অপছন্দের চাকরিতে মনস্থির করতে যেসব স্বভাব পরিবর্তন করবেন

photo: aimhiredenver

নিজের কর্মক্ষেত্র তথা চাকরি যদি হয় অপছন্দনীয় তবে তার মতো অশান্তি আর কিছুতে নেই! কেননা যে কাজ করে দিনের বেশিরভাগ সময় আমরা অতিবাহিত করি, যে কাজ করে আমরা জীবন ধারণ করি, সেই কাজ যদি স্বস্তির সাথে খুশি মনে না করা যায়, তবে তা মহা বিপত্তির কারণ।

photo: aimhiredenver

তবে ঢালাওভাবে যেকোনো চাকরি কোনো কোনো মানুষের কাছে অপছন্দনীয় হয়ে থাকে। এমন ক্ষেত্রে বুঝতে হবে সমস্যা চাকরি বা কর্মক্ষেত্রের নয়, সমস্যা কর্মীর। নিজের কর্মক্ষেত্র পাল্টে ফেলার বদলে সবার আগে পাল্টাতে হবে কর্মীর দৃষ্টিভঙ্গি এবং আচরণ।

আমি ইতিপূর্বে এ বিষয়ে একটি নিবন্ধ লিখেছি। আজ দ্বিতীয় পর্বে অপছন্দনীয় চাকরির ব্যাপারে কী কী করণীয় তা নিয়ে আরো কিছু পরামর্শ আলোচনা করার চেষ্টা করবো। আশা করি এই নিবন্ধটিও আপনাদের কর্মজীবন আরো সুন্দরভাবে সাজাতে সাহায্য করবে।

১. নতুন চাকরির ব্যবস্থা না করে বর্তমান চাকরি ছাড়বেন না

যদি আপনার মন্দ লাগার যথাযথ কারণ অফিসকে জানানোর পরও অফিসের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ না নেওয় হয় এবং আপনার কথায় যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া না হয়, তবে হঠাৎ করে চাকরি ছেড়ে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, চাকরি ছেড়ে দিলেই স্বস্তি ফিরে আসবে। কিন্তু চাকরি ছাড়ার পর দেখবেন স্বস্তি তো ফেরেইনি, উপরন্তু অর্থনৈতিক কারণে আরো নানান সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। তখন বেকারত্বের নতুন ফাঁদে পড়বেন।

photo: sdwrec

সুতরাং নিজের আচরণ এবং দৃষ্টিভঙ্গিতে সামান্য পরিবর্তন এনে কষ্ট করে হলেও চাকরিতে অবস্থান করুন। যদি সত্যিই আপনাকে চাকরি ছাড়তে হয়, তবে আগে অন্য একটি চাকরি নিশ্চিত করে নিন। সাথে সাথে চেষ্টা করুন নতুন চাকরিটি যেন আপনার মনের মতো হয়। অন্ততপক্ষে বর্তমান চাকরিতে যেসব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, তা যেন মোকাবেলা করা না লাগে।

২. সবসময় সেরা কর্মী হওয়ার চেষ্টা করুন

আপনি আপনার চাকরি অপছন্দ করেন। আবার অফিস বা সহকর্মীদের সাথে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে চলেন না। নতুন কোনো চাকরিও খোঁজেন না, বর্তমান চাকরিও ছাড়েন না, অথচ নিজে নিজে এই চাকরি নিয়ে সবসময় অস্বস্তি ভোগ করেন, এর অর্থ হল আপনি আসলে ভালো কর্মী না।

এই সবগুলো বিষয় একসাথে আপনার অপেশাদারী মনোভাব ফুটিয়ে তোলে। সুতরাং, এ ব্যাপারে আগে সচেতন হন। আপনার বর্তমান চাকরি আপনি যতটা খুশি ঘৃণা করতে পারেন, তাতে কেউ আপনার মনোভাব জানতে আসবে না। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি বর্তমান চাকরিতে বহাল আছেন, ততক্ষন পর্যন্ত আপনাকে নিজের সেরাটা দিয়ে নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যেতে হবে।

photo: itsaboutpeople

যারা ইচ্ছা করে কাজে ফাঁকি দেয়, আবার একই সাথে এই কাজে ফাঁকি দেওয়াকে নিজের কাছে বৈধতা দেওয়ার জন্য এমন নানান অজুহাত সৃষ্টি করে। এগুলো আসলে কর্মবিমুখ মানুষের স্বভাব। আপনি নিশ্চয়ই এই শ্রেণীর নয়। আপনার মধ্যে যদি এই প্রবণতা থাকে তবে আগে তা দূর করুন। অফিসের কর্মপরিবেশ ঠিক করার পূর্বে নিজে মানসিকভাবে সৎ হন। কেননা এমন খোঁড়া অজুহাত দেখিয়ে বর্তমান চাকরি ছেড়ে আপনি যেখানেই যেতে চাইবেন সেখানেও আপনাকে কাজ করতে হবে। কাজ ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান আপনাকে অকারণে সম্মানী দিবে না। সুতরাং নিজের মনকে কাজের জন্য আরো শক্তিশালী ও প্রস্তুত করুন।

৩. ইতিবাচক মনোভাবের চর্চা করুন

আপনি আপনার চাকরি অপছন্দ করেন তার অর্থ এই নয় যে, এই চাকরি এবং এই অফিস সম্পর্কিত সবকিছুই আপনি অপছন্দ করেন। বর্তমান চাকরিতে আপনার পছন্দনীয় এবং অপছন্দনীয় বিষয়গুলোর একটি তালিকা তৈরি করুন। তারপর মিলিয়ে দেখুন পছন্দনীয় বিষয়ের সংখ্যা বেশি, নাকি অপছন্দনীয় বিষয়ের সংখ্যা বেশি। দেখবেন পছন্দনীয় বিষয় বেশি।

কেননা অপছন্দনীয় বিষয় বেশি হলে সেটা কোনো ভাবে ন্যুনতম কর্মপরিবেশের মধ্যে পড়বে না। তখন সমস্যা শুধু আপনার না, অন্যান্য সিংহভাগ কর্মীরও হবে।

photo: wishes msg

তাছাড়া সবকিছুর ভালো এবং মন্দ দিক আছে। সুতরাং যদি আপনার পছন্দনীয় বা আপনার জন্য কল্যাণকর বিষয়ে বেশি হয়ে থাকে তবে সমস্যা সমাধান! একটি বা দুটি নেতিবাচক কারণে বিক্ষিপ্ত হওয়ার বদলে এই কাজের ভালো এবং গঠনমূলক দিক নিয়ে বেশি চিন্তা করুন। এই মুহূর্তের বিক্ষিপ্ততার চেয়ে ভবিষ্যতের দিকে বেশি মনোযোগ দিন। হয়তো আপনি এই চাকরির বর্তমান অবস্থাকে অপছন্দ করেন, কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে এই চাকরি আপনাকে যে জায়গায় পৌঁছে দিবে তা হয়তো স্বপ্ন দেখেন! সুতরাং সবদিক বিবেচনা করে নিজের কাজে ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করুন।

৪. অন্যদের বিরক্তির কারণ হবেন না

কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তিত্বহীন মানুষকে কেউ পছন্দ করে না। আপনি যদি সবসময় অস্বস্তিতে ভোগেন, অশান্তি করেন এবং অন্য কলিগদের সাথে নিজের কাজের মন্দ দিক নিয়ে ঘ্যানঘ্যান করেন, তবে অল্পদিনেই সবাই আপনার নেতিবাচক ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে বুঝে যাবে। তাতে স্বভাবতই সহকর্মীরা আপনাকে অপছন্দ করবে এবং কর্মক্ষেত্রের সব বন্ধুকে আপনি অচিরেই হারাবেন।

photo: complete wellbeing

সুতরাং এমন ব্যক্তিত্ব বজায় রাখুন যেন আপনি সহকর্মীদের কাছে কোনো খোলা বইয়ে পরিণত না হন। নিজের সব কথা অন্যকে বলার চেয়ে নিজের মধ্যে রাখাই ভালো। তাতে সুন্দর ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পায়।

উপরিউক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়ার পরও যদি আপনার সমস্যা সমাধান না হয়, তবে অবশ্যই আপনার বর্তমান চাকরি ত্যাগ করা উচিত। তবে কোনোভাবেই তা অসম্মানজনক উপায় নয়। তবে আবারও বলছি, আগে নতুন চাকরি খুঁজে নিয়ে, তারপর সম্মানজনক উপায়ে অস্বস্তিকর চাকরি থেকে বিদায় নিন, অথবা বিচক্ষণতার সাথে সকল সমস্যার সমাধান করে বর্তমান চাকরিতে বহাল থাকুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *