কর্মক্ষেত্র পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে ৬টি গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ

মনে পড়ে, কতো আনন্দ আর আশা নিয়ে প্রথম কর্মক্ষেত্রে যোগদান করেছিলাম আমরা। এরপর নতুন নতুন অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতার সাথে বেড়ে চলেছে জীবনের চাহিদা। হয়তো এই বর্ধিত চাহিদার কিছু অংশ মেটাতে পারছে বর্তমান কর্মক্ষেত্র, আবার কিছু হয়ত মেটাতে পারছে না। ঠিক এই পর্যায়ে এসে আমরা সবাই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হিমশিম খেয়ে থাকি।

source:hairashid.com

নিজেকে প্রতিনিয়ত প্রশ্ন করতে থাকি কর্মক্ষেত্র পরিবর্তন করা আসলেই কি ঠিক হচ্ছে? নাকি ভুল করছি? যদি আপনিও এই দোটানায় পড়ে থাকেন তাহলে আমার এই আর্টিকেলটি আপনার সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করতে পারে।

নিজেকে প্রশ্ন করুন নতুন কর্মক্ষেত্রে আপনি কী কী আশা করছেন?

আপনি কি জানেন? মানুষ কী কারণে কর্মক্ষেত্র পরিবর্তন করতে চায়? একটি গবেষণা বলে, মানুষ যে সকল কারণে কর্মক্ষেত্র পরিবর্তন করে থাকে সেগুলোর মাঝে অন্যতম হচ্ছে, একটি ভালো বেতন, জীবন এবং কর্মক্ষেত্রের সাম্যাবস্থা এবং কিছু ভালো সুযোগ সুবিধা। আবার এই গবেষণা আরও কিছু চমকপ্রদ তথ্য উপস্থাপন করেছে আর সেটা হলো, কিছু কিছু মানুষ তাদের কর্মক্ষেত্র পরিবর্তন করে থাকে যাদের তেমন কোনো উল্লেখ্য কারণ থাকে না। এদের সমস্যাটা নিজের মধ্যেই। যেমন: এদের মাঝে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার আগ্রহ খুব কম।

source:oecdeducationtoday.blogspot.com

এদের কর্মক্ষেত্রে লক্ষ্য অর্জনে কোনো প্রকার পরিকল্পনা থাকে না। এরা সব সময় স্যালারি বা বেতন নিয়ে হতাশায় ভোগেন। আসলে আপনিও কি এগুলোই চান? আর তাই একটু ভেবে দেখুন নতুন কর্মক্ষেত্র পারবে পূরণ করতে আপনার এই চাওয়াগুলোকে? যদি পারে তাহলেই কেবল বর্তমান কর্মক্ষেত্র পরিবর্তন করা যৌক্তিক হবে। তাই কর্মক্ষেত্র পরিবর্তনের আগে একটি লিস্ট বা তালিকা তৈরি করুন, আর এই তালিকায় লিপিবদ্ধ করুন আসলে আপনি কী কী চান। যদি নতুন কর্মক্ষেত্রটি আপনার অধিকাংশ চাহিদা পূরণ করতে পারে তবেই কর্মক্ষেত্র পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

ভেবে দেখুন কর্মক্ষেত্রে আপনি কোন ধরনের পরিবেশ পছন্দ করেন?

পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষই আলাদা চরিত্র নিয়ে জন্মায়। প্রতিটি মানুষের চাহিদা থেকে শুরু করে আচার আচরণ পর্যন্ত ভিন্ন হয়ে থাকে। মানুষ পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে। আর কর্মক্ষেত্রে পরিবেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ যদি উপভোগ্য না হয় তবে কখনই মানসিক শান্তি পাবেন না। তাই কর্মক্ষেত্র পরিবর্তনে পূর্বে একটু ভেবে নেয়া উচিৎ পূর্বের কর্মক্ষেত্রগুলোতে এবং বর্তমান কর্মক্ষেত্রে আপনি কোন কোন পরিবেশ উপভোগ্য ছিল। সেগুলোর একটি লিস্ট তৈরি করা। ধরুন, আপনি ফর্মাল জব পছন্দ করেন। কিন্তু যে প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছেন সেই প্রতিষ্ঠান হচ্ছে, একটি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান তাহলে এই প্রতিষ্ঠান আপনার জন্য নয়। কারণ এই প্রতিষ্ঠান আপনার স্বভাবের সাথে যায় না। এজন্য বলতে চাই যদি নতুন কর্মক্ষেত্রে আপনার উপভোগ্য পরিবেশ না থাকে তাহলে ঐ প্রতিষ্ঠানে যোগদান না করাই যৌক্তিক হবে।

ভেবে দেখুন সমস্যাটি কি সমাধান যোগ্য?

যদি আপনি আপনার বর্তমান কর্মক্ষেত্র বা আপনার কাজকে উপভোগ করে থাকেন শুধুমাত্র উন্নত জীবন অথবা বেশি টাকার জন্য কর্মক্ষেত্র পরিবর্তন করতে যাচ্ছেন। তাহলে যদি সম্ভব হয় তবে আপনার চাহিদাগুলো আপনার ম্যানেজার বা উপরস্থ কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করতে পারেন।

source: psychologytoday.com

এতে করে সমস্যা সমাধান হতে পারে। আর যখন আপনি এই সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন তখন একটু যত্ন সহকারে আপনার সমস্যাগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে উপস্থাপন করুন যাতে এটা পরিষ্কার হয় যে এই সমস্যা সমাধান না হলে, এই কর্মক্ষেত্র পরিবর্তন ছাড়া কোনো উপায় নেই। যদি সমস্যা সমাধান হয়ে যায় তাহলে বর্তমান কর্মক্ষেত্রে থেকে যেতেই পারেন।

গবেষণা করুন (এস, ডবলু, ও, টি)

এস, ডবলু, ও, টি এর পূর্ণরূপ হচ্ছে স্ট্রেন্থ, উইকনেস, অপারচুনিটিস এবং থ্রেট। অর্থাৎ কোনো প্রতিষ্ঠানে যোগদান বা আবেদন করার পূর্বে এই চারটি বিষয় গবেষণা করে নিন। তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক বর্তমান অবস্থান বা প্রেক্ষাপট পরিষ্কার হবে। একটু ভাবুন প্রতিষ্ঠানটির মুল ভিত্তি কী? কী তাদের দুর্বলতা? কী কী সুযোগ সুবিধা প্রদান করে থাকে এবং এই প্রতিষ্ঠানে বড় সমস্যা বা হুমকিগুলো কী হতে পারে?

source:careersincare.com.au

এই প্রশ্নগুলোর উত্তরই আপনাকে একটি স্বচ্ছ ধারণা দিতে পারে। এই গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ একটি সুবিধা হচ্ছে একটি স্বচ্ছ ধারণা পাবেন যে, এই প্রতিষ্ঠানটি আপনার যোগ্য কি না। যদি প্রতিষ্ঠানটি এই গবেষণায় উত্তীর্ণ হয় তবে দেখে নিন প্রতিষ্ঠানটির চাহিদাগুলো। যদি আপনার মাঝে কিছু গুনের ঘাটতি থাকে তাহলে সময় এসে গেছে সেই গুণগুলো অর্জন করার। আর এই গুণগুলো বিভিন্ন ট্রেনিং বা ভলেন্টিয়ারিং কাজের মাধ্যমেও অর্জন করা যেতে পারে।

একজন অভিজ্ঞ মানুষের সাথে আলোচনা করতে পারেন

প্রথমে নিজের যোগ্যতা এবং দুর্বলতা সম্পর্কে সচেতন হোন। এরপর ভেবে দেখুন যে কর্মক্ষেত্রে যোগদান করতে যাচ্ছেন, সেখানে কি এই যোগ্যতা দিয়ে মোকাবেলা করা সম্ভব। এরপর একজন অভিজ্ঞ মানুষের সাথে এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করুন। এছাড়া খুব কাছের বন্ধুদের সাথেও শেয়ার করতে পারেন। এতে করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে।

নজর দিন আপনার ডিজিটাল প্রোফাইলে

টেকনোলজি বর্তমান পৃথিবীকে প্রতিনিয়ত করে চলেছে আরও সহজ আরও স্বচ্ছন্দময়। তাই প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে টেকনোলজির ব্যবহার। আমাদের দৈনন্দিন কর্মক্ষেত্রগুলোও হয়ে চলেছে টেকনোলজি নির্ভর। আজকাল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি থেকে শুরু করে নিয়োগে আবেদন থেকে নিয়োগদান পর্যন্ত সমস্ত কর্মকাণ্ড সম্পাদন হয়ে থাকে টেকনোলজির সাহায্যে। তাই ডিজিটাল প্রোফাইলগুলো এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

source:hairashid.com

এজন্য সোশ্যাল মিডিয়া যেমন: লিংক ডিন হতে পারে আপনার জন্য সহায়ক। এখানে আপনি যোগাযোগ করতে পারেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক কিংবা শীর্ষস্থানীয় মানুষদের সাথে। আর তাই এই সাইটে আপনার প্রোফাইলটিও হওয়া উচিৎ সাজানো গোছানো এবং প্রয়োজনীয় যোগ্যতার সঠিক বর্ণনা। এছাড়া আজকাল অনেক প্রতিষ্ঠান ফেসবুক প্রোফাইলেও ঢু মেরে আবেদনকারী সম্পর্কে ধারণা নিয়ে থাকেন। তাই এখানেও সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার।

Feature image source: inc.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *