একজন খারাপ বস একটি ভালো জবকেও অসহ্যকর, বিরক্তিকর, খারাপ করে দিতে পারেন। এবং একজন একজন ভালো বস একটি বিরক্তিকর জবকেও আপনার চোখে ভালো করে তুলতে পারেন। কমপক্ষে সহনশীল পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারেন। এই কথা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, প্রাইভেট কোম্পানি, সরকারি অফিসের চাকুরীজীবীদের জন্যও প্রযোজ্য। সমান প্রযোজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া কিংবা গবেষণা কাজে নিয়োজিত পিএইচডি, এমেসের শিক্ষার্থীদের জন্যও। কেননা খারাপ, বদমেজাজি একজন বস যেমন একজন চাকুরীজীবীকে হতাশ করেন দিতে পারেন, কাজ করা অসহ্যকর করে দিতে পারেন তেমনি একজন খারাপ শিক্ষক, থিসিস সুপারভাইজাও একজন ছাত্রের কাজ করার, পড়াশোনার আগ্রহ নষ্ট করে দিতে পারেন। এজন্যই আমাদের জানতে হবে কীভাবে একজন খারাপ বসের সাথে মানিয়ে চলতে হবে। আসুন জেনে নেই –

১। নিজেকে বসের কাছে অপরিহার্য করে তুলুন

Image source – vedioblocs

আপনার প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কাজে কৃতিত্ব দেখিয়ে বসের কাছে নিজেকে অপরিহার্য করে তুলুন। তাহলে আপনার সাথে বসের ব্যবহার সহজ, স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তবে কৃতিত্ব নিতে গিয়ে খুব বাড়াবাড়ি করে বসকে বিরক্ত করাটাও উচিত হবে না। তাহলে উল্টো ফল ফলতে পারে। নিজে উদ্যোগ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করুন। যা সবার কাছেই একজন ভাল, দায়িত্বশীল কর্মী হিসেবে আপনার গুরুত্ব প্রমাণ করবে।

২। নিজেকে বসের জায়গায় নিয়ে ভাবুন

Image source – user research friday

অন্যের সাথে খারাপ ব্যবহার করা, অসাদাচরণ করার ক্ষেত্রে প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব কিছু যুক্তি থাকে। কোন খারাপ মানুষই নিজেকে খারাপ ভাবে না। নিজের ভালত্ব নিয়ে তাদের নিজস্ব কিছু যুক্তি থাকে। নিজেকে তাদের জায়গায় নিয়ে ভাবলে বিষয়টা বোঝা যাবে ভালো। আর আপনি যখন তার অসাদাচরণের কারণটি বুঝতে পারবেন, তখন তার প্রতি আপনার মধ্যে সমবেদনা, সহানুভূতি তৈরি হবে। কেননা ইচ্ছা করেই কিংবা অকারণে কেউ সবার সাথে খারাপ ব্যবহার করাটা এক ধরনের দূর্বলতা। আবার অনেকেই নিজের দূর্বলতা ঢাকার জন্য সবসময় রাগের মুখোশ পরে থাকেন। এসব ক্ষেত্রে আপনি বসের জায়গায় নিজেকে রেখে ভাবুন, তার এই সমস্যার কারণটি কী? এই জিনিস বুঝতে পারলে মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা থেকে আপনি মুক্ত হবেন। ফলে কর্মক্ষেত্রে কাজ করা অনেক সহজ হয়ে যাবে। এবং আপনি তার রাগের কারণগুলো বুঝতে পারলে সেসব এড়িয়ে যেতে পারলেই সমস্যা অনেকাংশে সমাধান হয়ে যাবে।

৩। আপনার বসের উর্ধ্বতন কারো কাছে অভিযোগ করবেন না

Image source – wall street journal

বসের কোন ব্যবহারে আপনি কষ্ট পেলে কিংবা কোন জটিলতার সৃষ্টি হলে আপনার বসের চেয়ে উর্ধ্বতন কারো কাছে অভিযোগ করবেন না। অভিযোগ করলে আপনার প্রতি বসের নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে। তার চেয়ে বরং সরাসরি তার সাথেই কথা বলুন। সরাসরি কথা বললে সমস্যা সমাধান হবার সুযোগ তৈরি হয়। তা না করে যদি আপনি অন্য কারো কাছে অভিযোগ করেন তাহলে পরিস্থিতি বরং আরো বেশি ঘোলাটে হবে। এবং আপনার পক্ষে এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করাটা ক্রমেই অসম্ভব হয়ে যাবে।

৪। নিজের নীতির উপর অটল থাকবেন

Image source – launchpad516.com

বসকে রাগানো যাবে না,অভিযোগ করা যাবে না, মেনে চলতে হবে, তার মানে কি এই বস যা বলবেন আপনাকে তাই করতে হবে! অবশ্যই না। আপনার নীতি ও নৈতিকতার বিরুদ্ধ কোন কাজ করতে বললে, করতে চাপ দিলে আপনার উচিত হবে ঠান্ডা মাথায় তার এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করা। এবং অবশ্যই নিজের নীতির জায়গায় অটল থাকা। আপনি যদি এর উপর স্থির থাকতে না পেরে অনৈতিক কিংবা বেআইনী কোন কাজ করে বসেন তাহলে একজন খারাপ বস হিসেবে তিনি আপনাকে চাপে রাখার, এবং ইচ্ছামত কাজ করিয়ে নেবার সুযোগ পাবে। তাতে আপনার কর্মক্ষেত্রে টিকে থাকাটা অনেক বেশি কষ্টকর হয়ে যাবে। যা ক্রমশই আপনার কাজের প্রতি এবং মানিয়ে নেয়ার প্রতি অনীহা তৈরি করবে। এবং আপনি নিজের নীতির প্রশ্নে ঠিক থাকলে বস যত খারাপই হোক, উনি যদি বুঝতে পারেন,তাহলে আপনার প্রতি তার একটা সমীহের ভাব তৈরি হবে। যা আপনার কাজ কে অনেক সহজ করে দেবে। তাই নিজের জায়গায় ঠিক থাকুন।

 ৫। পরিস্থিতির শিকার হবেন না, নিজের ক্যারিয়ারকে গুরুত্ব দিন

Image source – lakeviewconsulting Inc.

এতকিছু করার পরও দেখলেন আপনি আর বসের সাথে মনিয়ে নিতে পারছেন না। কোনভাবেই জবটা চালিয়ে যাওয়া আপনার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তাহলে নিজের মনের উপর জোর করে এই চাকরিতে থাকবেন না। তাতে বস যদি বোঝেন এই জব ছাড়া আপনার আর কোন উপায় নেই,তাহলে আপনি ক্লমশ কোনঠাসা হয়ে যাবেন। তাই যদি সুযোগ থাকে অন্য কোথাও জব নিন, কিংবা নিজেই একটা স্বাধীন কাজ খুঁজুন, উদ্যোক্তা হয়ে যেতে পারেন-কিংবা অন্যকিছু। কিন্তু নিজের ক্যারিয়ারকে গুরুত্ব দিয়ে আগাবেন। সফলতা আপনারই হবে।