পদ খালি নেই! আমার মামা-চাচা নেই! চাকরি পাচ্ছি না-এই হচ্ছে দেশের হাজার হাজার শিক্ষিত বেকারদের প্রতিদিনের অভিযোগের গল্প। আসলেই অভিযোগের সত্যতা কতটুকু? আপনি নিজে তৈরি হয়েছেন তো চাকরির জন্য? ধরুন, আপনি গতকাল শেষ করলেন আপনার অনার্স কিংবা বিএসসি পরীক্ষা। অথবা জীবনের দরকারে এখন চাকরি খুঁজছেন,কিন্তু কিভাবে কি শুরু করবেন বুঝতে পারছেন না?

আপনাদের কথা ভেবেই আজকে নিয়ে এলাম সাত দিনের এক চাকরি খোঁজার প্যাকেজ। জেনে নিন কিভাবে সাত দিনে ধাপে ধাপে চাকরির জন্য নিজেকে তৈরি করবেন ।

রবিবার: চাকরি এবং কোম্পানি সম্পর্কে ঘাঁটুন

Image Source: jobfiner;

আপনি চাকরি খুঁজছেন অথচ কোথায় চাকরি করবেন-কি কাজ করবেন সেই বিষয়ে যদি না জানেন তাহলে কোম্পানি কেন আপনাকে কাজে নেবে! আপনি যেমন চান কোম্পানির ম্যানেজার আপনার সিভি দেখে আপনাকে ডাকবে তেমনি ম্যানেজারও চায় আপনি যেন তাদের কোম্পানি এবং তাদের কাজ সম্পর্কে জানেন। আপনি চাকরি খোঁজার শুরুতে যে কোম্পানিতে সিভি দিচ্ছেন তার ব্যাপারে জানতে চেষ্টা করুন। জানতে চেষ্টা করুন কোম্পানি যে পদের জন্য লোক খুঁজছে সেই পদটা কি?

কোম্পানিতে সেই পদের ভূমিকা কী-তার কাজ কী? কিভাবে সেই পদ কোম্পানির লক্ষ্য পূরণ করে এবং করতে পারে? -এইসব তথ্য। তাই শুরুতে যে কোম্পানিতে আপনি সিভি দিয়েছেন তাদের সম্পর্কে জানুন। তাদের ব্রান্ড-সার্ভিস বা পণ্য সম্পর্কে ঘাটুন। সম্ভব হলে কোম্পানির সাইট থেকে তাদের সর্বশেষ অগ্রগতি, প্রজেক্ট, কর্মকান্ড  এবং ফলাফল সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন। কেন দরকার এসব তথ্য? চাকরির ইন্টারভিউতে এসব তথ্যগুলা পারবেন ব্যবহার করতে রেফারেন্স হিসাবে।

এক কথায়, জানুন কোম্পানি সম্পর্কে, জানুন আপনার পদ সম্পর্কে। এই ঘাঁটাঘাঁটির কাজটা করে ফেলুন সপ্তাহের ছুটির দিনেই। শুক্র-শনি বার তৈরি করুন আপনার পছন্দের কোম্পানির তালিকা। এরপর তালিকা ধরে জানতে শুরু করুন। পছন্দের কোম্পানি তালিকার‍ ধরে শুরু করুন খোঁজ করা এবং জানুন কোম্পানির অতীত, বর্তমান সম্পর্কে। এই তথ্যগুলো যদি আপনি জানেন তাহলে নিজেই আত্মবিশ্বাসী বোধ করবেন ইন্টারভিউতে। এছাড়া ম্যানেজার বুঝতে পারবেন আপনি সত্যি কোম্পানির জন্য একজন যোগ্য ব্যক্তি।

সোমবার: সিভি ঠিক করে ফেলুন

Image Source: the job;

সিভি হচ্ছে আপনার প্রথম পরিচয়। আপনি যতই যোগ্য ব্যক্তি হোন না কেন আপনার সিভি যদি ঠিক না হয় তবে আপনার যোগ্যতা কিংবা দক্ষতা কোনটাই ঠিক ভাবে প্রকাশ পাবে না ম্যানেজারের কাছে। সিভির কিছু জিনিস বদলায় না এবং বদলাবার না। যেমন বায়োডাটা-জন্মের সাল, শিক্ষাগত যোগ্যতা, কাজের অভিজ্ঞতা, যোগাযোগের ঠিকানা। তাই আমরা যেকোনো চাকরির জন্যই ঘুরে ফিরে একই সিভি ব্যবহার করি। কিন্তু আপনি জানেন কি সমীক্ষা বলছে ৬১ শতাংশ এর বেশি ম্যানেজার চায় চাকরি প্রার্থীর সিভি হবে তার কোম্পনির জন্য বিশেষ হবে তৈরি হবে। এই সমীক্ষা তৈরি করেছে ক্যারিয়ার বিল্ডার। ক্যারিয়ার বিল্ডার এর মতে, আপনার সিভি আপনার কাঙ্ক্ষিত চাকরির সাথে সাথে আলাদা আলাদা ভাবে তৈরি করা উচিত।

কিভাবে করবেন? ধরুন, আপনি আইটি সম্পর্কিত চাকরির জন্য চেষ্টা করছেন। প্রথমে কোম্পানির বিষয় তথ্য জানবার পর শুরু করলেন আপনার সিভির পরিবর্তনের কাজ। সিভিতে আগের তথ্যের সাথে যুক্ত করুন আপনার আইটি সেক্টরে কাজের অভিজ্ঞতা, বিশেষ করে আপনার আগের করা কাজের অভিজ্ঞতা। এছাড়া কোম্পানি থেকে চাওয়া বিভিন্ন দক্ষতার বিষয়ে খেয়াল রাখবেন, আপনার সেরকম কোন দক্ষতা থাকলে সেগুলো যোগ করতে ভুলবেন না আপনার বায়োডাটাতে নতুন করে। তাই সোমবার রাখুন শুধু সিভির জন্য। আপনার পছন্দের চাকরি এবং কোম্পানির উপর নির্ভর করে তৈরি করুন সিভি।

মঙ্গলবার: খুঁজে বের করুন পুরনো নেটওয়ার্ক

Image Source: Career builder;

আপনার বায়োডাটায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হলো রেফারেন্স। রেফারেন্স হলো আপনার দক্ষতা এবং যোগ্যতা যাচাইকারী প্রদত্ত ব্যক্তির তথ্য। উক্ত ব্যক্তি পারবে আপনার তথ্য এবং দক্ষতার বিষয়ে কোম্পানিকে সঠিক তথ্য দিতে। সিভি পাঠিয়েছেন, দরকারি তথ্য সংগ্রহ করেছেন পাশাপাশি পুরোনো নেটওয়ার্কে এ যুক্ত হোন। সম্ভব হলে চাকরি খোঁজার আগেই এই প্রক্রিয়া শুরু করে দিন। আপনার আগের অফিসের কলিগ, আপনার সুপারভাইজার কিংবা হতে পারে আপনার পুরনো ম্যানেজার। তবে একটা বিষয় মাথায় রাখা উচিৎ যে, এমন কাউকে রেফারেন্স ব্যক্তি হিসাবে দেবেন যে আপনার সম্পর্কে সঠিক এবং ভালো তথ্য রাখে, আপনার ভালো দিক নিয়ে কথা বলে।

সম্ভব হলে তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন। ইমেল কিংবা সোশ্যাল সাইট কিংবা লিঙ্কড ইনের মাধ্যমে নিয়মিত রাখুন যোগাযোগ আপনার শুভাকাঙ্খীদের সাথে। তাদের সাথে আপনার চাকরি ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলুন নিয়মিত। তাদেরকে আপনার বায়োডাটায় রেফারেন্স হিসাবে তাদেরকেই যুক্ত করুন এবং চাকরির ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবেন আপনি অনেকাংশে।

বুধবার: নতুন নেটওয়ার্কের খোঁজে লেগে পড়ুন

Image Source: The balance;

নতুন চাকরি খুঁজছেন? একটা টিপস দিতে চাই আপনাদের জন্য। ৬০ শতাংশের বেশি চাকরির খবর অনলাইনে আসে না, আসে না আমাদের প্রিয় বিডিজবস.কম কিংবা পত্রিকায়। যেকোনো কোম্পানির ভালো ভালো পদগুলো তাহলে কিভাবে পূরণ করা হয়? রেফারেন্স থেকে বা মামা-চাচার মাধ্যমে। সবার তো আর মামা চাচা নেই তাহলে কী করণীয়? সমাধান, নিজেই তৈরি করুন নিজের মামা-চাচা। এই মামা-চাচা তৈরি মানে নিজে নিজে নতুন নতুন মানুষদের সাথে পরিচিত হয়ে কাজের ব্যবস্থা করা। বলা হয়ে থাকে, সেরা চাকরিগুলোর খোঁজ মিলবে কফির আড্ডায়, অনলাইনে না। তাই বুধবার আলাদা রাখুন শুধু নতুন যোগাযোগের জন্য। বুধবার দিন বসে আপনার পছন্দের কোম্পানির বা কাজ সম্পর্কিত অনুষ্ঠানের খোঁজ করুন সেখানে যাওয়ার জন্য রুটিন তৈরি করুন। চেষ্টা করুন আপনার এই রুটিন আপনার সাপ্তাহিক পদ এবং মাসিক পরিকল্পনা দুটো জুড়েই যেন থাকে এতে আপনার পরিকল্পনা করতে অনেক সুবিধা হবে।

কোথায় পাবেন এইসব তথ্য? সোশ্যাল সাইট- যেমন ধরুন আপনি একজন চার্টার্ড একাউন্টেট হবেন তাহলে ফেসবুকে সার্চ করলেই বিভিন্ন গ্রুপ পাবেন, পাবেন বিভিন্ন ধরনের ইভেন্ট। এছাড়া বিভিন্ন চাকরির ওয়েবসাইট থেকে শুরু করে পত্রিকায় পাবেন এইসব খবর। তাই মাসের শুরুতেই আপনার ক্যালেন্ডারে টুকে নিন এসব আর চলে যান ইভেন্টে। কিভাবে কাজে দেবে এইসব ইভেন্ট? আপনি জানতে পারবেন কিভাবে কাজ হচ্ছে, চিনবেন উপরের মহলের মানুষদের। তাদের সাথে কথা বলে জানবেন আপনার পছন্দের সেক্টর কিভাবে কাজ করে, কী কী কাজ হচ্ছে, কী কী বিষয়ের দক্ষতা থাকা দরকার এইসব। তাই নতুন নেটওয়ার্ক তৈরির ব্যাপারে গুরুত্ব দিন।

বৃহস্পতিবার: আপনার অনলাইন লাইফে যা কিছু একজন বসের দেখা উচিত নয় তা পরিষ্কার করে ফেলুন

Image Source: The balance;

চাকরি খোঁজার পরের ধাপ নিজের অবস্থান ঠিক রাখা। এখন কারো সম্পর্কে জানার জন্য সেরা উপায় হচ্ছে তার সোশ্যাল মিডিয়া ঘুরে আসুন নয়তো তার বন্ধুকে জিজ্ঞেস করুন। তাই চাকরির সিভি দেবার পর এবং প্রস্তুতি নেবার পাশাপাশি সোশ্যাল জগতে আপনার উপস্থিতি ব্যাপারে সতর্ক হোন। এক সমীক্ষায় এসেছে ৪৮ শতাংশ ম্যানেজার চাকরি দেবার আগে চাকরীপ্রার্থীদের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে জেনে নেয় সোশ্যাল মিডিয়া থেকে। ক্যারিয়ার বিল্ডার থেকে করা এই সমীক্ষায় আরো উঠে এসেছে বেশ কিছু দিকের কথা সেগুলো যদি ম্যানেজার খুঁজে পান কোন চাকরীপ্রার্থীর টাইমলাইনে, তাহলে সে বাতিলের খাতায় চলে আসবে।

যেসব ছবি আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায় থাকবে না

  • উত্তেজক বা ব্যক্তিগত অবান্তর ছবি(৪৬ শতাংশ)।
  • চাকরীপ্রার্থীর নেশা জাতীয় পণ্য ব্যবহারের তথ্য (৪০ শতাংশ)।
  • চাকরীপ্রার্থীর আগের কর্মক্ষেত্রের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা কিংবা বাজে রিভিউ (৩৪ শতাংশ)।
  • কমিউনিকেশন স্কিল বা যোগাযোগ দক্ষতার অভাব (৩০ শতাংশ)।
  • সহকর্মীদের সাথে বাজে ব্যবহার কিংবা বাজে ভাবে কথা বলা যেমন- সহকর্মীর ধর্ম, লিঙ্গ, জাতের উপর ভিত্তি করে কথা বলে (২৯ শতাংশ)

শুক্রবার: ইন্টারভিউ এর জন্য কেনাকাটা আছে তো?

Image Source: Business Insider;

শুক্রবার ছুটির দিন। সব তো তৈরি হয়ে আছে কিন্তু কাল যদি ইন্টারভিঊ এর জন্য ডাক পড়ে তাহলে কী করবেন ? তৈরি আছেন তো ইন্টারভিউ এর জন্য? তাই শুক্রবারে সেরে ফেলতে পারেন কেনাকাটার কাজ। এই কেনাকাটা আপনাকে চাকরির ব্যাপারে আরো আগ্রহী করবে। প্রথমেই আপনার আলমারিতে দেখে নিন দেখে কাপড়, জুতো প্যান্টস ঠিক আছে কিনা। না থাকলে কিনে নিন কিংবা ধুয়ে ইস্ত্রী করে নিন। জুতো পরিষ্কার করতে ভুলবেন না, কেননা জুতোতেই আপনার ব্যক্তিত্ব লুকিয়ে থাকে। কি পড়বেন? হাল্কা রঙের মার্জিত শার্ট, ইস্ত্রি করে নেবেন তো অবশ্যই।

শনিবার: সামনের সপ্তাহের করণীয় ঠিক করে নিন আজই

Image Source: doctoroz.com;

শুক্র-শনিবার অনেক সরকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ছুটি এখন। ছুটি না হলেও শুক্রবারে চেষ্টা করুন সামনের সপ্তাহের করণীয় ঠিক করে নিতে। না হলে শনিবারকে সঠিক ব্যবহার করুন। শনিবারে চেষ্টা করুন আপনার সপ্তাহের শুরুটা ঠিক করে নিন। শনিবারে তৈরি করুন আপনার ‘করণীয় কাজের লিস্ট’। তৈরি করে নিন ‘আপনার পছন্দের চাকরির তালিকা’ এবং পছন্দের কোম্পানির তালিকা তৈরি করে ফেলুন আপনার চাকরির প্রস্তুতি।

উপরের ধাপগুলো মিলিয়ে নিন নিজের সাথে টুকে নিন ডায়েরিতে এরপর লেগে পড়ুন সোনার হরিণ খোঁজার চেষ্টায়।