সবসময় সমান কর্মতৎপরতা ধরে রেখে সাফল্য ছিনিয়ে আনবেন যেভাবে

photo: purelyb

একটা সময় কঠিন পরিশ্রম করাকেই সাফল্যের একমাত্র চাবিকাঠি ধরা হত। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মানুষ অনেক উন্নত হয়েছে। মানুষের চিন্তা-ভাবনার পরিবর্তন হয়েছে। এখন আর কঠিন কাজকে সাফল্যের একমাত্র চাবিকাঠি ধরা হয় না, বরং এখন সাফল্যের চাবিকাঠি ধরা হয় বিচক্ষণ কাজকে। অর্থাৎ বর্তমান সময়ে কর্মক্ষেত্রে যে যতটা বিচক্ষণ সে ততটা সফল। এর সাথে আছে সব সময় সমান কর্মতৎপরতা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ।

photo: youminow

এই দুই ক্ষেত্রে যারা কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখে তারাই সাফল্যের শীর্ষে অবস্থান করে। আমি ইতিপূর্বে একটি নিবন্ধ প্রতিষ্ঠানে কর্মতৎপরতা ধরে রাখতে করণীয় সম্বন্ধে একটি আলোচনা করেছি। আজকের নিবন্ধে আরো কিছু গভীর বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো, যা যেকোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির সার্বক্ষণিক কর্মতৎপরতা ধরে রেখে সাফল্য ছিনিয়ে আনতে সহায়ক হবে।

১. অন্যের প্রভাব মুক্ত হয়ে কাজ করা

যে কোনো কাজে সাফল্য পেতে সবার আগে নিশ্চিত করুন যে, এই কাজের প্রচেষ্টা অন্যের প্রভাবমুক্ত। অর্থাৎ আপনার লক্ষ্য অন্য কারো দ্বারা উৎসাহিত, অনুপ্রাণিত বা বাধ্য নয়। অন্য কারো সাফল্য দেখে ঈর্ষাকাতর হয়ে অথবা অন্য কারো চাপের মুখে কোনো কাজ শুরু করলে তাতে সাফল্য নাও আসতে পারে। এবং সম্পূর্ণ সময় জুড়ে আপনি কর্মঠ নাও থাকতে পারেন। কেননা এই কাজের জন্য যথাযথ অনুপ্রেরণা আপনার নেই!

photo: purelyb

আপনাকে নিজের দক্ষতা ও যোগ্যতার উপর বেশি জোর দিতে হবে। আপনার কাজ কী এবং তা কতটা শ্রমসাধ্য সেটা মুখ্য বিষয় নয়, মুখ্য বিষয় হল এই কাজটি করতে আপনি সমর্থ কিনা। অন্য কারো সহযোগিতা, প্রভাব বা ঈর্ষাপরায়ণতা থেকে আপনি কাজটি করছেন নাকি নিজের উদ্যোগে করছেন? কখনো অন্যের প্রতি মোহ থেকে কাজ করবেন না। কাজ করবেন নিজের প্রয়োজনে। এককথায় নিজ কাজে আপনাকে শ্রেষ্ঠতম হতে হবে।

সুনির্দিষ্ট কোনো কাজ করতে আপনার নেওয়া সকল সিদ্ধান্ত অন্য কারো পছন্দ নাও হতে পারে, অথবা আপনার সকল সিদ্ধান্ত অন্যের চোখে সম্ভাব্য সাফল্যের জন্য উপযুক্ত নাও মনে হতে পারে। কিন্তু এতে আপনার বিচলিত হবার কিছু নেই। আপনাকে নিশ্চিতভাবেই নিজের সক্ষমতা এবং কর্মকৌশল সম্বন্ধে সচেতন থেকে কাজ করতে হবে।

photo: ted

বলার অপেক্ষা রাখে না যেকোনো কাজের ব্যাপারে আপনার নেয়ার সিদ্ধান্ত বাইরের সকল সিদ্ধান্তের চেয়ে অনেক বেশী কার্যকর। সুতরাং সবসময় কর্মমুখী থাকতে এবং কাঙ্ক্ষিত সাফল্য ছিনিয়ে আনতে নিজের সক্ষমতা এবং দক্ষতায় বেশি মনোযোগী হোন।

২. সময় ছক ঠিক করা

সময়ের গুরুত্ব নিশ্চয়ই নতুন করে ব্যাখ্যা করার অবকাশ রাখে না। আমরা সবাই জানি যেকোনো কাজের জন্য সময় কতটা গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। প্রত্যেকটি সাফল্য যাত্রাই ঝুঁকিপূর্ণ। কাজ সম্পন্ন করতে গিয়ে নানান ধরনের ঝুঁকি মোকাবেলা করতে হয়। তার সাথে যদি সময় জ্ঞান না থাকে তাহলে ঝুঁকির মাত্রা আরও বহুগুণ বেড়ে যায়। আপনার হাতে যদি সময় কম থাকে তাহলে ঝুঁকির মাত্রা বেশি থাকবে। আর সময় বেশি থাকলে ঝুঁকির মাত্রা কম থাকবে।

হাতে সময় কম থাকলে বেশি ঝুঁকি নিয়ে দ্রুত অধিক কর্মী কাজে লাগিয়ে কাজ সম্পাদন করতে হয়। তাতে আপাতদৃষ্টিতে কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি পেলেও কাজের গুণগত মান কমে যায়। তাই কম সময়ে অধিক ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে প্রতিষ্ঠানগুলো পর্যাপ্ত কাজ করলেও ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠান ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

photo: corporate finance institute

অপরদিকে সম্ভাব্য কাজের জন্য পর্যাপ্ত সময় থাকলে যথাযথ পরিকল্পনার ভিত্তিতে কাজ এগিয়ে নেওয়া যায়। কর্মীদের উপর অধিক চাপ দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। যাতে কাজের গুণগতমান বৃদ্ধি পায় এবং স্বভাবতই খুব সহজে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয়।

সুতরাং যেকোনো কাজের সাফল্য পেতে পর্যাপ্ত সময় হাতে রাখুন। সম্পূর্ণ সময়কে পরিকল্পনার আওতায় নিয়ে আসুন এবং ধীরে ধীরে কাজ এগিয়ে নিন তাতে অনেকটাই ঝুঁকি হ্রাস পাবে।

৩. কাজে অটল থাকা

এই শেষ পরামর্শটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে কোনো কাজের সাফল্যের জন্য আপনাকে কাজে অটল থাকতে হবে। অব্যাহতভাবে দৃঢ়তার সাথে প্রচেষ্টা চালাতে হবে। যেকোনো সাফল্য যাত্রায় আপনাকে নানান ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হবে।

মাঝপথে এমন সব ঘটনা ঘটবে যা কোনভাবেই আপনি প্রত্যাশা করেন না। এমন কিছু অদ্ভুত সমস্যার সম্মুখীন হবেন যা আপনি কখনোই সমাধান করেননি। আপনাকে তবুও কাজে অটল থাকতে হবে। এক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার, সাফল্য কখনো প্রাকৃতিক নিয়মে আসে না। কঠিন প্রচেষ্টা এবং ধারাবাহিকতা ক্রমান্বয়ে আমাদের সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়।

photo: swish design

কাজেই যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজের কাজে অটল থাকুন এবং সকল বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে বিচক্ষণতার সাথে এগিয়ে যান। কাজ করতে গিয়ে মনে করবেন আপনার সামনে যদি কোনো বাধা-বিপত্তি না আসে তাহলে এই কাজের সাফল্যে ততটা আনন্দ নেই। অপরদিকে যে কাজে বাধা-বিপত্তি যত বেশি সে কাজে সাফল্য তত বড়। কাজেই সকল বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে নিজের কাজে অটল থাকুন। আপনার পরিকল্পনা সঠিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যান। দক্ষতার সাথে কাজ করুন আর কাঙ্ক্ষিত সাফল্য ছিনিয়ে আনুন।

সাফল্য শুধু কাজের পরিমাণের উপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে আপনার বিচক্ষণতা এবং কর্মকৌশলের উপর। সুতরাং যতটা বিচক্ষণতার সাথে আপনি কাজ করতে পারবেন সাফল্য তত দ্রুত আপনার কাছে ধরা দিবে। সুতরাং সব সময় কর্মক্ষম থেকে যথাযথ পরিকল্পনামাফিক কাজ করে যান, তার কাঙ্খিত সাফল্য ছিনিয়ে আনতে পারবেন খুব সহজেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *