উদ্যোক্তা তথা এন্টারপ্রেনার বা স্টার্টআপ বর্তমান সময়ে আলোচনার একটি জনপ্রিয় বিষয়বস্তু। কারণ একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হতে হয়তো সবাই চান। তবে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য তো কোনো কিছু দিয়ে আপনাকে শুরু করতে হবে। তাই আপনার উদ্যোক্তাময় জীবনকে সহজ করার জন্য পৃথিবীর বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উর্ধতন কর্মকর্তাগণ তাদের নিজেদের অভিজ্ঞাতার আলোকে কিছু ব্যবসার কথা বলেছেন যা এই মূহুর্তে আপনি শুরু করতে পারেন। তাহলে চলুন, দেরি না করে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

ইমেইলে স্মার্ট ইনবক্স

এ বিষয়ে বার্নার (Burner) কোম্পানির প্রধান নির্বাহী গ্রেগ কোহেন (Greg Cohn) বলেন, বর্তমান প্রযুক্তিগত উন্নতির ফলে প্রতিনিয়ত প্রায় অনেক সময় যায় মেইল করতে বা রিপ্লাই দিতে। তবে মহা মূল্যবান এই কাজটি বেশিরভাগ সময় বিরক্তিকর হয়ে উঠে। তবে মেইলে যদি কোনোভাবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে বুদ্ধিমান তথা স্মার্ট ইনবক্স ব্যবস্থা চালু করা যেত যা ক্লায়েন্টের সাথে কথোপকথন, প্রজেক্ট, টু-ডু সহ আরও বেশ কিছু কাজ করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাথে।

Photo Credit: images.google.com

তাহলে এই ইমেইল বা জিমেইল নামক বোরিং কাজটি হয়ে উঠতো অনেক সহজ। এজন্যই তিনি মনে করেন অতি শীগ্রই এরকম একটি সিস্টেম চালু হওয়া উচিত।

পণ্যের নির্দিষ্ট মানদন্ড নির্ধারণ

পৃথিবীর জনসংখ্যা সাথে অগ্রগতি দুটোই বৃদ্ধির ফলে মানুষের চাহিদা বাড়ছে দিনদিন। কিন্তু একবার লক্ষ্য করে দেখেছেন কি? সৌখিন কিংবা নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল জিনিসগুলো কেনার সময় আমাদের কাছে নির্দিষ্ট কোনো মানদন্ড না থাকার ফলে পড়তে হয় নানা ঝামেলায়। কিন্তু এরকম কোনো মানদন্ড বা ব্যবস্থা যদি থাকত তাহলে কেমন হতো বলুন তো?

Photo Credit: images.google.com

এ বিষয়টি, নো সাপ্লাই (Known Supply ) এর প্রধান নির্বাহী কোল ক্রিসিলিয়াস (Kohl Crecelius) মনে করেন, অচিরেই এরকম একটি সিস্টেম চালু হওয়া উচিত যার মাধ্যমে মানুষ প্রকৃত জিনিসটি খুঁজে পাবে।

 ডিজিটাল অ্যাসিস্ট্যান্ট আপডেট

ডিজিটাল অ্যাসিস্ট্যান্টের কথা আসলেই অ্যাপলের সিরি (Siri), মাইক্রোসফটের কর্টনা, আমাজনের অ্যালেক্স কিংবা গুগল অ্যাসিস্ট্যান্টের নামগুলো প্রথমেই আসে। ডিজিটাল অ্যাসিস্ট্যান্ট হচ্ছে এমন একটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স তথা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্বলিত প্রোগ্রাম যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার দেওয়া বিভিন্ন দিকনির্দেশনা মেনে চলতে সক্ষম। ২০১৮ সালের গুগল আইও’র মাধ্যমে আমরা দেখেছি গুগল তাদের অ্যাসিস্ট্যান্টকে এতটাই বুদ্ধিমান একটি যন্ত্রে রুপান্তরিত করেছে যে, এটি সাধারণ মানুষের মতো কথা বলতে পারে এবং ধারণা করা হচ্ছে এটি ব্যবসা ক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য নিয়ে আসবে।

Photo Credit: images.google.com

এজন্যই ব্যানডু’র (Bando) ‘র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা (Lana Hansen) মনে করেন, বর্তমানে এমন একটি অ্যাসিস্ট্যান্ট দরকার যা ব্যবসাক্ষেত্রে এইচ আর এর ভূমিকা পালন করবে। তবে আধুনিক প্রযুক্তির এই অগ্রযাত্রায় খুব বেশিদিন হয়তো অপেক্ষা করতে হবে না আমাদের, এ নিয়ে নিশ্চিত থাকতে পারেন।

সুখ পরিমাপক

কী ভাবছেন? সুখের আবার পরিমাপক হয় কেমন করে? বিশ্বায়নের এই সময় একটি বিষয় খেয়াল করলে দেখবেন, আপনাকে যদি কেউ প্রশ্ন করে আপনি কতটুকু সুখী অথবা হতাশ?

যাই হোক আপনার হতাশা তো দূর করার দায়িত্ব আপনার কিন্তু আপনার অবচেতন মনের শান্তির জন্য বলতে চাই – পরিসংখ্যান বলে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী কিংবা মিলিয়ন ডলারের মালিকরা সবচেয়ে বেশি অসুখী। এবার ভাবুন প্রতিদিন যদি কেউ এসে আপনার হতাশাময় জীবনকে অনুপ্রেরণা দিত তাহলে কি হতো? খুবই স্বাভাবিক আপনার প্রোডাকটিভি, সৃজনশীলতা সহ আরও যত ভালো গুণ সৃষ্টিকর্তা আপনার মধ্যে দিয়েছিল সব তরতর করে উপরে উঠতো। কিন্তু বাস্তবতা কি এত সহজ বলুন! তবে এটা ভাববেন না যে, এই হতাশাময় জীবন থেকে সুখী হওয়ার কোনো উপায় নেই। তবে মনস্তাত্ত্বিক এই খেলায় সব গোপনীয়তা লুকিয়ে আছে আপনার অবচেতন মনে।

Photo Credit: images.google.com

মূলত মনস্তাত্ত্বিক এই বিষয়টি উপলব্ধি করে ফর্কের প্রধান নির্বাহী হ্যারি ওয়েস্ট (Harry West) বলেন, সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে প্রায় প্রত্যেকের সুখ পরিমাপক কিছু মনস্তাত্ত্বিক ব্যবস্থা বা সিস্টেম থাকা দরকার যেখান থেকে মানুষ উপলব্ধি করতে পারবে যে তিনি কতটা সুখী। আর এটি সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন উদ্যোক্তাদের জন্য। কারণ উদ্যোক্তাদের মতো হতাশাময় জীবন খুব কম মানুষ কাটান।

নতুন সোশ্যাল মিডিয়া

প্রযুক্তিগত উন্নতির ফলে অনলাইন মার্কেটিংয়ের জনপ্রিয়তা দিনদিন বাড়ছে। নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় সকল পণ্য এখন সবাই অনলাইনে ঝামেলা ছাড়া কিনতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন যদিও আমাদের দেশে এখনো পরিপূর্ণভাবে এই সুবিধা চালু হয়নি। আর এই অনলাইন মার্কেটিং তথা ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের অন্যতম ক্ষেত্র এখন সোশ্যাল মিডিয়াগুলো যেমন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি।

হবে না কেন বলুন? পৃথিবীর মোট ৭.৬ বিলিয়ন জনসংখ্যার প্রায় ৪ বিলিয়ন ইন্টারনেট ব্যবহার করে বর্তমানে। এর মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৩.২ বিলিয়ন। কোনো ব্যবসা মানেই তো ক্লায়েন্ট তথা ক্রেতা খুজে নেওয়া তাই না। এজন্যই প্রায় সব অনলাইন কিংবা অফলাইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো চেষ্টা করে তাদের প্রোডাক্টগুলো ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়াগুলো ব্যবহার করে সবার মাঝে পৌছানোর।

Photo Credit: images.google.com

তবে বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে ভালো কনটেন্ট তথা বিষয়বস্তু খুজে পাওয়া বেশ কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও কতিপয় সোশ্যাল মিডিয়া হয়ে উঠেছে সময় নষ্টকারী এক অনন্য মাধ্যম হিসেবে। এজন্যই দ্য ইনসাইডারের (The Insider) প্রধান নির্বাহী ক্রিস্টিয়ান লামেক্স (Christiane Lemieux) মনে করেন, নতুন একটি সোশ্যাল প্লাটফর্ম দরকার যা ইমেজ রিকগনেশন প্রযুক্তির মাধ্যমে সবকিছু মনিটর করবে ফলে নতুন এই প্লাটফর্মটি হয়ে উঠবে গঠনমূলক এবং প্রকৃত একটি সোশ্যাল মিডিয়া।

উপরের সম্মানিত প্রধান নির্বাহীগণ তাদের সমস্যার আলোকে কিছু সমাধান তুলে ধরলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষপটে বিষয়গুলো একটু ভিন্ন। কারণ জনবহুল এই দেশে সমস্যার শেষ নেই আর পূর্বের একটি আর্টিকেলে বলেছিলাম সমস্যা থেকেই মুলত স্টার্টআপ শুরু হয়। তাই সত্যই যদি আপনি একজন উদ্যোক্তা হতে চান তাহলে দেরি না করে কোনো নির্দিষ্ট সমস্যা যথপোযুক্ত সমাধান নিয়ে লেগে পড়ুন আর উদ্যোক্তা হিসাবে নিজের নামটি স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখুন পৃথিবীর বুকে।