মহিলাদের যেকোনো প্রকারের মেয়েলি সমস্যা অথবা প্রজননতন্ত্রের বিভিন্ন ধরনের রোগ নির্ণয় এবং নিরাময়ের জন্য চিকিৎসা করে থাকেন একজন গাইনিকোলজিস্ট। গাইনিকোলজিতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে আপনিও মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় ভূমিকা রাখতে পারেন এবং গড়তে পারেন সম্মানজনক ক্যারিয়ার। চিকিৎসা সেবায় পেশা গড়া অন্য যেকোনো পেশার চেয়ে অনেক বেশি সম্মানজনক। কারণ এই পেশার সাথে জড়িত রয়েছে মানবতাবোধ ও সহমর্মিতা।

একজন গাইনিকোলজিস্টের কাজের ধরন

১. রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা সেবা প্রদান

রোগীর রোগের উপসর্গ ও বর্ণনা শুনে এবং প্রয়োজন হলে ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের সমস্যা সনাক্ত ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, পিরিয়ড সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা যেমন: অনিয়মিত ঋতুস্রাব, ঋতুস্রাবকালীন সময়ে অস্বাভাবিক পেট ব্যথা ইত্যাদি রোগের চিকিৎসা করা, মহিলাদের প্রজননতন্ত্রের ক্যান্সার হলে তার চিকিৎসা করা এবং প্রয়োজন হলে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া, বর্তমান প্রদত্ত চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীর সমস্যার সমাধান না হলে বিকল্প চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং দীর্ঘস্থায়ী ও গুরুতর প্রজনন ব্যাধির ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার করা। 

২. মাতৃত্বকালীন সেবা প্রদান

গর্ভকালীন চিকিৎসা প্রদান করা, সেইসাথে প্রসবকালীন, জন্মগত ও জন্মোত্তর যত্নের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা, নরমাল ডেলিভারি অথবা সিজারের মাধ্যমে নবজাতক প্রসব করানো। এছাড়াও মাতৃত্বকালীন যেকোনো সমস্যায় পরামর্শ দেওয়া।

৩. পরামর্শ প্রদান

জন্মনিয়ন্ত্রণ ও বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণ  সম্পর্কিত বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া। এছাড়াও চিকিৎসার সময় রোগীর স্বাস্থ্যগত অগ্রগতির তথ্য সংরক্ষণ করে রাখাও একজন গাইনিকোলজিস্টের কাজের মধ্যে পড়ে।

একজন গাইনিকোলজিস্টের যোগ্যতা ও দক্ষতা

১. দক্ষ ও পারদর্শী

একজন গাইনোকলজিস্টের অবশ্যই তাদের কাজ সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকতে হবে। সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় এবং রোগীদের সঠিক চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করার দক্ষতা থাকতে হবে।  এছাড়াও রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ব্যবহারে পারদর্শী হতে হবে। কারণ একজন গাইনিকোলজিস্ট প্রদত্ত চিকিৎসার উপর নির্ভর করে রোগীর সুস্বাস্থ্য। এজন্য তাকে সকল ছোটখাটো বিষয়ে খেয়াল রাখতে হয়। কারণ, সামান্য ভুল হলে একজন রোগীর পুরো চিকিৎসাতেই ভুল হবে, এমনকি রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

২. ভালো শ্রোতা ও বন্ধুত্বপরায়ন

রোগীর সমস্যার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে ও বোঝার চেষ্টা করতে হবে এবং সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করতে হবে, যাতে করে রোগী নিঃসংকোচে তার সকল সমস্যা গাইনিকোলজিস্টের সাথে আলোচনা করতে পারে। এছাড়াও যোগাযোগ করার দক্ষতা থাকতে হবে যাতে করে সহজেই রোগীর সমস্যার কথা বুঝতে পারেন।

Image Source: dublinprimarycare.com

৩. পরিশ্রমী

অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে কাজ করার মন মানসিকতা থাকতে হবে। এছাড়াও একজন চিকিৎসকের কাজের দায়িত্ব অনেক বেশি। একটানা অনেক সময় কাজ করার মন মানসিকতা থাকতে হবে। দিন রাত যেকোনো সময় ডিউটি থাকতে পারে আবার অনেক সময় ছুটির দিনেও ডিউটি থাকতে পারে।

৪. সাহসী

যেকোনো জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মন মানসিকতা থাকতে হবে এবং চিন্তা  ও বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে।   

শিক্ষাগত যোগ্যতা 

৫ বছর এমবিবিএস পড়াশোনা শেষ করার পর ১ বছর ইন্টার্নশিপ করতে হবে। এমবিবিএস ও ইন্টার্নশিপের পর গাইনিকোলজিতে বিশেষজ্ঞ হতে চাইলে গাইনিকোলজিতে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে হবে। ডিগ্রিগুলো হলো-

•     ৩ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন গাইনি (২ বছর কোর্স ও ১ বছরের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনিং)

•     ৪ বছর মেয়াদি এফসিপিএস ইন গাইনি (১ বছর কোর্স ও ৩ বছর ট্রেনিং)

•     ৫ বছর মেয়াদি এমএস ( মাস্টার অব সার্জন) ডিগ্রি নিতে পারেন। মূলত ২ ধাপে এমএস সম্পূর্ণ করতে হয়। প্রথম ধাপে দুই বছর প্রয়োজন হয় এবং দ্বিতীয় ধাপে তিন বছর।

এছাড়াও রয়েছে এফআরসিএস, এমডি, পিএইচডি ডিগ্রি। আপনি চাইলে একটি বা একের অধিক ডিগ্রি নিতে পারেন।

কাজের ক্ষেত্র

বাংলাদেশের প্রায় সকল সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে আলাদা গাইনিকোলজি বিভাগ আছে। অবস্টেট্রিকস ও গাইনিকোলজি জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল রয়েছে, এসব হাসপাতালে চাকরি করতে পারেন। সেনাবাহিনীতে মেডিকেল কোরেও রয়েছে কাজের সুযোগ। এছাড়াও  বিভিন্ন এনজিও যেমন: মেরী স্টোপস, সূর্যের হাসি চিহ্নিত ক্লিনিক ও অন্যান্য সংস্থার অধীনে মা ও শিশু হাসপাতালে গাইনিকোলজিস্টের পদ রয়েছে। গাইনিকোলজিকাল সোসাইটির অধীনে হাসপাতালের বিভিন্ন ট্রেনিং প্রোগ্রামে কাজ করার সুযোগ রয়েছে । এছাড়া অনেক সময় সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজের সুযোগ থাকে।

Image Source: dreamsmetroeve.com

বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার হিসেবে সরকারি হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগদানের পর গাইনিকোলজিতে উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণ করে মেডিকেল কলেজের গাইনিকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হওয়া যায়। সহকারী অধ্যাপক হিসেবে অন্তত পাঁচ বা ছয় বছর দায়িত্ব পালন করার পর যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে সহযোগী অধ্যাপক সম্ভব। আবারো কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা ও চাকরির অভিজ্ঞতা অর্জন করে সহযোগী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক হওয়া যায়। তবে এক্ষেত্রে একের অধিক রিসার্চ পেপার থাকা বাধ্যতামূলক।

আয় রোজগার

সরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন দেয়া হয়। সেইসাথে রয়েছে বোনাস ও ভাতার সুবিধা। চাকরির শুরুতে বেতন কিছু কম থাকতে পারে। তবে অভিজ্ঞতা বাড়ার সাথে সাথে আয়ের পরিমাণও বাড়তে থাকবে। বেসরকারি নামিদামি হাসপাতালগুলোতে অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বেতন কয়েক লাখ টাকাও হতে পারে। এছাড়া বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে সাময়িকভাবে রোগী দেখে ও অপারেশন করে অনেক টাকা আয় করা সম্ভব। এর বাইরে স্বাধীনভাবে চেম্বার করার সুযোগ তো থাকছেই।

Featured Image: weillcornell.org