সুখী হওয়ার ৫টি গোপন সূত্র

সুখের ৫টি সুত্র যা আপনাকে সুখী করতে বাধ্য

সুখ এক অচিন পাখি! তাকে ধরা নাকি খুব কঠিন। অধিক অর্থ, যশ, খ্যাতির মোহ, নিজের বর্তমান অবস্থায় অমনোযোগী, অপরিকল্পিত দিন যাপন অনেক অর্থবিত্ত থাকা স্বত্তেও আমাদের অসুখী করে তোলে। তাইতো জগৎজোড়া খ্যাতি থাকা সত্ত্বেও কোন কোন বিখ্যাত অভিনেতা/অভিনেত্রীকে আত্মহত্যা করতে দেখা যায়। অঢেল সম্পদের মালিক হয়েও কেউ কেউ জেল খাটেন। সুখী হতে হলে তাই আগে নিজেকে জানতে হয়, কখনো কখনো লোভের লাগাম টেনে ধরা শিখতে হয়। তবেই সুখী হওয়া যায়। আসলে আপনি চাইলেই সুখী হতে পারেন। নিজের অসুখী অবস্থার উত্তরণ ঘটিয়ে সুখী হওয়ার জন্য রইল এই পরামর্শগুলো।

সুখের ৫টি সুত্র যা আপনাকে সুখী করতে বাধ্য   photo: hd wallpapers

০১। বর্তমান অবস্থাকে মেনে নিন

আমরা মনে করি সুখ অন্য জগতের কিছু যা বিশেষ কোন পন্থায় অর্জন করতে হয়। তাইতো ভাল খেয়ে, পরে, ভাল বাড়িতে বসবাস করেও বিশেষ কোন সুখ খুঁজি। মনে করি সুখ আসবে স্বর্গ থেকে, অথচ ভেবে দেখি না, আমি ইতিমধ্যে স্বর্গের সুখ উপভোগ করছি। অথবা সত্যিই আপনার অর্থিক অবস্থা ভাল না, নিত্যপ্রযোজনীয় সব চাহিদা পুরণ করা আপনার পক্ষে কঠিন। তাহলে আপনার ভাবা উচিত আপনি অন্তত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের কোন আশ্রয়প্রার্থী নন। দেখবেন নিজেকে সুখি মনে হচ্ছে। এবার নিজের বর্তমান অবস্থার উত্তরণের চেষ্টায় নেমে পড়ুন, আলো আসবেই।

আপনার বর্তমান অবস্থায় নিজের অনেক ইচ্ছা পুরণ না হলেও আপনি চাইলে নিজের অবস্থা ঠিক রেখে অন্যের উপকার করতে পারেন।  photo: UNIVERSITY OF OXFORD

০২। অন্যের সুখের সারথি হোন

আপনার পকেটে ৫০ টাকা আছে, যা আপনার এই মহুর্তের চাহিদা একটা পিজ্জা খাওার জন্য যথেষ্ট নয়, কিন্তু একজন অভুক্ত মানুষের জন্য এই অর্থ অনেক কিছু। অর্থাৎ মানুষের অবস্থা ভেদে চাহিদার তারতম্য হয়। তাই আপনার বর্তমান অবস্থায় নিজের অনেক ইচ্ছা পূরণ না হলেও আপনি চাইলে নিজের অবস্থা ঠিক রেখে অন্যের উপকার করতে পারেন। হয়ে উঠতে পারেন অন্যের সুখ লাভের সারথি। এই উপকার বা সহযোগিতা সবসময় দুঃখি, অভুক্ত, দরিদ্র মানুষের জন্য করবেন তা নয়।

উত্তর আধুনিক যুগে এসে এই সহযোগিতার অন্য অর্থ হতে পারে ‘নেটওয়াকিং’। আপনার কলিগকে কোন কাজে সহযোগিতা করে, প্রতিবেশিকে কোন সুপরামর্শ দিয়ে, বন্ধুর দুর্দিনে পাশে থেকে, অথবা পথ চলতে অপরিচিত কোন মানুষকে কয়েক মহুর্তের সহযোগিতা দিয়ে হয়ে উঠতে পারেন এই মানুষগুলোর প্রিয় পাত্র। আর বাড়তি প্রাপ্তি হিসেবে পাবেন এক পরশ আত্মতৃপ্তি, যা আপনাকে সুখী করতে বাধ্য।

কাজেই দিনের পরিকল্পনা করুন পূর্বের রাতে আর লিখে ফেলুন ছোট্ট হ্যান্ডবুকে বা মোবাইলের টাক্স পেজে। photo: pacq

০৩। দৈনন্দিন পরিকল্পনা

সুখী হওয়ার অন্যতম প্রধান হাতিয়ার পরিকল্পনা। আমরা কর্মজীবনে যত সফলই হই না কেন, কাজ করতে করতে প্রায়ই হাঁপিয়ে উঠি, সবকিছু বিক্ষিপ্ত লাগে, অকারণ হতাশা ভর করে মনে। কিন্তু যদি দৈনন্দিন পরিকল্পনা থাকে, তাহলে নিমেশেই এই হতাশা কেটে যায়। আত্মশক্তি ফিরে আসে। আর এই দৈনন্দিন পরিকল্পনা একসময় আমাদের পৌছে দেয় সুখ-স্বাচ্ছন্দের চূড়ান্ত শিখরে।

কাজেই দিনের পরিকল্পনা করুন পূর্বের রাতে আর লিখে ফেলুন ছোট্ট হ্যান্ডবুকে বা মোবাইলের টাক্স পেজে। পরদিন পরিকল্পনা মাফিক চলুন। এভাবে বছর শেষে দেখবেন গোটা বছরটাই কেটেছে সুপরিকল্পিতভাবে। এভাবে চললে দুঃচিন্তা, অশান্তি, হতশা কখনো স্পর্শ করবে না আপনাকে, যা আপনা থেকেই আপনাকে সুখী করে তুলবে।

আরও চাওয়ার প্রবণতা যতদিন না যাবে ততদিন আপনি সুখী হতে পারবেন না। photo: huffington post

০৪। অপ্রয়োজনীতা পরিহার করুন

অঢেল সম্পদ, দামি গাড়ি, প্রসাদতুল্য বাড়ি আছে তবুও আপনার আরও চায়। এই আরও চাওয়ার প্রবণতা যতদিন না যাবে ততদিন আপনি সুখী হতে পারবেন না। একটা নতুন গাড়ি কিনেছেন এক মাসে আগে, এখন নতুন মডেলের একটা বিএমডব্লিউ এসেছে, আপনি সেটাও কিনতে চান। ওটা না কেনা পর্যন্ত আপনার রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। নতুন গাড়ি কেনায় দোষ নেই, কিন্তু সব নতুন, সব ভালটা বারবার চাওয়ার প্রবণতা দোষের। কেননা এই প্রবণতার কারণে নতুন গাড়ি কেনার কিছুদিন পর যখন আরও একটা নতুন গাড়ি আসবে, তখন আবার আপনার ঘুম হারাম হবে! তার মানে আপনার টাকা আছে, নিত্যনতুন গাড়ি আছে, কিন্তু মানসিক স্থিতিশিলতা নেই, তাই সুখও নেই। নিজের ভোগ বিশাসের চেয়েও আত্মতৃপ্তি পাওয়ার মত অনেক কাজ আছে, সেসব কাজে অর্থ খরচ করুন। পরম আত্মতৃপ্তি আর সুখ পাবেন।

সুখের জন্য পরিবারের সবার মতামত, সৌহার্দ আর ভালবাসার বন্ধনের বিকল্প নেই।  photo: i choose change

০৫। পারিবারিক জীবন যাপন

অর্থ থাকলেই যা খুশি তাই করতে হবে এমন নয়। এতে সুখ তো পাওয়া যায়ই না বরং সেচ্ছাচারিতা অশান্তি, অসম্মান আর বিপদ ডেকে আনে। সেচ্ছাচারি জীবন যাপন মানুষকে নিঃসঙ্গ আর অপরাধ প্রবণ করে তোলে। কাজেই ভুল বন্ধুদের সঙ্গ পেয়ে সেচ্ছাচারিতা করলে চলবে না। নিজের এবং পরিবারের সুখের জন্য পারিবারিক জীবন যাপন প্রয়োজন।

আবার সম্পদ আর ক্ষমতার দাপটে অনেকে সেচ্ছাচারি হয়ে ওঠে। পরিবারের সুখ, শান্তি, পরস্পরের ভাল-মন্দ, মতামত, মনের চাওয়া এসব সম্পদ বা ক্ষমতার দিয়ে নিয়ন্ত্রন করতে চায়। এমন ধারণা কখনো পরিবারে সুখ আনে না, বরং অশান্তি বাড়ায়্। সুতরাং সুখের জন্য পরিবারের সবার মতামত, সৌহার্দ আর ভালবাসার বন্ধনের বিকল্প নেই।

মোদ্দাকথা, সুখ একটা মানসিক ব্যাপার। অর্থ, ক্ষমতা, দাপট বা বিলাসিতায় সুখ পাওয়া যায় না। সুখী হতে হলে সর্বপ্রথম মনকে ইতিবাচক করতে হবে। মঙ্গল চিন্তা করতে হবে। নিজের চেয়ে বেশি নিজের পরিবার, আপনজন এবং প্রতিবেশির সুখের কথা ভাবতে হবে। নিজের মস্তিষ্ককে সবার আগে সুখি করতে পারলে সুখের পাখি নিজেই এসে ডানা ঝাপটাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *