আজকাল আমরা প্রতিনিয়তই শুনে থাকি সাইবার দুর্ঘটনার কথা। এইতো কিছুদিন আগে ফেসবুকের একটি ঘটনা সারা পৃথিবীর মানুষকে নাড়া দিয়েছিলো। ২০১১ সালে বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান সনি ৭০ মিলিয়ন গ্রাহকের তথ্য যা প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। ২০১৭ সালে ক্রেডিট সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান ইকুইফিক্স থেকে প্রায় ১৪০ মিলিয়ন আমেরিকানের তথ্য চুরির ঘটনা ঘটে।

Source: blog.rackspace.com

আমরা লক্ষ্য করেছি, এই সকল দুর্ঘটনায় লক্ষ লক্ষ মানুষের তথ্য হুমকির মুখে পড়ে। প্রতিষ্ঠানগুলো হয়ে পড়ে সর্বশান্ত। তাই আজকাল সাইবার ইনস্যুরেন্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যদিও আমাদের দেশে সাইবার ইনস্যুরেন্স খুব একটা পরিচিত নয়। কিন্তু এই বিষয়ে আমাদের জানা খুবই জরুরি। তাই আজকে আমি সাইবার ইন্স্যুরেন্স সম্পর্কে আলোকপাত করতে চাই। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।

সাইবার ইনস্যুরেন্স কী?

ইনস্যুরেন্স মার্কেটের একটি ক্রমবর্ধমান খাত হচ্ছে সাইবার ইনস্যুরেন্স। আজকাল প্রযুক্তির আধুনিকায়নের ফলে প্রতিটি কাজ হয়ে উঠেছে খুবই সহজ এবং সাশ্রয়ী। যোগাযোগ থেকে সংরক্ষণ ব্যবস্থা, সকল ক্ষেত্রে এখন প্রযুক্তির ব্যবহার। প্রযুক্তির এই বহুল ব্যবহারে বাড়ছে নিরাপত্তার দুশ্চিন্তা। যেমন: বেশ কয়েক বছর ধরে আমরা ব্যক্তিগত তথ্য থেকে শুরু করে অফিসের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল সংরক্ষণে প্রযুক্তির ব্যবহার করে আসছি।

Source: blog.rackspace.com

এতে করে কাজ যেমন সহজ হয়েছে, সেই সাথে প্রযুক্তির নির্ভরতা বাড়ছে। ফলে সাইবার ডাকাতেরাও তৎপর হয়ে উঠেছে। আজকাল হরহামেশাই শুনতে পাচ্ছি সাইবার ডাকাতির ঘটনা। ফলে বহুপ্রতিষ্ঠান সম্পদ হারিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে। এরই প্রেক্ষিতে সাইবার ইনস্যুরেন্সের আবির্ভাব। সাইবার ইনস্যুরেন্সের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ডাটাবেস তথা সাইবার সংক্রান্ত সকল ক্ষতির বিপরীতে এই বীমা বা ইনস্যুরেন্স করে থাকে।

ইনস্যুরেন্সের খরচ

প্রতিটি সম্পদ সংরক্ষণের বিপরীতে থাকে ঝুঁকি। আর বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো এই সম্ভাব্য ঝুঁকি গ্রহণ করে থাকে। এর জন্য তারা একটি নির্দিষ্ট ঝুঁকির বিপরীতে নির্দিষ্ট টাকা গ্রহণ করে থাকে। যদিও প্রতিটি দেশে বীমার জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট নীতিমালা। এই নীতিমালা অনুসরণের মাধ্যমে বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হয়।

Source: pwc.ch

পৃথিবীর অধিকাংশ বীমা প্রতিষ্ঠানের সাইবার ইনস্যুরেন্স পলিসি হচ্ছে, প্রতি দশ লক্ষ ডলারের বিপরীতে এক হাজার ডলার প্রতিবছরে। আপনার সাইবার সিকিউরিটির অবস্থার ওপর নির্ভর করে এই চুক্তি।

বীমার জন্য আবেদন করার পর বীমা প্রতিষ্ঠান তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে আপনার প্রতিষ্ঠানের সম্ভাব্য ঝুঁকি চিহ্নিত করবেন। এরপর তারা ঝুঁকির মূল্য নির্ধারণ করবেন। পরবর্তীতে সম্ভাব্য ঝুঁকির বিপরীতে বীমা চুক্তি করবেন। এজন্য বীমা করার আগে আপনার প্রতিষ্ঠানের শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তা ব্যবহার করুন।

যে সকল ক্ষেত্রে সাইবার ইনস্যুরেন্স প্রযোজ্য

আপনাকে এটা মানতেই হবে, ঝুঁকি সম্পর্কে বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর খুব ভালো ধারণা থাকে। তারা বীমা চুক্তির আগে খুব সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করে থাকে। তাই বীমা চুক্তির আগে আপনার প্রতিষ্ঠানের ঝুঁকি সম্পর্কে পূর্ণ বিবরণী তুলে ধরুন। প্রয়োজনে একজন আইনজীবীর সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। প্রতিটি বীমার কিছু নির্দিষ্ট খাত রয়েছে। এই খাতগুলোতেই বীমা প্রতিষ্ঠান বীমা চুক্তি করে থাকে। তেমনি সাইবার ইনস্যুরেন্সেরও কিছু নির্ধারিত খাত রয়েছে। এই খাতগুলো সম্পর্কে নিচে আলোকপাত করা হলো।

গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা

সাইবার ইনস্যুরেন্সের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি। আজকাল অসংখ্য প্রতিষ্ঠানে কার্যক্রম প্রযুক্তির মাধ্যমে চলে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের তথ্য সংরক্ষণের প্রয়োজন হয়।

Source: racktopsystems.com

এই সকল তথ্য সংরক্ষণে ব্যবহার হয়ে থাকে প্রযুক্তি নির্ভর সংরক্ষণ ব্যবস্থা। এই সংরক্ষণ ব্যবস্থায় যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। চুরি হতে পারে প্রতিষ্ঠানের সকল তথ্য। ফলে হুমকির মুখে পড়তে পারে গ্রাহক তথা প্রতিষ্ঠানের সকল গোপনীয়তা। তাই প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সম্ভাব্য এই গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তার বিপরীতে বীমা করে থাকে। আর বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো চুক্তির মাধ্যমে এই ঝুঁকি গ্রহণ করে এবং দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকে।

হার্ডওয়্যার মেরামত এবং ডাউন টাইম

আজকাল তথ্য সংরক্ষণে প্রযুক্তি ব্যবহার অভাবনীয়। কারণ, প্রযুক্তি নির্ভর সংরক্ষণ ব্যবস্থা খুব সহজ এবং সাশ্রয়ী। কিন্তু তথ্য সংরক্ষণে যে সকল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়ে থাকে এগুলো যেকোন সময় নষ্ট হতে পারে। ফলে অসংখ্য গ্রাহক তথা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হুমকির মুখে পড়তে পারে। যদিও নষ্ট হওয়া যন্ত্রাংশ থেকে পুনরায় তথ্য ফিরিয়ে আনা যায় কিন্তু এটা খুবই ব্যয়বহুল।

Source: converzant.com

তাই প্রতিষ্ঠানগুলো এই বিশাল ব্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বীমা করে থাকে। আর বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো চুক্তির ওপর ভিত্তি করে এই দুর্ঘটনার ব্যয় বহন করে থাকে।
আবার নষ্ট হওয়া যন্ত্রপাতি মেরামত করতে বেশ সময় লাগতে পারে। ফলে গ্রাহকদের সেবা দিতে প্রতিষ্ঠানের সমস্যা হবে। প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ থাকতে পারে। ফলে প্রতিষ্ঠান আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। আর এই ক্ষতি চুক্তির ওপর ভিত্তি করে বীমা কোম্পানি ক্ষতিপূরণ সরবরাহ করে থাকে।

মুক্তিপণ নিষ্পত্তি

আজকাল হরহামেশাই শুনে থাকি, ওয়েব সাইট ডাকাতি এবং বিনিময়ে মুক্তিপণ দাবি। যদি আপনারো এরকম প্রযুক্তি নির্ভর প্রতিষ্ঠান থাকে, তাহলে আপনারো রয়েছে এরকম ঝুঁকির সম্ভাবনা। তাই আপনারো উচিৎ একটি সাইবার ইনস্যুরেন্স করা। যাতে আপনিও চুরির বিশাল ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেতে পারেন।

Source: cio.com

যদি কোনো প্রতিষ্ঠান এই রকম ডাকাতির শিকার হয় এবং মুক্তিপণ দাবি করা হয়। তখন বীমা কোম্পানিগুলো এই সমস্যা নিষ্পত্তির জন্য স্পেশালিষ্ট নিয়োগ করেন এবং প্রয়োজনে মুক্তিপণ দিয়ে সমস্যা সমাধান করেন। ফলে প্রতিষ্ঠান এই বিশাল ক্ষতির বিপরীতে ক্ষতিপূরণ পায়।

মিডিয়া/ওয়েব কনটেন্ট দায়বদ্ধতা

যদিও এটি নিরাপত্তা জনিত সমস্যা নয় তবুও এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, একটি প্রতিষ্ঠান সাইটের সকল বিষয় মনিটর করতে পারেনা। যেমন: ইউজার ফোরাম, মন্তব্য এবং ব্যানার বিজ্ঞাপন একটি আইন অনুসরণের মধ্যদিয়ে চালিত হয়।

Source: articles.bplans.com

অনেক সময় অনেক প্রতিষ্ঠান এই আইন অমান্য করে থাকে। আবার অনেক সময় একটি সাইটের কনটেন্ট অন্যরা কপি করে নিজেদের ওয়েব সাইটে পোস্ট করে। ফলে ওয়েবসাইটের মালিক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। আর এই সকল ঝুঁকির বিপরীতে বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো আইনি জটিলতা এবং ক্ষতিপূরণ সরবরাহ করে থাকে।

Feature Image Source: bleuwire.com