রেফারেন্স লেটারে কী কী থাকা উচিত?

রেফারেন্স লেটার মূলত তৃতীয় পক্ষের দেওয়া ব্যক্তিগত চারিত্রিক সনদ, যা আবেদনকারীর চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। তাই চাকরির বাজারে সুনির্দিষ্ট কোনো ক্ষেত্রে প্রবেশ করতে আবেদনকারীদের বিশেষ রেফারেন্সের প্রয়োজন হয়। আপনি যদি কোনো ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি হয়ে থাকেন, তবে আপনাকেও পরিচিত কারো জন্য রেফারেন্স লেটার দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

Source: RIVS

চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতার মতোই রেফারেন্স সমান গুরুত্বপূর্ণ। কেননা নিয়োগকারীরা রেফারেন্সের উপর নির্ভর করে অনেক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। তাছাড়া অসংখ্য যোগ্যতাসম্পন্ন আবেদনকারীর মধ্য থেকে বিশ্বাসযোগ্য কাউকে খুঁজে পেতে নিয়োগকারীরা গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্সের উপর নির্ভর করে। কেননা আবেদনকারী তাদের কাছে অপরিচিত হলেও বিশ্বাসযোগ্য রেফারেন্সের উপর ভিত্তি করে তারা আবেদনকারীকে বিশ্বাস করতে পারে।

তাই আমাদের আজকের নিবন্ধের বিষয়বস্তু ব্যক্তিগত রেফারেন্স লেটার। ফলপ্রসূ রেফারেন্স নিশ্চিত করতে একটি রেফারেন্স লেটারে কী কী থাকা উচিত তা নিয়ে এখানে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

কাকে রেফারেন্স লেটার দেবেন?

আপনাকে যদি কখনো রেফারেন্স লেটার দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়, তবে নিশ্চিত করুন যে আবেদনকারীকে আপনি ভালোভাবে চেনেন। নিজের পরিচিত কমিউনিটি বা নেটওয়ার্কের মধ্যে থাকা ব্যক্তিকেই শুধু রেফারেন্স লেটার দিন। অন্যথায় ভবিষ্যতে মানহানি বা নানা রকম জটিলতায় পড়তে পারেন।

Source: Khalsa Trading

কেননা আপনার রেফারেন্সের উপর ভিত্তি করেই আবেদনকারীকে কোনো প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিবে। সুতরাং তার কৃত কর্ম বা অসৌজন্যমূলক আচরণের জন্য আপনিও সমানভাবে দায়ী থাকবেন। হয়তো কোনো ফৌজদারি মামলায় আপনাকে জড়ানো হবে না, কিন্তু মানহানি তো হবে।

চলুন এবার ভালোভাবে জেনে নিই, রেফারেন্স লেটারে কী কী থাকা উচিত বা রেফারেন্স লেটার কেমন হওয়া উচিত।

প্রার্থীর সাথে আপনার সম্পর্ক কী?

কাউকে রেফারেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টভাবে তার সাথে আপনার সম্পর্ক নির্ণয় করুন। আবেদনকারী আপনার আত্মীয়র আত্মীয়, বন্ধুর বন্ধু অথবা দুঃসম্পর্কের কেউ- এমন হওয়া উচিত নয়। যে ব্যক্তির জন্য আপনি রেফারেন্স লেটার লিখবেন তার সাথে আপনার সুনির্দিষ্ট সম্পর্ক উল্লেখ করুন।

Source: The Balance Careers

যেমন এভাবে উল্লেখ করুন, জনাথন আর আমি একটা মানবাধিকার সংস্থায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছি এবং তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে আমি চিনি, অথবা জনাথন আমার নিকটতম প্রতিবেশী এবং আমার ছেলের বন্ধু। আমি তার মঙ্গল কামনা করি। এভাবে সুনির্দিষ্ট সম্পর্কের কথা উল্লেখ করলে নিয়োগকারীরা আবেদনকারীর প্রতি বিশেষ মনোযোগী হয়।

আবেদনকারীকে কতদিন ধরে চেনেন?

রেফারেন্স ফলপ্রসূ করতে আবেদনকারীকে আপনি কতদিন ধরে চেনেন তা উল্লেখ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিচিতির সময়কাল উল্লেখ করলে নিয়োগকারীরা আবেদনকারীর সাথে আপনার বোঝাপড়া এবং তার ব্যাপারে আপনার দৃষ্টিভঙ্গির স্পষ্ট ধারণা পায়। ফলে রেফারেন্স আরো অর্থপূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। সুতরাং রেফারেন্স লেটারে আবেদনকারীর সাথে আপনার পরিচয় বা সম্পর্কের সময়কাল উল্লেখ করুন।

Source: Oxbridge Academy

যেমন, রবার্টকে আমি ছয় বছর ধরে চিনি। এমনকি আমরা দুই বছর একসাথে একই প্রতিষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেছি, অথবা রবার্ট আমার নিকটতম প্রতিবেশী, যাকে আমি শিশুকাল থেকে চিনি, অথবা রবার্ট আর আমি একসাথে দীর্ঘ সময় দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ নিয়েছি।

ইতিবাচক গুণাবলীর উল্লেখ

আপনার রেফারেন্স লেটারে অন্ততপক্ষে আবেদনকারীর তিনটি ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী উল্লেখ করুন। যেন নিয়োগকারীরা আবেদনকারীর যোগ্যতা সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা পায় এবং বুঝতে পারে এই আবেদনকারী তাদের কোম্পানির জন্য কতটা প্রয়োজনীয়।

Source: The Balance Careers

এই গুণাবলী হতে পারে আবেদনকারীর কাজের প্রতি মনোযোগ, যোগাযোগ দক্ষতা, নেতৃত্তের গুনাবলি, ইতিবাচক মনোভাব, অথবা ব্যক্তিগত যেকোনো বৈশিষ্ট্য। এমনকি আবেদনকারীর ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে এমন ছোট ঘটনা উল্লেখ করতে পারেন।

সুস্পষ্ট সুপারিশ মূলক বিবৃতি

রেফারেন্স লেটারে আবেদনকারীর ব্যক্তিগত যোগ্যতা ও গুণাবলী, আপনার সাথে সম্পর্ক ইত্যাদি উল্লেখ করার পরও আরও একটি বিষয় বাদ থেকে যায়। তা হলো সুস্পষ্ট সুপারিশমূলক বিবৃতি। আবেদনকারীর চাকরি প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে আপনার রেফারেন্স লেটারের শেষ অংশে সুস্পষ্ট বিবৃতি যুক্ত করুন। যেন আপনার এই বিবৃতি আবেদনকারীর সাথে আপনার সম্পর্ক এবং তার গুণাবলীকে প্রমাণ করে।

যেমন লিখুন, এই কারণে আমি এই আবেদনকারীর পক্ষে সুপারিশ করছি। আমি বিশ্বাস করি এই ব্যক্তি যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য সুনাম এবং সাফল্য বয়ে আনবে। আমি তার সার্বিক মঙ্গল কামনা করি।

রেফারেন্সকারীর সাথে যোগাযোগের তথ্য

অনেক সময় দেখা যায় একটি চমৎকার রেফারেন্স লেটারের শেষ অংশে শুধু রেফারেন্সকারীর নাম এবং পদবি লেখা থাকে। রেফারেন্সে উল্লেখ করা বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য এবং আন্তরিক মনে হলেও শুধু রেফারেন্সকারীর সাথে যোগাযোগের পর্যাপ্ত তথ্য না থাকায় নিয়োগকর্তারা রেফারেন্স গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করেন না।

সুতরাং কাউকে রেফারেন্স দিতে হলে সুস্পষ্টভাবে রেফারেন্সকারীর সাথে যোগাযোগের বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করুন। যেন নিয়োগকর্তারা ইচ্ছা করলে রেফারেন্সকারীর সাথে যোগাযোগ করে অধিকতর নিশ্চিত হতে পারে।

Source: Robert Half

রেফারেন্স লেটারে রেফারেন্সকারীর সাথে যোগাযোগ করার অন্তত ২টি উপায় উল্লেখ করুন। যেমন যোগাযোগের ঠিকানা ও ফোন নম্বর, অথবা যোগাযোগের ঠিকানা ও ইমেইল এড্রেস। আপনি চাইলে রেফারেন্স লেটারে সবগুলো তথ্যই যুক্ত করতে পারেন।

বর্তমানে কর্মসংস্থানের তুলনায় চাকরি প্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। এমনকি যোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা সৃষ্ট কর্মক্ষেত্রের কয়েকগুণ। সুতরাং এই বাস্তবতায় কাঙ্ক্ষিত চাকরি অনেকাংশে রেফারেন্সের উপর নির্ভর করে।

রেফারেন্স লেটার বায়োডাটায় উল্লেখ্য অন্যান্য তথ্যের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। তাই কারো কাছ থেকে রেফারেন্স লেটার নেওয়ার সময় উপরোক্ত বিষয়গুলো নিশ্চিত করুন। একই ভাবে কাউকে রেফারেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রেও উপরোক্ত বিষয়গুলো নিশ্চিত করুন। তাহলে আশা করা যায় আপনার রেফারেন্স বৃথা যাবে না।

Feature Image: Khalsa Trading

মোস্তাফিজুর রহমান: তরুণ কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট এবং সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা যশোরে। পৈতৃক নিবাস যশোরের সদর থানার খোজারহাট গ্রামে। বাবা-মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান সবার বড়। লেখাপড়া করেছেন যশোরের খোজারহাট মাধ্যামিক বিদ্যালয়, ছাতিয়ানতলা চুড়ামনকাঠি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ডা: আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজ এবং ঢাকার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার প্রকৌশল নিয়ে পড়াশোনা করলেও আত্মনিয়োগ করেছেন সাহিত্য সাধনা এবং সাংবাদিকতায়। শিল্প-সাহিত্যের প্রতি তীব্র অনুরাগী মোস্তাফিজুর রহমান স্কুল জীবন থেকেই লেখালেখি করেন। বাংলাদেশ ও কলকাতার সাহিত্য পত্রিকা, দৈনিক এবং ম্যাগাজিনে লিখে থাকেন। এছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে দৈনিক পত্রিকায় কলাম লেখেন নিয়মিত। ২০০৯ সাল থেকে সাংবাদিকতার সাথে জড়িত, একটি অনলাইন পত্রিকা সম্পাদনাসহ কাজ করেছেন বিভিন্ন পত্রিকায়। সাম্প্রতিককালে তারুণ্য, শিল্প-সাহিত্য, চলচ্চিত্র এবং ট্রেন্ডিং বিষয় নিয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবে আলোচনা করেন। ইউটিউব সহ সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মোস্তাফিজুর রহমানকে @MustafizAuthor ইউজারে খুঁজে পাওয়া যাবে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘দ্বন্দ ও পথের খেলা’ প্রকাশিত হয়। _____________________________________________________________________________________________________________________________________________________________ find him everywhere @MustafizAuthor | email: mustafizauthor@gmail.com