ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছেন সঠিক শিক্ষায় সুশিক্ষিত হও। কিন্তু প্রশ্নফাঁসের এই সময়ে সুশিক্ষিত হওয়ার সুযোগ কতটুকু সেটা ভাবার দায়িত্ব আপনার। তবে এর সমাধান হিসাবে প্রযুক্তি খুব ভালো একটি মাধ্যম হতে পারে এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নাই । প্রযুক্তির মাধ্যমে নিজেকে সুশিক্ষিত করার নানাবিধ উপায়ের মধ্যে প্রথম পর্বে আমরা এমন কিছু টুলস বা সফটওয়্যার সম্পর্কে জেনেছি যা ব্যবহারে কাজের গতিকে কয়েকগুণ বাড়ানো যায়। এ পর্বে দেখব এমন কিছু ওয়েবসাইট যেগুলো আপনার নিজের আত্মোন্নয়নের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ক্ষেত্রেও সাহায্য করবে অনেকখানি।

এডেক্স

যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটি এবং হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ২০১২ সালে এডেক্স (edX) প্রতিষ্ঠা করে।

Photo Credit: images.google.com

সম্পূর্ণ ফ্রি তথা নন প্রোফিট এই অর্গানাইজেশনের মাধ্যমে পৃথিবীর বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত প্রফেসরগণ অনলাইন ভিত্তিক লেকচারের মাধ্যমে বিভিন্ন কোর্স নিয়ে থাকেন। বর্তমানে ১৮০০ কোর্সে প্রায় ১৪ মিনিয়ন শিক্ষার্থী ক্লাস করেন এডেক্সে।

ইউডেমি

ইউডেমি (Udemy) জনপ্রিয় অনলাইন লার্নিং প্লাটফর্মগুলোর মধ্যে অন্যতম। বিভিন্ন ক্যাটাগরি যেমন ব্যবসা, ডেভলপমেন্ট, সফটওয়্যার, মার্কেটিং, ডিজাইন, ব্যক্তিগত ডেভলপমেন্ট সহ অসংখ্য কোর্স করানো হয় এই ওয়েবসাইটটিতে।

Photo Credit: images.google.com

উইকিপিডিয়ার পরিসংখ্যান অনুয়ায়ী, বর্তমানে প্রায় ৬৫ হাজারেরও বেশি কোর্স পরিচালনা করছে ইউডেমি। তবে ফ্রি এবং পেইড দুইভাবেই এই উচ্চ মানের কোর্সগুলো করার সুযোগ থাকছে আপনাদের।

কোর্সেরা

বিশ্ববিখ্যাত স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত প্রফেসর অ্যান্ড্রু এন (Andrew Ng) এবং ডেফনে কোলার (Daphne Koller) প্রতিষ্ঠা করেন কোর্সেরা (Coursera)। এই ই-লার্নিং প্লাটফর্মটির মাধ্যমে কম্পিউটার সাইন্স, ডাটা সাইন্স, বিজনেস, ডিজিটাল মার্কেটিং, গণিত, মেডিসিন সহ বেশ কিছু বিষয়বস্তুর উপর কোর্স করানো হয়।

Photo Credit: images.google.com

এখানে কিছু কোর্স ফ্রি পেলেও বেশিরভাগ কোর্স করতে হয় টাকা দিয়ে।

কোড একাডেমি

প্রযুক্তি বিষয়ক পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের অনলাইনে কোর্স করার জন্য কোড একাডেমি (Codecademy) অসাধারণ একটি ওয়েবসাইট। পাইথন, জাভা, জাভাস্ক্রিপ্ট, রুবি সহ বেশ কিছু বিষয়ের উপর দক্ষ মেন্টার দ্বারা উন্নতমানের কোর্স করানো হয় এখানে। তবে কোর্সগুলো ফ্রি এবং পেইড দুইভাবে করা যায়।

 টেড

আমাদের প্রতিটি কাজের জন্য কোনো না কোনো অনুপ্রেরণা তথা মোটিভেশন প্রয়োজন হয়। যারা খুব তাড়াতাড়ি মোটিভেশন হারিয়ে ফেলেন তাদের জন্য টেড (TED) অসাধারণ একটি ওয়েবসাইট। কারণ এটি এমন একটি প্লাটফর্ম যেখানে পৃথিবীর সফল মানুষেরা তাদের সফল হওয়ার গল্প শেয়ার করেন।

Photo Credit: images.google.com

সাকসেস ডট কম

সফল হতে কে না চায় বলুন! কিন্তু সফল হওয়ার মত জটিল কঠিন পথটা সহজ করার জন্য সাকসেস ডট কম (success.comঅসাধারণ একটি ওয়েবসাইট।

Photo Credit: pexels.com

কোরা

ধরুন আপনি একজন এন্টারপ্রেনার বা উদ্যোক্তা হতে চান। এজন্য আপনি যাচ্ছেন এ সম্পর্কিত কিছু বই পড়তে। কিন্তু বাজারে তো অনেক বই কোনটা দিয়ে শুরু করবেন বুঝতে পারছেন না। এছাড়াও প্রতিনিয়ত কোনো কাজ শুরু করার আগে, কোনটা দিয়ে শুরু করব? কিভাবে করবো? কেন করবো? এরকম কত প্রশ্ন মাথায় আসে। এই প্রশ্নগুলোর সর্বোত্তম উত্তর আপনি পেতে পারেন কোরা (Quora) ডট কমে। কারণ এই ওয়েসাইটটি এমন একটি প্রশ্ন উত্তর প্লাটফর্ম যেখানে আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য পৃথিবীর অভিজ্ঞ সব মানুষ অপেক্ষা করে থাকেন।

Photo Credit: images.google.com

একটি কথা না বললেই নয় কোরার মতো কিন্তু আমাদের দেশেও একটি ওয়েবসাইট আছে বেশতো (beshto)। যেখানে সম্পূর্ণ বাংলায় আপনি আপনার সকল প্রশ্ন করতে পারেন।

স্টাক ওভারফলো

কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়ক প্রায় সকল প্রশ্নের উত্তর পাবেন স্টাক ওভারফলোতে (Stack OverFlow)। যদি কোনো ভাবে কোনো প্রশ্নের উত্তর খুঁজে না পান তাহলে ঝটপট একাউন্ট করে প্রশ্ন করুন দেখবেন কিছুক্ষণের মধ্যে অসংখ্য উত্তর পেয়ে গেছেন।

Photo Credit: images.google.com

স্টাক ওভারফলোর মতো আমাদের দেশেও একটি ওয়েবসাইট আছে যেটি প্রোগ্রামাবাদ (programabad) নামে পরিচিত। এখানে সম্পূর্ণ বাংলায় আপনি প্রযুক্তি সম্পর্কিত যেকোনো প্রশ্ন করতে পারবেন।

মেনটাল ফ্লস

এমন জিনিস যা আপনার জানা উচিত কিন্তু এখনো জানা হয়নি এরকম তথ্যবহুল মজাদার কিছু আর্টিকেল প্রকাশ করা মেনটাল ফ্লস (Mental Floss) ওয়েবসাইটিতে। যার মাধ্যমে আপনি সংস্কৃতি, বিজ্ঞান এবং ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবেন ব্যতিক্রমী নানা তথ্য।

মিডিয়াম

প্রতিনিয়ত যারা অনলাইনে আর্টিকেল বা ব্লগ পড়তে ভালোবাসেন তাদের জন্য মিডিয়াম অন্যতম একটি ওয়েবসাইট হতে পারে। এখানে বিভিন্ন বিষয়ে সফল তথা অভিজ্ঞ মানুষেরা তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে ব্লগ আকারে। বিভিন্ন ক্যাটাগরি থাকায় আপনার পছন্দের বিষয়টি খুঁজে পেতে সহজ হবে এই সাইটটিতে।

Photo Credit: images.google.com

এছড়াও আপনার পছন্দের কোনো বিষয়ে নিজের অভিগ্যতা শেয়ার সুযোগ তো থাকছেই।

দ্য ক্রিয়েটিভ পোস্ট

‌আপনার সৃজনশীলতাকে কয়েকধাপ উপরে তুলতে দ্য ক্রিয়েটিভ পোস্ট (The Creativity Post) ওয়েবসাইটির নতুনত্বে ভরপুর উচ্চগুণ সম্পূর্ণ আর্টিকেলগুলো আপনাকে নানাভাবে সাহায্য করবে।

বুমবার্ক বিজনেসউইক

বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়, আর্থিক এবং স্টক মার্কেটের সমস্যা সম্পর্কে স্মার্ট এবং গভীরভাবে সংবাদ পাওয়ার জন্য বুমবার্ক বিজনেসউইক (Bloomberg BusinessWeek) ওয়েবসাইটিকে রাখতে পারেন পছন্দের শীর্ষে।

 গুড রিডস

গ্রন্থানুরাগী তথা যারা বই পড়তে ভালোবাসেন তাদের জন্য গুড রিডস( Goodreads) অন্যতম অনলাইন ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। তবে বই পড়ার পাশাপাশি এখানে আরও অনেক কিছু করার সুযোগ পাচ্ছেন এখানে। যা আপনার বই পড়াকে করে তুলবে আরও বেশি আনন্দদায়ক।

Photo Credit: images.google.com

অ্যাবাউট ডট মি

‌ওয়েবসাইটের কথা আসলে প্রথমেই আসে প্রোগ্রামিংয়ের কথা। কিন্তু সবার পক্ষে প্রোগ্রামিং করে তো আর ওয়েবসাইট বানানো সম্ভব না, তাই না? আবার প্রযুক্তিগত উন্নতির এই সময়ে নিজস্ব বায়োডাটা সম্বলিত একটি ওয়েবসাইট না থাকলেও নয়।

Photo Credit: images.google.com

এখন তাহলে কী করবেন? চিন্তার কোনো কারণ নেই এর সমাধান পাচ্ছেন অ্যাবাউট ডট মি(About.me) এ। এর মাধ্যমে আপনি কোনো প্রোগ্রামিং ছাড়া আপনার নিজস্ব প্রোর্টফলিওটি বানাতে পারবেন খুব সহজে।

লুমোসিটি

অনলাইন কিংবা অফলাইন দুইমাধ্যমেই যারা গেম খেলে অভ্যস্ত কিংবা আসক্ত তাদের জন্য লুমোসিটি (Lumosity) হতে পারে অসাধারণ একটি গেম। এটিকে শুধু গেম বললে ভুল হবে কারণ যথারীতি এটি একটি ব্রেইন ট্রেনিং সেন্টার।

Photo Credit: images.google.com

বিজ্ঞানী এবং গেম ডিজাইনারদের সমন্বয়ে তৈরিকৃত এই গেমটি আপনার বিনোদনের পাশাপাশি বিভিন্নভাবে আপনার বুদ্ধির বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করবে।

রেডিট

ইন্টারনেটের ফ্রন্ট পেজ খ্যাত রেডিট (Reddit) সাইটটি পৃথিবীর অন্যতম তথ্যবহুল একটি ওয়েবসাইট। পড়াশোনা, নিজেকে আপডেট রাখা এবং স্কিল ডেভেলাপমেন্টের জন্য রেডিট সত্যিই অতুলনীয়।

Photo Credit: images.google.com

উইকি হাউ

একের ভিতর সব বলতে যদি কিছু থাকে তাহলে উইকি হাউ (Wikihow) নিঃসন্দেহে এরকম একটি ওয়েবসাইট। উপরের সব কিছু পাবেন এই ওয়েবসাইটিতে।

Photo Credit: images.google.com

সত্যি কথা বলতে, ইন্টারনেট নামক খনি থেকে কয়েকটি টুলস বা সফটওয়্যার কিংবা ওয়েবসাইটকে নিয়ে প্রোডাকটিভিটির কথা বলার একমাত্র এবং অন্যতম উদ্দেশ্য হলো প্রযুক্তির পজিটিভ তথা ভালো প্রভাবগুলোকে আপনার মাঝে তুলে ধরা। তবে আপনি যদি একটু সচতন হন তাহলে এরকম অসংখ্য ভালো ওয়েবসাইট পাবেন যা হয়তো আপনার প্রতিদিনের কাজকে করবে অনেক বেশি আনন্দময়। কিন্তু দ্রুতগতির এই ইন্টারনেটের যুগে আপনি যদি এখনো পড়ে থাকেন ফেসবুক এবং ইউটিউব নিয়ে তাহলে খুব ভুল করছেন।

কেননা আপনি যে সময়টা অযথা ব্যয় করছেন অন্য কেউ হয়তো এই সময়টা কাজে লাগিয়ে স্বপ্ন দেখছে পৃথিবী জয়ের। তাই আসুন প্রযুক্তির প্রকৃত ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন হই। আর প্রযুক্তিগতভাবে প্রোডাকটিভ তথা কর্মদক্ষ হওয়ার মাধ্যমে চেষ্টা করি নিজেই নিজের স্বপ্নকে ছাড়িয়ে যেতে।