বর্তমান সময়ে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে কর্মজীবন শুরু করতে আপনার জন্য চাকরি মেলায় অংশগ্রহণ করা হতে পারে, দারুণ স্মার্ট একটি মাধ্যম। ক্যারিয়ার কিংবা চাকরিসংক্রান্ত একটি মেলায় অংশগ্রহণ, আপনাকে হয়তো পাইয়ে দিতে পারে, আপনার স্বপ্নের কোনো চাকরি। হতে পারে সেটা জীবনের প্রথমবার। কিংবা অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হওয়ার পরেও। আপনি হয়তো অনলাইন কিংবা পত্রিকায় ঘরে বসে চাকরির খোঁজ করছেন।

Source: businessinsider.com

তারপর সুবিধা মতো কোনো পদের জন্য সিভিও দিচ্ছেন। কিন্তু চাকরি মেলায় অংশগ্রহণ, আপনাকে সরাসরি চাকরিদাতার মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ করে দেবে। এদের সামনে আপনার স্বতঃস্ফূর্ত ও কৌশলপূর্ণ অংশগ্রহণই পারে, অন্য সবার কাছ থেকে আপনাকে আলাদাভাবে তাদের কাছে তুলে ধরতে। তাই চলুন, এমন কিছু কৌশল জেনে নিই, যেগুলো প্রয়োগ করে আপনিও পেতে পারেন আপনার কাঙ্ক্ষিত চাকরি।

কীভাবে তৈরি হবেন?

প্রতিটি কাজের জন্যই প্রস্তুতি নিতে হয়। তেমনিভাবে চাকরির মেলায় অংশগ্রহণের জন্যও প্রস্তুতি নিতে হবে। কীভাবে চাকরি মেলা থেকে চাকরি পাওয়ার জন্য নিজেকে তৈরি করবেন? এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা পেতে নিচের পরামর্শগুলো মেনে চলুন।

১. ক্যারিয়ার মেলা শুরু হওয়ার পূর্বেই রেজিস্ট্রেশন করে রাখুন

সাধারণত অধিকাংশ চাকরি কিংবা ক্যারিয়ার মেলা শুরু হওয়ার আগেই, চাকরি প্রার্থীদের রেজিস্ট্রেশন করার সুযোগ দেওয়া হয়ে থাকে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রেজিস্ট্রেশন করুন ও সিভি জমা দিন। এটি করে রাখার একটা ভালো দিক হলো, যারা আপনার ভাইবা নেবেন, তারা আগে থেকেই আপনার ব্যাপারে জানতে পারবে।

২. যেসব প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করবে, তাদের ব্যাপারে খোঁজ নিন

একটা কোম্পানি সম্পর্কে যখন আপনি আগে থেকেই জানবেন, সেটা ভাইবার সময় আপনার নিজের প্রতি দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। কারণ আপনি তাদের চাহিদা ও কাজের ধরন সম্পর্কে পূর্বেই জেনে গেছেন।

Source: bognor.news

এখন তারা প্রশ্ন করলে, আপনি তাদের চাহিদার দিক বিবেচনা করে কৌশলী জবাব দিতে পারবেন। এতে ভাইবা বোর্ডের সদস্যরা আপনার প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টি দেবে। সেই সাথে প্রতিষ্ঠান ও আপনার মাঝে অদৃশ্য একটা বন্ধন তৈরি হয়ে যাবে।

৩. পূর্ণাঙ্গ নকশা তৈরি করুন

যখন আপনি প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে খোঁজ নিবেন, তখন কাদের মুখোমুখি আপনি হতে যাচ্ছেন, সেটা আগেই জানতে পারবেন। তারপর আপনি চিন্তা ও নকশা করুন, কোন প্রতিষ্ঠানকে কীভাবে মোকাবিলা করবেন, কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য কতটুকু সময় ব্যয় করা আপনার জন্য বুদ্ধিমানের মতো কাজ হবে। আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময় বাঁচাতে চাইলে এটি অবশ্যই করুন।

৪. সিভির হার্ডকপি সাথে রাখুন

আপনি যতগুলো কোম্পানির জন্য চাকরি মেলায় আবেদন করছেন, তার চেয়ে কয়েকটি বেশি সিভির হার্ডকপি সঙ্গে করে নিয়ে যাবেন।

Source: dldc.org

কারণ অনেকগুলো কোম্পানি হয়তো, একের অধিক সিভি চাইতে পারে। আবার চাকরির ধরন যদি ভিন্ন ভিন্ন হয়, তবে পৃথক পৃথক ভার্সনের বিভিন্ন সিভি যথেষ্ট পরিমাণে সাথে রাখুন।

৫. এলিভেটর পিচে জন্য নিজেকে তৈরি করুন

আপনি নিজেকে চাকরিদাতার কাছে পরিচয় করানোর জন্য, প্রায় ১ মিনিট কিংবা একটু কমবেশির মতো সময় পাবেন। এই সময়ের ভেতর আপনার চাহিদা, যোগ্যতা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তাদেরকে জানাতে হবে। তাই এই এলিভেটর পিচের জন্য, ভাইবাতে মুখোমুখি হওয়ার পূর্বেই, নিজে নিজে প্রচুর অনুশীলন করুন ও প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।

৬. ভাইবার প্রশ্ন সম্পর্কে ধারণা রাখুন

সবচেয়ে ভালো হয় ভাইবা দিতে যাওয়ার আগে, ইন্টারভিউয়ে সাধারণত যেসব প্রশ্ন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়ে থাকে, সেগুলো সম্পর্কে জানা ও বিভিন্ন ভাইবা প্রশ্ন নিয়ে গবেষণা করা।

Source: freshcareersfair.co.uk

এটিই অনেকের চেয়ে আপনাকে, প্রশ্নকর্তাদের কাছে আলাদা ও ইতিবাচক দৃষ্টিতে উপস্থাপনের সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে। এছাড়াও আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়াতেও, ইন্টারভিউয়ের বিভিন্ন প্রশ্ন সম্পর্কে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মেলায় অবস্থানরত অবস্থায় কী করবেন?

চাকরি মেলায় আসার আগে আপনাকে অবশ্যই সঠিক পোশাক নির্বাচন করতে হবে। চুল ঠিক করে, ভাইবার জন্য উপযোগী রং বিশিষ্ট জামা ও প্যান্ট পরিধান করে, জামা-প্যান্টের সাথে মানানসই জুতো পায়ে দিয়ে তবেই বাসা থেকে বের হবেন। এবার নিচের দিকনির্দেশনার প্রতি খেয়াল করুন।

১. নিজের আত্মবিশ্বাস ধরে রাখুন

যখন চাকরিদাতাদের সামনে যাবেন, তখন একটু মিষ্টি হাসি দিয়ে তাদের সাথে কুশলাদি বিনিময় করুন। মনে রাখবেন, প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা এখানে আপনার সাথে কথা বলতেই এসেছে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাটি হলো, তারা চাকরি দেওয়ার জন্য যোগ্য মানুষটি খুঁজতে এসেছে। তাই নিজেকে সেভাবে উপস্থাপন করুন। আপনি যদি এখনো ছাত্র হন, তাহলে এলিভেটর পিচয়ের সময় নিজের প্রাতিষ্ঠানিক পারফরম্যান্স, এক্সট্রা কারিকুলাম এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়েও বলতে পারেন।

২. প্রয়োজনে নোট রাখুন

যখন আপনি এমন কোনো তথ্য জানতে পারলেন, যেগুলো জানতেন না কিংবা পরবর্তী সময়ে কাজে লাগতে পারে বলে মনে হয়, সেগুলো নোট করে রাখবেন। তাহলে এটি আপনার পরবর্তী সময়ে কিংবা অন্য প্রতিষ্ঠানের ভাইবাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

Source: michaelbluemling.com

তাছাড়া যারা আপনার ভাইবা নেবে তাদের যোগাযোগ নাম্বার ও যোগাযোগের ঠিকানা সংগ্রহে রাখুন। কোনো গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ জানতে পারলে সেগুলো অবশ্যই টুকে রাখবেন।

৩. প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের থেকে ব্যবসায়িক কার্ড সংগ্রহ করুন

চাকরি মেলায় চেষ্টা করবেন, কোম্পানির প্রতিনিধিদের থেকে তাদের ব্যবসায়িক কার্ড চেয়ে নিতে। এটিই তাদের সাথে পরবর্তীতে যোগাযোগের রাস্তা তৈরি করে দেবে। কার্ড সংগ্রহ করার পর তাদেরকে ধন্যবাদ বলুন। আপনি জেনে অবাক হবেন, কেউ কেউ চাকরি মেলায় চাকরি পেয়ে যায়, শুধুমাত্র ছোট একটি শব্দ ‘ধন্যবাদ’ বলার কারণে।

৪. নেটওয়ার্ক

চাকরি মেলায় অংশগ্রহণ করাটা পূর্ণতা পাবে, যখন আপনি অন্যান্য প্রতিযোগীদের সাথেও পরিচিত হবেন। কোম্পানির ব্যাপারে আপনার কোনো তথ্য জানা থাকলে, তাদের সাথে আলোচনা করবেন এবং তাদের সম্পর্কে জেনে নেবেন।

Source: newslocker.com

আবার পাশাপাশি মেলায় অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারেও টুকিটাকি খোঁজ-খবর নিয়ে রাখবেন, যাতে ভবিষ্যতে কোনো কাজে লাগাতে পারেন। এভাবে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করুন। তাছাড়াও মেলায় অনেক অভিজ্ঞদের সাথে পরিচয় হয়ে যেতে পারেন, যাদের কাছে থেকে আপনার হয়তো দারুণ কিছু শেখার সুযোগ তৈরি হবে।

মেলা থেকে ফিরে কী করবেন?

চাকরি মেলা থেকে ফিরে এসে ঘরে চুপচাপ বসে থাকলে, আপনার চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকবে। তাই চাকরি পেতে হলে, মেলা থেকে এসে আপনার করণীয় হলো-

১. কোম্পানি প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখুন

ভাইবা দিয়ে আপনি মেলা থেকে ফিরলেন, তার মানে এই না যে, আপনার কাজ শেষ। এখন আপনি নিজের সারাদিনের কর্মকান্ড চিন্তা করুন। কী করা উচিৎ হয়নি কিংবা কোনটা করলে আরো ভালো হতো সেটা ভেবে দেখুন। তারপর যেসব প্রতিষ্ঠানে আপনি ভাইবা দিয়েছেন, তাদেরকে ধন্যবাদ সূচক মেইল করুন। তাদের সাথে কথা বলতে পেরে, আপনি কতটুকু খুশি সেটা জানান। তাদের প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করতে পারলে, আপনার সেরাটা দেওয়ার কথাও জানাতে পারেন। মেইলের শেষদিকে নিজেকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রতিনিধির কাছ থেকে পরামর্শও চেয়ে নিতে পারেন। এভাবে প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখবেন।

২. নেটওয়ার্ক বজায় রাখা

মেলায় অংশগ্রহণ করে, পরিচিত হওয়া অন্য চাকরিপ্রার্থীদের কথা মনে আছে? সম্ভব হলে তাদের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখুন। তাদের ব্যর্থতা ও সফলতার গল্প শুনুন।

Source: rts.org

প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে নতুন কোনো তথ্য থাকলে তাদের জানান, তাদের কাছ থেকেও জানতে চেষ্টা করুন। নিজেদের ভেতর কমিউনিটি তৈরি করুন। সবচেয়ে ভালো হয় চাকরির তথ্য জানানো হয় এমন কোনো গ্রুপে জয়েন করলে। এতে আপনি নিরবচ্ছিন্ন তথ্য পেতে পারবেন।

আপনি যখন কোনো চাকরি মেলায় অংশগ্রহণ করবেন, চেষ্টা করবেন এ কৌশল, পরামর্শ ও উপদেশগুলো মাথায় রাখতে। তাহলে হয়তো আপনার চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা একধাপ এগিয়ে যাবে এবং অন্যান্য চাকরি প্রার্থীদের তুলনায় আপনি এগিয়ে থাকবেন।

Featured Image:Clfb.tk