যে ১৫টি ব্যাপার জীবনবৃত্তান্তে (CV) উল্লেখ করবেন না

সঠিক সিভি তৈরী করুন; Image Source: businessinsider.com

একটি কোম্পানির সিইও এর মতে, তারা যখন ম্যানেজার পদের জন্য লোক খুঁজছিলেন, তখন কেবলমাত্র একটি পদের জন্য ৭৫টি জীবনবৃত্তান্ত জমা হয়। সবার জীবনই যান্ত্রিক হয়ে গিয়েছে, তাই কারোরই সময় হয় না সবগুলো জীবনবৃত্তান্ত ভালো ভাবে পড়ার। তারা বলেন,”আমরা প্রতিটা জীবনবৃত্তান্তের পিছনে মাত্র ছয় সেকেন্ড সময় ব্যয় করি, এর মাঝে যদি ঐ জীবনবৃত্তান্ত ফিট হয় তবে আমরা পরবর্তীতে ইন্টারভিউ এর জন্য তাকে আসতে বলি।” তাহলে বুঝতেই পারছেন, চাকরীর বাজার কতটা যান্ত্রিক এবং প্রতিযোগীতামূলক। মাত্র ৬ সেকেন্ডেই নির্ধারণ হয়ে যায় আপনি সেই পদের জন্য উপযোগী কিনা।

সঠিক সিভি তৈরী করুন; Image Source: businessinsider.com

আপনি কোন পদের জন্য উপযোগী কিনা তা নির্ধারণ হয়ে যায় আপনার জীবনবৃত্তান্ত দেখেই। আপনার জীবনবৃত্তান্ত সুন্দর এবং সঠিক হওয়া খুব বেশি জরুরি। জীবনবৃত্তান্ত যত ছোট এবং ছিমছাম হবে তত ভালো। কোন অহেতুক কথা কিংবা তথ্য না দেয়াই ভালো। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেসব ব্যাপারগুলো যেগুলো আপনার জীবনবৃত্তান্তে উল্লেখ করা উচিত নয়।

১. অবজেক্টিভ বা উদ্দেশ্য

অব্জেক্টিভ বা উদ্দেশ্য; Image Source: businessinsider.com

আমরা সাধারণত জীবনবৃত্তান্তের একদম প্রথমেই অবজেক্টিভ বা উদ্দেশ্য লিখে থাকি। এর মূলভাব থাকে আমি কেন এই চাকরি করতে চাই এবং আমি কেন এই চাকরির জন্য নিজেকে উপযুক্ত মনে করি। কিন্তু এই কথাটি একদম অহেতুক। আপনি যেহেতু চাকরির জন্য আবেদন করছেন সেহেতু আপনি নিজেকে যোগ্য মনে করছেন। তাই আপনি এই কথাগুলো প্রোফাইল সামারি বা সারাংশে উল্লেখ করতে পারেন।

২. অমানানসই কাজের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করবেন না।

অমানানসই কাজের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করবেন না; Image Source: businessinsider.com

আমরা অনেকেই স্কুলে কিংবা কলেজে বিভিন্ন ছোটখাটো কাজ করেছি। হয়তো বা সেসব কাজে আমরা খুব বেশি পরিপক্ক। অনেকেই বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে পড়ান, কেউ বা কোনো দোকানে পার্ট টাইম চাকরী করেন। কিন্তু আপনি যদি কোন অফিসিয়াল পদের জন্য আবেদন করেন তবে এসব অপ্রাসঙ্গিক কাজের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ না করাই ভালো। তবে আপনি যদি স্কুল কলেজে কোনো সংস্থায় স্বেচ্ছাসেবী কিংবা কোনো পদে কাজ করে থাকেন তবে তা এক্সট্রা কারিকুলাম এক্টিভিটিজে উল্লেখ করাই ভালো।

অর্থাৎ আপনি সেসব অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করবেন যেগুলো দ্বারা আপনি যে পদের জন্য আবেদন করছেন, তার জন্য আপনি যে যোগ্য প্রার্থী এই ব্যাপারটি স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।

৩. ব্যক্তিগত ব্যাপার।

ব্যক্তিগত ব্যাপার; Image Source: businessinsider.com

জীবনবৃত্তান্ত মানে এই না যে, আপনার জীবনের সব কিছু উল্লেখ করতে হবে। কখনই জীবনবৃত্তান্তে আপনার বৈবাহিক অবস্থা বা আপনার ধর্ম এ জাতীয় তথ্য উল্লেখ করবেন না। আগে সবসময় জীবনবৃত্তান্তে এই ব্যাপারগুলো উল্লেখ করা হতো। কিন্তু এখন নিয়ম হয়েছে যে, কোন কর্মচারীকে তার পারিবারিক এবং ব্যক্তিগত কোন তথ্য জিজ্ঞাসা করা যাবে না। তাই এখন আর জীবনবৃত্তান্তে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয় না।

৪. আপনার শখ

আপনার শখ; Image Source: businessinsider.com

আপনার কি করতে ভালো লাগে আর কি করতে ভালো লাগে না তা জানার জন্য কেউ উদ্গ্রীব হয়ে নেই। তাই জীবনবৃত্তান্তে আপনার শখ উল্লেখ না করাই ভালো। যদি আপনার শখের সাথে আপনার কাজের মিল থাকে তবে তা উল্লেখ করতে পারেন। যেমনঃ আপনি যদি লাইব্রেরিয়ান পদের জন্য আবেদন করেন তবে সাথে শখ হিসেবে বই পড়া উল্লেখ করতে পারেন, কিন্তু আপনি যদি উল্লেখ করেন আপনি সাইকেল চালাতে ভালোবাসেন তবে তা অপ্রাসঙ্গিক হবে এবং সেই ছয় সেকেন্ড সময়ের মাঝে বাদ পড়ার সম্ভাবনা থাকবে।

৫. আপনার বয়স

আপনার বয়স; Image Source: businessinsider.com

অনেক সময় চাকরীর ক্ষেত্রে বয়সের জন্য আপনাকে বৈষম্যের শিকার হতে পারে। আপনি সেক্ষেত্রে যদি বৈষম্যের শিকার হতে না চান তবে গ্র্যাজুয়েশনের সাল উল্লেখ না করাই ভালো। এই কথাগুলো বলছিলেন ক্যাথরিন জুয়েল যিনি কিনা New Résumé, New Career. এর লেখক।

৬. অতিরিক্ত লেখা

অতিরিক্ত লেখা; Image Source: businessinsider.com

পূর্বেই যেমনটা বলা হয়েছে যে, আপনি যে পদের জন্য আবেদন করেছেন, সেই পদের জন্য আপনি যোগ্য কিনা তা কেবল মাত্র ছয় সেকেন্ড সময়ে নির্ধারণ করা হয়। তাই আপনি যদি আপনার জীবনবৃত্তান্তে অতিরিক্ত তথ্য দেন তবে প্রয়োজনীয় অনেক পয়েন্ট মিস হতে পারে আর আপনি বাদ পড়ে যেতে পারেন। তাই সবসময় জীবনবৃত্তান্তে একদম যে কথা না লিখলে নয় বাদে কোন কথা উল্লেখ না করা ভালো।

৭. রেফারেন্স

রেফারেন্স; Image Source: businessinsider.com

আপনি যে পদের জন্য আবেদন করছেন সেক্ষেত্রে কারো রেফারেন্স আছে কিনা তা আপনাকে ইন্টারভিউতেই জিজ্ঞাসা করা হবে যদি প্রয়োজন পড়ে। আপনাকে আলাদা করে জীবনবৃত্তান্তে উল্লেখ করা লাগবে না রেফারেন্সের কথা।

৮. অগোছালো ফরম্যাট

অগোছালো ফরম্যাট; Image Source: businessinsider.com

সবসময় একটি নির্দিষ্ট ফরম্যাটে লিখা উচিত। একটি জীবনবৃত্তান্তে সবসময় নির্দিষ্ট ফরম্যাট অনুসরণ করা উচিৎ। না হলে তা দেখতে অসুন্দর হয় এবং আপনার বাদ পড়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।

৯. পূর্ববর্তী কাজের জন্য বর্তমান কাল ব্যবহার করা।

কখনোই পূর্ববর্তী কাজের জন্য বর্তমান কাল উল্লেখ করবেন না। এতে মনে করা হয় যে আপনি এখনও সেখানে চাকরি করছেন।

১০. অপেশাদারী ইমেইল এড্রেস

অপেশাদারী ইমেইল এড্রেস; Image Source: businessinsider.com

অনেক সময় আমাদের ইমেইল এড্রেস অপেশাদার হয়। অনেকেই নিজের নাম ব্যবহার না করে অন্য কোন নাম দিয়ে ইমেইল খোলেন। সেসব ইমেইল ব্যবহার না করাই ভালো। যেমনঃ cutexerry@xyz.com ব্যবহার না করে Mr.a.1996@gmail.com এরকম ভাবে ইমেইল ব্যবহার করা উচিৎ।

১১. হেডার, ফুটার, টেবিল প্রভৃতি

কখনই জীবনবৃত্তান্তে টেবিল, হেডার কিংবা ফুটার ব্যবহার করা উচিৎ নয়। এরকম ব্যবহারকে বাজে ফরম্যাটের আওয়াতাভুক্ত করা হয়। তাই এগুলো ব্যবহার না করাই ভালো।

১২. প্রাক্তন বসের নাম উল্লেখ করবেন না

আপনার বসের নাম; Image Source: businessinsider.com

কখনোই আপনার সিভিতে বসের নাম উল্লেখ করবেন না। আপনি যদি নিশ্চিত হন যে, আপনার বসের সাথে যোগাযোগ করলে চাকরি পেতে সুবিধা হবে তবে আপনি সেখানে বসের নাম উল্লেখ করতে পারেন অন্যথায় না করাই ভালো।

১৩. সোশ্যাল মিডিয়ার লিংক

সোশ্যাল মিডিয়ার লিংক; Image Source: businessinsider.com

আপনার চাকরির সাথে অপ্রাসঙ্গিক এমন সোশ্যাল মিডিয়ার লিংক উল্লেখ না করাই ভালো। আপনি আপনার লিংকডইন প্রোফাইল যুক্ত করতে পারেন।

১৪. বহুকাল আগের কোন অভিজ্ঞতা

১৫ বছরের আগের কোন অভিজ্ঞতা; Image Source: businessinsider.com

ধরুন, আপনি ২০১৮ সালে কোন চাকরির জন্য আবেদন করছেন সেক্ষেত্রে ২০০৩ এর আগের কোনো অভিজ্ঞতা উল্লেখ না করাই ভালো, কেননা তারা সর্বোচ্চ ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা দেখবেন এর বেশী নয়।

১৫. সম্মানীর কথা

সম্মানির কথা; Image Source: businessinsider.com

সাধারণত ইন্টারভিউতে জিজ্ঞাস করা হয় যে, আপনি কত টাকা সম্মানী চাচ্ছেন, কিন্তু তার আগেই জীবনবৃত্তান্তে কখনোই উল্লেখ করা উচিৎ নয় সম্মানীর কথা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *