বর্তমান সময়ে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ব্লকচেইন প্রযুক্তি। ব্লকচেইনকে আধুনিক কালের এক অভিনব উদ্ভাবন বলা হচ্ছে। ব্লকচেইন তথ্য সংরক্ষণ করার একটি নিরাপদ এবং উন্মুক্ত পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে তথ্য বিভিন্ন ব্লকে একটির পর একটি চেইন আকারে সংরক্ষণ করা হয়।

Source: financialexprees.com

এটি একটি অপরিবর্তনযোগ্য ডিজিটাল লেনদেন, যা শুধুমাত্র অর্থনৈতিক লেনদেনের জন্যই প্রযোজ্য না, বরং এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে যেকোনো ধরনের কার্যাবলির তথ্য সংরক্ষণ করা যেতে পারে। ব্লকচেইন এমন একটি বন্টনযোগ্য ডাটাবেজ, যাতে অংশগ্রহণকারী পক্ষগুলোর মধ্যে সব লেনদেনের নথি সংরক্ষণ করে রাখা যায়। প্রতিটি লেনদেন আবার সিস্টেমের সংখ্যাগরিষ্ঠতা দ্বারা যাচাই করা হয়। একবার লেজারে কোনো তথ্য প্রবেশ করলে স্থায়ীভাবে তা থেকে যায় এবং কখনো মুছে ফেলা যায় না।ব্লকচেইন প্রতিটি একক লেনদেনের যাচাইযোগ্য রেকর্ড নিয়ে গঠিত হয়।

Source: forbes.com

এই অন্তর্নিহিত প্রযুক্তি নির্ভুলভাবে কাজ করে এবং বিভিন্ন কাজে ও শিল্পক্ষেত্রে এটির প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। ফলে ব্লকচেইন প্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের চাকরির পদও তৈরি হয়েছে। ব্লকচেইন সংক্রান্ত সেরা পাঁচটি চাকরি সম্পর্কে জানতে এ আর্টিকেলটি পড়ুন। কারণ আমি এই আর্টিকেলটিতে ব্লকচেইন ক্ষেত্রের অন্যতম সেরা পাঁচটি চাকরি সম্পর্কে আলোচনা করবো।

১. অ্যানালিস্ট

একজন অ্যানালিস্ট ব্লকচেইন থেকে প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহার করে, শিল্পের সম্ভাবনা নির্ণয় করা, ডাটা পর্যবেক্ষণ করা, গবেষণা পরিচালনা ও উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাসহ নানাবিধ কাজের সঙ্গে জড়িত থাকেন। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ওপরে রিপোর্ট লেখার দায়িত্ব পালন করেন। অ্যানালিস্ট হিসেবে কর্মজীবন শুরু করতে হলে কমপক্ষে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করতে হবে এবং ব্লকচেইন সংক্রান্ত কোনো কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

Source: theicon.ist

আবার অর্থসংক্রান্ত কোনো কোর্স করা থাকলে, তা আপনার চাকরি পেতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। একজন অ্যানালিস্টের বেতন নির্ভর করে, মূলত অভিজ্ঞতা ও প্রতিষ্ঠানের ধরনের উপরে। তবে সাধারণত একজন অ্যনালিস্টের বার্ষিক গড় আয় প্রায় ৪০ হাজার পাউন্ড থেকে ৬০ হাজার পাউন্ড, যা বাংলাদেশের মুদ্রার হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৪২ লক্ষ টাকা থেকে ৬২ লাখ টাকা।

২. ব্লকচেইন ইঞ্জিনিয়ার

একজন ব্লকচেইন ইঞ্জিনিয়ার সাধারণত প্রোগ্রামিং ভাষাগুলো ব্যবহার করে, ব্লকচেইন অ্যাপ্লিকেশনগুলো পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার দায়িত্ব পালন করেন। এই শিল্পটি এতো দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে যে, প্রতিনিয়তই ব্লকচেইন ইঞ্জিনিয়ারদের কাজের ধরনে প্রতিনিয়তই কিছুটা হলেও পরিবর্তন আসছে। ইঞ্জিনিয়ারেরা ব্লকচেইন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিশ্লেষণ করা, নিরাপত্তা পরীক্ষাকরণ এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করার মতো কাজগুলোও করে থাকে। ব্লকচেইন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করতে হলে, অবশ্যই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, কম্পিউটার সায়েন্স কিংবা এই ধরনের কোনো বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ডিগ্রি অর্জন করতে হবে।

Source: cointelegraph.com

এছাড়াও ব্লকচেইন সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও কাজের অভিজ্ঞতা থাকা ভালো। একজন ইঞ্জিনিয়ারের প্রাথমিকভাবে বার্ষিক গড় বেতন প্রায় ৪০ হাজার পাউন্ড বা ৪২ লক্ষ টাকা। আর অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পেলে, তখন বার্ষিক বেতন বেড়ে প্রায় ৮০ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত হতে পারে, যা বাংলাদেশের মুদ্রা হিসেবে প্রায় ৮৩ লক্ষ টাকা। যারা প্রোগ্রামিং ভালোবাসে তাদের এই পদের চাকরিতে ক্যারিয়ার শুরু করা উচিত। এতে তারা খুব সহজেই সফলতার মুখ দেখতে সক্ষম হবে।

৩. ডেভলপার

ডেভলপারেরা ব্লকচেইন তথ্য গ্রহণ করে ও তা সচল রাখার দায়িত্ব পালন করে। এছাড়াও তারা ব্লকচেইনের সাজ-সরঞ্জাম করতে এসডিকে, এপিআই ও সম্পূর্ণ অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করে। ফলে ব্যবসায়ীদের নিকটে কাজকর্ম করা সুবিধাজনক হয় এবং ভোক্তারাও খুব সহজে জটিল তথ্যগুলো লিপিবদ্ধ ও সংরক্ষণ করতে পারে। ডেভেলপার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে হলে, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং সংক্রান্ত বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করা জরুরী।

Source: monster.ca

এছাড়াও সি++, জাভা ইত্যাদি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। একজন ব্লকচেইন ডেভলপারের প্রাথমিক অবস্থায় বার্ষিক গড় বেতন প্রায় ৩০ হাজার পাউন্ড বা ৩২ লক্ষ টাকা। আর অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পেলে বছরে প্রায় এক লক্ষ পাউন্ড বা প্রায় এক কোটি টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব।

৪. প্রকল্প ব্যবস্থাপক

একজন প্রকল্প ব্যবস্থাপক সাধারণত কোনো ব্লকচেইন প্রকল্প পরিচালনার যাবতীয় দায়িত্ব পালন করে থাকে। আবার প্রকল্প ব্যবস্থাপক ইঞ্জিনিয়ার ও ডেভেলপারদের দলকে পরিচালনা করে ও ব্যবসার উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের দিকনির্দেশনা প্রদান করে থাকে। প্রকল্প ব্যবস্থাপক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে হলে, অবশ্যই প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

Source: hybridblock.io

এছাড়াও ব্লকচেইন সংক্রান্ত বিষয়ে ন্যূনতম ধারণা থাকা আবশ্যক। আবার ভালো যোগাযোগের দক্ষতা ও সমস্যা সমাধানের যোগ্যতা থাকা ভালো। একজন প্রকল্প ব্যবস্থাপকের বার্ষিক গড় আয় প্রায় ৫০ হাজার পাউন্ড থেকে ১ লক্ষ পাউন্ড পর্যন্ত হতে পারে, যা বাংলাদেশের মুদ্রার হিসাব অনুযায়ী ৫২ লক্ষ টাকা থেকে প্রায় ১ কোটি টাকা।

৫. কিউএ ইঞ্জিনিয়ার

একজন কিউএ ইঞ্জিনিয়ার (QA Engineer) মূলত ব্লকচেইন পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালন করেন। কোনো পণ্য বাজারে রিলিজ করার পূর্বেই, কিউএ ইঞ্জিনিয়ার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখে, পণ্যের গুণগত বৈশিষ্ট্য মানসম্মত আছে কি না। আবার পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে; সে সম্পর্কেও পরামর্শ প্রদান করে থাকে। কিউএ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে হলে সফটওয়্যার নেটওয়ার্কিং সংক্রান্ত বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি থাকা ভালো, তবে জরুরী নয়।

Source: zycrypto.com

আর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার মতো যোগ্যতা ও বিশ্লেষণ করার দক্ষতা থাকলে কিউএ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ক্যারিয়ার গঠন করা সহজ হয়ে যায়। একজন কিউএ ইঞ্জিনিয়ারের বার্ষিক গড় আয় প্রায় ৫৫ হাজার পাউন্ড থেকে ৬৫ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত হতে পারে, যা বাংলাদেশের মুদ্রার হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৫৬ লক্ষ থেকে ৬৬ লাখ টাকা।
ব্লকচেইন ক্ষেত্রে আপনার ক্যারিয়ার গঠন করার ইচ্ছা থাকলে, আপনার যোগ্যতা ও দক্ষতা বিবেচনা করে, এসব চাকরি থেকে কোনো একটিকে ক্যারিয়ার গঠনের হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন।

Featured Image:Stoodnt.com