কৈশোর থেকে প্রত্যেকেরই যে ৫টি বিষয় জানা উচিৎ

photo- cdn2.momjunction.com

বয়ঃসন্ধি বা টিনএজ, এই সময়টা প্রত্যেক মানুষের জীবনে এক রুপান্তরের সময়। শৈশবের খোলস ছাড়িয়ে কৈশোরে ডানা মেলে জীবন এ সময়। হুট করে শুধু কন্ঠস্বর ও দেহের কিছু পরিবর্তনই নয়, মনোজগতেও ঘটে যায় এক আশ্চর্য আলোড়ন। এই আলোড়নে কখনো আমরা ভুল করে ফেলি, গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে স্রেফ অজ্ঞতাবশত নিয়ে ফেলি এমন সব সিদ্ধান্ত যা পরবর্তীতে ভোগায় দারুনভাবে। জেনে নেওয়া যাক এমনই কিছু বিষয় যা প্রত্যেকেরই কৈশোরে জেনে রাখা উচিত যাতে ভুল পথে পা না বাড়াতে হয়।

১. ভুল করা সবসময় অভিশাপ নয়, কখনো কখনো আশীর্বাদও

ভুল বা ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিৎ। ছবিসূত্র- brightside

শুধু কি ১৩-১৪ বছরের কিশোর কিশোরীরাই ভুল করে? না, ভুল যে কারো অর্থাৎ যেকোনো বয়সের মানুষের দ্বারা হতে পারে। হতে পারে স্কুলে কোনো বিষয়ে ফেল করা কিংবা ঠিকঠাক তালা না দেওয়ায় শখের সাইকেলটা চুরি যাওয়া। ভুল করাটা লজ্জার হলেও, নিজের সামান্য ভুল থেকে বড় ক্ষতি হলে অনেকে বিষণ্ণ হয়ে পড়ে।

জীবন তো আর ঐ একটি ভুলকে আঁকড়ে বসে থাকে না, এটা বুঝে নিতে হবে অল্প বয়স থেকেই। আসলে ভুল তার জন্যই আশীর্বাদ যে ঐ ভুল থেকে শিক্ষা নেয়, নিজেকে সংশোধন করে নেয়। ভুল করার চেয়ে, ভুল থেকে শিক্ষা না নেওয়াটাই মস্ত বড় ভুল। তাই যে ব্যর্থতাই আসুক না কেন, সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

২. নিজের খেয়াল সবার আগে

কথায় আছে, Self help is the best help। হ্যাঁ, প্রথমে নিজেকে শারীরিকভাবে সুস্থ আর মানসিকভাবে স্থির রাখতে হবে। আপনি যদি নিজে ভালো না থাকেন, অপরের ভালো করতে পারবেন কীভাবে? চিন্তা থেকে নেগেটিভিটি ঝেড়ে ফেলতে হবে আর শরীর- মনের উদ্যমের জন্য যা করা দরকার, করতে হবে। তাই বলে নিজেকে গুটিয়ে রাখলেও চলবে না। নিয়মিত হাঁটা, সময়মতো খাওয়াদাওয়া, নতুন কিছু শেখা- এগুলোও যেমন করতে হবে, পাশাপাশি চারপাশের মানুষের সাথেও মিশতে হবে।

শরীর ও মন ভালো রাখতে মেডিটেশন, ব্যায়াম করা উচিৎ। ছবিসূত্র- wikihow

সুস্থ শরীর, সুন্দর ও কর্মচঞ্চল মন বজায় থাকলে নিজের অন্যান্য কাজও ভালোভাবে হবে। এই বয়সে কণ্ঠস্বরের সাথে সাথে দেহের গঠনে পরিবর্তন আসে, পরিচিত হতে হবে সেসব পরিবর্তনের সাথে। এই বয়সে চেষ্টা করতে হবে নতুন কিছু শেখার- সাঁতার হোক, ড্রাইভিং হোক বা কোন বাদ্যযন্ত্রই হোক না কেন। সামনে আসা সুযোগগুলোকে নিজের মতো করে কাজে লাগাতে হবে।

৩. রঙিন মানেই আকর্ষণীয় নয়

ক্লাসে আপনি যখন আর দশজনের মতোই গড়পড়তা একজন। সেখানে আপনার চোখ ধাঁদিয়ে যেতে পারে অন্যদের দেখে, যাদের হাতে আছে হাল ফ্যাশনের ইলেকট্রিক গ্যাজেট অথবা হাই স্পিড বাইক। দামী জামা ও গয়না পরা কোনো অনিন্দ্য সুন্দরী যখন আপনারই সাথে পড়ে আর আপনি কিনা তাদের ভাষায় নিতান্তুই ‘নার্ড’- তখন খারাপই লাগে। কিন্তু তাদের জীবন আসলেই কি বাইরের মতোই রঙিন অথবা নির্ভার? আসলে তা নয়, এখন যদি তাদের দেখে হতাশ হোন সেটা বোকামি।

অন্যের সাথে নিজেকে না মিলিয়ে নিজেকে উন্নত করতে পরিশ্রম করা উচিৎ। ছবিসূত্র- wikihow

১৬ বছর বয়সে যে মেয়েটি রুপচর্চায় ব্যস্ত ৩০ এর কোঠায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে তার রুপ ধরে রাখা কঠিন হয়ে যাবে। বাবা মায়ের কেনা দামী ইলেকট্রিক গ্যাজেট নিয়ে ঘুরছে যে, তার গ্যাজেটটি আজ বাদে কাল পুরনো হয়ে যাবে। কিন্তু আপনি যদি ওসব চিন্তা না করে নিজের কাজ নিজের মতো করতে থাকেন, ভবিষ্যতে আপনি নিজের যোগ্যতায় অন্যদের থেকে এগিয়ে যাবেন। তাই অন্যের সাথে নিজেকে না মিলিয়ে, আপনার অতীতের সাথে আপনার বর্তমানকে মেলান, নিজেকে কতটুকু উন্নত করলেন।

৪. ডিগ্রি অর্জনই জীবন নয়

শিক্ষাগ্রহণ জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তবে এটিই জীবনের সব নয়। নাম্বার এবং গ্রেডের পেছনে না ছুটে বরং জানার জন্য, শেখার জন্য আগানো উচিৎ। এটি জীবনের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি উপলব্ধি। বাবা মায়ের ইচ্ছাপূরণ বা ভালো উপার্জনের জন্য ডিগ্রী নিতে হয়।

ডিগ্রী অর্জনের চেয়ে দক্ষতা অর্জন গুরুত্বপূর্ণ। ছবিসূত্র- brightside

কিন্তু আপনার যদি কোন বিষয়ে আগ্রহ থাকে মন থেকে, ইচ্ছা জাগে কাজ করার, সেক্ষেত্রে সেই কাজে দক্ষতা অর্জন করুন। ডিগ্রী না বরং আপনার দক্ষতাই আপনাকে নিয়ে যাবে লক্ষ্যে। তবে পড়াশোনার দরকার অবশ্যই আছে, জগত ও জগতের বিভিন্ন বিষয়গুলো ভালোভাবে জানা ও বোঝার জন্য।

৫. একজনকে নিয়েই পৃথিবী না

বন্ধুত্ব হোক আর প্রেম বা যে কোনো সম্পর্কই হোক- হতে পারে তার সাথে আপনার বনিবনা হচ্ছে না। যেকোনো ব্যাপারে ভুল বোঝাবুঝিতে আপনার সঙ্গ ছেড়ে গেছে পছন্দের মানুষ। যেতে দিন। কিছুদিন সময় নিন। প্রথম প্রথম কষ্ট পেলেও কছুদিন পর দেখবেন মানুষটি ছাড়া আপনার বিশেষ ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে না। জীবনে চলতে গেলে বহু মানুষের সাথে আপনাকে মিশতে হবে, ওঠাবসা করতে হবে। এর মধ্যে সবার সাথেই যে ভালো সম্পর্ক হবে তা নয়। যদি ভালো সম্পর্ক নাও হয়, তবু তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকুন আপনার জীবনের একটা অভিজ্ঞতার অংশ হয়ে থাকার জন্য।

ছেড়ে যাওয়া মানুষের জন্য দুঃখ করাটা বোকামি। ছবিসূত্র- brightside

আপনার আপনজন হোক বা অন্য কেউ, কেউই কিন্তু আপনার পুরো জীবন জুড়ে থাকে না, থাকা সম্ভব নয়। প্রত্যেকেই আপনার জীবনের একটি অংশ। কেউ আপনার জীবন থেকে চলে গেলে বা সম্পর্ক খারাপ হলে তাই সেখান থেকে শিক্ষা নিন, ভেঙে না পড়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *