দুধ সম্পর্কে যে ৭টি ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত রয়েছে

ভ্রান্ত ধারণা দুইঃ জৈবিক দুধ রেগুলার দুধের থেকে ভালো; Image Source: scoopwhoop.com

শৈশবের একটি বিভীষিকার কথা বলতে বলা হলে কোনটি আপনি সবার আগে বলবেন? অনেকেই হয়তো বলবেন প্রতি রাতে দুধ খাওয়ার কথা। প্রায় সব দেশের শিশুদেরই জীবনের একটি বিভীষিকা হলো প্রতিদিন রাতে দুধ খাওয়া। দুধে রয়েছে অনেক পুষ্টি উপাদান যা আমাদের দেহের জন্য অনেক উপকারী। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন- এই দুইটিই আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী।

দুধের এত গুণাবলী থাকা সত্ত্বেও আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে অনেকগুলো ভ্রান্ত ধারণা। এইসব ভ্রান্ত ধারণার জন্য আমরা অনেকেই দুধ খেতে অনীহা প্রকাশ করি। কিন্তু প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ পান করা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এটি যে কেবল ভিটামিন বা ক্যালসিয়াম এর চাহিদা মিটায় তা নয়, সাথে সারাদিনের কাজ করার শক্তিও জোগায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক দুধ পান সম্পর্কে সেই ৭টি ভ্রান্ত ধারণা যা আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে।

ভ্রান্ত ধারণা ১ঃ দুধ পান করলে কিডনিতে পাথর হতে পারে।

ভ্রান্ত ধারণা ১ঃ দুধ পান করলে কিডনিতে পাথর হতে পারে; Image Source: scoophoop.com

আমাদের দেশে অনেকেই মনে করেন যে, দুধ পান করলে কিডনিতে পাথর হতে পারে। এটি সম্পূর্ণ একটি ভ্রান্ত ধারণা। এটি বিজ্ঞানসম্মত কোনো ধারণা হয়। অনেকে দুধ পানে অনীহা জানান এই ভয়ে যে, দুধ পান করলে কিডনিতে পাথর হবে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এই ধারণাকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলেছেন। উলটো তারা প্রমাণ করেন যে, দুধ পান করলে কিডনিতে পাথর হবার সম্ভাবনা কমে যায়।

ভ্রান্ত ধারণা ২ঃ জৈবিক দুধ অন্য দুধের থেকে ভালো

ভ্রান্ত ধারণা দুইঃ জৈবিক দুধ রেগুলার দুধের থেকে ভালো; Image Source: scoopwhoop.com

আসলে দুটির মধ্যে বাস্তবে তেমন কোন পার্থক্য নেই। রেগুলার দুধ এবং জৈবিক দুধের মান, পুষ্টি, উপাদান সবই একই। কেবলমাত্র একটাই পার্থক্য বিদ্যমান। তা হলো জৈবিক দুধ খামারে উৎপাদন করা হয়। যেহেতু মান, গুণ, পুষ্টি সবই একই তাই কোনটি উৎপন্ন হয়েছে এগুলো নিয়ে চিন্তা না করাই শ্রেয়।

ভ্রান্ত ধারণা ৩ঃ প্যাকেটজাত দুধ হচ্ছে সিন্থেটিক দুধ

ভ্রান্ত ধারণা ৩ঃ প্যাকেটজাত দুধ হচ্ছে সিন্থেটিক দুধ; Image Source: scoopwhoop.com

এটি আসলে সত্য না। প্যাকেটজাত দুধের স্বাদ অনেক বেশী হয়ে থাকে। সাধারণভাবে যেসব দুধ সংগ্রহ করা হয় তার থেকে এই দুধের স্বাদ আলাদা। কেননা স্বাধারণভাবে যেসব গাভী থেকে দুধ সংগ্রহ করা হয় সেগুলো খুব একটা স্বাস্থ্যবান বা স্বাস্থ্যসম্মত এবং বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে পালন করা হয় না। কিন্তু যেসব কোম্পানী প্যাকেটজাত দুধ বাজারজাত করে তারা খামারে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে গাভীকে লালন পালন করে। সেসব গাভীকে উন্নতমানের খাবার দেয়া হয়। যার জন্য খামারের সব গরুর স্বাস্থ্য অনেক ভালো থাকে। আর এদেরকে সব ধরনের চিকিৎসা প্রদান করা হয়। তাই খামারে উৎপাদন করা দুধের স্বাদ অন্যান্য সাধারণ দুধ থেকে অনেক ভালো।

ভ্রান্ত ধারণা ৪ঃ প্যাকেটজাত দুধে সংরক্ষণ করার জন্য রাসায়নিক দ্রব্যাদি মিশানো হয়

ভ্রান্ত ধারণা চারঃ প্যাকেটজাত দুধে সংরক্ষন করার জন্য কেমিক্যাল মিশানো হয়; Image Source: scoopwhoop.com

টেট্রা প্যাকে সংরক্ষণ করা দুধে আলাদা করে কোন রাসায়নিক দ্রব্য মিশানো হয় না। দুধ এমনভাবে প্যাকেটজাত করা হয় যাতে করে দুধের মাঝে কোন জৈবিক উপাদান অবশিষ্ট থাকে না। যেহেতু কোন জৈবিক উপাদান অবশিষ্ট থাকে না, তাই দুধ নষ্ট হবার সম্ভাবনা থাকে না। আপনি যদি রুমের তাপমাত্রায় এই প্যাকেটজাত দুধ ছয় মাসও রেখে দিন, তাতেও দুধ নষ্ট হবে না। তাই বলা বাহুল্য যে, যেহেতু দুধের মাঝে জৈবিক কোন উপাদান বিদ্যমান থাকে না অর্থাৎ দুধ পচনের কোন সম্ভাবনা নেই সেহেতু দুধ সংরক্ষণের জন্য আলাদা করে রাসায়নিক দ্রব্য মিশানোর কোন প্রয়োজনীয় নেই।

ভ্রান্ত ধারণা ৫ঃ দুধ পানে তাড়াতাড়ি বার্ধক্য আসে

ভ্রান্ত ধারণা পাঁচঃ দুধ পানে তাড়াতাড়ি বার্ধক্য আসে; Image Source: scoopwhoop.com

অনেকগুলো ভ্রান্ত ধারণার মাঝে এই কথাটি সবচেয়ে বেশি শুনা যায়। অনেক অভিভাবক মনে করেন যে, বাচ্চাদেরকে দুধ খাওয়ালে তারা তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যাবে। দুধ পানের সাথে বার্ধ্যকের কোনো সম্পর্কই নেই। উলটো দুধ পান করলে বাচ্চাদের দেহের ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিনের চাহিদা পূরণ হয়।

ভ্রান্ত ধারণা ৬ঃ যারা শর্করা অসহিষ্ণু তারা দুধ খেতে পারবে না

ভ্রান্ত ধারণা ৬ঃ যারা শর্করা অসহিষ্ণু তারা দুধ খেতে পারবে না; Image Source: scoopwhoop.com

এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কথা। আপনি যদি শর্করা অসহিষ্ণু হয়ে থাকেন তাও আপনি দুধ পান করতে পারবেন। বাজারে এখন শর্করা বিহীন দুধ পাওয়া যায়। এই শর্করা বিহীন দুধের পুষ্টি গুণাবলীর মাঝে কোনো পরিবর্তন নেই। এর স্বাদ, পুষ্টি সব একই থাকে। তাই বলা যায় যে, আপনি শর্করা অসহিষ্ণু হলেও দুধ পান করতে পারেন। এই শর্করা বিহীন দুধ বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে তৈরী করা হয়। তাই এটি স্বাস্থ্যসম্মত।

ভ্রান্ত ধারণা ৭ঃ আপনি যদি বাইরে থেকে প্যাকেটজাত দুধ ক্রয় করেন তবে তা ফুটিয়ে পান করতে হবে।

ভ্রান্ত ধারণা ৭ঃ আপনি যদি বাইরে থেকে প্যাকেটজাত দুধ ক্রয় করেন তবে তা ফুটিয়ে পান করতে হবে; Image Source: scoopwhoop.com

আমাদের প্রায় সবার মাঝেই এই ধারণা বিদ্যমান। বেশীরভাগ মানুষই মনে করেন যে, প্যাকেটজাত দুধ ক্রয় করলে তা অবশ্যই ফুটিয়ে পান করতে হবে। এই ভ্রান্ত ধারণার পিছনে কারণ হলো সবাই ভাবেন যে, প্যাকেটজাত দুধ সরাসরি সংগ্রহ করে বাজারজাত করা হয়। কিন্তু এই ধারণা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। দুধ প্যাকেটজাত করার আগে অনেকগুলো ধাপ অতিক্রম করতে হয়। দুধ পাস্তুরিত করা হয়, পাস্তুরিত করার ফলে দুধের মাঝে বিদ্যমান সব জীবাণু, ব্যাক্টেরিয়া নষ্ট হয়ে যায়। অর্থাৎ এই দুধ ফুটিয়ে আর জীবাণুমুক্ত করতে হয় না। তবে আপনি যদি গরম দুধ  খেতে পছন্দ করেন তবে খাওয়ার আগে গরম করে নিতে পাড়েন কিন্তু প্যাকেটজাত দুধ ফুটিয়ে পান করার প্রয়োজন নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *