভাগঃ
১। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট – https://www.army.mil.bd
এখান থেকে আপনি সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক কার্যক্রমের বিস্তারিত জানতে পারবেন। সেনাবাহিনীতে বছরের বিভিন্ন সময়ে নানা পদে লোক নেওয়া হয়। সার্কুলারগুলো সম্পর্কে আপডেট পেতে এবং ফলাফল জানতে নিয়মিত চোখ রাখুন https://joinbangladesharmy.army.mil.bd/ ওয়েবসাইটে ।
এবার দেখে নেয়া যাক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পদমর্যাদাঃ
কেবলমাত্র কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাই (কমিশন্ড অফিসার) সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা, জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার (জেসিও) কিংবা নন-কমিশন্ড অফিসার (এনসিও)রা নয়। কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদের প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা এবং বিশেষ সুযোগ-সুবিধা রয়েছে যা সৈনিক/এনসিও/জেসিওদের নেই । চট্টগ্রামের ভাটিয়ারীতে অবস্থিত বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমীতে (বিএমএ) অফিসার পদ প্রদান করা হয়।
লেফটেন্যান্ট, ক্যাপ্টেন, মেজরদেরকে জুনিয়র অফিসার বলা হয় (জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার নয়)। অপরদিকে মেজর জেনারেল, লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদবীধারী ব্যক্তিদেরকে সংক্ষেপে জেনারেল বলা হয় যদিও শুধু জেনারেল নামের আরও একটি পদমর্যাদা আছে। আর ব্রিগেডিয়ার জেনারেলদেরকে সংক্ষেপে ব্রিগেডিয়ার বলা হয় যদিও এ পদবীতে জেনারেল অনুসর্গ আছে।
কমিশন্ড অফিসার (প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড অফিসার) পদবী
সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট -> লেফটেন্যান্ট -> ক্যাপ্টেন
মেজর ->লেফটেন্যান্ট কর্নেল->কর্নেল
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল->মেজর জেনারেল-> লেফটেন্যান্ট জেনারেল->জেনারেল
জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার (জেসিও)
পদবি ওয়ারেন্ট অফিসার -> সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার -> মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার
নন-কমিশন্ড অফিসার (এনসিও) এবং সাধারণ সৈনিক
সার্জেন্টদের দ্বিতীয় শ্রেণীর মর্যাদা রয়েছে। ল্যান্স কর্পোরাল থেকে এনসিও ধরা হয়। এনসিওরা অফিসার নন।
সৈনিক (Snk) -> ল্যান্স কর্পোরাল (L Cpl) -> কর্পোরাল (Cpl) -> সার্জেন্ট (Sgt)
২। বাংলাদেশ বিমানবাহিনী
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর পদবী
বাংলাদেশের বিমান বাহিনীর পদবীগুলো দুই ভাগে বিভক্ত। একটি অফিসারদের (কর্মকর্তা) পদবী এবং অন্যটি বিমানসেনাদের পদবী। বিমানসেনা (ইংরেজীতে এয়ারম্যান) মানে বৈমানিক বোঝায় না, বোঝায় স্থলে কাজ করা কর্মচারীদের, কারণ সকল বিমান চালকই অফিসার । নিচে অফিসার ও বিমানসেনাদের পদবী নিম্নক্রম অনুসারে দেওয়া হলঃ
অফিসারদের পদবীঃ
এয়ার চীফ মার্শাল <- এয়ার মার্শাল <- এয়ার ভাইস মার্শাল
এয়ার কমোডোর <- গ্রুপ ক্যাপ্টেন <- উইং কমান্ডার
স্কোয়াড্রন লীডার <- ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট <- ফ্লাইং অফিসার <- পাইলট অফিসার
এ সকল পদবীধারী মহিলা/পুরুষরা বিমান বাহিনীর প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা এবং এদেরকে বাংলাদেশের ‘প্রথমে শ্রেণীর সরকারী গ্যাজেটেড কর্মকর্তা’ ধরা হয়।
যশোরে অবস্থিত বিমান বাহিনী একাডেমীতে তিন বছর প্রশিক্ষণ শেষে ফ্লাইং অফিসার পদবী প্রদান করা হয়। পাইলট অফিসার পদটি আর ব্যবহার করা হয় না । যদি কোন ব্যক্তি জিডিপি (জেনারেল ডিউটি পাইলট) শাখায় কমিশন (অফিসার পদ) পান তবে তিনি বৈমানিক অর্থাৎ বিমান চালক। অফিসারদের এছাড়াও আরও অনেক শাখা রয়েছে যেমন এটিসি (এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল), প্রশাসন, এডিডব্লিউসি (এয়ার ডিফেন্স ওয়েপন্স কন্ট্রোল), লজিসটিক্স ইত্যাদি । অফিসারদের সর্বোচ্চ পদবী হচ্ছে ‘এয়ার চীফ মার্শাল’, যেটি কেবলমাত্র ‘বিমান বাহিনী প্রধানকে’ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দিয়ে থাকেন।
নিচে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যোগদানের একটি সাধারণ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হল। প্রতি বছরই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদে লোক নেওয়া হয়। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যোগ দিতে পারবেন। নিয়মিত চোখ রাখুন www.joinbangladeshairforce.mil.bd ওয়েবসাইটে।
উড়ে বেড়ান আকাশে, দেখুন বিশ্বকে!
৩। বাংলাদেশ নৌবাহিনী
বাংলাদেশের অন্যতম সামরিক বাহিনী হচ্ছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। এ বাহিনীর কাজ হচ্ছে সমুদ্রপথে যুদ্ধ করা।
বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে চার ধরণের সদস্য আছেনঃ
১। নৌ কর্মকর্তা
২। নাবিক
৩।এমওডিসি (নিরাপত্তারক্ষী) এবং
৪। বেসামরিক সদস্যগণ।
এদের মধ্যে কেবলমাত্র কর্মকর্তাদেরকেই বেশি সম্মান, ভালো বেতন, ভালো বাসস্থান দেওয়া হয়।
কর্মকর্তাদের পদবীঃ লেফটেন্যান্ট, কমান্ডার, ক্যাপ্টেন, কমোডোর এবং এ্যাডমিরাল।
নাবিকদের পদবীঃ সীম্যান, পেটি অফিসার, আর্টিফিসার ইত্যাদি।
এমওডিসিদের পদবীঃ সৈনিক, কর্পোর্যাল, ওয়ারেন্ট অফিসার ইত্যাদি।
আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, বয়স ও শারীরিক সামর্থ্য অনুযায়ী দেখে নিন আপনি কোন পদের জন্য বেশি উপযুক্ত। প্রায় সব ধরণের মানুষের জন্যই কিন্তু পদ রয়েছে।
তথ্যসূত্রঃ ১। www.joinbangladesharmy.mil.bd/about-army/ranks-and-insignia ২। www.baf.mil.bd/ ৩। www.joinbangladeshairforce.mil.bd ৪। www.joinnavy.mil.bd ৫। www.navy.mil.bd