মেসি ও রোনালদো সহ যে ১০জন সেরা ফুটবল খেলোয়াড় কখনো বিশ্বকাপ জিততে পারেননি

0

Image result for মেসি ও রোনালদো

ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল সেই ১৯৩০ সাল থেকে ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আসর বলে বিবেচিত হয়ে আসছে। যুগে যুগে সেরা খেলোয়াড়দেরও তাই স্বপ্ন থাকে, ব্যক্তিগত অর্জনের ঝুলি কানায় কানায় পূর্ণ হলেও একটিবার দেশের হয়ে বিশ্ব ফুটবলের ময়দান জয় করার, বিশ্বকাপের শিরোপা হাতে নেয়ার। কিন্তু ফুটবল যে দলগত খেলা, তাই স্বভাবতই অনেক খেলোয়াড়ের জন্য সে স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে যায়। মেসি ও রোনালদোও হয়তো এই ভেবে সান্ত্বনা পাবেন যে, যুগে যুগে তাদের মতো আরো অনেক খ্যাতিমান খেলোয়াড়কে বিশ্বকাপের আসর থেকে রিক্ত হাতে ফিরতে হয়েছে। বিশ্ব ফুটবলে নিজেদের ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের জন্যই তারা স্মরণীয় হয়ে আছেন।

১. লিওনেল মেসি

ফ্রান্সের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে হতাশ মেসি ; Source: fifa.com

এবারের বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের শেষ ম্যাচে তার হ্যাটট্রিকে বৈতরণী পার হলেও চূড়ান্ত পর্বে মেসি ও তার দলকে অনেকটা নিস্প্রভই দেখা গেছে। তাই প্রথম রাউন্ডের ফাঁড়া কাটাতে পারলেও শেষ ১৬-তে ফ্রান্সের কাছে ৪-৩ গোলে হেরে বিদায় নিতেই হলো।

আর্জেন্টিনার জার্সিতে গোল উদযাপনরত লিওনেল মেসি ; Source: canal3.md

গত ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে মেসির যোগ্য নেতৃত্বেই ডিফেন্সিভ আর্জেন্টিনা দল ফাইনালে উঠেছিল। কিন্তু অতিরিক্ত সময়ে জার্মানির একটি গোলে অধরাই থেকে যায় বিশ্বকাপের শিরোপা। এখন বয়সটাও হয়ে গেছে ৩১, এর আগে ২০১৬ সালে কোপা আমেরিকা ফাইনালে দ্বিতীয়বার পরাজয়ের শোকে তো অবসরের ঘোষণাই দিয়ে দিয়েছিলে। শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে ৭৫৬ মিনিট গোলশূন্য থাকার রেকর্ড নিয়েই হয়তো তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি ঘটবে।

২. ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো

শেষ চ্যাম্পিয়নস লিগে যেমন দুর্দান্ত বাইসাইকেল কিক গোল করেছেন, সেই দুরন্ত ফর্মটাই যেন বয়ে নিয়ে এসেছিলেন এবারের বিশ্বকাপে। হ্যাটট্রিক সহ চার গোল করে দলকে গ্রুপ পর্ব থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডে তুলতে মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন। কিন্ত উরুগুয়ের কড়া ডিফেন্সে আটকা পড়ে, দলের  অন্যদের জ্বলে উঠতে না পারার ব্যর্থতায় শেষ ষোলোতেই শেষ হয়ে গেল ৩৪ বছর বয়সী এই  পর্তুগিজ অধিনায়কের বিশ্বকাপ যাত্রা।

উরুগুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে রোনালদো ; Source: thenational.ae

২০০৬ সালে তার দল সর্বোচ্চ সেমিফাইনাল পর্যন্ত গিয়েছিল, ২০১০ সালে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারলেও ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে ইনজুরিগ্রস্ত রোনালদোর দলকে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছিল। আগামী কাতার বিশ্বকাপের সময় বয়স হয়ে যাবে ৩৭। তাই ২০১৬ সালের ইউরো শিরোপা জয়ের সুমধুর স্মৃতিটুকু নিয়েই হয়তো ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে বিদায় নেবেন।

৩. অলিভার কান

২০০২ বিশ্বকাপের ফাইনাল শেষে অলিভার কান ; Source: btcmarkethastag.xyz

সর্বকালের অন্যতম সেরা এই গোলরক্ষক এগারো বছর ধরে জার্মানির গোলপোস্ট আগলেছেন। কিন্তু ২০০২ সালের  বিশ্বকাপের ফাইনালে তার একটু ভুলের জন্য রোনালদোর জোড়া গোলের একটি হজম করতে হয় (কানও নিজের লিগামেন্ট ইনজুরিকে এ ভুলের জন্য দায়ী করেননি),  ব্রাজিলও ২-০ গোলে জিতে বিশ্বকাপ জয় করে। তার অবিসংবাদী পারফর্ম্যান্সের জন্য সেই বিশ্বকাপেই প্রথম গোলরক্ষক হিসেবে ফিফার গোল্ডেন বলের সম্মাননা পেয়েছেন, কিন্তু বিশ্বকাপ না জেতার আক্ষেপটা সঙ্গী হয়ে রইল অলিভার কানের।

৪. পাওলো মালদিনি

২০০২ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে ইতালির বিদায়ের পর মালদিনি ; Source: gettyimages.com

ইতালির এই কিংবদন্তি এসি মিলানের হয়ে তার ২৫ বছরের ক্লাব ক্যারিয়ারে সাত বার সিরিএ ও পাঁচ বার চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জয় করেছেন, কিন্তু দেশের হয়ে কোন ট্রফি জিততে পারেননি। ২০০২ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় গ্রুপ পর্ব থেকে ইতালির লজ্জাজনক বিদায়ের সঙ্গী হতে হয়েছিল তাকে, ১৯৯৪ সালে বিশ্বকাপ ফাইনালে ব্রাজিলের কাছে পেনাল্টিতে পরাজয় বরণের সময়ও ইতালি দলের অংশ ছিলেন।

৫. ইয়োহান ক্রুইফ

১৯৭৪ বিশ্বকাপে ইয়োহান ক্রুইফ; Source: fortune.com

তিনবার ব্যালন ডি’অর জিতেছেন, তিনি গোল করেছেন এমন কোন ম্যাচে হল্যান্ড হারেনি, কোচ হিসেবেও তার অনবদ্য সাফল্যের জন্য উয়েফার সেরা দশ কোচের তালিকায় ঠাই করে নিয়েছেন। সেই ১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপে টোটাল ফুটবল খেলা হল্যান্ড পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে গেলেও ফাইনালে পশ্চিম জার্মানির কাছে ২-১ গোলে পরাজিত হয়। তাই হল্যান্ডের সাথে সে বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় ক্রুইফকেও শিরোপাপূর্ণ হাতে দেশে ফিরতে হয়।

৬. মিশেল প্লাতিনি

১৯৭৮ বিশ্বকাপে ফ্রান্সের বিদায় নিশ্চিত হওয়ার পর অশ্রুসজল প্লাতিনি ; Source: fortune.com

১৯৮৪ সালে তার নেতৃত্ব আর সেরা পারফরম্যান্সের (দুইটি হ্যাট্রিক সহ পাঁচ ম্যাচে নয় গোল)  গুণে ফ্রান্স ঘরের মাটিতে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিল।কিন্তু বিশ্বকাপে এসে সে পর্যায়ের সাফল্য অনূদিত হয়নি। ১৯৭৮ সালে ফ্রান্স গ্রুপ পর্বই পার হতে পারেনি, ১৯৮২ ও ১৯৮৬ সালে তদানীন্তন পশ্চিম জার্মানির কাছে দুইবার সেমিফাইনালে হেরে প্লাতিনি ও তার দলকে  যথাক্রমে চতুর্থ ও তৃতীয় স্থান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়।

৭. ইউসেবিও

১৯৬৬ বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ শেষে অশ্রুসিক্ত ইউসেবিও ; Source: whoateallthepies.tv

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর জন্মেরও প্রায় দুই যুগ আগে কালো চিতা ডাকনামের এই পর্তুগিজ কিংবদন্তি পর্তুগালকে বিশ্ব ফুটবলের দরবারে সুপরিচিতি এনে দিয়েছিলেন। ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপে তিনি রেকর্ড নয় গোল করে জিতেছিলেন গোল্ডেন বুট, কিন্তু সেমিফাইনালে ২-১ গোলে ইংল্যান্ডের কাছে পরাজয় মেনে চোখের জলে সিক্ত ইউসেবিওকে বিশ্বকাপ লড়াইয়ের মাঠ ছাড়তে হয়। এছাড়া ১৯৬২ ও ১৯৭০ সালে দেশের হয়ে বিশ্বকাপের বাছাইপর্বও খেলেছেন,কিন্তু ১৯৮৬ সালের আগ পর্যন্ত পর্তুগাল আর চূড়ান্ত পর্ব পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি।

৮. ফেরেঙ্ক পুসকাস

১৯৫৪ বিশ্বকাপে পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে হাঙ্গেরির পুসকাস; Source: worldfootballindex.com

হাঙ্গেরির সর্বকালের সেরা এই ফুটবলার বর্ণাঢ্য ক্লাব ক্যারিয়ারের পাশাপাশি হাঙ্গেরি জাতীয় দলের হয়েও ৮৪ ম্যাচে ৮৩ গোল করেছিলেন। তার সময়েও হাঙ্গেরি ফুটবলেও চলছিল স্বর্ণযুগ, টানা ৩২ ম্যাচে অপরাজিত দলটি ১৯৫২ সালে অলিম্পিকে স্বর্ণপদক ও পরের বছর ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ জয় করেছিল। কিন্তু ১৯৫৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে এসে অপ্রতিরোধ্য হাঙ্গেরি দলটি অবিশ্বাস্যভাবে, ম্যাচের আট মিনিটের মধ্যে দুই গোলে এগিয়ে গিয়েও প্লেঅফ খেলা দুর্বল প্রতিপক্ষ পশ্চিম জার্মানির কাছে ৩-২ গোলে পরাজয় বরণ করে। এরপর নানা রাজনৈতিক জটিলতার শিকার হয়ে তিনি স্পেনের জাতীয়তা নিয়ে ১৯৬২ সালের বিশ্বকাপে অংশ নেন, তবে সেবার স্পেন গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয়।

৯.  ওয়েইন রুনি

উরুগুয়ের বিপক্ষে নিজের প্রথম বিশ্বকাপ গোল উদযাপন করছেন রুনি ; Source: express.co.uk

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড করা এই ফুটবলার ইংল্যান্ডের সোনালি প্রজন্মের অংশ হয়ে তিনটি বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু ২০০৬ সালে পর্তুগালের বিপক্ষে পেনাল্টিতে হেরে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে যে বিদায়ের শুরু, তার ক্রমনিম্ন ধারাবাহিকতায় ২০১০ সালে শেষ ষোলো থেকে ও ২০১৪ সালে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় ইংল্যান্ড। ৩২ বছর বয়সী এই ফুটবলার গত বছর আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানান।

১০. রাউল গঞ্জালেস

গোল উদযাপনরত স্পেন দলের তৎকালীন অধিনায়ক রাউল ; Source: tarafdari.com

স্পেনের ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই খেলোয়াড় ১৯৯৮, ২০০২ ও ২০০৬ সালে বিশ্বকাপে অংশ নিলেও কোনবারই লা রোজারা শেষ আটের বাধা পেরুতে পারে নি। শেষ পর্যন্ত ২০০৮  সালে কোচের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে ইউরোজয়ী স্পেনের স্কোয়াড থেকে বাদ পড়েন রাউল, তাই এর দুই বছর পর বিশ্বকাপ জেতা দলটিরও অংশ হতে পারেননি তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *