অসংখ্য তরুণের অভিযোগ তারা শত চেষ্টা করেও পছন্দের চাকরি পান না। সেইসব তরুণদের উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই, আমরা ভাল কিছুর জন্য সবসময়ই বড় বড় বিষয়ে প্রস্তুতি নিই, কিন্তু অনেক খুঁটিনাটি বিষয় উপেক্ষা করে যায়। অথচ আমরা কখনো হিসাব করে দেখি না এইসব ছোট ছোট বিষয়ের কারণে অনেক বড় অর্জন আমাদের হাতছাড়া হয়ে যায়।
![](http://youthcarnival.org/bn/wp-content/uploads/2018/07/1_E0qx2_JUO-rUhyAiMkKWmA.jpeg)
তেমনি চাকরি পাওয়ার সকল যোগ্যতা থাকা সত্বেও ছোট ছোট কিছু ভুল সিদ্ধান্তের কারণে কাঙ্ক্ষিত চাকরির জন্য আমাদের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। আজকের নিবন্ধ এমন কিছু ছোট ছোট বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো যেগুলো আমরা কখনো বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখি না, অথচ এই বিষয়গুলোর কারণেই অধিকাংশ মানুষ চাকরি পায় না।
১. স্থান পরিবর্তন
বেশিরভাগ তরুণ চাকরির প্রয়োজনে নিজের বসবাস করা গ্রাম বা শহর পরিবর্তন করে। সারা জীবন একটি মানুষ যেখানে বসবাস করেছে হঠাৎ করেই তা পাল্টে অন্য একটি পরিবেশে গিয়ে উপনীত হয় শুধুমাত্র একটি চাকরি পাওয়ার আশায়।
![](http://youthcarnival.org/bn/wp-content/uploads/2018/07/solo-travel-660x400.jpg)
সুতরাং স্বভাবতই নতুন পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে তার কিছুটা সময় লাগে। এমন অবস্থায় যদি সে চাকরি পাওয়ার চেষ্টা করে তবে অনেকাংশেই তা ব্যর্থ হয়। আপনি যদি চাকরির জন্য নিজের আবাসস্থল পরিবর্তন করে নতুন কোনো শহরে গিয়ে থাকেন, তবে অবশ্যই সৎভাবে নিজের বায়োডাটায় বা কভার লেটারে তা উল্লেখ করুন। যেন সহজেই এই বিষয়টি নিয়োগকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এতে নিয়োগকর্তা আপনার প্রতি বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি দেখবে বলে আশা করা যায়।
২. জব ডেসক্রিপশন ভালভাবে না পড়া
যেকোনো চাকরির বিজ্ঞাপন দেখলেই সেখানে আবেদন করবেন না। কেননা প্রত্যেক চাকরিতে নিয়োগের ব্যাপারে নিয়োগকর্তাদের সুনির্দিষ্ট মতামত থাকে। সুতরাং সুনির্দিষ্ট কাজের জন্য আবেদন করার পূর্বে যথাযথভাবে চাকরির বিবরণী পড়ুন।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানুষ চাকরির জন্য প্রস্তাবিত যোগ্যতার দু-একটি নিজের মধ্যে থাকলেই উক্ত চাকরিতে আবেদন করে বসে। অযথা এই কাজ আর করবেন না। যেকোনো চাকরিতে আবেদনের পূর্বে অন্ততপক্ষে তার সিংহভাগ যোগ্যতা আপনার মধ্যে আছে এটা নিশ্চিত হয়ে নিন।
![](http://youthcarnival.org/bn/wp-content/uploads/2018/07/o-READ-NEWSPAPER-facebook.jpg)
সুতরাং আপনি যখন কোনো চাকরির জন্য আবেদন করবেন, তখন ভালভাবে পড়ে নিন তার আসলে কেমন যোগ্যতা সম্পন্ন মানুষ চায়। ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানির ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম-নীতি থাকে। কোম্পানির সব নিয়মনীতিও আবেদন করার পূর্বে ভালভাবে পড়ে নিন।
আবেদন করার পূর্বে কোম্পানির চাওয়া সকল কাগজপত্র আবেদনপত্রের সাথে যুক্ত করুন। মনে রাখবেন, আপনার মত হাজার হাজার মানুষ উক্ত চাকরির জন্য আবেদন করবে। সুতরাং নিয়োগকর্তা শুরুতেই অপূর্ণ আবেদনগুলো বাদ দিয়ে দিবেন এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং কোনো চাকরিতে আবেদনের পূর্বে তাদের প্রত্যাশিত সকল কাগজপত্র আবেদনপত্রের সাথে সংযুক্ত করুন।
৩. শুরুতেই উচ্চাকাঙ্ক্ষা
নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে উচ্চাকাঙ্খার সবারই থাকে। কিন্তু এই উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ করার জন্য সময় প্রয়োজন। জীবনের শুরুতেই কেউ চূড়ান্ত সাফল্যে পৌঁছাতে পারে না। এই সত্য আপনাকে মেনে নিতে হবে।
বেশিরভাগ মানুষ বিশ্ববিদ্যালয় ভালো ফল করার কারণে জীবনের শুরুতেই সেরাটা পেতে চায়। তারা মনে করেন সর্বোচ্চ সম্মানির চাকরি পাওয়ার জন্য তারা এখনই যোগ্য। আপনি যদি এমন উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে থাকেন তবে নিশ্চিতভাবেই কাঙ্ক্ষিত চাকরি পেতে আপনাকে বেগ পেতে হবে।
![](http://youthcarnival.org/bn/wp-content/uploads/2018/07/1_JGRkEO2L7lKjowzhr4JHrg.jpeg)
আপনি যত যোগ্য ব্যক্তিই হোন না কেন, কোম্পানি সবসময়ই কম বেতনে ভালো কর্মী নিয়োগ দিতে চায়। সব কোম্পানিতে নির্দিষ্ট কাজের জন্য স্যালারি স্কেল নির্ধারণ করা থাকে। সুতরাং আপনি যদি প্রতিষ্ঠান স্কেলের চেয়ে বেশি সম্মানীর দাবিদার হয়ে থাকেন তবে নিশ্চিতভাবেই আপনি পস্তাবেন।
কাজেই আপনি যদি কর্মক্ষেত্রের নতুন হয়ে থাকেন তবে জীবনের সব পরীক্ষায় ভালো ফল করা সত্বেও শুরুতে নিজের প্রত্যাশিত পারিশ্রমিক কম রাখুন। আপনি যদি সত্যিই যোগ্যতাসম্পন্ন হয়ে থাকেন, তবে খুব দ্রুতই আপনার পদোন্নতি হবে এবং সম্মানীযও বাড়বে। সুতরাং সম্মানীর চিন্তা আগে নয়, আগে একটি চাকরি জোটান।
৪. খুব বেশি কথা বলা
সব যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র অতিরিক্ত বহির্মুখীতার কারণে অনেক মানুষ চাকরি পায় না বহির্মুখীতা আপনার দোষ নয়, বরং একটি বিশেষ গুণ, যা সবার মধ্যে থাকে না। কিন্তু এই বহির্মুখীতা বা বাচালতার চর্চা করার ক্ষেত্রে চাকরির ইন্টারভিউ নয়।
![](http://youthcarnival.org/bn/wp-content/uploads/2018/07/Answering-hard-questions-during-a-job-interview-1024x740.jpg)
তারপরও যত পরামর্শই দেওয়া হোক না কেন বহির্মুখী স্বভাবের মানুষের থামানো সত্যিই খুব কঠিন। বিশেষ করে চাকরির সাক্ষাৎকারে তাদের এই বাচালতা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
কখনোই চাকরির সাক্ষাৎকারে এমন স্বভাব প্রকাশ করবেন না। সব সময় সুনির্দিষ্ট পয়েন্টে স্বল্প কথা বলুন। যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে নিয়োগকর্তা বিরক্ত হওয়ার পূর্বেই দ্রুত উত্তর শেষ করুন। অল্প কথায় বেশি প্রকাশ করার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, চাকরির সাক্ষাৎকার নিতে এসে নিয়োগকর্তা নিরর্থক কথা শুনতে পছন্দ করবেন না।
৫. খুব বেশি বাছাই করা
একটি বিরাট সংখ্যক মানুষ খুব বেশি বাছ-বিচার এবং খুঁতখুঁতে স্বভাবের কারণে কখনোই কাঙ্ক্ষিত চাকরি পায় না। মনে রাখবেন অন্যের প্রতিষ্ঠানে চাকরি আপনার পারিবারিক বিষয় নয় যে, বাবা-মায়ের কাছে আবদার করার মতো ইচ্ছা মতো সুযোগ-সুবিধা চাইবেন।
চাকরির সাক্ষাৎকারে কোনো নিয়োগকর্তা যদি আপনাকে বলেন প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনে ছুটির দিনেও আপনি কাজ করতে পারবেন কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে কোনভাবেই ‘না’ সূচক কিছু বলবেন না। আপনাকে যদি নিয়োগকর্তা নির্দিষ্ট কাজের বাইরে কোথাও ভ্রমণ করতে বলেন তাহলে আপনার অসন্তোষ বা অপারগতা প্রকাশ করবেন না। মনে রাখবেন, এইসব প্রশ্নের মাধ্যমে নিয়োগকর্তা আসলে যাচাই করেন আপনি কতটা ঝুঁকি এবং চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত আছেন।
![](http://youthcarnival.org/bn/wp-content/uploads/2018/07/1200-473299140-choosy-person-indecision.jpg)
আপনি যদি সবসময় নিজের আরামদায়ক পরিবেশ নির্বাচন করেন, তাহলে নিয়োগকর্তা আপনাকে নির্বাচন করবে না। সুতরাং প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে সকল প্রকার ঝুঁকি এবং চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার মানসিকতা প্রকাশ করুন, যা বেশিরভাগ মানুষ করে না। তাই কাঙ্খিত চাকরিও পায় না।
মোটকথা, সার্বিকভাবে নিয়োগকর্তাকে বুঝিয়ে দিন আপনি এ কাজের ব্যাপারে অধিক আগ্রহী এবং কাজের মাধ্যমে বহুদূর যেতে চান। তারপরও একবার সাক্ষাৎকার দেওয়ার পর থেমে গেলে চলবে না। নিজের প্রয়োজনেই প্রতিষ্ঠানের কাছে খোঁজখবর নিন। এতে এই কাজের ব্যাপারে আপনার আগ্রহ প্রকাশ পায়, যা সাক্ষাৎকারের পরও নিয়োগকর্তাদের ইতিবাচক করতে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে।