মাদাম সি জে ওয়াকারঃ শূন্য থেকে সাফল্যের শিখরে

মাদাম সি জে ওয়াকার হলেন শূন্য থেকে সাফল্যের শিখরে যাওয়া মানুষদের মধ্যে একজন। তবে তার অবদান উপেক্ষিতই বলা চলে। ইতিহাসে অবদান রেখে যাওয়া এই মহীয়সী নারীর অজানা কথাগুলোই তুলে ধরা হয়েছে এই লেখায়।

Source: AZ Quotes

ছেলেবেলা 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রদেশ লুইজিয়ানাতে ডেল্টা নামের একটি গ্রামে ১৮৬৭ সালের ২৩শে ডিসেম্বর ওয়াকার জন্মগ্রহণ করেন।  মা-বাবা তার নাম রেখেছিলেন সারাহ্‌ ব্রিডলাভ। সারাহ্‌র পাঁচজন ভাই বোন ছিল; সোলোমন, ওয়েন জুনিয়র, আলেকজেন্ডার, জেমস্‌ এবং লৌভেনিয়া। তার পরিবারের সদস্যরা দাসদাসী ছিলেন এবং বহু বছর ধরে তারা লুইজিয়ানার একটি উপনিবেশে বসবাস করেছেন। কথিত আছে , ১৮৭২ সালে তার মা কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এর পর সারাহ্‌র বাবা দ্বিতীয়বারের মতো বিয়ে করেন। তবে এর কয়েক বছর পর সারাহ্‌র বাবাও মৃত্যুবরণ করেন। যখন মাদামের বয়স কেবল সাত বছর তখন তিনি তার বোন লৌভেনিয়ার বাসায় আশ্রয় নেন যিনি উইলি পোইয়েল নামের একজন ব্যক্তির স্ত্রী ছিলেন।

Source: Convene

পেশা জীবন

বিশ বছর বয়সে সারাহ্‌ তার দুই বছর বয়সী সন্তানকে নিয়ে চলে যান সেন্ট লুইয়ের বন্দর নগরীতে। সেখানে তার দুইজন ভাই ও বোন  থাকতেন। খুব অল্প সময়েই তিনি সেখানে একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মীর চাকুরি পেয়ে যান। মাদামে ওয়াকার তার এই পেশা থেকে দিনে এক ডলার উপার্জন করতেও হিমশিম খেতেন। এরপর তিনি অ্যানি টার্নবো ম্যালোন নামের একজন উদ্যোক্তার সাথে কাজে জড়িয়ে পরেন এবং তার প্রতিনিধি হিসেবে চুলের যত্নের বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করতেন। চুলের যত্নের পণ্য নিয়ে তার যে জ্ঞান ছিলো, তা কাজে লাগিয়ে তিনি একজন রূপবিশেষজ্ঞ, কেশ বিন্যাসকারী ও খুচরা বিক্রেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি কসমেটিকস ক্রিম বিক্রি করে মুনাফা লাভ করেন। খুব শীঘ্রই  সৌন্দর্য বর্ধনে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য তিনি নারী প্রতিনিধিদের কাজে নিয়োগ দেয়া শুরু করলেন।

ছবিসূত্র: Naturally Moi

মাদামে তার দ্বিতীয় স্বামী চার্লস্‌ জোসেফের সাথে মিলে লেলিয়া কলেজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান শুরু করেন ১৯০৮ সালে। সেখানে তিনি বিক্রয় কর্মীদের চুলের বিশেষজ্ঞ হিসেবে তৈরি হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দিতেন। দুই বছর পর তিনি ইন্ডিয়ানাপোলিসের একটি শহরে থাকার জন্য চলে যান এবং চুলের যত্নের জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক কার্যক্রম প্রতিষ্ঠা করেন যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিলো সৌন্দর্য শিক্ষার স্কুল ও সেলুন। শহরটি ক্রমেই মাদামের ব্যবসায়িক কার্যক্রমের সদর দপ্তরে পরিণত হয় যা ধীরে ধীরে বিভিন্ন শহর- জ্যামাইকা, কিউবা, পানামাতে ছড়িয়ে যেতে থাকে। ১৯১৭ সালে মাদামে ফিলাডেলফিয়া শহরে মাদামে ওয়াকার বিউটি কালচারিস্ট নামেবাৎসরিক একটি সভার আয়োজন করেন। এই ইভেন্টটি সে সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম এবং ভিন্ন ধাঁচের ইভেন্ট ছিলো। বিক্রয়কর্মীদের মধ্যে যারা তার পণ্য বিক্রি করে অধিক মুনাফা এনে দিতেন, তাদের অনুপ্রাণিত করার জন্য তিনি পুরষ্কারের ব্যবস্থাও করতেন।

ছবিসূত্র: Indiana Historical Society

এছাড়াও যারা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দাতব্য সংস্থায় দান করতেন, তাদেরকেও তিনি সহযোগিতা করতেন। তিনি ১৯১৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ওয়াকার হেয়ার কালচারিস্টস্‌ ইউনিয়ন অব আমেরিকা  যা সে সময়ের প্রথম সম্মেলন ছিলো। এই সম্মেলনটি নারীদের বিশেষভাবে বাণিজ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য উৎসাহিত করেছিলো।

মুখ্য কাজ

চুল বিষয়ে মাদামের উল্লেখযোগ্য অবদানের মধ্যে রয়েছে  পমেড এবং মোমের মতো একটি হেয়ার ক্রিম উদ্ভাবন  যা চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যার সমাধানে করে এবং চুলের উজ্জ্বলতা রক্ষায় কাজে দিতো । এই পণ্যগুলো ক্যানে পাওয়া যেতো যার ওপর মাদামের ছবি আঁকা থাকতো।

ছবিসূত্র: sciencesource.com

ব্যক্তিগত জীবন এবং অর্জন

সারাহ্‌র বয়স যখন কেবলমাত্র চৌদ্দ বছর ছিলো, তখন তিনি মোজেজ ম্যাক উইলিয়ামস্‌ নামের একজন লোকের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এর কারণ ছিলো তার বোনের স্বামী উইলি পোয়েল তাকে খুব অত্যাচার করতেন। সারাহ্‌ এবং মোজেজের লেলিয়া নামের একজন মেয়ে সন্তান ছিলো। তার বয়স যখন বিশের কোঠায়, তখন মোজেজ মারা যান। তিনি তখন একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কর্মরত চার্লস জোসেফ ওয়াকারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এরপর তার নাম হয়ে যায় মাদামে সি জে ওয়াকার। ১৯১৭ সালটি মাদামের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। কারণ সে সময়ে ফিলাডেলফিয়াতে অনুষ্ঠিত ওয়াকার  বিউটি কালচারিস্টস্‌ এর বাৎসরিক সভার জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ এবং তাদের সংঘবদ্ধ করার জন্য তিনি দক্ষিণের পুরোটাই ঘুরেছেন।

ছবিসূত্র: epps-alford.com

হাইপারটেনশনে আক্রান্ত হয়ে মাদামওয়াকার ১৯১৯ সালের ২৫শে মে মৃত্যুবরণ করেন। একান্ন বছর বয়সে যখন তিনি মৃত্যুবরণ করেন, তখন আফ্রিকান-আমেরিকান জাতির মধ্যে তিনিই সবচাইতে ধনবান মহিলা ছিলেন। তার মৃত্যুর পূর্বে তিনি দেশে অমানবিক নির্যাতন বন্ধ করার উদ্দেশ্যে স্বেচ্ছায় পাঁচ হাজার ডলার দান করে যান। এছাড়াও তার আয় থেকে বিভিন্ন দাতব্য সংস্থার তহবিলে জমা করেন এক লক্ষ ডলার। ভিলা ল্যাভেরো নামের তার বিলাসবহুল বাসভবনটি ঐতিহাসিক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ স্থান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। মাদামের অর্জনগুলোকে সম্মাননা জানাতে বিভিন্ন ধরনের পুরষ্কার ও অভ্যর্থনা তার নামানুসারে দেয়া হয়। এর মধ্যে একটি হলো মাদাম সি জে ওয়াকার বিজনেস এন্ড কমিউনিটি রিকগনিশন এ্যাওয়ার্ড 

Source : Not Even Past

টুকিটাকি

 সৌন্দর্যচর্চার পণ্য নিয়ে ব্যবসা করার ধারণাটি মাদামের তখনই এসেছিলো, যখন তিনি রাসায়নিক পদার্থযুক্ত দূষিত পানি দিয়ে চুল পরিষ্কার করতে গিয়ে স্ক্যাল্পে সমস্যার সম্মুখীন হন।

Feature Image Source: Timeline

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *