বৈশ্বিক অর্থনীতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। যার ফলে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। বৈশ্বিক বিবেচনায় পরিবর্তিত অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সাথে উন্নত বিশ্ব খাপ খাইয়ে চলছে। সেখানে কর্মসংস্থান নিয়ে বিশেষ হা-হুতাশ দেখা যায় না।
কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন! এখানেও প্রতিনিয়ত নতুন নতুন স্টার্টআপ সৃষ্টি হচ্ছে। বিশ্ব বিখ্যাত নতুন নতুন বহুজাতিক কোম্পানি এ দেশে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। আবার সমানতালে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে স্নাতক পাস করা ছেলেমেয়ে বের হচ্ছে। স্বাভাবিক বিবেচনায় নতুন সৃষ্টি হওয়া চাকরিতে পাস করা এইসব স্নাতকরা যোগ দিবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ঘটছে সম্পূর্ণ উল্টো!
![](http://youthcarnival.org/bn/wp-content/uploads/2018/07/Job-Searching-Online-8-Best-Practices-You-Need-to-Know.jpg)
পাস করা স্নাতকরা বলছে তারা চাকরি পাচ্ছে না। আবার কোম্পানিগুলো বলছে তারা যোগ্য প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছে না। আসলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে সত্যি, কিন্তু আপনি নিজেকে সার্বিকভাবে যোগ্য করে গড়ে তুলতে পারছেন না। তাই শত চেষ্টা করেও আপনি কাঙ্ক্ষিত চাকরি পাচ্ছেন না।
আমি চাকরি সম্পর্কিত একাধিক নিবন্ধে চাকরি পাওয়ার কলাকৌশল নিয়ে আলোচনা করেছি। কিন্তু এখন লক্ষ্য করছি চাকরি পাওয়ার কলাকৌশল জানার চেয়ে কেন চাকরি পাচ্ছি না সেটা জানা বেশি জরুরি। আমি ধারাবাহিকভাবে কয়েকটি নিবন্ধ এমন কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো যার কারণে আপনি শত চেষ্টা করেও কাঙ্ক্ষিত চাকরি পাচ্ছেন না।
১. নেটওয়ার্কিং দক্ষতা
আমাদের একাধিক নিবন্ধ নেটওয়ার্কিং সম্বন্ধে আপনি পড়ে থাকতে পারেন। কিন্তু বলতে পারেন নেটওয়ার্কিং সম্বন্ধে এত কিছু জানার পরও কেন আপনার চাকরি হচ্ছে না? আসল কথা হল, আপনি সঠিকভাবে এখনও নেটওয়ার্কিংয়ের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারেননি। নেটওয়ার্কিং নিয়ে আপনি বিস্তর পড়েছেন, কিন্তু কখনো নিজের ভেতর তার গুরুত্ব উপলব্ধি করেননি। যে কারণে আপনার নেটওয়ার্কিং তথা যোগাযোগ দক্ষতা খুবই দুর্বল।
![](http://youthcarnival.org/bn/wp-content/uploads/2018/07/wsi-imageoptim-GEVME-promoting-networking-event-success-2-1200x800.jpeg)
স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভালো ফলাফল এবং আপনার পরিপাটি বায়োডাটা কোনো কাজেই আসবে না যদি আপনি সঠিক মানুষের সাথে যোগাযোগ না করেন। অর্থাৎ জীবনের বিভিন্ন পরীক্ষায় ভালো ফল করা যেমন জরুরী, তেমনি সঠিক জায়গা চিনে যথার্থ যোগাযোগ করাও সমান জরুরী। সুতরাং কাঙ্ক্ষিত চাকরি পেতে নিজের যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি করুন, এবং সবসময়ই চারপাশের চলতি বিষয়ের সাথে নিজেকে আপডেট রাখুন।
২. আপনি কি সঠিকভাবে চাকরির সাক্ষাৎকার দিয়েছেন?
চাকরির সাক্ষাৎকার নিয়ে ইতিমধ্যে আমি একাধিক নিবন্ধে আলোচনা করেছি। আমার বিশ্বাস সেসব নিবন্ধ আপনি পড়েছেন। তারপরও চাকরির সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে আমরা অনেক ভুল করে বসি।
মনে রাখবেন, চাকরির সাক্ষাৎকার শুধুমাত্র প্রশ্নকর্তার প্রশ্ন এবং আপনার উত্তরের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আপনি যখন কোনো চাকরির সাক্ষাৎকারের জন্য ডাক পাবেন মনে রাখবেন তখন আপনার সম্বন্ধে সকল বিষয়েই পরীক্ষকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন।
![](http://youthcarnival.org/bn/wp-content/uploads/2018/07/careerbuilder-ar_post-745.jpg)
আপনার শারীরিক ভাষা, আপনার কথা বলার ধরণ, হাঁটা, বসা, হাসি, দৃষ্টি, উত্তর দেওয়ার কৌশল, এমনকি কোনো উত্তর না জানা প্রশ্ন সামাল দেওয়ার কৌশল – সবকিছুই পর্যবেক্ষণ করা হয়। আপনি হয়তো বলবেন এর সবকিছুই তো আমি জানি। তারপরও আমার চাকরি হচ্ছে না! তাহলে বুঝতে হবে ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় আপনার মধ্যে এক ধরণের মানসিক দুর্বলতা কাজ করে, যে দুর্বলতা খুব দ্রুত আপনার সার্বিক দক্ষতা কমিয়ে দেয়, আপনাকে দ্বিধাগ্রস্ত করে তোলে।
সুতরাং সবার আগে এই দ্বিধা মুক্ত হোন, এবং বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার সময় যেমন দ্বিধাহীন থাকেন তেমনি আত্মবিশ্বাসের সাথে সকল চাকরির সাক্ষাৎকার মোকাবেলা করুন।
৩. শুধু বায়োডাটা যথেষ্ট নয়
কাঙ্ক্ষিত চাকরি পাওয়ার জন্য শুধু একটি পরিপূর্ণ বায়োডাটা যথেষ্ট নয়। আপনার বায়োডাটার সাথে অবশ্যই একটি সংক্ষিপ্ত কভার লেটার থাকতে হবে। এই কভার লেটার সুনির্দিষ্টভাবে আপনার দক্ষতা ও যোগ্যতা সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরবে। কভার লেটারটি একদৃষ্টে দেখার পরই যেন নিয়োগকর্তা আপনার সকল প্রতিভা এবং দক্ষতা সম্বন্ধে বুঝতে পারেন।
![](http://youthcarnival.org/bn/wp-content/uploads/2018/07/24.05.17cv.jpg)
বায়োডাটার মধ্যে আপনার সকল অর্জন ও কর্মের কথা যেমন লেখা থাকতে হবে, তেমনি আপনাকে জানতে হবে কভার লেটারেও কী কী থাকবে। একটি আদর্শ কভার লেটার সাধারণত এক পৃষ্ঠা বা তারও কম হয়ে থাকে।
কভার লেটারে নিজের অর্জন বা ব্যক্তি পরিচয় কখনো লিখবেন না। শুধুমাত্র সংক্ষিপ্ত আকারে নিজের দক্ষতা, যোগ্যতা ও প্রতিভার কথা তুলে ধরুন। এমনকি চাকরির বিজ্ঞাপনে যে ক্রমে দক্ষতা, যোগ্যতা চাওয়া হয়েছিল একই ক্রমে কভার লেটারটি সাজাতে পারেন। তাহলে নিয়োগকর্তা খুব সহজেই আপনাকে মূল্যায়ন করতে সক্ষম হবেন।
৪. আপনি কি যথেষ্ট পরিমাণ চাকরির জন্য আবেদন করেছেন?
শিক্ষাজীবন শেষ করে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী সুনির্দিষ্ট কয়েকটি চাকরি সম্বন্ধে অবগত থাকে। নিজের বায়োডাটা তৈরি করে শুধুমাত্র নিজের জানা পরিধির মধ্যে চাকরি গুলোর জন্য চেষ্টা করতে থাকে। ক্রমাগত চেষ্টা করে যায়, কিন্তু বারবার তারা ব্যর্থ হয়।
অথচ তারা জানেই না প্রতিদিন শত শত নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। এমনকি অসংখ্য নতুন চাকরি আছে যার সম্বন্ধে আপনি কিছুই জানেন না। সুতরাং সুনির্দিষ্ট একটি ক্ষেত্রে আবেদন করা বন্ধ করে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন চাকরির জন্য চেষ্টা করা শুরু করুন। আপনি যদি সুনির্দিষ্ট একটি বা দুইটি চাকরির জন্য চেষ্টা করে যান আর এই কাজের জন্য যথাযথ যোগ্যতা যদি আপনার না থাকে তাহলে কোনো কালেও আপনি কাঙ্ক্ষিত চাকরি খুঁজে পাবেন না।
![](http://youthcarnival.org/bn/wp-content/uploads/2018/07/how_to_successfully_apply_for_a_new_job_in_your_current_company.jpg)
তাছাড়া কিছু কিছু আবেদনকারী মাত্র কয়েকটি আবেদনে ব্যর্থ হবার পর হতাশ হয়ে পড়েন, হাল ছেড়ে দেন। কাঙ্ক্ষিত চাকরি পাওয়ার জন্য কখনো আবেদনের সংখ্যা নির্ধারণ করবেন না, বরং ততক্ষণ পর্যন্ত আবেদন করতে থাকুন যতক্ষণ না কাঙ্ক্ষিত চাকরি খুঁজে পান।
সুতরাং গৎবাঁধা কয়েকটি চাকরির ধারণা বাদ দিয়ে বিভিন্নভাবে ক্রমাগত বিভিন্ন চাকরির জন্য চেষ্টা করে যান। তাতে আপনার চাকরি পাওয়ার সম্ভাব্যতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। এমনকি খুব দ্রুত আপনি কাঙ্ক্ষিত চাকরি পেয়েও যাবেন।
অনেক ভালো লাগছে ভাই