বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে শুরু হোক কর্মক্ষেত্রের প্রস্তুতি, যেভাবে কাজে লাগাবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪টি বছরকে

‘বিশ্ববিদ্যালয়’ স্বপ্নকে খুব কাছ থেকে দেখার অন্যতম প্ল্যাটফর্ম। কিন্তু একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখবেন সময়ের সাথে সাথে কেন জানি – স্বপ্নময় এই পথটি হয়ে উঠে হতাশায় পরিপূর্ণ। আরও ভয়ংকর লাগে যখন শুনি নানা কারণে হতাশাকে জয় করতে না পেরে কতিপয় শিক্ষার্থী বেছে নেয় আত্নহত্যার মতো জঘন্য পাপকে বা পথকে।

সে যাই হোক, ডিপ্রেশন তথা হতাশাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে স্বপ্নের আরও কাছাকাছি যাওয়ার জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীর একটি গোছালো জীবন ব্যবস্থা খুবই প্রয়োজন। গোছালো এই জীবন ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে নিচের বৈশিষ্ট্যগুলো আপনার জীবনযাত্রা সম্পর্কে উপলব্ধি করার পাশাপাশি উন্নত ক্যারিয়ার সহ নানাবিধ কাজে সাহায্য করবে বলে আশা করি।

জিমেইল বা মেইল করার অভ্যাস গড়ে তুলুন

প্রযুক্তিক উন্নতির ধারাবাহিকতায় যোগাযোগ ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে উন্নত এবং সহজলভ্য  কার্যকরী মাধ্যমটি হচ্ছে গুগলের জিমেইল সিস্টেম। কেননা এটি পৃথিবীর প্রশংসিত ব্যক্তিদের সাথে দেখা করার সবচেয়ে কার্যকর উপায়গুলোর একটি এবং সকল পেশাদারী তথা প্রফেশনাল কাজে সর্বাধিক ব্যবহৃত মাধ্যমও এটি।

ছবিসূত্রঃ Digit

মেইলের গুরুত্ব বোঝার জন্য চলুন একটি বাস্তব উদাহরণ দেখে নেই, আমার এক বন্ধু বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করা জন্য আবেদন করে কিন্তু যথাসময়ে আবেদনকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তি সম্পর্কিত মেইল করা হলে নিয়মিত মেইল আপডেট চেক না করার কারণে মেইলের উত্তর দিতে পারেনি। ফলে সেবারের মতো স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়টিতে আর ভর্তি হয়ে ওঠা হয়নি।

এভাবেই আমরা অবহেলা বা অপরাগতার কারণে হারিয়ে ফলছি অসাধারণ কিছু সুযোগ। তবে এর উত্তম ব্যবহারের জন্য পেশাদার কোনো সুযোগ না থাকলে আপনি ব্যক্তিগতভাবে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫ জন দেশি কিংবা বিদেশি বন্ধুকে মেইল করতে পারেন। মেইল করার অভ্যাস গড়ার জন্য এটি খুবই কার্যকরি একটি অভ্যাস। পরিশেষে, আপনার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া .edu যুক্ত মেইলটির বৈশিষ্ট্য অনেক। এটিকে ব্যবহার করে আপনি অনলাইন অফলাইন দুই মাধ্যমেই অনেক সুযোগ সুবিধা পেতে পারেন। তাহলে আর দেরি না করে শুরু করে দিন এই অসাধারণ মেইলটির যথোপযুক্ত ব্যবহার।

বন্ধুত্ব স্থাপন করুন অসাধারণ ব্যক্তিত্বের সাথে

পরিবেশ প্রত্যেকটি মানুষের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ কেননা সুস্থ এবং মনোরম পরিবেশই পারে একজন মানুষের সৃজনশীলতার উত্তম প্রতিফলন ঘটাতে। বাংলার বহুল পরিচিত একটি প্রবাদ মনে আছে নিশ্চয়ই “সৎ সঙ্গে স্বর্গ বাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।”

খেয়াল করুন, আপনার চারপাশে থাকা মানুষগুলো যদি হয় চমৎকার সব সৃজনশীলতায় পরিপূর্ণ তাহলে আপনার মাঝে সৃষ্টিশীল চিন্তাশক্তি না থাকলেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে জেগে উঠবে সৃজনশীল সব চিন্তাশক্তি এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে খুঁজে নিতে হবে বুদ্ধিমান, সৃজনশীলতায় ভরপুর অসাধারণ সব বন্ধুকে। হতে পারে আপনার সহপাঠী, বড় ভাই কিংবা ছোট ভাই। এই কার্যকরী সৃজনশীল ব্যক্তিত্বের সংস্পর্শে থেকে আপনি পেতে পারেন বাস্তব জীবনের কিছু অসাধারণ শিক্ষা।

ছবিসূত্রঃ Humans.Media

একটি কথা না বললেই নয়, সবসময় চেষ্টা করবেন সময় নষ্টকারী সকল বিষয় থেকে দূরে থাকতে। তাহলেই দেখবেন, আপনি নিজেকে নিয়ে গেছেন সৃজনশীল মানুষদের এক অনন্য উচ্চতায়।

জ্ঞান শেয়ার করুন

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমরা নিত্যনতুন বিভিন্ন বিষয় অধ্যয়ন করি। কিন্তু একবার ভেবে দেখেছেন কি যেসব বিষয় আমরা শিখছি সে বিষয়গুলো থেকে শেখা জ্ঞানগুলো যদি সবার মাঝে শেয়ার করতাম সেটা হতে পারে ব্লগ কিংবা ভিডিও আকারে তাহলে কত ভাল হতো। শেয়ারিং এই সিন্ধান্তটুকু হয়তো আপনার পরবর্তী শিক্ষার্থীদের শিখতে নানাভাবে সাহায্য করতো, যা আপনাকে করে তুলতো অমর। এজন্যই তো দালাই লামা বলেছেন, “Share your knowledge. It’s way to achieve immorality.” অর্থাৎ যদি অমর হতে চাও তাহলে তোমার অর্জিত জ্ঞান সবার মাঝে ছড়িয়ে দাও। 

Photo: images.google.com

ছোট্ট করে একটি কথা না বলে পারছি না। ধরুন, কোনো একটি জটিল বিষয় আপনি কোনোভাবেই বুঝতে পারছেন না, কি করবেন বলুন তো? সিন্ধান্ত  নিন। যা নিজে বুঝবেন তা সবার মাঝে শেয়ার করবেন। দেখবেন জটিল বিষয় এমনিই সহজ হয়ে গেছে।

পড়াশোনার বাইরে কিছু করার চেষ্টা করুন

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই নতুন কিছু করার প্রধান এবং একমাত্র আদর্শ সময়। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি জিনিস খেয়াল করলে দেখবেন আমাদের শিক্ষার্থীরা নিদির্ষ্ট একটি গন্ডির ভিতরে থাকতে চায় সবসময়। তথাকথিত এই গন্ডি থেকে বের হতে তিনটি জিনিস মনে রাখা অতীব জরুরী। প্রথম্‌ আপনাকে আপ টু ডেট থাকতে হবে সহজ করে বললে আধুনিক বিশ্বের পরিবর্তনের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত, পরিবর্তনের সাথে মিল রেখে বিভিন্ন ম্যানেজিং দক্ষতা অর্জন করতে হবে। তৃতীয়ত, নিজেকে নিয়ে গবেষণা করতে হবে।

Photo: images.google.com

এরপর শুরু করতে হবে আপনার ভালো লাগার সাথে সাদৃশ্য রেখে সামাজিক, সাংস্কৃতিক কিংবা প্রতিযোগিতামূলক নানা কাজ। যা আপনাকে খুব কাছ থেকে শেখাতে সাহয্য করবে বাইরের তথা পৃথিবীর এই বিশাল ভয়ংকর সুন্দর জগত সম্পর্কে।

মেন্টর খুঁজে নিন

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিকেই আপনাকে খুঁজে নিতে হবে একজন অসাধারণ এবং সফল মেন্টর। কেননা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের এই লম্বা সময়ে নানাবিধ কারণে বিপথে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক। এই বিপথে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মেন্টর খুঁজে নেওয়া খুবই জরুরী। আর এর সমাধান স্বরূপ আপনার অধ্যাপকেরা হতে পারেন চমৎকার একজন মেন্টর। এজন্য খুঁজে নিতে হবে কোন অধ্যাপক আপনাকে অনুপ্রাণিত করে এবং অবশ্যই চেষ্টা করতে হবে অধ্যাপকদের সাথে ক্লাসের বাইরেও বন্ধুভাবাপন্ন এবং দৃঢ় সম্পর্ক রাখার।

Photo: images.google.com

তবে কোনভাবে আপনার মনের মতো অধ্যাপক না পেলে, বেছে নিতে পারেন অতি মাত্রায় পরিশ্রমী সফল কোনো বড় ভাইকে।

যথাসম্ভব দুঃসাহসিক কিছু করার চেষ্টা করুন

Out of the Box তথা বৃত্তের বাইরে ভালো যত কাজ আছে সব কিছু করার উত্তম সময় হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪টি বছর। কারণ এরপর আপনি চাইলেও আর এত সহজে সুযোগ পাবেন না। এজন্য এ মহামূল্যবান সময়টাতে প্রতি সেমিস্টারে আপনি চাইলে একটি করে পার্টটাইম চাকরি ছাড়াও চেষ্টা করতে পারেন বিভিন্ন রকম স্কিল তথা দক্ষতা অর্জনের মতো দুঃসাহসিক কাজ হাতে নিতে অথবা আর্থিকভাবে সচ্ছল হলে ভ্রমণ করতে পারেন পৃথিবীর নানা দেশে। এসব করলে পরবর্তীতে আপনি খুব সহজেই বুঝতে পারবেন কোন জিনিসটা আপনার জন্য ভালো আর কোনটা মন্দ। যা সত্যিই একজন মানুষের জন্য অসাধারণ একটি বাস্তব শিক্ষা।

Photo: images.google.com

খেয়াল করুন, বিল গেটস, স্টিভ জবস, মার্ক জাকারবার্ক এই জিনিয়াস মাইন্ডগুলো যদি ড্রপ আউট হওয়ার মতো দুঃসাহসিক কাজটি না করতে পারতেন, তাহলে কি আমরা মাইক্রোসফট, অ্যাপেল কিংবা ফেসবুকর মতো অসাধারণ সৃজনশীল জিনিসগুলো পেতাম। এরকম বিল্পব ঘটার মতো পরিকল্পনা থাকলে আপনি নেমে পড়তে পারেন আজই। কেননা পৃথিবীকে জয় করার সকল প্রকার ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা আপনাকে দিয়েছেন। এই বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে দুঃসাহসিকতার সাথে শুরু করেদিন আপনার অবচেতন মনের ভিতরে আত্মগোপনে থাকা কোনো একটি ভালো কাজ দিয়ে।

অভিজ্ঞতা অর্জনের চেষ্টা করুন

লক্ষ করলে দেখবেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪টি বছর প্রত্যেকটি শিক্ষার্থী অসংখ্য কাজ করার সুযোগ পান কিংবা চিন্তা করেন। কিন্তু কাল পরিক্রমায় এই নির্দিষ্ট কাজগুলোর প্রাথমিক কিংবা মাধ্যমিক তথা ইন্টারমেডিয়েট পর্যায় পর্যন্ত যাওয়ার পর আর করা হয়ে উঠে না। কিন্তু খেয়াল করলে দেখবেন, চাকরির বাজার থেকে শুরু করে যেকোনো জায়গায় অভিজ্ঞ লোকের প্রয়োজন কত বেশি। এজন্য আপনি যদি নির্দিষ্ট একটি লক্ষ্য ঠিক করে, আপনার ভাল লাগে এরকম একটি কাজে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন তাহলে এই দক্ষতা তথা অভিজ্ঞতা আপনাকে চাকরির বাজারে নিয়ে যাবে কয়েক ধাপ উপরে।

Photo: images.google.com

পরিশেষে বলতে চাই, একমাত্র গোছালো তথা পরিপাটি একটি জীবন ব্যবস্থাই পারে আপনাকে একজন প্রকৃত মানুষরূপে ঢেলে সাজাতে আর একজন গোছালো সুখি মানুষ হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় একটি অসাধারণ প্লাটফর্ম। তাই উপরের বৈশিষ্ট্য গুলোর আলোকে আজই নেমে পড়ুন নিজেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার অসাধারণ এক যুদ্ধে।

One Comment

Leave a Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *