তত্ত্বাবধান শিল্পের সেরা ৬টি চাকরি

বর্তমান আধুনিক যুগে কাজের ক্ষেত্র বিবেচনা করে, বিভিন্ন ধরনের শিল্প গড়ে উঠেছে। পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ আছে, যারা মানুষদের তত্ত্বাবধান করতে, যত্ন নিতে, ভালোবাসতে ও তাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণভাবে মিশতে অধিক পছন্দ করেন। এসব মানুষদের নিয়ে উদ্যোক্তারা গড়ে তুলেছেন তত্ত্বাবধান শিল্প । তত্ত্বাবধান শিল্পের কর্মকর্তা ও কর্মীরা সাধারণত বিভিন্ন সুবিধা বঞ্চিত, হতাশাগ্রস্ত, আত্মবিশ্বাসহীন মানুষ ও মানসিক রোগীদের নানান রকমে অনুপ্রেরণা, সহযোগিতা, যত্ন ও সেবা প্রদান করে থাকেন।

Source: exscribe.com

আপনিও যদি বন্ধুভাবাপন্ন, ধৈর্যশীল, যত্নবান ও অনুপ্রেরণাদায়ক গুণাবলী সংবলিত মানুষদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকেন, তবে খুব সহজেই তত্ত্বাবধান শিল্পে আপনার ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন। আমি এ আর্টিকেলটিতে তত্ত্বাবধান শিল্পে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য সেরা ৬ টি চাকরি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

১. সহযোগী অ্যাডমিন

একজন সহযোগী অ্যাডমিন সাধারণত তত্ত্বাবধান শিল্পের অফিস বা তত্ত্বাবধান হোমে কাজ করে থাকেন। তিনি সেবা প্রত্যাশীদের অভ্যর্থনা জানানো, তথ্য লিপিবদ্ধ করা, মিটিং আয়োজন ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিভিন্ন কাজে সহায়তা করার মতো কাজগুলো করেন। সহযোগী অ্যাডমিন পদে চাকরি করতে হলে, আপনার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রির পাশাপাশি সাংগঠনিক, সময় ব্যবস্থাপনা ও ভালো যোগাযোগের দক্ষতা থাকতে হবে।

Source: monster.com

এছাড়াও কম্পিউটার বিষয়েও দক্ষ হতে হবে। তবে উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা মূখ্য বিষয় না, শিক্ষাগত যোগ্যতা কম থাকলেও, অন্যান্য বিষয়ে যদি ভালো দক্ষতা থাকে; তবে সহজেই সহযোগী অ্যাডমিন পদে চাকরি পাওয়া সম্ভব। প্রাথমিক পর্যায়ে একজন সহযোগী অ্যাডমিনের বার্ষিক গড় বেতন প্রায় ১৪ হাজার থেকে ১৮ হাজার পাউন্ড, যা বাংলাদেশের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১৫ লক্ষ থেকে ১৯ লক্ষ টাকা। আর একজন অভিজ্ঞ সহযোগী অ্যাডমিনের বার্ষিক গড় আয় প্রায় ২৪ হাজার পাউন্ড বা ২৫ লাখ টাকা।

২. তত্ত্বাবধান সহযোগী

যেসব মানুষেরা তাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম যেমন, খাওয়া, গোসল করা, পোশাক পরিধান করা ইত্যাদি নিজেরা করতে অক্ষম, তাদেরকে বাজার করা থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় সকল কাজ সমাধান করতে, সাহায্য করে থাকেন তত্ত্বাবধান সহযোগী। তত্ত্বাবধান সহযোগী সবসময় তার ক্লায়েন্টের আরাম ও সুবিধার কথা চিন্তা করে কাজ করে থাকেন।

Source: healthsocialcaremangementlavel.com

তত্ত্বাবধান সহযোগীকে সাধারণত নার্সিং হোম কিংবা ক্লায়েন্টের নিজ বাসায় থেকে কাজ করতে হয়। এ পদে চাকরি করতে হলে শিক্ষাগত যোগ্যতা বিবেচ্য বিষয় না, বরং রোগীদের সেবা করা, স্বেচ্ছাসেবামূলক ও গৃহস্থালির টুকিটাকি কাজ করার দক্ষতা থাকতে হয়। আপনার যদি এসব দক্ষতা থেকে থাকে, তবে এ পদে চাকরি করে আপনার ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। প্রথম দিকে বার্ষিক গড় আয় প্রায় ১৫ হাজার পাউন্ড বা ১৬ লাখ টাকার মতো হবে। তবে পরবর্তীতে অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বার্ষিক প্রায় ২৪ হাজার পাউন্ড বা ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বেতন পেতে পারেন।

৩. পরামর্শদাতা

বিভিন্ন হতাশাগ্রস্ত, আত্মবিশ্বাসহীন, মানসিক বিকারগ্রস্ত, নেশায় আসক্ত, মানসিক রোগ ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত মানুষদেরকে অনুপ্রেরণা, সাহস, উৎসাহ ও পরামর্শ দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে আসই হচ্ছে, একজন পরামর্শদাতার মূখ্য কাজ। পরামর্শদাতা হতে হলে আপনার ধৈর্যশীলতা, অনুপ্রেরণাদায়ক, সহানুভূতি প্রকাশক ও উৎসাহ প্রদানমূলক গুণাবলী থাকতে হবে।

Source: themcintyregroup.com

এছাড়াও আপনাকে কাউন্সিলিং বিষয়ক কোনো কোর্স করার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হতে হবে। পরামর্শদাতা হলে আপনি বছরে প্রায় ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার পাউন্ড আয় করতে পারবেন, যা বাংলাদেশের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ২১ লাখ থেকে ৩১ লাখ টাকা।

৪. সমাজকর্মী

সমাজকর্মীরা সাধারণত নবজাতক শিশু ও নারীদের বিভিন্ন সমস্যা, দুস্থ মানুষদের বাসস্থান ও খাদ্যের সমস্যা, বয়স্কদের সঠিক খাদ্য ও স্বাস্থ্যের সুরক্ষার ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সমস্যার সমাধান নিয়ে কাজ করে থাকে। এছাড়াও সমাজকর্মীরা ব্যক্তির বিভিন্ন মানসিক সমস্যা নিয়ে কাজ করে; বিশেষ করে বিভিন্ন দুর্যোগের আগে ও পরে মানুষকে মানসিক সহযোগিতা প্রদান করে। সমাজকর্মী হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে হলে, যে কোনো বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে; তারপর সমাজকর্ম বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করা দরকার। অথবা সোশ্যাল ওয়ার্কের উপরে কোনো প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা জরুরি।

Source: yudu.co.nz

সমাজ কর্মী হতে হলে ধৈর্যশীল, অনুপ্রেরণাদায়ক ও সহানুভূতিশীল ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন হতে হবে। বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করার মতো দক্ষতা থাকতে হবে। আপনার এসব দক্ষতা ও যোগ্যতা থাকলে, সমাজ কর্মী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন। একজন সমাজ কর্মীর বার্ষিক গড় বেতন প্রায় ২০ হাজার থেকে ৪০ হাজার পাউন্ড; যা বাংলাদেশের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ২১ থেকে ৪২ লাখ টাকা।

৫. যুব কর্মী

তরুণ সমাজ বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের মানসিক, সামাজিক ও ব্যক্তিগত সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে। তরুণ তরুণীরা যাতে তাদের সমস্যা কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে, সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে যুব কর্মীরা। যুব সমাজের কেউ কেউ বিপথগামী হয়ে পড়ে, কেউ চাকরি না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে যায়, কেউবা আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভোগে এবং দিনদিন অন্ধকার পথে হারিয়ে যেতে থাকে; আর যুব কর্মীরা তাদের কর্ম দক্ষতা দিয়ে এ তরুণ সমাজকে আলোর দিশা প্রদান করে থাকে। এছাড়া যুব কর্মীরা বেকারত্ব দূরীকরণেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে।

Source: reed.co.uk

যুব কর্মী হিসেবে ক্যারিয়ার গঠন করতে হলে, কোনো বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করতে হবে এবং জাতীয় যুব উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে। আর ধৈর্যশীল হওয়ার মানসিকতা, অনুপ্রাণিত করার সক্ষমতা ও সমস্যা সমাধান করার মতো দক্ষতা থাকতে হবে। আপনার যদি এসব দক্ষতা ও যোগ্যতা থাকে, তবে খুব সহজেই যুব কর্মী হওয়াকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন। প্রাথমিকভাবে একজন যুব কর্মীর বার্ষিক গড় বেতন প্রায় ১৮ হাজার পাউন্ড বা ১৯ লাখ টাকা। অভিজ্ঞতা অর্জিত হলে বছরে প্রায় ৩০ হাজার পাউন্ড বা ৩১ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব।

তত্ত্বাবধান শিল্পে ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে এগুলো অন্যতম সেরা চাকরি। তাই আপনার যোগ্যতা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে, কোনো একটি চাকরিতে যোগদান করার মাধ্যমে, তত্ত্বাবধান শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারেন।

Featured Image: Dw.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *