যে ৫টি পরামর্শ সদ্য স্নাতকধারীদের চাকরি পেতে সাহায্য করবে

চাকরির সুযোগ যে কোনো শিক্ষার্থীকে জীবনের পরবর্তী পদক্ষেপে পদার্পণ, চাকরির প্রশিক্ষণ, উচ্চ উপার্জনের সম্ভাব্যতা, চমৎকার কর্মজীবনের সম্ভাবনা এবং আরো অনেক কিছুই প্রদান করে। কিন্তু এই প্রতিযোগিতামূলক ব্যবস্থায় আপনি কিভাবে এগিয়ে থাকবেন? কীভাবে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেই চাকরি পাবেন? আপনার কেমন ভূমিকা হওয়া উচিত? এ বিষয়ে বিশ্বের বৃহত্তম নিয়োগসংস্থা আরএএনডিএসটিএডি (RANDSTAD)-এর বিবেচনায় শীর্ষ পাঁচটি প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও পদক্ষেপ, এ আর্টিকেলটিতে আলোচনা করবো।

১. শুরুতেই শুরু করুন

আপনি যদি একটি দুর্দান্ত চাকরিতে নিজেকে নিয়োজিত করার মাধ্যমে, ভবিষ্যতকে উজ্জ্বল প্রমাণিত করতে চান। তাহলে আপনাকে একদম প্রথমেই শুরু করতে হবে। চাকরির অনুসন্ধান শুরু করা, অধৈর্য হওয়া যাবে না ।

Source: macword.co.uk

আপনার পড়াশোনা শেষ হওয়ার আগেই, আপনার পরবর্তী গন্তব্য সম্পর্কে নিজেকে সচেতন করা উচিত। উদাহরণস্বরুপ, একটি বড় নিয়োগকারী সংস্থার নিয়োগ পদ্ধতি, তারা কেমন প্রার্থীর অনুসন্ধান করে; এসব বিষয়ে খোঁজখবর রাখতে হবে। এটি অনেকভাবেই করা যেতে পারে, যেমন: বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টার্নশিপের সময়ে কিংবা দৈনন্দিন কাজের ফাঁকে। আপনি যে প্রতিষ্ঠানে যোগদান করতে ইচ্ছুক, পড়াশোনায় থাকা অবস্থায়ই সেই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করুন। এই মূল্যবান যোগাযোগ পরবর্তীতে আপনার চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনাকে আরো বাড়িয়ে দেবে।

Source: independent.co.uk

বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান তাদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলো, নিয়োগ প্রদানের সময়ের অনেক আগে থেকেই প্রচার করে আসে, তাই আপনার পড়াশোনায় শেষবর্ষে থাকাকালীন সময়েই, আপনি আবেদন করতে পারেন।

২. ভালোভাবে খুঁজুন

আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে, সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করাটাই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। আপনি যে প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেছেন, তা আপনার জন্য সঠিক কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য, সেই প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি, সেই জায়গায় কাজ করতে গিয়ে আপনাকে কী কী বিষয়ে দায়িত্ব পালন করতে হতে পারে, এসব বিষয়ে অনুসন্ধান করাটা জরুরী। কর্মকর্তার কর্মক্ষেত্রের উন্নতি, প্রনোদনা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অভিব্যক্তি ও প্রস্তাবনা সম্পর্কে অবগত থাকাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট, পর্যালোচনা সাইট (রিভিউ) ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পেইজ হলো, এই তথ্যগুলো খুঁজে পাওয়ার সহজ মাধ্যম।

Source: roberhalf.com

বিশেষ করে পর্যালোচনা সাইট (রিভিউ সাইট) থেকে পূর্ববর্তী সময়ে ও বর্তমানে যারা কাজ করছেন, তারা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কেমন ধারণা পোষণ করেন এবং প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পদ্ধতি ও সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়া ইত্যাদি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যাবে। মনে রাখা জরুরী যে, আপনি যা চাচ্ছেন, সবকিছু সে রকমই হবে এমন কিন্তু নয়। নিয়োগকর্তারা কেমন প্রার্থী নিয়োগ করতে চাচ্ছেন, সেই সম্পর্কে জানতে হলেও প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব, সংস্কৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে অবগত থাকা জরুরী।

৩. আবেদন করুন

আপনি সাক্ষাতকারের জন্য বিবেচিত হচ্ছেন কি না, তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আপনার আবেদন পত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আবার আবেদন পত্র প্রেরণ করা মানেই বিবেচিত হওয়া, এমনটি ভাবার কোনো অবকাশ নেই। আপনার একটি হালনাগাদকৃত (Up to date) সিভি আছে, প্রথমেই এই বিষয়টি নিশ্চিত করুন।

Source: cnbc.com

যদি এটি আপনার প্রথম আবেদন পত্র হয়ে থাকে এবং ইতিপূর্বে আপনার কাজ করার কোনো অভিজ্ঞতা না থাকে, তাহলে আপনি এই ক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়ে পড়তে পারেন। একটি পার্ট টাইম চাকরির জন্য যা প্রয়োজন, অন্যান্য ক্ষেত্রে শুধুমাত্র তা প্রাসঙ্গিক নাও হতে পারে। আপনার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে যা সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক, তা আপনার সিভিতে ব্যবহার করুন। যে অবস্থানের জন্য আপনি আবেদন করছেন, সেই ক্ষেত্রে যদি আপনার অভিজ্ঞতা নাও থাকে, তা নিয়ে চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। তার পরিবর্তে আপনার দক্ষতাকে কীভাবে আপনি প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারবেন, সেই বিষয়ে মনোনিবেশ করুন।

Source: theguardian.com

মনে রাখবেন, শুধুমাত্র আপনার দক্ষতা সিভিতে তালিকাবদ্ধ করাই কিন্তু পর্যাপ্ত নয়। আপনার বাস্তব জীবনের বিভিন্ন উদাহরণ, যেমন: আপনার শখ, কাজের অভিজ্ঞতা কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের নানান অভিজ্ঞতাও এক্ষেত্রে উল্লেখ করা প্রয়োজন।

৪. ভালোভাবে উপস্থাপন করুন

নিজেকে এমনভাবে উপস্থাপন করুন, যেনো আপনার সিভি পড়ে, সেটাকে শুধুমাত্র এক টুকরো কাগজ বলে মনে না হয়। সেই বিষয়ে দৃষ্টিপাত করুন, যা আপনাকে অন্যান্য সবার চেয়ে আলাদা হিসেবে প্রমাণ করে। এটিই আপনাকে চাকরির প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রাখতে পারে। সাধারণভাবে বললে, এমন কী দক্ষতা, যা আপনার আছে কিন্তু অন্য কারো নেই? মনে করুন, আপনি অবসর সময়ে ব্লগিং করেন কিংবা সমাজ সেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত অথবা আপনি আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সামাজিক বা সাংস্কৃতিক সংগঠনের মূল দায়িত্বে ছিলেন। এগুলোই কিন্তু আপনাকে অন্য যে কারো থেকে এগিয়ে রাখতে পারে।

Source: jobs.ie

যদি এ রকম কিছু আপনি খুঁজে পান, তাহলে অবশ্যই সিভির মাধ্যমে তা নিয়োগকর্তাদের অবহিত করবেন। আপনার দৃষ্টিভঙ্গি ও ব্যক্তিত্বকে আপনি সফলভাবে আপনার সিভিতে ফুটিয়ে তুলতে পারছেন কি না, সেই বিষয়ে খেয়াল রাখুন। আপনি বাস্তব জীবনে নিজেকে কীভাবে উপস্থাপন করেন, সেই সম্পর্কে নিয়োগকর্তাদের একটি স্বচ্ছ ধারণা দিতে পারলে; আপনি কেনো একজন যোগ্য প্রার্থী, সেই প্রশ্নে আপনি এগিয়ে থাকবেন।

৫. কখনো হাল ছাড়বেন না

বর্তমানে চাকরির ক্ষেত্র মারাত্মক প্রতিযোগিতামূলক। আপনি প্রথম আবেদনেই ডাক পেয়ে যাবেন, এমনটি ঘটতে পারে আবার নাও ঘটতে পারে। তাই কোনোভাবেই হতাশ হওয়া যাবে না। প্রত্যাখ্যান হওয়া আপনাকে শুধুমাত্রই শেখাবে না, পাশাপাশি আপনার কোন বিষয়ে ঘাটতি রয়েছে, তাও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে। তাই প্রতিটি সাক্ষাতকারের পর হতাশ না হয়ে, তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে ইমেইল করুন, খোঁজ-খবর রাখুন এবং সম্ভব হলে তাদের প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করুন।

Source: cbc.ca

এইদিকে আবার আপনি পরবর্তী সাক্ষাতকারের জন্য নিজেকে যোগ্য করে তুলুন। আপনি চাকরির জন্য ভালোভাবে চেষ্টা করছেন, সেটা নিশ্চিত করা জরুরী। এমনটি হতে পারে যে, আপনি শুধুমাত্র বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ কার্যক্রমের দিকে খেয়াল রাখছেন। কিন্তু এমনও কিছু তুলনামূলকভাবে ছোট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা আছে, যারা আপনার মতো যোগ্য প্রার্থীকে সন্ধান করছে। তাদের খুঁজে পেতে হলে আপনাকে ভালোভাবে অনুসন্ধান করতে হবে।
সর্বোপরি নিজের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে অবিচল থেকে প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। প্রবাহমান সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে নিজের লক্ষ্য বাস্তবায়নে এগিয়ে যাবেন। তাহলে প্রত্যাশা করা যায়, খুব সহজেই পছন্দের চাকরিতে ক্যারিয়ার শুরু করতে পারবেন।

Featured Image:Theundercoverrecruiter.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *