একজন ফার্মাসিস্ট হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার উপায়

কেউ অসুস্থ হলে সুস্থ হওয়ার জন্য প্রথমেই যে জিনিসটির প্রয়োজন পড়ে তা হলো ঔষধ, আর এই ঔষধ তৈরি প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিটি হলেন ফার্মাসিস্ট।

বর্তমানে আমাদের দেশে ঔষধ ক্ষেত্রের দ্রুত বিস্তার ঘটছে। বাংলাদেশ এখন ঔষধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পন্ন। দেশের ঔষধের চাহিদার ৯৮ ভাগই দেশীয় ওষুধ কোম্পানিগুলো পূরণ করে থাকে। সেইসাথে পৃথিবীর ১০২ টি দেশে বাংলাদেশ ঔষধ রপ্তানি করছে।

দেশে ২০০টির বেশি ঔষধ কোম্পানি রয়েছে। সেই সঙ্গে ইতিবাচক বিষয় হচ্ছে যে, ঔষধ কোম্পানিগুলো এই খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। এতে এ ক্ষেত্রে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।

Image Source: insidemonkey.com

দেশের ঔষধের মান ঠিক রাখতে দক্ষ ফার্মাসিস্টের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রসার ঘটছে ফার্মেসি শিক্ষারও। সায়েন্সের শিক্ষার্থীদের কাছে ফার্মাসি বিষয়টি দিন দিন পছন্দ তালিকার শীর্ষে উঠে আসছে। ফার্মাসিস্টদের চাকরির প্রচুর সুযোগ থাকায় বর্তমানে শিক্ষার্থীরা ফার্মাসিতে পড়তে আগ্রহী হয়ে উঠছে।  বর্তমানে পাবলিক ও প্রাইভেট মিলিয়ে ৪০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্ডারগ্রাজুয়েট লেভেলে ফার্মাসি পড়ানো হচ্ছে।

ফার্মাসিস্টের কাজের ধরণ

ফার্মাসিস্টদের কাজের মধ্যে রয়েছে ঔষধ গবেষণা, প্রস্তুত, মান নিয়ন্ত্রণ, সংরক্ষণ, সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, স্থিতিশীলতা, গবেষণা, বিপণন, আইন ও নিয়ম মোতাবেক ঔষধ তৈরি করা হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে নজর রাখাসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিভিন্ন কাজ।

একজন ফার্মাসিস্টের কাজের বেশ কয়েকটি ক্ষেত্র রয়েছে। আপনি নিজের পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো ক্ষেত্র বেছে নিতে পারেন। ক্ষেত্র অনুযায়ী একজন ফার্মাসিস্টের কাজের ধরন ভিন্ন হয়ে থাকে। বিভিন্ন ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে,

•     রিটেইল ফার্মাসিস্ট

•     হসপিটাল ফার্মাসিস্ট

•     ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফার্মাসিস্ট

•     রিসার্চ ফার্মাসিস্ট প্রভৃতি

শিক্ষাগত যোগ্যতা

আমাদের দেশে ফার্মাসিতে তিনটি ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ রয়েছে। সেগুলো হলো,

•     ডিপ্লোমা ইন ফার্মাসি (ডি. ফার্ম)

•     ব্যাচেলর অব ফার্মাসি(বি. ফার্ম)

•     ব্যাচেলর অফ ফার্মাসি প্রফেশনাল

এইচএসসিতে পাস করার পর ফার্মাসিতে চার বছর মেয়াদি ব্যাচেলর কোর্সে ভর্তি হতে পারেন। ব্যাচেলর অফ ফার্মাসি সম্পূর্ণ করে মাস্টার্স অফ ফার্মাসি কোর্স করতে পারেন। মাস্টার্স অফ ফার্মাসির মেয়াদ এক থেকে দুই বছরের হয়ে থাকে।

Image Source: harcourthealth.com

ব্যাচেলর অব ফার্মাসি প্রফেশনাল ডিগ্রির মেয়াদ পাঁচ বছর। বর্তমানে পাঁচ বছরের এ ডিগ্রিকে আন্তর্জাতিকভাবে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়।

এছাড়াও ফার্মাসিতে ডিপ্লোমা কোর্স করতে পারেন। এ কোর্স বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরিচালিত হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ডিপ্লোমা কোর্সের মেয়াদ ৩ বছরের, তবে কিছু কিছু কোর্স ৪ বছরেরও হয়ে থাকে।

ভর্তি প্রক্রিয়া

শুধুমাত্র বিজ্ঞান বিভাগে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়তে চাইলে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। এসএসসি এবং এইচএসসিতে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট পয়েন্ট প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে পারবে। ভর্তি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।

একজন ফার্মাসিস্টের গুণাবলী

একজন যোগ্য ফার্মাসিস্টের নিম্নলিখিত গুণাবলী থাকতে হবে,

•     পরিশ্রমী

•     সৃজনশীল

•     সৎ

•     নীতিবান

•     যোগাযোগ করার দক্ষতা

•     স্মার্ট

•     উদ্যমী

•     ইতিবাচক মনোভাব

•     দূরদর্শিতা

•     চিন্তা করে বিশ্লেষণ করা এবং সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা।

একজন ফার্মাসিস্টের কাজের উপর নির্ভর করে অনেক মানুষের সুস্বাস্থ্য। এজন্য তাকে সকল ছোটখাটো বিষয়ে খেয়াল রাখতে হয়। এছাড়া ল্যাবরেটরিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে তার। ঔষধের গুণাগুণ, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকতে হবে। পাশাপাশি ঔষধ শিল্পে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ব্যবহারে পারদর্শী হতে হবে।

কোথায় পড়বেন

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মাসিতে পড়ার সুযোগ রয়েছে।

এছাড়াও ফার্মাসির শিক্ষার্থীদের দেশের বাইরে ফার্মাসির যেকোনো বিষয়ে উচ্চতর গবেষণা ও ডিগ্রি নেয়ার পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে।

কাজের ক্ষেত্র

ফার্মাসি একটি বহুমাত্রিক ক্ষেত্র। এখানকার শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষেত্রের ব্যাপ্তি ব্যাপক। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কমিউনিটি স্বাস্থ্য সেবা, আর্মড ফোর্সেস, সরকারি হাসপাতাল, ওষুধ প্রশাসনসহ প্রশাসনিক বিভিন্ন উচ্চ পদে ফার্মাসিস্টরা চাকরি করতে পারেন।

বেসরকারি হাসপাতালে ও ক্লিনিকে ক্লিনিক্যাল ফার্মাসিস্ট, ফার্মেসি ম্যানেজার ছাড়াও প্রশাসনিক বিভাগে ফার্মাসিস্টদের কাজের সুযোগ রয়েছে। ফার্মাসিস্টদের যে কেবল ঔষধ শিল্পেই কাজের সুযোগ আছে তা কিন্তু নয়, স্বাস্থ্য খাতেও তাদের কাজ করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে।

Image Source: verywellhealth.com

বাংবাংলাদেশে দুইশ’র অধিক ঔষধ উৎপাদনকারী কোম্পানিতে একজন ফার্মাসিস্ট ঔষধ উৎপাদন, নতুন ঔষধ আবিষ্কার, মান নিয়ন্ত্রণ, মান নিশ্চিতকরণ, পণ্যের মান বৃদ্ধি, সিজিএমপি ট্রেনিং, ওয়ের হাউস, ওষুধ নিয়ে গবেষণা, প্রযুক্তিগত সার্ভিস বিভাগে ব্যবস্থাপনা বিভাগ, মেডিক্যাল সার্ভিস বিভাগ, মার্কেটিং, মেডিকেল প্রমোশন, ক্লিনিক্যাল সার্ভিস, ট্রেনিং, আন্তর্জাতিক বিপণন বিভাগেও কাজ করতে পারেন।

আবার যারা শিক্ষাক্ষেত্রে কাজ করতে চান, তারা শিক্ষকতা, গবেষণা, স্বাস্থ্য রক্ষা ও উন্নয়ন বিষয়ক প্রশাসনিক দপ্তরেও চাকরি করতে পারেন। এছাড়া দেশের বাইরে কাজ করার সুযোগ তো রয়েছেই। মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের দেশের ফার্মাসিস্টদের বেশ চাহিদা রয়েছে।

একজন ফার্মাসিস্টের মাসিক আয়

ফ্রেশ গ্রাজুয়েটরা নিয়োগ পেলে প্রতিষ্ঠান ভেদে শুরুতেই ১৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন। ভালো পারফরমেন্স দেখাতে পারলে দ্রুতই প্রমোশন হয়। প্রমোশন হলে বেতন ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকা  পর্যন্ত হতে পারে।

এছাড়া এ পেশায় দুই তিন বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে, বিভিন্ন ফার্মগুলোতে চাকরি করে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করার সম্ভাবনা রয়েছে।  সেই সঙ্গে রয়েছে বোনাস, ভাতা, ইনসেনটিভ ও ইনক্রিমেন্টের সুবিধা।

Featured Image: indianpharmacist.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *