ইতিহাস নগরী হাম্পি।

 

ভ্রমণ পিপাসু বা ইতিহাসের খোঁজে যাদের নেশায় পরিনত হয়েছে তাদের জন্য আদর্শ একটি স্থান হতে পারে ভারতের হাম্পি। মাত্র ১০,০০০টাকার ভিতরেই প্রায় এক সপ্তাহ ঘুরে আসতে পারেন ইতিহাস নগরী হাম্পি। কিংবা গিয়েছে ভারত ভ্রমণে কিন্তু হাম্পি নগরীতে আপনি পা রাখেন নাই তবে বলব আপনার ভারত ভ্রমণের অপুর্ণ থেকে গেল। যেখানে পা দিলেই আপনার সামনে ধরা দিবে কেমন ছিল বিজয় নগরের রাজধানী। চলুন আমার সাথে একটু ঘুরে আসুন সেই ইতিহাসের নগরী হাম্পি থেকে।

উত্তর কর্ণাটকের ছোট গ্রাম হাম্পি। শুনেছিলাম হাম্পি দেবী থেকেই এর নামকরণ করা হয়েছিল। ভারত ইতিহাসের সবচেয়ে বৃহৎতম হিন্দু সম্রাজ্য বিজয়নগরের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে এই হাম্পিতে। অতীতে বিজয়নগর রাজ্যের রাজধানী ছিল হাম্পি। তা দেখার এতটাই উত্তেজনা ছিল যে সারারাত ট্রেন জার্নি করে একটুকুও ক্লান্ত অনুভব করলাম না। সারাদিনে গোটা জায়গাটা দেখা সম্ভব না বলেই ঠিক করলাম কোন তাড়াহুড়া করব না। যেখানে যতটা সময় থাকতে ইচ্ছে করব ততক্ষনই থাকব। ভাবামাত্রই সবাই ক্যামেরা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ালাম। হাটতে হাটতে পৌছালাম বিরুপাক্ষ মন্দির। সঠিক জন্ম ইতিহাস না জানতে পারলেও, দেখেই বোঝা যাচ্ছিল অন্তত কয়েক দশক আগে তৈরী হয়েছে এই অনন্য স্থাপত্য। হেমকূট পাহাড়ের উপরের চারিদিক খোলা রঙমন্ডপটি তো এক কথায় অনবদ্য। এখানে কিছু সময় কাটিয়ে গেলাম মন্দির গর্ভে। এখানেই একখন্ড পাথর কুঁদে বিশাল আকারের শিব রয়েছে। সঙ্গে দেবী পার্বতী, ভুবেনশ্বরী ছাড়াও নানা দেবতার মূর্তি রয়েছে এই সব মন্দিরে। কোন কোনওটা আবার চালুক্য ও হোয়সল কালে তৈরি। মন্দিরের ভিতরের নানা পিলারে বিজয়নগরের চিত্রকলার নদর্শন দেখতে পেলাম। কী অপরুপ কাজ! সিলিংয়ে শিব, বিষুর অবতার। মহাভারতের নানা আখ্যান শোভা পেয়েছে। দেখে ঘোর লেগে যায়। মনে হবে একটা অন্য সময় পৌছে গেছেন আপনি।

বিরুপাক্ষ থেকে বাসে উঠে গেলাম ভিট্টলা মন্দির দেখতে। তুঙ্গভদ্র পাড় ধরে ধ্বংস অবশেষ মাঝ দিয়ে যেতে হয়। অবশ্য বাস পুরো মন্দির পর্যন্ত যায় না। বেশ কিছু রাস্তা হাটিতে হয়। অবশ্য মোটর গাড়ির ব্যবস্থা আছে। ভিট্টলা মন্দির কৃষ্ণ দেব রায়ের হাতে শুরু হলেও আজও অসম্পূর্ণ। বিধস্ত গোপুরম দিয়ে ঢুকেই চোখে পড়ল পাথরের রথ। জানলাম একে সোনার রথ ও বলা হয়। সূর্যের আলোয় চিকচিক করছিল। কী অপরুপ তার শোভা! রথের গায়ের সূক্ষ কারুকাজ, মন্দির চত্বর, বাইরের থামের খোদাই করা হাতি-ঘোড়া-সিংহ, দেখে তাক লেগে যায়। শ্রীকৃষ্ণের গোপীদের বস্ত্রহরণ দৃশ্যও মূর্ত করা আছে মন্ডপে। নিমেষে যেন পৌছে গেলাম ইতিহাসের পাতায়। ভিট্টলা মন্দিরের আর এক বিশেষত্ব মিউজিক্যাল পিলারস। টোকা দিলেই নাকি সরগরম শোনা যায়। তবে সেটা দেখার সৌভাগ্য হল না। রেস্টোরেশনের কাজ চলছিল বলে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হলাম।

পরের গন্তব্য জেনানা এঙ্কলোজার। আগের দিনে এখানেই রানিরা স্নানবিলাসের সুখ উপভোগ করতেন। ১৫ বর্গ মিটার জুড়ে স্নানাগারটি এখনও বেশ সুন্দর। স্নানাগারের প্রতিটা গম্ভুজের ভাস্কার্য দেখার মতো। ইসলামিক স্টাকো শৈলীতে তৈরি পদ্মাকার ঝরনা থেকে নাকি সুগন্ধি জল বেরত আগে। জল আসত পম্পা নদী থেকে। এরই উত্তরপশ্চিমে কারুকার্য খচিত আট মিটার উচু বর্গাকার ভিতে ১৪ শতকের মহানবমী ডিব্বা। ডিব্বা থেকেও রাজপরিবার নবরাত্রি ও দশেরা উৎসব দেখত। প্রাসাদের তখনকার ট্রেজারি বিল্ডিং লোটাস মহলটি এই ফাঁকে দেখে নিলাম। এই মহলের পিছনেই ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হাতিশালা। পুরো চত্বর ঘুরতেই প্রায় ছ’টা বেজে গেল। মনে হচ্ছিল, দিনে কেন এত কম সময় থাকে। সারাদিন ইতিহাসের আনাচেকোনাচে ঘুরে ফিরলাম হোটেলে।

কীভাবে যাবেনঃ

সবার প্রথমে আপনাকে আকাশপথ বা স্থল পথে ভারতে তো যেতেই হবে। এরপর হাম্পির সবচেয়ে কাছের রেল স্টেশন হসপেট। হসপেট থেকে বাসে যেতে পারেন হাম্পি। হাওড়া থেকে অমরাবতী এক্সপ্রেস ধরে হসপেট যেতে পারেন।

কোথায় থাকবেনঃ

থাকতে পারেন পদ্মা গেস্টহাউজ (+৯১৮৩৯৪২৪১৩৩১) হাম্পিজ বোল্ডার এ (+৯১২২৬১৫০৬৩৬৩)। যোগাযোগ করতে পারেন কর্ণাটক।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *