বেকারত্বের সময় বসে না থেকে যে কাজগুলো নিয়মিত করবেন

photo: the balance

আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড যাই হোক বর্তমান সময়ে জীবনধারণ করা সত্যিই খুব কঠিন। পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা আমাদের এমন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে এনে দাঁড় করিয়েছে। বিশ্বব্যাপী পরিবর্তিত ও দ্রুত অগ্রসরমান অর্থব্যবস্থা যেকোনো মানুষের পক্ষে কাজ খুঁজে পাওয়া অনেক কঠিন করে তুলেছে। বয়স বা যোগ্যতা নির্বিশেষে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেকারত্ব পৃথিবীর অনেক দেশে জেঁকে বসেছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং তার বিপরীতে পর্যাপ্ত কাজের ক্ষেত্র সৃষ্টি না হওয়া মূলত এর জন্য দায়ী। এর সমান্তরালে আছে বিশ্বব্যাপী কিছু বড় কোম্পানি, যারা পৃথিবীর মোট সম্পদের প্রায় সিংহভাগ দখল করে আছে! এই জটিল অর্থব্যবস্থা প্রতিনিয়ত বেকারের সংখ্যা বাড়াচ্ছে।

photo: la portada canada

একক ব্যক্তির পক্ষে এই বেকার সমস্যার সমাধান করা বা এই প্রলয় থেকে নিজেকে রক্ষা করা সত্যিই খুব কঠিন। তবে যদিও আমরা এই পরিস্থিতি রোধ করতে পারি না, কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে আমরা কী প্রতিক্রিয়া দেখাবো তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। বেকারত্বের এমন কঠিন অবস্থা শর্তেও নিজেকে এগিয়ে নেওয়ার এবং আশাবাদী থাকার অনেক পথ খোলা আছে।

আপনি একজন চাকরি সন্ধানকারী অথবা সদ্য চাকরি হারানো কোনো হতভাগ্য, যেই হন না কেন আপনার জন্য আমার আজকের এই নিবন্ধ। দুই পর্বে এই নিবন্ধে আমি কয়েকটি প্রচেষ্টার কথা আলোচনা করবো, যা বেকার থাকার সময়ও আপনাদের ব্যস্ত রাখবে এবং উৎপাদনমুখী করে তুলবে। আমার বিশ্বাস এই নিবন্ধের বিষয়বস্তু আপনাকে ইতিবাচক থেকে জীবনের পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুত করবে।

১. নিয়মানুবর্তী থাকুন

হতে পারে আপনি একজন চাকরি সন্ধানকারী অথবা সদ্য একটি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন অথবা বাদ পড়েছেন। যেভাবেই হোক এখন আপনার কিছুটা বিশ্রাম নেওয়ার সময়। কিন্তু লক্ষ্য রাখুন এই বিশ্রাম নিতে গিয়ে যেন বেশি আরামপ্রিয় না হয়ে যান। বেকার বা অবসর যাপনের সময় অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন সম্পূর্ণ বন্ধ করুন। আপনি বেকার থাকলেও একজন ব্যস্ত মানুষের মতো সকালে দিন শুরু করুন। নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং নিজের সম্পূর্ণ দিনকে প্রাণচঞ্চল রাখুন। সাথে সাথে পরবর্তী কাজের জন্য ক্রমাগত প্রচেষ্টা চালিয়ে যান।

photo: night writer poet

একবার নিজেকে অলসভাবে ছেড়ে দিলে নিয়ন্ত্রণ নেওয়া বড় কঠিন। তাই সব সময় নিয়মানুবর্তী থাকুন। এই নিয়ম অনুবর্তিতা আপনার সকল প্রকার হতাশা এবং অনিশ্চয়তা কাটিয়ে সাফল্য আনতে সহযোগিতা করবে।

২. কাজ অনুসন্ধানী সংস্থায় যোগ দিন

পূর্বের চাকরি ছাড়া এবং নতুন চাকরি শুরু করা এর মাঝের সময়, অথবা শিক্ষাজীবন শেষ করা এবং চাকরি শুরু করা এর মাঝের সময় – এই সময়ের যথার্থ ব্যবহার করতে আপনি খুব দ্রুতই কোনো কাজ অনুসন্ধানী সংস্থায় যোগ দিন। অথবা এমন কোনো সংস্থার মাধ্যমে অস্থায়ী কোনো কাজ শুরু করুন।

photo: industrial personnel

উন্নত বিশ্বে বিপুল সংখ্যক বেকার মানুষ এমন কাজ অনুসন্ধানী সংস্থার মাধ্যমে অস্থায়ী থেকে স্থায়ী কাজ খুঁজে পেয়েছেন। আপনি যদি এমন সংস্থায় যোগ দেন তাহলে প্রথমত, আপনি আর সম্পূর্ণভাবে বেকার রইলেন না। দ্বিতীয়ত আপনি ক্রমাগত প্রচেষ্টার মধ্যে আছেন। তৃতীয়ত এই সংস্থার সাথে থাকার কারণে ক্রমাগত আপনার বিভিন্ন দক্ষতার উন্নতি হচ্ছে, যা অস্থায়ী অবস্থা থেকে স্থায়ী এবং কাঙ্ক্ষিত কোনো কাজ খুঁজে পেতে আপনাকে সহযোগিতা করবে।

৩. অনলাইনে কাজ করুন

বেকার থাকার দিনগুলোকে উৎপাদনমুখী এবং কার্যকরী করে তোলার আরও একটি চমৎকার উপায় হলো অনলাইনে কাজ করা। আপনার যদি অনলাইন সম্বন্ধে কিঞ্চিৎ জানাশোনা থাকে এবং দক্ষতা থাকে, তাহলে খুব সহজেই আপনি অনলাইনে কাজ করে টাকা রোজগার করতে পারেন।

photo: online stuffbox

ইন্টারনেটে অসংখ্য ওয়েবসাইট আছে যারা বিভিন্ন ধরনের ছোট ছোট কাজের বিনিময়ে টাকা আয় করার সুযোগ দিয়ে থাকে। তবে কোনো ওয়েবসাইটে কাজ করার আগে দুটি জিনিস মাথায় রাখবেন। প্রথমত সাইটটি নির্ভরযোগ্য কিনা। দ্বিতীয়তঃএই কাজটি সম্মানজনক কিনা। এক্ষেত্রে কোনো কোনো কাজে কম সম্মানী পাওয়া যায়, আবার কোনো কাজে বেশি সম্মানী পাওয়া যায়। আপনি যেহেতু স্থায়ীভাবে কাজটা করবেন না, তাই লক্ষ করে যে কাজ আপনার জন্য সহজ সেই কাজটি আপনি গ্রহণ করবেন।

এর সাথে সাথে ইন্টারনেটেই অসংখ্য স্থায়ী চাকরি খোঁজার ওয়েবসাইট আছে। আপনি সেসব ওয়েবসাইটগুলোতেও স্থায়ী চাকরি খোঁজার প্রচেষ্টা চালাতে পারেন। এভাবে বেকার সময়টা অনলাইনে কাজ করে কিছু রোজগার আর বাকি সময় নতুন চাকরির সন্ধান করে আপনি উৎপাদনমুখী করে তুলতে পারেন।

৪. সংগঠিত হোন

বেকারত্ব নিজেকে গুছিয়ে নেয়ার জন্য সবচেয়ে চমৎকার সময়! এই বাক্যটি শুনে হয়তো আপনাদের খটকা লাগতে পারে! বেকারত্ব জীবনের সবচেয়ে খারাপ অধ্যায়, অথচ সেই অধ্যায়কেই কেন সংগঠিত হওয়ার চমৎকার সময় বলছি?

photo: simply organized

বেকারত্ব নিজেকে নিয়ে ভাবার সুযোগ করে দেয়। নিজের ভালো-মন্দ, ভুল বা সঠিক সিদ্ধান্ত, অতীত জীবন ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা; এই সবকিছু নিয়ে একসাথে ভাবার অনুপ্রেরণা যোগায় বেকারত্ব। সুতরাং বেকারত্বের দিনগুলোতে আপনি নিজের মধ্যে ডুব দিন, আর সেই সব বিষয় খুঁজে বের করুন, যা আপনার কখনোই প্রয়োজন না এবং তা থেকে নিজেকে মুক্ত করুন।

নিজের এই ছোট ছোট সিদ্ধান্তগুলো জীবনের পরবর্তী পর্যায়ে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। সাথে সাথে জীবনের সঠিক গন্তব্য নির্ধারণ করতে কাজ করবে। এই ভাবনা নিশ্চয়ই সামনের দিনগুলোতে আপনাকে আরও প্রাণচঞ্চল এবং উৎপাদনমুখী করে তুলবে।

৫. ব্যায়াম করুন

নিজেকে সংগঠিত রাখার মতো আরো উৎসাহী, ইতিবাচক এবং স্বাস্থ্যবান রাখার চমৎকার উপায় হলো নিয়মিত ব্যায়াম করা। শুনতে অবাক লাগলেও বেকার থাকার সময়গুলোতে আপনি অনেক ব্যায়ামের কলাকৌশল রপ্ত এবং অনুশীলন করতে পারেন। এইসব ব্যায়াম আপনাকে আলস্য ত্যাগ করে আরো বেশি প্রাণচঞ্চল করে তুলবে, এমনকি সঠিক নিয়মে ব্যায়াম আপনাকে ইতিবাচক থাকতে সাহায্য করে।

photo: rd

প্রতিদিন নির্দিষ্ট কলাকৌশল চর্চা আপনাকে অনুপ্রাণিত এবং দৃঢ়চেতা করে তুলবে। মোটকথা, আপনি যদি সত্যিই নিজের শরীরের যত্ন নিতে জানেন, তাহলে আপনার এই শরীরও আপনার ভবিষ্যতের যত্ন নিবে। সুতরাং বেকার থাকার দিনগুলোতে পর্যাপ্ত ব্যায়াম করুন এবং নিজের যত্ন নিন। নিজেকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করুন। পরবর্তী নিবন্ধে বেকারত্ব নিয়ে আরও আলোচনা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *