বাংলাদেশে এনজিও বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া

এনজিও প্রতিষ্ঠার হার বাংলাদেশে বেশ ভালো হারেই বৃদ্ধি পাচ্ছে বলা চলে। এনজিও হিসেবে নিবন্ধন করার অবশ্যই কিছু সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। নিবন্ধন প্রক্রিয়ার ধাপগুলো আজকের লেখায় উল্লেখ করা হলো।

যথাযথ তথ্যের অভাবে বাংলাদেশে এনজিও নিবন্ধন করাটা বেশ কষ্টসাধ্য একটি ব্যাপার। বিভিন্ন সরকারি সংস্থাগুলো থেকে আপনার এনজিও নিবন্ধন করিয়ে নিতে পারেন। আপনার এনজিওর লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই সংস্থাগুলোর নানান দিক তুলে ধরা হয়েছে।

ছবিসূত্র: YPSA

১। বাংলাদেশ এনজিও ব্যুরোর মাধ্যমে নিবন্ধন-

আপনার প্রতিষ্ঠানটি যদি আন্তর্জাতিক হয়ে থাকে (বাংলাদেশের বাইরে নিবন্ধিত), তাহলে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করার আগে এনজিও ব্যুরো থেকে নিবন্ধন করে নিতে হবে। দুর্ভাগ্যবশত, বিভিন্ন প্রকারের আর্থিক জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত এনজিওদের দমন করার উদ্দেশ্যে সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের কঠোর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পদ্ধতির কারণে প্রক্রিয়াটি বেশ দীর্ঘ হয়ে গিয়েছে। আপনার নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান (বাংলাদেশের বাইরে) থেকে যদি আইনত টাকা পয়সা আনা নেয়ার পদ্ধতির ব্যাপার থাকে, তাহলে এনজিও ব্যুরোতে অবশ্যই নিবন্ধন করতে হবে। অন্য আরেকটি পদ্ধতি হলো, আন্তর্জাতিক যেসব সংস্থার ইতিমধ্যে এই পদ্ধতিটি রয়েছে তাদের সাথে অংশীদারিত্বে যাওয়া। আপনার প্রতিষ্ঠানের সাথে এই চুক্তিতে আসতে চায়, এমন অনেক সংস্থাই পাবেন। তবে, বিভিন্ন বিষয় আপনাকে মাথায় রাখতে হবে। যেমন- সংযুক্ত সার্ভিস চার্জ (তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ফি এর বিষয়টি এড়িয়ে যাবে), প্রসিদ্ধ কোনো প্রতিষ্ঠানের নামের আদলে কাজ করা এবং অংশীদারি প্রতিষ্ঠানের নিয়মনীতি মেনে কার্যক্রম পরিচালনা করা।

ছবিসূত্র: Palashipara Samaj Kallayan Samity

২। সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ডিপার্টমেন্ট অব সোশ্যাল সার্ভিসে নিবন্ধন-

অপেক্ষাকৃত সহজ আবেদন প্রক্রিয়া (অনলাইনে আবেদন করা যায়) এবং প্রক্রিয়াধীন সময় ছয় থেকে সাত মাস লম্বা হয়। তবে ডিএসএস এর নিবন্ধনের মাধ্যমে আপনি শুধুমাত্র বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করার অনুমতি পাবেন। এক্ষেত্রে বৈদেশিক কোন সংস্থা থেকে অর্থ গ্রহণের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

৩। বাংলাদেশ রেজিস্টার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ এন্ড ফার্মসে নিবন্ধন-

রেজিস্টার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ এন্ড ফার্মস্‌ বা সাধারণভাবে পরিচিত বাংলাদেশ জয়েন্ট স্টকের মাধ্যমে নিবন্ধন অনেকটা ডিপার্টমেন্ট অব সোশ্যাল সার্ভিসের মতোই। তবে যেসব কারণে আপনি এই দুটোর মধ্যে বাংলাদেশ জয়েন্ট স্টকের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারেন তা হলো-

