পণ্য উন্নয়নের ৫টি কার্যকরী পদক্ষেপ

বর্তমানে বাজার ব্যবস্থা অনেক বেশি প্রতিযোগিতাপূর্ণ। এখন বাজারে নতুন পণ্য ছাড়া তো দূরের কথা, ঠিকমতো পণ্য বাজারে টিকিয়ে রাখতেও অনেক বেশি প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তাই বর্তমান বাজারে নতুন পণ্য আনতে হলে অবশ্যই পণ্যের মান, ক্রেতার চাহিদা, ক্রেতার জীবনযাত্রার মান, পণ্যের নকশা ও মোড়কীকরণসহ ইত্যাদি প্রতিটা বিষয় খুব গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হয়।

এই পণ্য উন্নয়নের এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হলো টনি কো, যার উন্নতির মূলে ছিলো ‘উন্নত পণ্য বাজারজাতকরণ ব্যবস্থা’। তিনি একটি উচ্চ মানের কিন্তু সাশ্রয়ী মূল্যের আইলাইনার পেন্সিল দিয়ে তার ব্যবসায়ের যাত্রা শুরু করেন। সময়টি ছিল ১৯৯৯ সাল, যখন উচ্চ-প্রসাধনীগুলো কেবলমাত্র ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোতে পাওয়া যেত। ২৬ বছর বয়সে কো কোয়ালিটি এবং দামের মধ্যে ব্যবধানটি পূরণ করার জন্য এনওয়াইএক্স কসমেটিক্স প্রতিষ্ঠা করেন।

পণ্য উন্নয়ন প্রক্রিয়া; Source: 123rf.com

স্টাইলিশ প্যাকেজযুক্ত প্রিমিয়াম আই পেন্সিলটি ১.৪৯ থেকে ১.৯৯ মার্কিন ডলারের মধ্যে পাওয়া যেত। এই আইলাইনার এবং লিপ লাইনার বিক্রি করেই তিনি ব্যবসায়ের প্রথম বছর দুই মিলিয়ন ডলার আয় করেছিলেন। যা অন্যান্য কোম্পানির জন্য বেশ সময়সাপেক্ষ ছিলো৷ কো এই ব্যবসায়ে এতোটা উন্নতি করার মূল কারণ হলো তাঁর ‘পণ্য উন্নয়নে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ’। চলুন জেনে নেওয়া যাক উক্ত পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে।

১. একটি ধারণা তৈরি করুন

পণ্য উন্নয়ন প্রক্রিয়ার প্রথম পর্যায় হলো একটি ফ্লোচার্ট তৈরি করা৷ এই ফ্লোচার্টে পণ্যের ধারণা নেওয়া এবং বাজারে পণ্যের অবস্থান কেমন সে সম্পর্কে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এবং এসব বিষয় বিবেচনা করেই ফ্লোচার্টটি তৈরি করা হয়। কিন্তু অনেকেই তাদের ব্যবসায়ের উজ্জ্বল ধারণা সম্পর্কে সংবেদনশীল থাকে এবং ধারণাটিকে ব্যবসায়ের প্রয়োজনীয় বিষয়বস্তু হিসেবে গণ্য করেন না। তাই তাদের ব্যবসায়ের কার্যাবলিগুলো থাকে অগোছালো।

এটি পণ্য উন্নয়ন প্রক্রিয়ার সাত ধাপের মধ্যে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ধাপ৷ কারণ এই ধারণাগুলো পেতেই আপনি আপনার পণ্যের গবেষণা এবং উন্নয়নের জন্য অর্থ ব্যয় করবেন। তাছাড়া এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যগুলোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এমন ধারণাগুলোও প্রত্যাখ্যান করা হয় এবং যারা বেশি সম্ভাবনাময় প্রতিনিধিত্ব করে তারা পণ্য উন্নয়নের জন্য নির্বাচিত হয়। পণ্য ধারণা থেকে ধারণা পর্যালোচনা কোম্পানির সংস্থার সাধারণ মূল্যায়ন প্রতিনিধিত্ব করে। এই পূর্ব ধারণার মাধ্যমেই প্রযুক্তিক ও অর্থনৈতিক যেকোনো পদক্ষেপ দ্রুত গ্রহণ করা যায়৷

২. পণ্যের নকশা বা ডিজাইন উন্নয়ন

একবার আপনার ধারণাটি ঠিকঠাক হয়ে গেলে, পণ্য উন্নয়ন প্রক্রিয়া ফ্লোচার্টের পরবর্তী ধাপটি হলো পণ্যের নকশা নির্বাচন করা। সাধারণত পণ্য নকশাটি খুবই সাধারণ কিন্তু আকর্ষণীয় হওয়া উচিত। যাতে আপনার পণ্যটি প্রতিটি রুচিশীল মানুষের পছন্দনীয় পণ্যে পরিণত হয়। মূলত যেই অঞ্চল আপনার পণ্যটি বাজারজাত করা হবে, সেই অঞ্চলের মানুষের রুচি ও চাহিদার উপর ভিত্তি করেই পণ্য নকশা করা প্রয়োজন।

পণ্য নকশা বা ডিজাইন নির্বাচন করা; Source: UX Planet

এই প্রসঙ্গে ব্যাংক, বিমানবন্দর এবং খুচরা বিক্রেতাদের কাস্টমাইজড ইলেকট্রনিক কিওস্ক বিক্রি করে এমন জিভেলোর প্রতিষ্ঠাতা জিভার বার্গ বলেছেন, “আপনার পণ্যটি প্রথম তিন সেকেন্ডের মধ্যে কারো দৃষ্টি আকর্ষণ করা উচিত এবং আপনার পণ্যের মানের ডিজাইন হলো আপনার করা সেরা বিনিয়োগ।”

৩. পরীক্ষা এবং প্রতিক্রিয়া

পণ্য উন্নয়নের এই পর্যায়ে আপনার পণ্যটি সম্পর্কে গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা সৃষ্টি হয়। এর জন্য প্রতিষ্ঠানের কর্মী ও সম্ভাব্য গ্রাহকদের কাছে আপনার পণ্যের স্যাম্পল পাঠান। এবং গ্রাহক, কর্মচারী এবং অংশীদারদের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়াসমূহ অনুসন্ধান করুন। যার উপর ভিত্তি করে আপনি পণ্যটি উন্নত করতে পারবেন। আবার ই-মেইল বা ফোন কলগুলোর মাধ্যমে গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়া জেনে নিন। অংশীদার এবং কর্মচারীদের একটি ই-মেইল প্রেরণ করুন এবং কোন পণ্যটি সবচেয়ে কার্যকর বা মূল্যবান বলে মনে হচ্ছে তা জিজ্ঞেস করুন।

তাছাড়া বিপণন দলগুলোকে বিপণন বার্তাগুলো তৈরি করতে এবং বিপণন প্রচারের ধারণাগুলো উন্নত করতে ই-মেইল, ওয়েবসাইট, বিলবোর্ড বা পোস্টার ব্যবহার করা উচিত। প্রোটোটাইপ মূল্যায়নের সময় গ্রাহক এবং অংশীদারদের কাছ থেকে সর্বাধিক ইতিবাচক মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়াগুলোর ভিত্তিতে বিপণন বার্তাগুলো প্রচার করা হয়।

৪. মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়া

পণ্যের বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে মূল্য নির্ধারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। অনেক উদ্যোক্তা মূল্য নির্ধারণের সময় শিপিং এবং ডিউটিসহ প্রতিষ্ঠানের সমস্ত ব্যয় নির্ধারণ করতে ব্যর্থ হন। যার ফলে পণ্যের যথাযথ মুনাফা সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। আবার মূল্য নির্ধারণ করতে ভোক্তার চাহিদা, ভোক্তার মূল্য পরিশোধ ক্ষমতা এবং পণ্য বাজারজাতকরণ অঞ্চলের মানুষের জীবন জীবিকা ইত্যাদি বিষয় মূল্যায়ন করা জরুরি৷ কেননা আপনার পণ্যের মূল্য যদি সেই অঞ্চলের ভোক্তাদের জীবনধারা অনুযায়ী ব্যয়বহুল হয় তাহলে পণ্যের উন্নয়ন সম্ভব নয়।

পণ্য উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো পণ্যের মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়া; Source: freepik.com

তাই পরিবেশ, পরিস্থিতি ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিশদভাবে বিশ্লেষণ করে মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা প্রয়োজন৷ এছাড়া অন্য একটি উপায় হলো, প্রথমে একটি যথাযোগ্য দামে পণ্য বাজারে ছাড়া এবং ক্রেতাদের প্রতিক্রিয়া ও চাহিদা অনুযায়ী মূল্যের উঠানামা করা। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেও পণ্যের উন্নয়ন সম্ভব।

৫. সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার

প্রতিক্রিয়া চাওয়ার জন্য এবং পণ্যের প্রচারের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। তাই যখনই আপনি পণ্য বাজারজাত করবেন, তখন থেকেই পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করা শুরু করুন। ফেসবুক, টুইটার বা অনুরূপ সাইটগুলোতে যদি আপনার একাউন্ট থাকে, তাহলে তাতে আপনার পণ্যের বর্ণনা বা ছবি পোস্ট করুন। এবং সেখান থেকে দর্শকদের মন্তব্য বা পছন্দগুলো সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা নিন।

সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পণ্যের প্রচার উন্নয়ন; Source: as.com

তাছাড়া লিংকডইনের মতো ব্যবসায়ের সাইটগুলোতে পেশাদার সহকর্মীরাও ইনপুটটির জ্ঞানীয় উৎস হতে পারে। বর্তমানে প্রযুক্তির উন্নতির ফলে সোশ্যাল মিডিয়াগুলোই সবচেয়ে উন্নত প্রচার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কারণ মানুষ প্রতিনিয়ত সবচেয়ে বেশি সোশ্যাল মিডিয়াগুলোর দিকেই ঝুঁকছে। এছাড়াও বিভিন্ন টিভি চ্যানেল, ইউটিউব ও অন্যান্য নিউজ মিডিয়াতেও পণ্যের প্রচার করা যায়।

Featured Image Source: blog.fracturedatlas.org

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *