বর্তমানে চাকরি ক্ষেত্রে যে শব্দটি সবচেয়ে বেশি শোনা যায় তা হলো অভিজ্ঞতা। আজকাল শুধুমাত্র শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি জোটানো বেশ কঠিন। চাকরিদাতারা অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রার্থী খোঁজেন আর নতুনরা হতাশায় ভুগে কোথা থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করবে। কিন্তু এমন কিছু পেশাগত কোর্স রয়েছে, যা আপনাকে করে তুলবে অভিজ্ঞ। তেমনি একটি পেশাগত কোর্স হচ্ছে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি বা সিএ। এটি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত আন্তর্জাতিক মানের একটি পেশা। আপনিও চাইলে এ সম্মানজনক পেশায় নিজের ক্যারিয়ার গড়তে পারেন।

চার্টার্ড একাউন্টেন্ট (সিএ) হচ্ছেন একজন হিসাববিদ, যিনি একটি প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক সংক্রান্ত বিভিন্ন দিক, যেমন:  হিসাব সংরক্ষণ, নিরীক্ষণ, অর্থায়ন, আর্থিক পরামর্শ প্রদান, আর্থিক ব্যবস্থাপনা, আর্থিক লেনদেনের রেকর্ড সংরক্ষণ, অডিট পরিচালনা এবং কর সংক্রান্ত কাজ করে থাকেন। আর এই পেশাটির নামই হচ্ছে চার্টার্ড একাউন্টেন্সি। একজন যোগ্যতাসম্পন্ন চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট চাইলে যেকোনো দেশে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন। একজন চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টের আয়ের পরিমাণও অনেক বেশি।

এছাড়াও বর্তমানে আমাদের দেশে দক্ষ হিসাববিদের অনেক চাহিদা রয়েছে। কারণ প্রয়োজনের তুলনায় দক্ষ হিসাববিদের সংখ্যা কম। ২০১৭ সালের আইসিএবি এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ১৮ হাজার হিসাববিদের চাহিদা আছে। কিন্তু আছেন মাত্র ১ হাজার ২০০ এর মতো।

Image Source: scalefactor.com

বাংলাদেশে হিসাবরক্ষণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পেশাগত এই ডিগ্রি দিয়ে থাকে দ্য ইন্সটিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশে (আইসিএবি)। প্রত্যেক চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট ইন্সটিটিউট চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের সদস্য হিসাবে ব্যক্তিগত অনুশীলন বা ফার্ম ও প্রতিষ্ঠানের হিসাব বিভাগে কাজ করে।

চার্টার্ড একাউন্টেন্টরা বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে কাজ করতে পারেন। ক্ষেত্রগুলো হলো,

১. ফাইন্যান্সিয়াল একাউন্টিং

২. অডিটিং

৩. কস্ট একাউন্টিং

৪. কর ব্যবস্থাপনা

৫. ম্যানেজমেন্ট একাউন্টিং

৬. কনসালটেন্সি

আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো ক্ষেত্র বেছে নিতে পারেন। কাজের ক্ষেত্রের উপর নির্ভর করবে আপনার কাজের ধরন কী রকম হবে।

ভর্তিগত যোগ্যতা

এইচএসসি পাসের পরই সিএ কোর্সে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারেন। এক্ষেত্রে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় কোনো একটিতে জিপিএ-৫ সহ ন্যূনতম ৯ পয়েন্ট থাকতে হবে। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ও-লেভেলে ন্যূনতম ৩৮ পয়েন্ট (সর্বনিম্ন ৫ বিষয়ে, সর্বোচ্চ ৭ বিষয়ে) এবং এ লেভেলে নূন্যতম ১২ পয়েন্ট (৩ বিষয়ে) পেতে হবে। এ ক্ষেত্রে ‘এ’ গ্রেড সমান ১০ পয়েন্ট, ‘বি’ গ্রেড সমান ৬ পয়েন্ট, ‘সি’ গ্রেড সমান ৪ পয়েন্ট হিসাব করা হবে। যেকোনো বিষয়ে স্নাতক অথবা স্নাতকোত্তর শেষে আবেদন করতে চাইলে উভয় পরীক্ষায় নূন্যতম দ্বিতীয় বিভাগ থাকতে হবে। সিজিপিএ-৪-এর মধ্যে ২.৫ থেকে ৩ এবং সিজিপিএ-৫-এর মধ্যে ৩ থেকে ৪-কে দ্বিতীয় বিভাগ হিসেবে গণ্য করা হয়।

কোথায় পড়বেন

সিএ পড়তে চাইলে প্রথমে যোগাযোগ করতে হতে হবে আইসিএবি এর নিবন্ধিত কোনো প্রতিষ্ঠানের (ফার্ম) সাথে। এই ফার্মগুলোর কাজ হলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক হিসাব যাচাই করা। হাতে কলমে কাজ শেখার সুযোগ দিয়ে থাকে এই ফার্মগুলো। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, খুলনা ও সিলেটেও রয়েছে কিছু নিবন্ধিত ফার্ম।

নতুন শিক্ষার্থী নেওয়ার ক্ষেত্রে অধিকাংশ ফার্ম পরীক্ষা নিয়ে থাকে। পরীক্ষায় সাধারনত মৌলিক হিসাববিজ্ঞান ও ইংরেজির উপর দক্ষতা যাচাই করা হয়। তাই চার্টার্ড একাউন্টেন্সি পড়তে চাইলে আগে থেকেই খোঁজখবর নিয়ে এবং ভালো করে প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিতে হবে, কারণ লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই কেবল মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। মৌখিক পরীক্ষায় ভালো করলে আর্টিকেলশীপের শিক্ষার্থী হিসাবে বিবেচিত করা হয়। তারপর ফার্মের নীতিমালা অনুযায়ী ফার্মে যোগদানের পরবর্তী দুই থেকে তিন মাস শিক্ষানবিশ হিসাবে কাজ করতে হয় এবং পরবর্তী সময়ে ঐ ফার্ম থেকে আইসিএবিতে শিক্ষার্থী হিসেবে নিবন্ধন জন্য আবেদন করতে হয়।

Image Source: ucresources.net

নিবন্ধনের তারিখ থেকে তিন বছর ঐ সিএ ফার্মের অধীনে কাজ করতে হয়। বর্তমানে আইসিএবি এর নিবন্ধন ফি ৩০,০০০ টাকা। এই নিবন্ধন খরচে অন্তর্ভুক্ত থাকবে পাঠ্যবই, কোচিং ফি ও গ্রন্থাগার ব্যবহারের সুযোগ। এছাড়াও ফার্ম থেকে প্রত্যেক মাসে আইসিএবি এর নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাতা দেওয়া হয়। আইসিএবি এর বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী আর্টিকেলশীপ শিক্ষার্থীদের মাসিক ভাতার পরিমাণ প্রথম বছর ৩০০০ টাকা, দ্বিতীয় বছর ৩৫০০ টাকা এবং তৃতীয় বছর ৪০০০ টাকা।

আর্টিকেলশীপ চলাকালীন বা শেষে মোট দুটি ধাপের পরীক্ষা উত্তীর্ণ হলে একজন শিক্ষার্থী চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসেবে কর্মজীবন শুরু করতে পারবেন। পরীক্ষার ধাপ দুটি হচ্ছে, প্রোফেশনাল স্টেজ এবং অ্যাডভ্যান্সড স্টেজ। প্রোফেশনাল স্টেজে আবার ২ টি ধাপে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, নলেজ লেভেল ও এপ্লিকেশন লেভেল। পরীক্ষাগুলোতে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন থেকে শুরু করে সবকিছুর তদারকি আইসিএবি এর তত্ত্বাবধানে এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে হয়ে থাকে।

ভর্তি, পরীক্ষা, রুটিন, নিবন্ধনকৃত ফার্মের সংখ্যা, পূর্ববর্তী পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ইত্যাদি সংক্রান্ত যেকোনো তথ্যের জন্য আইসিএবি এর ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে পারেন।

ওয়েবসাইট লিঙ্ক:  http://www.icab.org.bd/

কাজের ক্ষেত্র

দেশি বিদেশি ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এনজিও,কন্সাল্টেন্সি ফার্ম, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সর্বত্রই চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের চাহিদা আছে। চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফার্মে সকল স্তরে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টরা কাজ করেন। এছাড়া নিজ উদ্যোগে সিএ ফার্ম খোলার সুযোগ রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে বিভিন্ন শর্ত বিদ্যমান এবং প্রচুর অভিজ্ঞতা প্রয়োজন।

আয় রোজগার

একটি প্রতিষ্ঠানে চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টদের উপার্জন নির্ভর করে পদের উপর। মাসিক আয় ষাট হাজার থেকে শুরু করে কয়েক লাখ পর্যন্ত হতে পারে।

Featured Image: mentoryes.com