  • আবেদন প্রক্রিয়ার সময়সীমা অপেক্ষাকৃত দ্রুত।
  • আবেদন প্রক্রিয়া সহজতর।
  • অনলাইনে বিভিন্ন সেবা যেমন- নাম খোঁজা, নাম অনুমোদন করার মতো কাজগুলো করা যায়।

বাংলাদেশ জয়েন্ট স্টকের মাধ্যমে আপনার প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের প্রথম ধাপ হিসেবে আপনাকে নাম অনুমোদিত করার একটি আবেদনপত্র দাখিল করতে হবে। নাম খোঁজার বা খালি আছে কিনা তা জানতে পারবেন এই অনলাইন সার্ভিস থেকে। এনটিটি টাইপে গিয়ে ‘সোসাইটি’ সিলেক্ট করতে হবে এবং আপনি প্রতিষ্ঠানের যে নাম খুঁজছেন তা সার্চ দিতে হবে। যদি দেখেন যে, সেই নামে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান নেই, তাহলে আপনি নাম অনুমোদনের আবেদনটি অনলাইনে করে নিতে পারেন (এক্ষেত্রে একটি ইউজার অ্যাকাউন্ট করে নিতে হবে)। প্রতিটি নামের জন্য ফি বরাদ্দ করা রয়েছে ছয়শত টাকা যা বাংলাদেশের যেকোন স্থানীয় ব্যাংকে জমা দেয়া যায় (অনলাইনে টাকা জমা দেয়ার কোনো নিয়ম নেই)।

ছবিসূত্র: silvereaglesolution.com

প্রথমে অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়াটি শেষ হওয়ার পর নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে। ফি জমা করার চব্বিশ ঘণ্টা পর নামের অনুমোদন পাওয়া যাবে। আর এই অবস্থানটি বোঝা যাবে নাম অনুমোদনের আবেদন করার সময় যে অ্যাকাউন্ট তৈরি করা হয় সেখান থেকে। এর পরের ধাপটিই প্রকৃতপক্ষে প্রতিষ্ঠানটি নিবন্ধনের আবেদন করার প্রক্রিয়া। এই আবেদনপত্রটি হাতে লিখে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্রের সাথে জমা দিতে হবে। ঢাকার কারওয়ান বাজার এলাকার ওয়াসা ভবনের পাশে বেশ কিছু কন্সাল্টিং ফার্ম আছে যেগুলো ৭০০০-১৫,০০০ টাকার বিনিময়ে পুরো আবেদন প্রক্রিয়াটি প্রস্তুত করতে সহায়তা করে। তাদের মাধ্যমে আবেদনপত্র এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঠিক করে নিতে পারেন। কারণ তারা সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ার একেবারে সবকিছুই জানে (এমনকি আপনার হয়ে তারা সেগুলো জমাও দিতে পারে)।

আবেদনপত্রের ফর্ম এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের লিস্ট দেখে আপনি আতঙ্কিত হয়ে যেতে পারেন। তাই প্রথমে চোখ বুলিয়ে নিন এবং বোঝার চেষ্টা করুন যে, আপনি বা আপনার প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ এই বিষয়টি সামাল দিতে পারবেন কিনা। যদি হাতে কম সময় থাকে, তবে এখানে উল্লেখিত কন্সাল্টিং ফার্মের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।  এছাড়াও বাংলাদেশের এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর নিয়ম অনুযায়ী এনজিও সমূহের বাস্তবায়িত/ বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের জন্য যেসকল তথ্যের দরকার রয়েছে, তা ছক আকারে এখানে দেয়া আছে

ছবিসূত্র: gdrc.org

এছাড়াও ক্ষেত্রেভেদে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ফর্ম নিচে উল্লেখ করা হলো-

এই লেখায় উল্লেখিত লিংকগুলো ক্লিক করে আপনি প্রয়োজনীয় ফর্ম এবং কাগজপত্রের সন্ধান পেয়ে যাবেন।

Feature Image Source: YPSA

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *