কসমেটোলজিস্ট হতে চাইলে

যে ব্যক্তি প্রসাধনী ব্যবহার ও সৌন্দর্য চিকিৎসায় দক্ষ বা প্রশিক্ষিত থাকে, তাকে কসমেটোলজিস্ট বলা হয়। অনেক সময় কসমেটোলজিস্টদের প্রফেশনাল বিউটিশিয়ানও বলা হয়ে থাকে। বিউটি থেরাপি থেকে শুরু করে মেডিকেল ট্রিটমেন্ট সব ধরণের কাজে নিযুক্ত থাকেন একজন কসমেটোলজিস্ট। সাধারণত মানুষ এখন রূপ চর্চার জন্য প্রফেশনাল বিউটিশিয়ানদের শরণাপন্ন হয়ে থাকেন। তাই প্রফেশনাল বিউটিশিয়ানদের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

Image Source: athomeprep.com

এ পেশার ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট পদবিন্যাস নেই বরং বিষয়টি একেবারেই প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ। কসমেটোলজিস্ট হিসেবে নিয়োগ পেলে কিছু সময় পরে পদোন্নতি পেয়ে সাধারণত সিনিয়র কসমেটোলজিস্ট এবং পরবর্তীতে অ্যাসিস্ট্যান্ট কসমেটোলজিস্ট হিসেবে  কাজ করতে পারেন। যারা বেশ কিছুদিন কসমেটোলজিস্ট হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা লাভ করেন তারা এ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নিজস্ব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে  পারেন। এক্ষেত্রে প্রথম দিকে হয়তোবা আপনাকে কিছুটা কঠিন পথ পাড়ি দিতে হতে পারে, তবে কাজের মান ভালো হলে কিছু সময় পরে হয়তোবা আপনার প্রতিষ্ঠানও বিউটি ইন্ডাস্ট্রিতে একটি বড় নাম হতে পারে।

কাজের ধরন

বর্তমানে কসমেটোলজির বিভিন্ন শাখা তৈরি হয়েছে। হেয়ার, স্কিন, বডি ট্রিটমেন্ট ইত্যাদি যেকোনো ক্ষেত্রে কাজ করতে পারেন। কাজের ক্ষেত্র অনুযায়ী একজন কসমেটোলজিস্ট হেয়ার স্টাইলিস্ট, মেকআপ আর্টিস্ট, স্কিন কেয়ার স্পেশালিষ্ট, নেল টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করতে পারবেন। চলুন কসমেটোলজির ক্ষেত্রগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই,

হেয়ার সাইলিস্ট

একজন হেয়ার সাইলিস্ট গ্রাহকের চুলের ধরন বুঝে কোন ধরনের হেয়ার ট্রিটমেন্ট করতে হবে, চুলে কোন কালার দিলে ভালো লাগবে, ক্লায়েন্টের ফেইস কাটিং অনুযায়ী মানানসই হেয়ার কাটিং সম্পর্কে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এছাড়াও হেয়ার স্ট্রেটনিং, পাম্পিং, কার্লিং ও হেয়ার স্টাইলিং করে দেওয়াও একজন হেয়ার সাইলিস্টের কাজ।

স্কিন কেয়ার স্পেশালিষ্ট

একজন স্কিন কেয়ার স্পেশালিষ্ট গ্রাহকের ত্বকের ধরন বুঝে বিভিন্ন ধরনের স্কিন  ট্রিটমেন্ট, স্কিন কেয়ার, স্কিন থেরাপি সংক্রান্ত যাবতীয় সেবা প্রদান করে থাকেন।

নেল আর্টিস্ট

বর্তমানে তরুণীদের কাছে নেল আর্ট খুবই জনপ্রিয়। নিমেষে নজর কাড়তে নেল আর্টের জুড়ি মেলা ভার। এক্সট্রা লম্বা নখ লাগিয়ে সে নখে বিভিন্ন ধরনের নেল কালার, নেলস্টিকার, স্টোন লাগিয়ে নেল আর্ট করা হয়। এ কাজটি যে করে থাকেন তাকে  নেল আর্টিস্ট বলা হয়।

মেকআপ আর্টিস্ট

একজন মেকআপ আর্টিস্ট তার গ্রাহকের মেকওভার করে দেন। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী পার্টি মেকওভার, ব্রাইডাল মেকওভার ইত্যাদি করা একজন মেকআপ আর্টিস্টের কাজ।

শিক্ষাগত যোগ্যতা

কসমেটোলজিস্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে ধরাবাঁধা কোন শিক্ষাগত যোগ্যতা সাধারণত লাগে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যাদের কসমেটোলজিতে কোর্স করা আছে এমন কাউকে নিয়োগ দিতে আগ্রহী থাকে প্রতিষ্ঠানগুলো। কিছু ক্ষেত্রে মাধ্যমিক বা ও লেভেল এবং উচ্চমাধ্যমিক বা এ লেভেল পাস করেছেন এমন যোগ্যতাও নিয়োগের সময় উল্লেখ করা থাকে।

একজন কসমেটোলজিস্ট দক্ষতা

একজন কসমেটোলজিস্টের ভালো গ্রাহক সেবা প্রদানের দক্ষতা, যোগাযোগ করার দক্ষতা, ভালো শ্রোতা, সৃজনশীলতা, পরিশ্রমী হতে হবে।  বিউটি প্রোডাক্ট সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। এছাড়াও মানুষের ত্বকের ধরন নিয়ে সম্যক ধারণা থাকা বেশ জরুরী। আধুনিক যুগে বিউটি ট্রিটমেন্ট ব্যবহৃত হচ্ছে নানা ধরনের যন্ত্রাংশ, এসব যন্ত্রাংশ সম্পর্কেও ধারণা থাকতে হবে।

কোর্স

কসমেটোলজিস্ট হতে চাইলে রূপ চর্চার বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিশদভাবে জানতে হবে। এজন্য বিভিন্ন ধরনের কোর্স করা যেতে পারে। এই বিষয়ে রয়েছে ছয় মাস মেয়াদি বেসিক ফুল কোর্স, তিন বা আড়াই মাস
মেয়াদি লং কোর্স ও এক মাস বা ১৫ দিন মেয়াদি কিছু শর্ট কোর্স। শর্ট কোর্সগুলোতে সাধারণত একটি নির্দিষ্ট বিষয়েই প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। আবার লং কোর্সগুলোতে পরস্পরের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ একাধিক বিষয় নিয়ে প্যাকেজ আকারে কয়েকটি আইটেম শেখানো হয়।

Image Source: resource.workable.com

বেসিক ফুল কোর্সের আওতায় মূলত সব ধরনের রূপ চর্চার বিষয়গুলোই থাকে। কসমেটোলজিস্ট হতে চাইলে বেশিরভাগ কাজই করতে হবে হাতে কলমে। কোর্সের প্রায় ৭০ ভাগ হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। বাকি ৩০ ভাগ থাকে রূপ চর্চার তাত্ত্বিক পড়ালেখা। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানেই ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ থাকে। নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে চাইলে এ সুযোগ কে কাজে লাগাতে পারেন।

তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক উভয় ক্ষেত্রেই উত্তীর্ণ হতে হবে সার্টিফিকেট পেতে হলে। প্রতিষ্ঠান ভেদে কোর্সের খরচ কমবেশি হয়ে থাকে। বেসিক ফুল কোর্সে ৫০,০০০- ১,২০,০০০ হাজার টাকা লাগতে পারে। লং কোর্সগুলোর খরচ ২০,০০০- ৬৫,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। শর্ট কোর্সগুলো করা যাবে ৫,০০০-২৫,০০০ টাকায়।

কাজের সুযোগ

সারা বিশ্বে তথা বাংলাদেশে এ ধরনের পেশার উন্নতি হচ্ছে খুব দ্রুত। বর্তমানে মানুষের মধ্যে ফ্যাশন এবং বিউটি সচেতনতা বাড়ার কারণে বিউটি কেয়ার ইউনিট, পার্লার, সেলুন, স্পা সেন্টার ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের চাহিদা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেইসাথে এসব প্রতিষ্ঠানে কাজের চাহিদা কয়েক বছরে কয়েক গুণ বেড়েছে। এছাড়া এ বিষয়ে কোর্স করে আপনি নিজের প্রতিষ্ঠান খুলতে পারেন। এর বাইরে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও কসমেটলজির প্রশিক্ষণের কেন্দ্রগুলোতে আপনি প্রশিক্ষক বা কনসালটেন্ট হিসেবে যোগদান করতে পারেন।

Image Source: beautischooldirectory.com

কসমেটোলজিস্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা কমপক্ষে ১ বছর বলা হয়ে থাকে। আবার কিছু ক্ষেত্রে ৩ থেকে ৪ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়োগের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক থাকে। সাধারণত ৩- ৪ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন প্রার্থীকে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া হয়।

আয় রোজগার

এক্ষেত্রে মাসিক সম্মানীর বিষয়টি কাজ ও প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ। অভিজ্ঞ কসমেটোলজিস্টরা মাসিক ২০,০০০-৩০,০০০ টাকার মতো সম্মানী পেয়ে থাকেন। যারা এ পেশায় নতুন তারা সাধারণত মাসে ১০,০০০- ১৫,০০০ টাকা পেয়ে থাকেন।

Featured Image: alternativebalance.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *