অফিসের পিছিয়ে পড়া কর্মীকে গড়ে তোলার জন্য ম্যানেজারের করণীয়

যখন আপনার সহকর্মীর কাজের অগ্রগতি পর্যাপ্ত পরিমাণে হয় না, তখন আপনার অন্যভাবে কাজ এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকে। কিন্তু যখন আপনি একটি টিমের হেড বা প্রধান হোন, আপনি সম্পূর্ণ ভিন্ন অবস্থানে থাকেন।

কাউকে খুব অল্পতেই অবসান দিয়ে দেওয়াটা অনুচিত; Image source: independent.co.uk

একজন ম্যানেজারের কাজে দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে আশা করা হয়, আপনি আপনার টিমের আন্ডার পারফর্মার বা পিছিয়ে পড়া কর্মীদের সাথে এমনভাবে পরিস্থিতি সামলে নেবেন যেন তা আপনার টিম এবং অফিসের জন্য লাভজনক হয়। কাজের ধরণ আর কর্ম ইচ্ছা দেখেই আপনি তাদের ক্রিয়া কৌশল উন্নত করতে সাহায্য করতে পারেন, অথবা তাদেরকে ইস্তফা দিয়ে দিতে পারেন। তবে কাউকে খুব অল্পতেই বিচার করে কোনো কাজ থেকে অবসান দিয়ে দেওয়াটা অনেকটাই অমানবিক আর অনুচিত। যথাযথ ধৈর্য, নির্দেশিকা এবং কৌশলের সঠিক মিশ্রণে আপনি চাইলেই একজন মানুষের দক্ষতা আর কর্ম তৎপরতা বৃদ্ধি করতে পারেন। এমন‌ও হতে পারে, সে হয়ে যাবে আপনার সেরা কর্মীদের একজন।

এমন‌ও হতে পারে, সে হয়ে যাবে আপনার সেরা কর্মীদের একজন; Image source: gcregalo.com

যে সকল কর্মীদের কাজ সময়মতো শেষ হয়নি বা তারা কোনো এসাইনমেন্ট যথাযথভাবে পালন করতে পারে না- এ সকল লো পারফর্মারদের খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন কিছু নয়। কিন্তু যারা দক্ষ কর্মীর মতো ছদ্মবেশ ধরে চলে অথচ তাদেরকে আন্ডার পারফর্মার বলা যায় এধরনের ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা খুব সহজ হয় না। এক্ষেত্রে আপনাকে একজন দক্ষ বিচারকের দায়িত্ব পালন করতে হবে। আপনার টিম অফিসের প্রত্যাশাগুলো পূরণ করতে পারছে কি-না, তারা কর্পোরেট নীতিমালা মেনে চলছে কি-না অথবা তাদের মধ্যে কোনো নেতিবাচক মনোভাব বা আচরণ আছে কি-না, এসব কিছুই লক্ষ্য করে চললে আপনার অফিসের কাজের তুলনায় পিছিয়ে পড়া কর্মীদের আপনি খুঁজে বের করতে পারবেন।

কিছু কিছু লো পারফর্মারদের খুঁজে পাওয়া কঠিন নয়; Image source : soundboardconsulting.com

যদিওবা আন্ডার পারফর্ম্যান্সের লক্ষণগুলো তুলনামূলকভাবে চিহ্নিত করা সহজ, তবে এর মাঝে অন্তর্নিহিত কারণগুলো সহজেই বের করা সম্ভব নয়। হয়তো অফিসের পরিবেশের সাথে আপনার কর্মী খাপ খাওয়াতে পারছে না, অথবা কাজের ধরণগুলো তার জন্য অচেনা, কিংবা হয়তো সে তার ব্যক্তিগত জীবনে কোনো পীড়ার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে- এরকম অনেক কিছুই হতে পারে। এজন্যই হঠাৎ করে কারণ নির্বাচন করে কাউকে কোনো সিদ্ধান্ত না জানিয়ে তাকে সময় দিন, তাকে চেষ্টা করতে দিন। যাতে আপনি কোনো ভুল সিদ্ধান্ত না নিয়ে ফেলেন। অফিসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে কোনো রিপোর্ট প্রকাশ করার আগে আপনি আপনার অবস্থান থেকে আপনার দলকে সুযোগ দিন যেন পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে কোনো আক্ষেপের জায়গা না থাকে। এজন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে পারেন-

১. আপনার পিছিয়ে পড়া কর্মীটির অবস্থান জেনে নিন

অনেক সময়ই দেখি যায় যে একজন ব্যক্তি তার কাজের অবস্থান নিয়ে খুশি নয়। হয়তো সে এখানে কাজ করতেই আগ্রহী নন; কিন্তু কোনো কারণে এখানে বাধ্য হয়ে কাজ করছেন। এক্ষেত্রে আপনার ভূমিকা রাখতে হবে সৌহার্দ্যপূর্ণ। তাকে বোঝাতে হবে যে যদি সে এখানে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ না করে তবে যেন সে কাজটি জোর করে ধরে না রাখে।

যেন সে কাজটি জোর করে ধরে না রাখে; Image source: fool.com

বিখ্যাত অনলাইন শপিং ওয়েবসাইট অ্যামাজন তাদের সাথে কেবল আগ্রহী এবং সন্তুষ্ট কর্মীদের কাজে রাখার ক্ষেত্রেই নয়, বরং সেসকল কর্মীদের‌ও উৎসাহিত করে যারা হয়তো তাদের সাথে কাজ করতে অপারগ। বাৎসরিকভাবে, এই ই-কমার্স জায়ান্ট তার কর্মীদের কিছু সদস্যদের ৫০০০ ডলার পর্যন্ত দিতে রাজি হয় যদি তারা অ্যামাজন ছেড়ে দিতে চায়। একমাত্র শর্ত কেবল – তারা আর কখনও অ্যামাজনের হয়ে কোনো কাজ করতে পারে না। অদ্ভুত শোনালেও আপনার অফিসের কর্মচারীরা আপনার সাথে কাজ করতে কতটা আগ্রহী তা নিশ্চিত করার এটিই সর্বোত্তম উপায়। কর্মক্ষেত্র-সাংস্কৃতিক বিশেষজ্ঞ মাইকেল বার্চেলের মতে “যদি এধরনের পরিস্থিতিতে আপনি আসলে অর্থ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং আপনি থাকতে চান, এর অর্থ হলো আপনি ঐ সংস্থার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং আপনার কাজের প্রতি দায়িত্বশীল।” এরকম কোনো উপরি পাওনার পরিবর্তে হলেও আপনার অনাগ্রহী কর্মীকে খুঁজে বের করতে পারেন।

২. একজন মাইক্রোম্যানেজার হয়ে উঠুন

মাইক্রোম্যানেজমেন্ট হলো কাজের বৃহৎ-ক্ষুদ্র সকল বিষয় সম্পর্কে অবগত থাকা। সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আর তথ্য সংগ্রহের মধ্যে একজন মাইক্রোম্যানেজারের অফিসের কাজ সামলাতে হয়। কর্মক্ষেত্রে মাইক্রো ম্যানেজমেন্টকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয়। কেননা এতে অনেকের কর্মক্ষেত্রের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে মনে করা হয়। কিন্তু যদি আপনি আপনার কর্মীদের অবস্থা সম্পর্কে অবগত হতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও এই কাজটি করতে হবে। যাতে আপনি আপনার কর্মচারীদের সাহায্য করতে পারেন। এজন্য আপনাকে কিছু স্মার্ট উপায় অবলম্বন করতে হবে যেন কর্মীদের এমন মনে না হয় যে আপনি তাদেরকে কোনোরকম নজরদারিতে রাখছেন বা তাদের উপর ভরসা করছেন না। সাপ্তাহিক মিটিং এর মাধ্যমে তাদের থেকে খোঁজ নিয়ে নিন তাদের কাজ সম্পর্কে। প্রয়োজনে তাদের থেকে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে রিপোর্ট নিন প্রতিদিনের কাজের।

কর্মক্ষেত্রে মাইক্রো ম্যানেজমেন্টকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয়; Image source: shift.newco.com

৩. পিছিয়ে পড়া কর্মীদের কর্মক্ষমতা উপলব্ধি করুন

আন্ডার পারফর্মার কর্মচারীদের কাজের শক্তি আর উদ্দীপনা উন্মুক্ত করুন এবং তাকে কাজে লাগান ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য। দলের কোচের ভূমিকা পালন করুন‌। সকলের চেষ্টা আর আন্তরিকতা দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করুন। সকলকে এক সাথে নিয়ে কাজ করুন। সমস্ত কর্মীরা একসাথে কাজ করেই নতুন সম্ভাবনা তৈরি করে। সবার বিশেষ ক্ষমতা জানার চেষ্টা করুন এবং সে অনুযায়ী তাকে কাজ করতে দিন। এক্ষেত্রে যারা লো পারফর্মার আছে তাদেরকেও অন্তর্ভুক্ত করুন। যতক্ষণ না তাদেরকে আপনি কর্মস্থল থেকে বিদায় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, ততক্ষণ তাদের মাঝে কর্ম প্রেরণার যোগান দিন। হয়তো এই সহযোগিতার ফলে তারা নিজেদের মানসিকতাকে আরো দৃঢ় করে আপনার অফিসের লক্ষ্য আর উদ্দেশ্যকে পূরণ করতে সক্ষম হবে।

কোচের ভূমিকা পালন করুন‌।; Image source: forbes.com

আজ থেকেই আপনার পিছিয়ে পড়া কর্মীদের ব্যাপারে ধারণা পাল্টে ফেলুন। তাদের বোঝার চেষ্টা করুন আর সহযোগিতা করুন। শুরুতেই কাউকে অযোগ্য ভেবে তাকে সাহায্য না করার ভাবনা বাদ দিন। তাকে বিতাড়িত করার চিন্তা না করে, তার পটেনশিয়াল বুঝে যথাযথভাবে তাকে গাইড করে সামনে এগুতে সাহায্য করুন। তবেই আপনি নিজে যেমন একজন সফল ম্যানেজার হয়ে উঠতে পারবেন, তেমনি আপনার কর্মীকেও অফিসের একজন অন্যতম দক্ষ কর্মী হিসেবে দেখতে পারবেন।

Feature image source: inc.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *