ডিজিটাল প্রযুক্তি যেভাবে আপনার চাকরি এবং কাজের ধরণ পাল্টে দিচ্ছে

photo: lsbf

আধুনিক এবং ডিজিটাল প্রযুক্তিকে বিজ্ঞানের আশীর্বাদ হিসেবে অভিহিত করা হয়। নিত্যনতুন আবিষ্কার আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে একটু একটু করে পাল্টে দিচ্ছে। এমনকি ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবসা-বাণিজ্যে এনেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। ডিজিটাল প্রযুক্তির কারণে নতুন নতুন স্টার্টআপ সৃষ্টি হচ্ছে, এবং বিদ্যমান ব্যবসায় নতুন গতি সঞ্চার হচ্ছে। ডিজিটাল প্রযুক্তির কারণে কোম্পানিগুলোর উৎপাদন বেড়েছে, একই সাথে উৎপাদন ব্যয় কমেছে। যোগাযোগ অধিকতর সহজ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলো খুব দ্রুত সমৃদ্ধ হচ্ছে।

photo: pastexplore.wordpress

কিন্তু এই প্রযুক্তির আশীর্বাদ যখন ব্যবসার ক্ষেত্রে বিবেচনা না করে ক্যারিয়ার এবং চাকরির বাজারের ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হয় তখন নিদারুণভাবে হতাশ হতে হয়। ডিজিটাল প্রযুক্তি অসংখ্য শ্রমিকের মুখের ভাত কেড়ে নিচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি শ্রমিকের চাহিদা প্রায় শূন্যের কোঠায় নিয়ে এসেছে।

অ্যামাজন, আলিবাবার মতো বিশ্ব বিখ্যাত কোম্পানিগুলোর দৈনন্দিন কার্যক্রমের সিংহভাগ পরিচালিত হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির দ্বারা। বিশ্বের অধিকাংশ গাড়ি নির্মাণকারী কোম্পানির উৎপাদন কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির বদৌলতে। অপরদিকে অসংখ্য শ্রমিকের কর্মসংস্থান ক্ষীণ হয়ে এসেছে। উন্নত বিশ্বে ট্রাক ড্রাইভার থেকে শুরু করে সাংবাদিক, ডাক্তার পর্যন্ত, এমনকি আইনজীবীর কাজও দখল করে নিয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।

photo: lsbf

সর্বক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশনের ফলে এক নতুন ধরনের ডিজিটাল অর্থনীতির জন্ম হয়েছে এবং বলার অবকাশ রাখে না এ অর্থনীতি জনগণের দুঃখ-কষ্টও বহন করে চলেছে। তবে এই ডিজিটাল অর্থনীতিতে শ্রমিকরা কি হেরে যাবে?

নিশ্চয়ই না। ডিজিটাল প্রযুক্তি আসায় নতুন নতুন পথ উন্মোচিত হয়েছে, কাজে গতি এসেছে, প্রতিষ্ঠান পরিচালনা আরো বেশি সহজ হয়েছে। এই ডিজিটাল প্রযুক্তির সাথে যেসব কোম্পানি তাল মেলাতে পেরেছে ইতিমধ্যে তারাই বাজারের শীর্ষে অবস্থান করছে। সুতরাং প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্য পেতে সর্বক্ষেত্রেই ডিজিটাইজেশনকে আলিঙ্গন করতে হবে।

নয়টা-পাঁচটা অফিস করার ঐতিহ্যগত নিয়ম এবার ভূলে যান। কর্মস্থলকে নতুন করে সাজান। কেননা অন্যরা ইতিমধ্যে অনেক এগিয়ে গেছে। প্রযুক্তির ছোঁয়া নিয়ে প্রতিষ্ঠানকে নতুনভাবে উপস্থাপন করুন। আজকের এই নিবন্ধে আমি আলোচনা করব কিভাবে ডিজিটাল প্রযুক্তি আপনার কর্মজীবনকে বদলে দিচ্ছে, অর্থাৎ পরিবর্তিত এই বাস্তবতায় চাকরিজীবীদের ভূমিকা কী হবে।

১. নতুন দক্ষতা

সর্বক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশনের ফলে যে কোনো পেশার জন্যই আপনার কিছু বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন হবে। কেননা ডিজিটাল প্রযুক্তি সমূহ সব সাধারন মানুষের কাছে কিছু বিশেষ দক্ষতার দাবি রাখে। যেকোনো পেশা যেমন স্থাপত্যবিদ্যা থেকে শুরু করে সমাজ গবেষণা পর্যন্ত, সব ক্ষেত্রেই ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়া আছে। আপনাকে এ প্রযুক্তিগুলো ব্যবহার উপযোগী হয়ে উঠতে হবে। যেমন স্থাপত্যবিদ বা কোনো বিষয়ের গবেষক হতে হলে পূর্বে কম্পিউটার দক্ষতার প্রয়োজন হতো না। এখন এসব কাজের জন্য আপনাকে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং জানতে হবে।

photo: over sixty

তবে আশার কথা হলো প্রযুক্তি নিজেই এই দক্ষতা উন্নয়নকে সহজ করে দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী অনলাইনে অসংখ্য শিক্ষণীয় কনটেন্ট রয়েছে, যেখান থেকে আপনি প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করে নিতে পারেন। এমনকি অনলাইন থেকে সংক্ষিপ্ত কোর্স, বিশেষ ট্রেনিং করতে পারেন।

এছাড়া বর্তমান সময়ে ইউটিউব একটি বড় প্ল্যাটফর্ম। আপনি চাইলে ইউটিউব থেকেও নতুন নতুন অনেক দক্ষতা অর্জন করে নিতে পারেন। এমনকি আপনি চাইলে অনলাইনে বসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাও সেরে নিতে পারেন। সুতরাং যে ডিজিটাল প্রযুক্তি আপনার কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ পাল্টে দিয়েছে সেই ডিজিটাল প্রযুক্তিই আপনাকে নতুন কর্মক্ষেত্রের উপযুক্ত হয়ে ওঠার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। আপনাকে শুধু সুযোগটা কাজে লাগাতে হবে।

২. উদ্যোক্তা এবং উদ্ভাবনী চিন্তা

আবারো পূর্বের কথায় ফিরে আসি; ডিজিটাল প্রযুক্তি শ্রমিকের চাহিদা কমিয়ে দিয়েছে, অর্থাৎ চাকরির বাজার হ্রাস করেছে। কিন্তু পাশাপাশি নতুন সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে। এটা সত্য যে স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি বর্তমান সময়ে অনেক কাজ করছে। কিন্তু যন্ত্র কখনো সুযোগ-সুবিধা এবং ব্যবসায়িক সমৃদ্ধির কলাকৌশল বাতলে দিতে পারে না, অর্থাৎ যন্ত্রকে নির্দেশ দিলে সে নির্দেশনা অনুযায়ী একই কাজ বারবার করতে পারে, কিন্তু নতুন কিছু সৃষ্টি করতে পারে না।

photo: medium

এই কারণে সব যন্ত্রের পেছনে একজন পরিচালকের প্রয়োজন হয়। সকল প্রযুক্তি ব্যবহারের পেছনে নতুন নতুন উদ্ভাবনী চিন্তার প্রয়োজন হয়। এমনকি বড় বড় কম্পানিতেও সব তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ এবং কাজে গতি আনার জন্য কর্মীদের বিশ্লেষণী ক্ষমতা ব্যবহার করতে হয়।

সুতরাং এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে উদ্যোক্তারা যদি উদ্ভাবনী চিন্তা করে প্রযুক্তির সাথে নিয়ে কাজ করে তবে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবে। কাজেই বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক সমস্যার সমাধান করতে আপনার মধ্যে উদ্ভাবনী ক্ষমতা থাকতে হবে। এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে হলে শুধু প্রযুক্তি ব্যবহার জানা নয়, আপনাকে উদ্ভাবনী চিন্তাশীলও হতে হবে।

৩. একই প্রতিষ্ঠানে দুই শিল্প

ডিজিটাল প্রযুক্তি এখন অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত হচ্ছে। এমনকি ঐতিহ্যবাহী পুরনো সব রাঘববোয়াল ব্যবসায়ীরাও সাফল্যের জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তিকে আলিঙ্গন করছে। উদাহরণস্বরূপ আন্তর্জাতিক খুচরা বিক্রয় প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্ট নতুন করে ডিজিটাল ল্যাব সৃষ্টি করেছে তাদের ই-কমার্স সেবাকে আরো সম্প্রসারিত করার জন্য।

photo: bulldog auto transport

আপনি যদি আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেমন ব্যাংক, বীমা বা কোনো ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করে থাকেন তবে আশা করা যায় অদূর ভবিষ্যতে আপনি ইনসুটেক বা ফাইটেক নামের নতুন সেবা সৃষ্টি হতে দেখবেন। এমনকি বিদ্যমান চাকরিতেও প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার এখন সর্বত্র। আপনি যদি টেলিভিশন মিডিয়ায় কাজ করে থাকেন তবে নিশ্চয়ই ডিজিটাল মিডিয়াতে আপনাকে কাজ করতে হচ্ছে। এই তালিকা প্রতিনিয়ত দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। আশা করা যায় অদূর ভবিষ্যতে সবকিছুই ডিজিটাইজেশন হয়ে যাবে। সুতরাং সবকিছুর জন্য প্রস্তুতি নিন এখনই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *