ইতিহাসের মালদহ

মালদহের আকর্ষন অবশ্য শুধু সৌধই নয়,স্থানীয় সংস্কৃতিও সমান জনপ্রিয়।মালদহের সৌন্দার্য্যের কথা জানানো হচ্ছে

হাতে দিন তিনেক থাকলে বেড়ানর জন্য মালদহ অনবদ্য।ভ্রমনপিপাসু বাজ্ঞালিদের মধ্যে যাঁরা ইতিহাস ভালবাসেন মালদহ তাঁদের জন্য আদর্শ জায়গা।তবে মালদহ যে শুধু মসজিদের তা নয় মোটেও।এখানকার আম,পাটের কাজ আর সিল্ক তিনটিই জগত বিখ্যাত।কলকাতা থেকে ট্রেনে মালদহ যেতে ৭-৮ ঘণ্টা সময় লাগে।ভোর-রাত্রে,অন্ধকার থাকতে থাকতে আমরা পৌঁছালাম মালদা টাউন স্টেশনে।গাড়িতে চেঁপে মিনিট পনেরোর মধ্যেই পৌঁছে গেলাম পশ্চিম্বজ্ঞ সরকারের সেচ দফতরের অধীনস্ত বাংলোয়।সকাল ৯ তার মধ্যেই বেরিয়ে পড়লাম আমাদের প্রথম গন্তব্য জগজীবনপুরের দিকে।পৌঁছাতে লাগল প্রায় দেড় ঘণ্টা।পথে পেরোলাম মহানন্দা আর ট্যাঙ্গন নদী।মালদহের আমবাগানের কথা না বললে মালদহের রুপবর্ননা অসুম্পূর্ণ থেকে যায়।পথের দু’ধারে চোখে পড়ল বিরাট বিরাট আমবাগান।জগজীবনপুরের খ্রিস্টিয় অষ্টম শতাব্দিতে তৈরী পাল বংশের সময়কার বৌদ্ধ বিহারের একটি ধ্বংশাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে।নাম নন্দাদিঘী বিহার।এখানকার প্রত্নাতাত্ত্বিক নিদর্শ্নগুলো রাখা আছে মালদহের সংগ্রহশালায়।জগজীবনপুর থেকে ফেরার পথে দুপুরের খাওয়া দাওয়া রাস্তাতেই সেরে এলাম।আমাদের পরের দিন গন্তব্য ছিল গৌড়।গৌড়ে ঢুকবার মুখেই রয়েছে রামকেলি মন্দির।মালদহ থেকে দক্ষিনে যেতে ১৮ কিমি দূরে অবস্থিত এটি।এই মন্দির দেখবার পরে আমরা গেলাম বারোদুয়রি বা বড়সোনা মসজিদে।এর নাম বারোদুয়ারি কিন্তু দরজা আছে এগারোটি।সেখান থেকে গেলাম দাখিল দরওয়াজা।লাল ইট ও টেরাকোটা দিয়ে তৈরী এই সৌধ ছিল গৌড়ের প্রধাণ প্রবেশদ্বার।দাখিল দারওয়ার গাঁয়ে ইঁটের যে সুক্ষ কারুকার্য দেখা যায় তা এককথায় অদ্ভুত।এক কিমি দূরে রয়েছে ফিরোজ মিনার।এটি কুতুব মিনারের আদলে তৈরী।এই সমাধিটির ঢিল ছোড়া দুরুত্বেই রয়েছে লুকোচুরি দরজা।পরের দিন আমাদের গন্তব্য পান্ডূয়া।পান্ডুয়ার প্রধান নিদর্শন আদিনা মসজিদ।আদিনা যাবার পথে রয়েছে ‘ডিনার পার্ক’।এখানে হরিণ ও নীল গাই আছে অনেক।আদিনা মসজিদটি সিকান্দার শাহ তৈরী করেছিলেন।দোতলায় রয়েছে মেয়েদের নামাজ পড়বার জায়গা।মসজিদের চারিদিকে ঘিরে ছিল অতিথিদের থাকার জায়গা।আদিনা থেকে গেলাম একলাখি মসজিদ দেখতে,এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে,লিন্টেলের ওপর হিন্দু দেব-দেবীর মূর্তি খোদাই করা রয়েছে।

পরের দিন সকালে গোসল করে গেলাম জোহুরা কালীবাড়ি।প্রায় চারশো বছরের পুরোনো।এখানকার কালীমুর্তিটি গতানুগতিক কোনও কালীমন্দির নয়।সিঁদুর লেপে তৈরী মুখোশের মতো।মালদহে গেলে অবশ্যই আমার সাথে সাথে চেকে দেখবেন দুই ডাকসাইটে মিষ্টি-কান্সাট আর রসকদম্ব।তবে বলে রাখা ভাল যে সদ্য তৈরী কানসাটের স্বাদই আলাদা।পুরনো হলে এর আসল স্বাদটা বুঝতে পারবেন না।আর যা খাবেন সেটা হল নবাবগঞ্জের বেগুন।লাউ-এর মত দেখতে এই বেগুন খেতে ভারি মিষ্টি।শুধু ভেজে খেলেই ভাল লাগবে।গৌঁড়ের রামকেলি মেলা,কার্তিক পুজোর মেলা,চারু বাবু মেলা,চরক মেলা দেখতে অনেকেই ভীড় জমায়।আসলে ইতিহাসের বাইরে মালদহের স্থানীয় সংস্কৃতিও অনেক সমৃদ্ধ।

কীভাবে যাবেন

ট্রেনে মালদহ পৌঁছানো যায় সহজেই।হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে তো বটেই ভারতের নানা জায়গা থেকেই মালদহ পৌঁছানো যায় সহজেই কলকাতা থেকেন উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ট্রেন হল-জন শতাব্দি এক্সপ্রেস,গৌড় এক্সপ্রেস,কাঞ্জনজজ্ঞা এক্সপ্রেস,দার্জিলিং মেল,তিস্তা-তোর্সা এক্সপ্রেস।কলকাতা থেকে মালদহ পর্যন্ত বাস সার্ভিসও আছে তবে ট্রেন ভ্রমণ আরামদায়ক।

কোথায় থাকবেন

থাকার জন্য মালদহে নানা মানের হোটেল আছে।পশ্চিমবজ্ঞ সরকারের ট্যুরিস্ট লজও রয়েছে থাকার জন্য।বুকিং কলকাতা ট্যুরিস্ট অফিস থেকেই করা হয়।

কখন যাবেন

গরম ও বর্ষাকাল বাদে বছরের বাকি সময় মালদহ ভ্রমন করা যেতেই পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *