অর্থ ব্যবস্থাপনা এবং বিনিয়োগের সাধারণ কিছু দক্ষতা যা সব শ্রেণী-পেশার মানুষের জন্য প্রয়োজনীয়

photo: aarp

সাধারণ অর্থ আমরা বুঝি অর্থ ব্যবস্থাপনা এবং বিনিয়োগ শুধুমাত্র ব্যবসায়ীদের জন্য প্রযোজ্য। যারা ব্যবসা করেন বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন এই বিষয়গুলো শুধুমাত্র তাদেরই দৈনন্দিন হিসাব নিকাশের বিষয়। কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না, অর্থ ব্যবস্থাপনা এবং বিনিয়োগের কিছু সাধারণ দক্ষতা আছে, যা টিকে থাকার জন্য সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে অবশ্যই থাকতে হয়।

photo: due

অর্থ ব্যবস্থাপনার অসাধারণ দক্ষতাগুলো যদি আপনার মধ্যে না থাকে তাহলে আপনি যে পেশার মানুষই হয়ে থাকেন না কেন, ব্যক্তি এবং কর্ম জীবনে ব্যর্থতা অনিবার্য! কেননা সব পেশার মানুষ এই অর্থ রোজগার করে থাকেন এবং তা দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব চাহিদা পূরণ করে থাকেন।

সুতরাং সরাসরি অর্থনীতি বিষয়ক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত না হলেও আপনাকে অর্থের সাথেই সবসময় জীবনযাপন করতে হয়। তাই অর্থ ব্যবস্থাপনা এবং বিনিয়োগের কিছু সাধারণ দক্ষতা আপনার মধ্যে থাকতেই হবে। এই নিবন্ধে আমি এমন কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করব আমার বিশ্বাস এই আলোচনাটি আপনাদের দৈনন্দিন জীবনকে আরো বেশি সহজ এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে কাজে আসবে।

১. ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার

উন্নত বিশ্বে দৈনন্দিন কেনাকাটা এবং লেনদেনে নগদ অর্থের ব্যবহার প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে বেশিরভাগ মানুষ লেনদেনের জন্য ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই অসতর্কভাবে তাদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে, যা কেনাকাটায় অর্থ সাশ্রয়ের বদলে খরচ বাড়িয়ে দেয়!

photo: upgraded points

দৈনন্দিন বিভিন্ন লেনদেন ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার, কার্ডের ব্যালেন্স, কার্ড ব্যবহারের সীমা এবং অর্থ পরিশোধের সময়সীমা। এসব বিষয়ে আপনাকে ভালোভাবে জানতে হবে। আপনার ব্যবহৃত ক্রেডিট কার্ডে সর্বোচ্চ ব্যয়সীমা সম্বন্ধে সচেতন থেকে আপনার দৈনন্দিন লেনদেন নিশ্চিত করতে হবে।

কেননা নির্ধারিত অর্থের বেশি আপনি কখনোই খরচ করতে পারবেন না। সুতরাং আপনি যদি মাসের শুরুতেই বেহিসেবি খরচ করেন তাহলে মাসের শেষার্ধে গিয়ে আপনাকে বিপাকে পড়তে হবে। কেননা আপনার চাকরির স্যালারি নির্দিষ্ট এবং আপনার ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারের সীমাও নির্দিষ্ট।

২. স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ

স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ সম্বন্ধে জানা খুব বেশি কঠিন বিষয় নয়। স্টকমার্কেট শব্দটি শুনলেই আমরা যতটা ভীত হয়ে যায় এখানে বিনিয়োগ আসলে ততটা ভীতিকর নয়। এর জন্য বিশেষ শিক্ষার প্রয়োজন হয় না। কিছুদিন জানার চেষ্টা করলেই আপনি এ বিষয়ে দক্ষ হয়ে উঠবেন। আপনাকে জানতে হবে কিভাবে বিনিয়োগ করলে অর্থ বৃদ্ধি পায় এবং কোন কোন সম্ভাব্যতা সামনে রেখে বিনিয়োগ ক্ষেত্রে নির্বাচন করতে হয়।

photo: steemit

কাজ করতে শুরু করলে আপনা থেকে আপনার পোর্টফোলিও বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং আপনি ধীরে ধীরে সবকিছু সম্বন্ধে স্পষ্ট হয়ে উঠবেন।

আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, আমি স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ করব না, এই ব্যবসায় আমার কোনো ইচ্ছা নেই। তবুও স্টক মার্কেট সম্বন্ধে আপনার সম্যক ধারণা থাকতে হবে। কেননা স্টক মার্কেটের লেনদেনের সাথে আপনার জীবনের অনেক কিছুই জড়িত। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম, দেশের বাৎসরিক বাজেট, আপনার জীবন মানসহ এমন অনেক বিষয় স্টক মার্কেটের সাথে সম্পর্কিত। সুতরাং আধুনিক বিশ্বের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে স্টক মার্কেট সম্বন্ধে আপনার স্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে।

৩. চাকরি ছাড়া অর্থোপার্জনের কলাকৌশল

আমাদের সিংহভাগ শিক্ষিত, আধা-শিক্ষিত তরুণ যেখানে চাকরিকে অর্থ উপার্জনের একমাত্র উপায় হিসেবে জানে সেখানে আপনাকে জানতে হবে চাকরি অর্থ উপার্জনের একমাত্র উপায় নয়। পৃথিবীতে নানান ধরনের উদ্যোক্তা আছে এবং ছোট, বড় নানান ব্যবসা করে তারা অর্থ উপার্জন করে এবং সুখে থাকে।

তবে আপনাকে উদ্যোক্তাই হতে হবে এমন কোনো কথা নেই, অথবা চাকরিই করতে হবে এমনও কোনো কথা নেই। তবে চাকরি ছাড়াই অর্থ উপার্জনের কলাকৌশল আপনাকে রপ্ত করতে হবে। কোনো জাদুমন্ত্র, লটারি বা বিশেষ সুযোগ-সুবিধা নয়, যেকোনো আপদকালীন অবস্থায় চাকরি ছাড়াই অর্থ উপার্জন করে টিকে থাকার দক্ষতা আপনার মধ্যে থাকতে হবে।

photo: aarp

সুতরাং শুধু চাকরির উপর নির্ভরশীল না হয়ে, নিজেকে নানান কাজে দক্ষ করে তুলুন। চাকরির পাশাপাশি অর্থ উপার্জনের বিভিন্ন দক্ষতা অর্জন করুন। নিজের নির্ধারিত কাজের পর এইসব দক্ষতা অর্জন করতে সময় ব্যয় করুন, যা আপনাকে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী এবং সুখী করে তুলবে।

উদ্যোক্তা না হয়েও যদি উদ্যোক্তার সব গুণাগুন আপনার মধ্যে থাকে তবে যেকোনো বিরুপ পরিস্থিতি মোকাবেলা করা আপনার পক্ষে সহজ হবে। তাই উদ্যোক্তা হন বা চাকরি করুন আপনাকে নির্দিষ্ট কাজ বা চাকরি ছাড়াই অর্থোপার্জনের দক্ষতা অর্জন করতে হবে।

৪. ব্যক্তিগত অর্থ ব্যবস্থাপনা দক্ষতা

আমাদের চারপাশে অধিকাংশ মানুষ পর্যাপ্ত অর্থ উপার্জন করার পরও সুখী হতে পারে না, অথবা সর্বোচ্চ পর্যায়ের সম্মানি পাওয়ার পরও দৈনন্দিন সব চাহিদা পূরণ করতে পারে না। এক্ষেত্রে বুঝতে হবে অর্থের অপ্রতুলতা নয়, বরং তাদের বিচক্ষণতার অপ্রতুলতার কারণেই তারা অসুখী হয়ে থাকে।

photo: life and my finances

সুতরাং এই পরিস্থিতি এড়াতে আপনাকে ব্যাক্তিগত অর্থ ব্যবস্থাপনার দক্ষতা রপ্ত করতে হবে। এর অর্থ হল আপনাকে জানতে হবে, কিভাবে মাসের নির্দিষ্ট স্যালারি থেকে কিছু অর্থ সঞ্চয় করতে হয়, কিভাবে প্রতি মাসের উপার্জিত অর্থ দিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় সব চাহিদা পূরণ করতে হয়, কিভাবে অন্যান্য সব বিল পরিশোধ করার পূর্বে ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে হয়।

সার্বিকভাবে দৈনন্দিন এবং মাসিক অর্থ ব্যবস্থাপনার দক্ষতা আপনাকে আরো বেশি সুখী স্বাচ্ছন্দপূর্ণ জীবন উপহার দিবে। প্রতি মাসের নির্দিষ্ট অংকের টাকা যদি আপনি সব খাতে হিসাব করে ব্যয় করতে পারেন তবে সারা মাসে আপনার কোনো ঘাটতি মোকাবেলা করতে হবে না। অথবা কোনো খারাপ পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে না। সুতরাং শুধু অর্থ উপার্জন করলে হবে না, তা যথার্থ ব্যবস্থাপনার দক্ষতাও আপনার মধ্যে থাকতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *