যেকোনো প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারার ৭টি উপায়

একটি প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতি বা কালচার বলতে বোঝায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যক্তিত্ব। তবে কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিত্ব বর্ণনা করা খুব সহজ নয়। আপনি কি কখনো ভেবেছেন, আপনার প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতি কীভাবে বর্ণনা করবেন অথবা প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতি বর্ণনা করার উত্তরটি কেমন হতে পারে। সাধারণত কোনো প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতি বর্ণনা করার জন্য এখনো পর্যন্ত সার্বজনীন কোনো পরিভাষা বা সংজ্ঞা নেই।

চাকরিতে প্রবেশ করার পূর্বে একটি প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা খুবই জরুরী; Source: medium.com

সাধারণত কর্মীদের প্রতিষ্ঠানের প্রতি সন্তুষ্টি, কাজের ভারসাম্য, প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা, কার্যকর নেতৃত্ব থেকে শুরু করে কর্মকর্তাদের আচরণসহ অন্যান্য সব উপকরণগুলো প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে। পাশাপাশি আরও কিছু বিষয় রয়েছে। যেমন সাংগঠনিক বিশ্বস্থতা, কর্মীদের একে অপরের সাথে সম্পর্ক, অর্থবহ কাজ, কর্মীদের ক্ষমতায়ন করা, প্রতিষ্ঠানের প্রকৃতি, স্বকীয়তা, প্রতিষ্ঠানের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলো।

প্রতিষ্ঠানের আচরণ একজন কর্মচারীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ; Source: medium.com

যেকোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে যোগ দেওয়ার পূর্বে আপনি অবশ্যই প্রতিষ্ঠানটির সংস্কৃতি সম্পর্কে গবেষণা করতে পারেন। মূলত আপনি কোন ধরনের কাজের সংস্কৃতি পছন্দ করেন অথবা আপনার বিশ্বাস এবং মূল্যবোধের সাথে আপনি যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চাচ্ছেন তাদের বিশ্বাস এবং মূল্যবোধের সামঞ্জস্য রয়েছে কিনা, এই বিষয়গুলো জেনে নিতে পারেন। আজকের লেখাটি মূলত কোনো প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতি জানতে পারা সম্পর্কে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক কোনো প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে পারার ৭টি পদ্ধতি সম্পর্কে।

১. গ্লাসডোর ডটকমের রিভিউ

সম্ভবত কোনো প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য সর্বাধিক পরিচিত ওয়েবসাইট হল গ্লাসডোর ডটকম। এখানে বিভিন্ন নামিদামি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী কর্মকর্তারা তাদের বর্তমান ও প্রাক্তন প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতি তথা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে রিভিউ দিয়ে থাকে। এছাড়াও ওয়েবসাইটটি ইউজারদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ইন্টারভিউ বোর্ডের প্রশ্নগুলোর তালিকা তৈরি করে।

কোনো প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতি জানতে পারার সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম গ্লাসডোর ডটকম; Source: glassdoor.com

এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতনের বার্ষিক তালিকা এবং চাকরির জন্য সেরা প্রতিষ্ঠানগুলোর বার্ষিক তালিকা তৈরি করে থাকে। একজন চাকরি প্রত্যাশী ব্যক্তি গ্লাসডোর ডটকমের সাহায্য নিয়ে খুব সহজেই একটি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে পারে।

২. অন্যান্য সাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করা

দ্য মিউজ ও ক্যারিয়ার বিলস ডটকমের মতো ওয়েবসাইটগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে পর্যালোচনা করে থাকে। সাইটগুলোতে যে কেউ চাইলেই ফ্রিতে একাউন্ট করে তাদের ওয়েবসাইট থেকে যেকোনো প্রতিষ্ঠানের মূল্যায়ন যাচাই করে নিতে পারে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা এই ওয়েবসাইটগুলোতে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে রিভিউসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে থাকেন। সুতরাং আপনি চাইলেই এই ধরনের যেকোনো ওয়েবসাইট থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন।

৩. সোশ্যাল মিডিয়া থেকে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে পারা

বর্তমানে সারা পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে সম্পর্ক রয়েছে। সকল প্রতিষ্ঠান না হলেও, প্রায় অধিকাংশ ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোর ফেইসবুক পেইজ, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার পেইজের মতো সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে তাদের অফিসিয়াল একাউন্ট রয়েছে। সেখানে তাদের প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত বিভিন্ন পোস্ট থাকে।

সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে আপনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন; Source: tech.economictimes.indiatimes.com

যেখানে গ্রাহকরা বিভিন্ন প্রশ্ন করে থাকে এবং প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সেগুলোর উত্তর দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানের পেইজগুলোতে গ্রাহকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রতিষ্ঠানটি কতটুক আন্তরিকতার সাথে দিয়ে থাকে, সেগুলো আপনি লক্ষ্য করতে পারেন। এছাড়াও আপনি দেখতে পারেন কোন প্রতিষ্ঠান কত দ্রুত তাদের গ্রাহকের উত্তর দিতে সক্ষম। আপনি নিজেও সেখানে বিভিন্ন প্রশ্ন করে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন।

৪. অনলাইন গ্রাহক পর্যালোচনা

একটি প্রতিষ্ঠানের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গ্রাহকদের দেওয়া বিভিন্ন রিভিউ দেখে আপনি প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে পারেন। বর্তমানে প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের একটি ওয়েবসাইট থাকে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো সেখানে গ্রাহকদের জন্য রিভিউ সিস্টেম উন্মুক্ত করে থাকে। আপনি সেসব ওয়েবসাইটগুলো ভিজিট করে জানতে পারবেন যে, গ্রাহকরা সন্তুষ্ট কিনা বা গ্রাহকদের কী ধরনের অভিযোগ রয়েছে, অথবা প্রতিষ্ঠানটি প্রকাশ্যে অভিযোগগুলো কীভাবে মোকাবিলা করছে।

প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে দেওয়া গ্রাহকের রিভিউয়ের ভিত্তিতে জানতে পারবেন প্রতিষ্ঠানটির ভালো-মন্দ; Source: forbes.com

প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে পর্যালোচনার একটি উত্তম উপায় হলো তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে দেওয়া গ্রাহকদের রিভিউগুলো। যদিও ইতোপূর্বে রেস্টুরেন্টের মতো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাইটে রিভিউ সিস্টেম থাকতো। তবে বর্তমানে প্রায় সকল প্রতিষ্ঠান তাদের ওয়েবসাইটে গ্রাহকদের জন্য উন্মুক্ত রিভিউ সিস্টেম রেখে থাকে।

৫. কুয়োরা ডটকম

কুয়োরা ডটকম হচ্ছে আমেরিকার একটি জনপ্রিয় ওয়েবসাইট। যেখানে বিভিন্ন মানুষেরা প্রশ্ন পোস্ট করে থাকেন এবং উত্তর দিয়ে থাকেন বিভিন্ন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা। এছাড়াও আপনি চাইলে সেখানে আপনার মতামত দিতে পারেন। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছাড়াও বিভিন্ন বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী কর্মকর্তাগণ সেখানে প্রশ্নকারীদের উত্তর দিয়ে থাকেন। কুয়োরা ডটকম ব্যবহার করে আপনি খুব সহজেই একটি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে পারেন।

৬. লিঙ্কডইন থেকে তথ্য সংগ্রহ করা

লিঙ্কডইনের সাথে যুক্ত থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর পেইজগুলোতে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সমস্ত কর্মকর্তা কর্মচারীর তালিকা এবং আপনি যাদের সাথে যুক্ত রয়েছেন তাদের ক্যারিয়ারের পথ এবং বিভিন্ন ভিডিওসহ প্রচুর ডাটা সংরক্ষণ থাকে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের লিঙ্কডইন পেইজে সম্পূর্ণ তথ্য দেওয়া থাকে না।

লিঙ্কডইনে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে পারেন; Source: forbes.com

তবে যেসব প্রতিষ্ঠানের লিঙ্কডইন পেইজ রয়েছে, তাদের অধিকাংশই লিঙ্কডইনের পেইজে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে থাকে। লিঙ্কডইনে আপনার একাউন্ট থাকলে, আপনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন।

৭. প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি

একটি প্রতিষ্ঠান ভালো বা খারাপ তা শুধু প্রতিষ্ঠানের চার দেয়ালের ভেতরেই আবদ্ধ থাকে না। সাধারণত প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে থাকা সকল মানুষই প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে জানতে পারে। এছাড়াও প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সুখ্যাতি বা কুখ্যাতি থাকে। যেকোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে প্রবেশ করার পূর্বে অবশ্যই আপনি প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি সম্পর্কে জেনে নিন। অবশ্যই চাকরিতে প্রবেশ করার পূর্বে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জেনে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ, আর চাকরিতে প্রবেশ করার পর হতাশ হওয়া বোকামি।

Feature image Source: blog.indeed.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *