যে ১০ টি কারণে মানবসম্পদ বিভাগ যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

মানবসম্পদ বিভাগ যেকোন প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মানবসম্পদ বিভাগে উদ্দেশ্য হচ্ছে, নির্দিষ্ট এবং সাংগঠনিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সফল ব্যবহার নিশ্চিত করা। একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে কর্মীদের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা দেখার দায়িত্ব হচ্ছে মানবসম্পদ বিভাগের।
এছাড়াও আরও কী কী কারণে একটি প্রতিষ্ঠানে মানবসম্পদ বিভাগ থাকা জরুরি তা নিয়ে আলোচনা করা হল-

১. কৌশলগত ব্যবস্থাপনা

মানবসম্পদ বিভাগ কর্মীদের কিভাবে কৌশলগত ভাবে কাজে লাগানো তা নিয়ে কাজ করে। কর্মকর্তারা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে একটি প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যতের কর্মী চাহিদা নির্ণয় করে থাকেন।

Image Source: nationaldailying.com

যেমন- বিগত বছরের কর্মীদের তথ্য পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধান করে ভবিষ্যতে কোন বিভাগে এবং প্রতি বছর কতজন কর্মী লাগবে, কর্মীদের যোগ্যতা ও দক্ষতা কী ধরণের হতে হবে, ভবিষ্যতে কি ধরণের কাজ আসতে পারে এবং সেসব কাজ সম্পন্ন করার জন্য কয়জন কর্মীর নিয়োগ দেয়া লাগতে পারে তা নির্ণয় করে থাকে।

২. কর্মী নিয়োগ

মানবসম্পদ বিভাগ একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী নিয়োগ সম্পর্কিত যাবতীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। যেমন কাজের ধরণ বিশ্লেষণ করে সে অনুযায়ী চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, আবেদনকৃত প্রার্থীদের আবেদন পত্র যাচাই বাচাই করে যোগ্য প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়।

Image Source: onetraining.org

অনেক প্রতিষ্ঠান লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষা নেয়, আবার কোন প্রতিষ্ঠান শুধু মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে থাকে। ক্ষেত্র বিশেষে ডাক্তারি পরীক্ষা ও করানো হয়। যোগ্যতা,দক্ষতা, এবং সকল প্রয়োজনীয় তথ্য বিশ্লেষণ করে মানবসম্পদ বিভাগ উপযুক্ত প্রার্থী নিয়োগ দিয়ে থাকে।

৩. প্রশিক্ষণ প্রদান

শুধু কর্মী নিয়োগ করেই মানবসম্পদ বিভাগের কাজ শেষ হয়ে যায় না। নতুন কর্মীদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হয়। প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্দেশ্য হচ্ছে, কর্মীদের কে তাদের নির্ধারিত কাজের জন্য আরও দক্ষ ও যোগ্য করে তোলা। যাতে করে নতুন কর্মীরা প্রতিষ্ঠান ও তাদের কাজের ধরণ সম্পর্কে বিশদ ধারণা লাভ করতে পারে।

Image Source: humanresourcesonline.net

প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য, মিশন, ভিশন সম্পর্কে জানতে পারে। প্রশিক্ষণের মধ্যে আবার বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ রয়েছে। যেমন- চাকরির ক্ষেত্র থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ, হতে পারে আলাদা কোনো ক্ষেত্র থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ, অথবা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে কাজ করার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নেয়া। যা সবকিছু একটি প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগ করে থাকে।

৪. বেতন ও মজুরি

Image Source: businesscentrictechnology.com

মানবসম্পদ বিভাগ প্রতিষ্ঠানের কর্মী ও শ্রমিকদের বেতন ও মজুরি কাঠামো নির্ধারণ করে থাকে। সরকারের নির্ধারিত বেতন কাঠামো, অনুরূপ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতন পর্যবেক্ষণ এবং কর্মীদের যোগ্যতা, দক্ষতা,অভিজ্ঞতা ও পদের ভিত্তিতে বেতন ও মজুরি নির্ধারণ করে থাকেন।

৫. কর্মীদের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা

Image Source: alamy.com

কর্মীদের প্রতিষ্ঠানে ধরে রাখার জন্য, তাদের মধ্যে অনুপস্থিতির হার কমানো এবং কোনো কারণে কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মধ্যে যাতে ক্ষোভ ও অসন্তুষ্টি সৃষ্টি না হয়, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং কর্মীদের যাবতীয় সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে থাকে।

৬. নিরাপত্তা ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা

মানবসম্পদ বিভাগ কর্মীদের নিরাপদ কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করে থাকে। বিপদজনক সরঞ্জাম ও রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহারে সতর্কতা

Image Source: eshtoday.com

মানবসম্পদ বিভাগ কর্মীদের নিরাপদ কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করে থাকে। বিপদজনক সরঞ্জাম ও রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহারে সতর্কতা এবং বিভিন্ন দুর্যোগমূলক পরিস্থিতি যেমন- ভূমিকম্প, অগ্নিকান্ড, ভবনধসের সময় করণীয় এবং সেইসাথে ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, জরুরি নির্গমন পথ ইত্যাদির ব্যবহার সম্পর্কে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। কর্মীরা যাতে তাদের কর্মস্থলে নিরাপদবোধ করে সেরকম কর্মক্ষেত্র প্রদান করা হয়।

৭.শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ

Image Source: positivephycologyprogrames.com

কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণে কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। একজন কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূ্লক ব্যবস্থা বিভিন্ন কারনে নেয়া হতে পারে। যেমন- কর্মী কোনো ভু্ল করলে, পেশাগত নিয়ম লঙ্ঘন, উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে দূর্ব্যবহার করলে, অন্য কর্মীদের সাথে বৈষম্যমূ্লক আচরণ অথবা শালীনতাহানি করলে মানবসম্পদ বিভাগ কর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূ্লক ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।

৮. মধ্যস্থতাকারী

কর্মীদের কোনো প্রয়োজন অথবা সমস্যার সম্মুখীন হলে সরাসরি কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে পারে না। তাদের মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে সব কিছু আলোচনা করতে হবে।

মানবসম্পদ কর্মকর্তারা কর্মীর পক্ষ হয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবে। ঠিক একইভাবে মালিকপক্ষ মানবসম্পদ বিভাগের মাধ্যমে কর্মীদের সাথে আলোচনা করে থাকে।
সুতরাং, মানবসম্পদ বিভাগ মালিকপক্ষ ও কর্মচারীদের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে থাকে।

৯. আইন সম্পর্কিত তথ্য প্রদান

কর্মীদের শ্রমিক আইন সম্পর্কিত সকল তথ্য প্রদান করে থাকে মানবসম্পদ বিভাগ।

Image Source: study-cdp-org-bd

ট্রেড ইউনিয়ন এবং সরকারকতৃক নির্ধারিত সকল আইন সম্পর্কে যেমন- কর্মীদের বেতন ভাতা, বোনাস, ওভারটাইম, ছুটি, দৈনিক কর্মঘন্টা ইত্যাদি সম্পর্কিত তথ্য জানাতে হবে এবং এসব নিয়ম নীতি সঠিক ভাবে প্রয়োগ করা হয় তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব মানব সম্পদ বিভাগের।

১০. তথ্য সংগ্রহ

একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সকল প্রয়োজনীয় তথ্য মানবসম্পদ বিভাগের সংগ্রহে থাকে। ব্যক্তিগত সকল তথ্য, কোম্পানির সাথে চুক্তি, কাজের দায়িত্ব,তাদের সম্পাদিত সকল কাজের বর্ণনা সবকিছু সংগ্রহীত থাকে। এসব তথ্য ভবিষ্যতে যেকোনো প্রয়োজনে কাজে লাগতে পারে।

Image Source- betterteam.com

মানবসম্পদ বিভাগ একটি প্রতিষ্ঠানের সকল ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কর্মী সম্পর্কিত সকল নিয়ম-নীতির সুষ্ঠু প্রয়োগ করে থাকে। কারন মানবসম্পদ বিভাগ কর্মীদের নিয়ে কাজ করে এবং কর্মীরা হচ্ছে যেকোনো প্রতিষ্ঠানের সবথেকে মূল্যবান সম্পদ।

Featured Image: mun.ca

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *