প্রোগ্রামিংয়ের সেরা ইনভায়রনমেন্ট (IDE) এবং ইডিটর

যারা কম্পিউটার সাইন্স অথবা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পড়াশুনা করে তাদের মধ্যে বিপুল সংখক ছাত্ররাই নিজেকে প্রোগ্রামার হিসেবে দেখতে চায়। তবে এখনকার দিনে প্রোগ্রামার হতে হলে তাকে কম্পিউটার সাইন্স অথবা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পড়তে হবে এমন কোনো শর্ত নাই। যে প্রোগ্রামিং করতে ভালোবাসে, প্রোগ্রামিং কে পেশা হিসেবে নিতে চায় সেই চেষ্টা করলে প্রোগ্রামার হতে পারে।

যেকোনো যোদ্ধার কাছে তার অস্ত্র অনেক মূল্যবান। কারণ সে তার অস্ত্র ছাড়া যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। তেমনি একজন প্রোগ্রামার এর কাছে তার অস্ত্র হলো তার IDE (Integrated development environment)। এই IDE দিয়ে তাকে বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ বেবহার করে প্রোগ্রাম লিখতে হয়। আজকে আমি শীর্ষ 5 টি IDE সম্পর্কে বিস্তারিত বলার চেষ্টা করবো।

১.Microsoft Visual Studio

 

Image result for visual studio


বর্তমানে সবচেয়ে প্রচলিত এবং জনপ্রিয় IDE তালিকায় আছে Microsoft-এর Visual Studio। Visual Studio-এর বেশ কয়েকটি সংস্করণ আছে যার মাধ্যমে ওয়েব ডেভেলপিং/অ্যাপ্লিকেশন, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন এবং ভিডিও গেম জাতীয় প্রোগ্রাম তৈরী করা যায়। IDE-টিতে আপনার লেখা প্রোগ্রাম  গুলো টেস্ট করার জন্য অনেক অ্যাপ্লিকেশন আছে যেটা আপনাকে নির্ভুল কোড/প্রোগ্রাম লিখতে সহযোগিতা করবে। Visual Studio একজন ছাত্র কিংবা যারা প্রফেশনাল তাদের জন্য একটি দুর্দান্ত হাতিয়ার। তবে একজন বাংলাদেশী ছাত্র হিসেবে একটা কষ্টের বিষয় হলো IDE-টি টাকা দিয়ে কিনতে হয়। IDE-টির ট্রাইল ভার্শনও পাওয়া যায় কিংবা আপনি যদি Microsoft-এর Student Partner হন/হতে পারেন তাহলে IDE-টি ফ্রিতে পেতে পারেন।

আপনি যেসব ল্যাংগুয়েজ দিয়ে এই IDE-তে প্রোগ্রাম লিখতে পারবেন সেগুলো হলো:

ASP.NET, DHTML, JavaScript, JScript, Visual Basic, Visual C#, Visual C++, Visual F# এবং XAML

IDE-টির উল্লেখযোগ্য কিছু বৈশিষ্ট্য হলো:

  • IDE-টির এক্সটেনশনের জন্য একটি বৃহৎ লাইব্রেরি আছে এবং যেটা ক্রমশ বেড়েই চলছে।
  • এখনকার ড্যাশবোর্ডটিকে আপনি আপনার ইচ্ছা মতো সাজাতে পারবেন এবং চাইলে আমরা প্রোগ্রাম টিকে সেখানেই ডক ফাইল করতে পারবো, এজন্য অতিরিক্ত একটি অ্যাপ্লিকেশন আছে।
  • আপনার লিখিত প্রোগ্রামগুলোকে সবসময় নিরীক্ষণ করবে, যাতে আপনার ভুল গুলো সহজেই ধরতে পারেন।
  • প্রোগ্রামের সিনটেক্স লিখার সময় আপনার সামনে সিনটেক্স রিকমেন্ড করবে।
  • আপনার প্রোগ্রাম সহজেই ডিবাগিং করতে পারবেন।

Microsoft virtual studio একটি উচ্চপর্যায়ের IDE, এজন্য এই IDE-টি খোলা বা প্রোগ্রাম রান করতে একটু বেশি সময় লাগে। আমাদের যদি খুব জটিল কোনো প্রোগ্রাম লিখতে না হয় তাহলে এই IDE ব্যবহার না করাই উচিৎ।

NetBeans:

NetBeans একটি ফ্রি এবং ওপেন সোর্চ IDE । এই IDE-এর সবচেয়ে মজাদার বৈশিষ্ট্য হলো ড্র্যাগ এবং ড্রপ। ড্র্যাগ এবং ড্রপ মাধ্যমে আপনি আপনার প্রজেক্টের বিভিন্ন টেমপ্লেট, GUI-এর কাজ সবচেয়ে সহজেই আপনি এখানে করতে পারবেন। এই IDE-টি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে জাভা ডেভেলপার রা, তবে অন্যান্য ল্যাঙ্গুয়েজেও প্রোগ্রাম লিখা যায়।

Image result for netbeans

আপনি যেসব ল্যাংগুয়েজ দিয়ে এই IDE-তে প্রোগ্রাম লিখতে পারবেন সেগুলো হলো:

C, C++, C++11, Fortan, HTML 5, Java এবং PHP

IDE-টির উল্লেখযোগ্য কিছু বৈশিষ্ট্য হলো:

  • ড্র্যাগ এবং ড্রপ ইন্টারফেস।
  • IDE-টিতে ডায়নামিক এবং স্ট্যাটিক অনেক লাইব্রেরী আছে।
  • মাল্টি-সেশন GNU ডিবাগার আছে যেটা আমাদের নির্ভুল কোড লিখতে সহায়তা করবে।
  • IDE-টি সব ধরণের অপারেটিং সিস্টেম এ ব্যবহারযোগ্য।
  • এটি Qt Toolkit সমর্থন করে।
  • IDE-টিতে বাড়তি বেশ কিছু কম্পাইলার যুক্ত করতে পারি যেমনঃ CLang/LLVM, Cygwin, GNU, MinGW এবং Oracle Solaris Studio

 

তবে NetBeans IDE-টি মেমোরির জায়গা তুলনামূলক অনেক বেশি নষ্ট করে

PyCharm

PyCharm হলো Jet Brains IDE-এর একটি সংস্করণ। Python প্রোগ্রামিং-এর জন্য বহুল ব্যবহৃত এবং জনপ্রিয় একটি IDE। তবে অন্যান্য প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজে-ও প্রোগ্রাম লিখা যায়। IDE-টি সম্পূর্ণ ফ্রি না, তবে ৩০ দিন পর্যন্ত ফ্রি চালাতে পারেন। বার্ষিক $২১৩ থেকে $৬৯০ দিয়ে আপনি IDE টি নিতে পারবেন।তবে ছাত্র হিসেবে আবেদন করলে Pycham-এর সম্পূর্ণ ফ্রি সংস্করণও পাওয়া যায়।

Related image

আপনি যেসব ল্যাংগুয়েজ দিয়ে এই IDE-তে প্রোগ্রাম লিখতে পারবেন সেগুলো হলো:

AngularJS, Coffee Script, CSS, Cython, HTML, JavaScript, Node.js, Python এবং TypeScript

IDE-টির উল্লেখযোগ্য কিছু বৈশিষ্ট্য হলো:

  • IDE-টিতে Django IDE(এটি ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক) যুক্ত করা থাকে। যার ফলে আমরা PyCham দিয়ে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট করতে পারবো।
  • সব ধরণের অপারেটিং সিস্টেম এ ব্যবহারযোগ্য।
  • IDE-টিতে Google App Engine সমর্থন করে
  • আপনার IDE-টিতে আপনার পছন্দ মতো থিম সাজিয়ে নিতে পারবেন।
  • আপনি চাইলে IDE থেকে সরাসরি Git-এ কোড পাঠাতে পারবেন।

 

তবে কিছু গ্রাহক আছে যারা মনে করে যে IDE তে একটু বাগ আছে, তাদের ধারণা যে মাঝে মাঝে IDE-টির কিছু ফীচার ঠিক মতো কাজ করে না।

Eclipse

 Related image

যারা জাভা প্রোগ্রামিং-এ নুতুন আসে, তাদের কাছে অনেক পছন্দের একটি IDE হলো Eclipse আর এটি একটি ফ্রি এবং ওপেন সোর্চ IDE । এটা জাভা প্রোগ্রামিং-এর জন্য বহুল ব্যবহৃত এবং IDE-টির প্লাগইন আর এক্সটেনশনের রয়েছে একটি বিশাল লাইব্রেরি। IDE-টি অতিরিক্ত ডিবাগের সাথে সাথে Git/CVS-ও সমর্থন করে। এখানে আপনি বিভিন্ন চার্ট, প্রোগ্রামিং মডেল, টেস্টিং এবং GUI-এর কাজ করতে পারবেন।

আপনি যেসব ল্যাংগুয়েজ দিয়ে এই IDE-তে প্রোগ্রাম লিখতে পারবেন সেগুলো হলো:

C, C++, Java, Perl, PHP, Python এবং Ruby

IDE-টির উল্লেখযোগ্য কিছু বৈশিষ্ট্য হলো:

  • IDE-টির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো আপনি চাইলে প্যাকেজ এবং প্রোগ্রামের নাম দিয়ে অন্য প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজে করা প্রোগ্রাম আপনি সহজেই সংযোগ করতে পারবেন যার ফলে একটি বৃহৎ প্রজেক্ট করা সম্ভব।
  • IDE-টিতে আপনার পছন্দ মতো থিম সাজিয়ে নিতে পারবেন।
  • স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার ভুল গুলো ধরিয়ে দেবে যার ফলে আপনার প্রোগ্রাম ডিবাগিং করতে সুবিধা হবে।
  • JEE প্রজেক্টের জন্য অতিরিক্ত কোনো অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করতে হয় না।

 

Eclipse অত্যন্ত বহুমুখী সফ্টওয়্যার তাই এর অনেক ফীচার একটু কঠিন হয় নুতুনদের জন্য। এটি IntelliJ IDEA একটি সংস্করণ।

Code::Blocks:

Code::Blocks আরেকটি জনপ্রিয় IDE যা সম্পূর্ণ ফ্রি এবং ওপেন সোর্চ। আমাদের দেশে C বা C++ প্রোগ্রাম করার জন্য সবচেয়ে বেশি এই IDE-টি বৃহৎ আকারে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি অত্যন্ত কাস্টমাইজেবল IDE। IDE-টিতে আমাদের নিজের সুবিধার জন্য ফ্রেমওয়ার্ক প্লাগইন ব্যবহার করতে পারি।

Image result for codeblocks

আপনি যেসব ল্যাংগুয়েজ দিয়ে এই IDE-তে প্রোগ্রাম লিখতে পারবেন সেগুলো হলো:

C, C++ এবং Fortran

IDE-টির উল্লেখযোগ্য কিছু বৈশিষ্ট্য হলো:

  • আপনি আগে করেছেন এমন প্রোগ্রাম সহজেই খুলতে পারবেন এবং প্রোগ্রামগুলো ট্যাব আকারে সাজানো থাকে।
  • সবধরণের অপারেটিং সিস্টেম দিয়ে এখানে প্রোগ্রামিং করা যায়।
  • আমরা চাইলে IDE-টির নির্মিত করা প্লাগইন গুলোর সাথে নিজেদের সুবিধার জন্য প্লাগইন কাস্টমাইজ করে ব্যবহার করতে পারি।
  • GCC, MSVC++ এবং clang এই কম্পাইলারগুলো IDE-টিতে দেওয়া থাকে।
  • আপনার কোড গুলো হাই-লাইট এবং অসম্পূর্ণ টেক্সট লেখার ক্ষেত্তে সুবিধা দেয়।

Code::Blocks-এর অনেক সুবিধামূলক বৈশিষ্ট্য থাকলেও IDE-টি লাইটওয়েট হওয়ার জন্য অনেক বড় কোনো প্রজেক্ট করার সময় বিভিন্ন সমস্যা সম্মুখীন হতে হয়। তবে নুতুনদের প্রগ্রামিং শুরু করার জন্য এটি একটি মহান হাতিয়ার।

 

Written By,

Joy Roy

Data Science and Big Data Enthusiast
Dept. in Software Engineering,
Daffodil International University.

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *